ভ‚মিকা: মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যই রাষ্ট্রচিন্তার উদ্ভব। রাষ্ট্রকি ধরনের হলে সমাজ ব্যবস্থা
সুন্দর ও উত্তম হতে পারে তা নিয়ে যুগ যুগ ধরে চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান মানুষ চিন্তাভাবনা করেছেন। মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রের ও সরকারের কি ধরনের সম্পর্কহবে, আদর্শরাষ্ট্রের
রূপ কি হবে এ বিষয়ে চিন্তাবিদগণ তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। মধ্যযুগে মুসলিম
দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞনী ও মনীষীগণ রাষ্ট্রচিন্তার উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন
করেছিলেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আল ফারাবী, ইমাম গাযযালী, ইমাম আবুহানিফা, ইবনে
খালদুন, ইবনে রুশদ ও ইবনে সিনার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব চিন্তাবিদের
গুরুত্বপূর্ণঅবদানে ইসলামী ও মুসলিম রাষ্ট্রদর্শন পরিপুষ্ট হয়ে উঠে।
ইসলামী রাষ্ট্রদর্শনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছিল হযরত মুহাম্মদ (স:) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের
আমলে। কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শনই ইসলামী রাষ্ট্রদর্শন। মনে করা হয় যে, মানুষের
ইহলৌকিক ও পারলৌকিক, অর্থাৎ সার্বিক মুক্তির জন্য ইসলামী রাষ্ট্রদর্শনের গুরুত্বঅপরিহার্য।
শুরু থেকেই ইসলাম ধর্মশ্রেণী বৈষম্য দূর করে মানুষকে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে উদাত্ত
আহবান জানিয়েছে।
পটভ‚মি
নবুওয়ত লাভের পর বহু বছর মক্কায় অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিয়ে ইসলাম প্রচারের পর আল্লাহ্র
নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) প্রথম হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ৬২২
খ্রিস্টাব্দে ইয়াসরীব বা মদীনায় হিজরত করেন। তখন থেকে মদীনার নাম হয় মদীনাতুন নবী।
পরবর্তীকালে একে আল-মদীনা আল-মুনাওয়ারা কিংবা কেবল মদীনা বলা হতে থাকে।
৬২০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে মদীনা থেকে ৬ জন লোক রাসূল করীম(সাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ
করে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ ভাবে ইয়াসরীবের মৃত্তিকায় ইসলামের বীজ রোপিত হয়।
অতঃপর মদীনার খাযরাজ গোত্রের ৯ জন এবং আওস গোত্রের ৩ জন নিয়ে মোট ১২ জন
মুসলিম মক্কায় রাসূল করীম (সা:)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এটি ‘আকাবার প্রথম শপথ নামে
পরিচিত’। অতঃপর আকাবার শেষ বৈঠক বা দ্বিতীয় শপথে ৭৫ জন মুসলিম অংশ নেন। এ
সময় তারা রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাঁর নেতৃত্বে লড়াই করার এবং
কাফিরদের মোকাবিলা করার ওয়াদা করেন। একে ‘বায়াত-উল-হারব’ বা যুদ্ধের অঙ্গীকার
বলা হয়। এর মধ্যে প্রতিরক্ষার পাশাপাশি শত্রæর বিরুদ্ধে আক্রমণের অঙ্গীকারও ছিল। এটি
চুক্তির উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিম উম্মাহ্র ভিত্তি কাঠামো
প্রতিষ্ঠিত হয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে হিলফ, জিওয়ার ও বিলা ইত্যাদি রক্ত সম্পর্ককে
পরিত্যাগকরতঃ ঈমানের ভিত্তিতে ‘মুআখাত’ বা ভ্রাতৃসম্পর্ক গড়ে উঠে আনসার ও মুজাহিদদের
মধ্যে। আল কুরআনের আদর্শের ভিত্তিতে ইসলামী উম্মাহ্ নির্মিত হয়। রাসূল করীম (সা:)
মদীনায় হিযরতের পর ‘মুআখাত’ নতুন মাত্রা পায় এবং ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে এটি
মুহাজির ও আনসারদের ভিতর ফলপ্রসূ হয়।
মদীনা সনদ, ইসলামী উম্মাহ্ ও ইসলামী রাষ্ট্র
রাসূল করীম (সা:)-এর মদীনায় হিজরতের পর একদিকে যেমন ইসলামভিত্তিক মুসলিম উম্মাহ্
গঠিত হয় অন্যদিকে তেমনি ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিও প্রতিষ্ঠা পায়। রাসূল (সা:)-এর মদীনায়
গমনের অব্যবহিত পরেই মুআখাত-এর ক্রমধারায় তাঁর কিতাব বা মদিনা সনদ জারী করা
হয়। এটি ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত। মুআখাতে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের
প্রকাশ স্পষ্ট আর মদীনা সনদে ইসলামী বা মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি প্রকাশিত। কিন্তু মদীনা
সনদে সেই সঙ্গে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে জনগণকে মদীনার নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের
রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মদীনা সনদের ভিত্তি আল্লাহ্র উপর
বিশ্বাস, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর নেতৃত্ব ও প্রাধান্য এবং ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামোর
স্বীকৃতি-নির্ভর।
মদীনা সনদে খুবই পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে ঃ পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে। এ সনদ
আল্লাহ্র রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রণীত। এর আওতাধীন হচ্ছে কুরাইশ মুসলিম ও
ইয়াসরীবের সকল বিশ্বাসী ও মুসলিম এবং যাঁরা তাঁদের অনুসারী এবং এ ভাবে যাঁরা তাঁদের
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং যাঁরা তাঁদের সঙ্গে জিহাদে অংশ নেয় (দ্রষ্টব্য, ইব্ন ইসহাক, সীরাত
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)। এ সনদের দলীলে উল্লেখিত মুহাজির ও আনসারগণকে বাকি লোকদের
থেকে পৃথক করে এক ঐক্যবদ্ধ ‘উম্মাত আল্লাহ্’ বা আল্লাহ্র সমাজ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
এ উম্মতের এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)।
এ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং এটিকে শাসনের অধিকার আল্লাহ্র এবং তাঁর নামে রিসালতের
বাহক খিলাফতুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর। মদীনা সনদের ১,১৫,২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে
স্পষ্ট যে, একমাত্র মুসলমানরাই এ সনদের সদস্য, কেননা ইসলামী বন্ধনই উম্মাহ্র ভিত্তি।
মুহাম্মদ ফুয়াদ আল বাকীর মতে, আল কুরআনের পরিভাষা উম্মাহ্ শব্দটি ঐ মহা গ্রন্থে ৫১
বার এসেছে এবং এর বহুবচন উমাম শব্দটি ১৩ বার এসেছে। এ উম্মাহ্ শব্দটি ৩০৩টি হাদিসে
লক্ষণীয়। ওয়াট তাঁর “আইডিয়েল ফ্যাক্টরস অব দি অরিজিন অব ইসলাম”-এ স্বীকার করেছেন
যে, যারা রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর বাণীকে গ্রহণ করেছে তাঁদের নিয়েই এ সমাজ গঠিত
হয়েছিল। যে সব গবেষক বলেন যে, মদীনার মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকরা উম্মাহ্র ভিতর
ছিল, তারা কেবল মদীনা সনদেরই বিরোধী নয়, বরং ইসলামভিত্তিক উম্মাহ্র ধারণাকেই
বিকৃত করেন। মদীনা সনদের ১ অনুচ্ছেদে আনসার ও মুহাজিরগণকেই কেবল ‘উম্মাহ্
ওয়াহিদাহ্’ বা এক সমাজ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ইব্ন হিশামের “সীরা” গ্রন্থ(রাসূলুল্লাহ
সাঃ-এর জীবনী), রিউবেন লেভীর “দি স্যোশাল স্ট্রাকচার অব ইসলাম” এবং ডবিøউ.
মন্টোগোমারী ওয়াটের “মুহাম্মদ এ্যাট মদীনা” গ্রন্থে এ কথার স্বীকৃতি রয়েছে।
মদীনা সনদের ১ অনুচ্ছেদে মুসলিমদের পার্থক্য নির্দেশকরতঃ এক উম্মাহ্র ঘোষণার অনুক‚লে
১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, বিশ্বাসীরা একে অন্যের বন্ধু (মাওয়ালী)। এক বচন মাওলার
বহু বচন মাওয়ালী। মদীনা সনদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের আওতাধীন অবস্থায় স্বীকৃতি দেয়া
হলেও, নিরাপত্তা-অধিকার-মর্যাদা-স্বাধীনতা দেয়া হলেও বিশ্বাসী মুসলিমরা ছাড়া অন্যরা যে
এর বাইরে তা স্পষ্ট। ২৫ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ইব্ন হিশামের টেক্সক্ট(২য় খন্ড) পৃষ্ঠা ৫০১-৫০৪
থেকে দেখা যায় যে, সেখানে আছে “উম্মাতুন মা’আ আল-মুমিনিন”, “উম্মাতুন মিন আলমুমিনিন” নয়। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, বনু আওফের ইহুদীরা মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত
হয়েও বিশ্বাসীদের তথা মুসলিমদের বাইরে এক আলাদা সম্প্রদায়। আরবি ভাষার পন্ডিতগণ
মা’আ এবং মিন-এর তফাৎ বুঝেছেন বলে শুদ্ধ উদ্বৃতি ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ইউরোপীয় ও
প্রাচ্যদেশীয়রা ‘উম্মাহ্’ ধারণাটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন আরবীর ভ্রান্ত অর্থ করার কারণে।
মদীনা সনদ অনুযায়ী ইহুদীদের নিকট ইহুদীদের ধর্ম প্রবং মুসলিমদের নিকট তাদের ধর্ম
ইসলাম। তাদের মাওয়ালী ও তাদের প্রতিও এটি প্রযোজ্য ছিল। গভীর ব্যাখ্যা থেকে দেখা
যায়, মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলমানগণ এককভাবে মুসলিম উম্মাহ্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর
সকল অমুসলিম, পৌত্তলিক, ইহুদী, খ্রিস্টানরা হালীফের মর্যাদা পেয়েছিল। তারা নিরাপত্তা ও
সম অধিকারসম্পন্ন নাগরিকের মর্যাদা লাভ করেছিল। মদীনা সনদের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা
হয়েছে, ইহুদীদের মধ্যে যে বা যারা আমাদের অনুসরণ করে তাদের জন্য আমাদের সাহায্য
ও সমর্থন রয়েছে। তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না কিংবা তাদের শত্রæদেরও সাহায্য করা
হবে না। ২৫ অনুচ্ছেদে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদত্ত হয়েছে। আবার ২৪, ২৭, ৩৮
অনুচ্ছেদে সর্ব ব্যাপারে মুসলিমদের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।
মদীনায় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে ক্রিয়াশীল মদীনা সনদে ইসলামী
উম্মাহ্র সঙ্গে অমুসলিমগণের সংশ্লিষ্টতার প্রধান কারণ ছিল, তারা মদীনার রাষ্ট্রীয় ভ‚খন্ডের
অধিবাসী ছিল এবং এ জন্যে তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্রে আত্মীকৃত করা হয়েছিল। সংবিধান
হিসেবে মদীনা সনদ মুসলিম উম্মাহ্র সকল সদস্য ও সহযোগী সম্প্রদায়গুলিকে এক ঐক্যবদ্ধ
অধিকার ভোগ ও দায়-দায়িত্বে সংযুক্ত করেছিল। সাংবিধানিক অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি
যেমন ছিল সবার জন্য, তেমনি লেন-দেন পরিশোধ, মদীনা রাষ্ট্রের অধিবাসীদের শান্তিপূর্ণ
সহাবস্থান, বাইরের আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষা এবং আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ
মান্য করা বাধ্যতামূলক ছিল। “দি লাইফ অব মুহাম্মদ” (সাঃ) গ্রন্থে মুহাম্মদ হুসায়ন হায়কল
বলেন, ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সাঃ) কর্তৃক রচিত রাজনৈতিক দলিলটি ধর্মবিশ্বাস ও বাক
স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্র, মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান ও অপরাধ দমনের প্রশ্নে
রাজনৈতিক জীবনে এক নয়া দিগন্তের উম্মেষ ঘটিয়েছিল।
মদীনা সনদ থেকে স্পষ্ট যে, উম্মাহ্ ও ইসলামী রাষ্ট্রের সংগঠনের মধ্যে একটা পার্থক্য ছিল।
উম্মাহ্ ছিল কেবল ইসলামের ভিত্তিতে সামাজিক সংগঠন। আর ইসলামী রাষ্ট্র ইসলামী আদর্শ
ও জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের সাথে সাথে রাজনৈতিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখেছিল। উম্মাহ্
তাই কেবল মুসলিমদেরই অন্তর্ভুক্ত করেছিল। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয়ায়
ও মুসলিমদের সঙ্গে নিরাপত্তা ও শান্তিতে থাকার শর্তে অমুসলিমরাও মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের
অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। মদীনা সনদের ১ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে
নিশ্চয়তা সৃষ্টির প্রয়াস ছিল। এ সনদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের
রাষ্ট্রনায়ক, সরকার প্রধান,আইনের ব্যাখ্যাতা, শাসক, সেনাপতি, ধর্মপ্রচারক, সমাজ
সংস্কারক এবং সমাজ কাঠামোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে চ‚ড়ান্ত স্বীকৃতি পান। সকল বিষয়ে আল্লাহ্র
বিধানানুযায়ী ফয়সালার কর্তৃত্ব লাভ করেন তিনি। সনদের মুখবন্ধ এবং ১ ও ৪৭ অনুচ্ছেদ
থেকে এর ইসলামী চরিত্র ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃত্বের বিষয় স্পষ্ট হয়।
ইসলামী রাষ্ট্র
মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র আল-কুরআনের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও
যাত্রা শুরু করে। নিরাপত্তা, শান্তি, আইনের চোখে সমতা, নাগরিক সমঅধিকার, নাগরিকদের
ঐক্যের বন্ধন ও রাষ্ট্রীয় সংহতি, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার,
সহনশীলতা, অমুসলিমদের বৈষয়িক ও অন্যান্য স্বার্থ সংরক্ষণ ইত্যাদির লিখিত স্বীকৃতি ও
সার্থক বাস্তবায়নের মাধ্যমে মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ
ইসলামী রাষ্ট্র ছিল এক সুসংগঠিত ভ‚খন্ড ও ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টিসহ একটি দায়িত্বশীল সুদৃঢ়
সরকারের অধীনে এক সার্বভৌম কর্তৃত্ব-নির্ভর আদর্শ রাষ্ট্র। গোত্র বিভাজনে জর্জরিত ও
রক্তারক্তিতে বিপর্যস্ত, অনাচার-অবিচার-অনৈতিকতায় নিমজ্জমান এক আইয়ামে জাহিলিয়াত
থেকে বহুধাবিভক্ত মানবগোষ্ঠীকে মুক্ত করে এক সভ্য ও সুশৃংখল আল্লাহ্ বিশ্বাসী ইসলামী
জনমন্ডলীতে রূপান্তরকরণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিতরকার কেন্দ্রীয়
সত্য।
মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র ও আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব
আজকের যুগের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ব্যক্তিক-রাজতান্ত্রিক বহিপ্রকাশ কিংবা গণতান্ত্রিক দর্শনের
জনগণের সার্বভৌমত্বের কোনো তত্ত¡ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের সঙ্গে
সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। মৌলিক ভিন্নতা ও পার্থক্য নির্দেশ করে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের
সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র মালিক হিসেবে আল কুরআনের শর্ত অনুযায়ী স্বীকার করা হয়েছিল
স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনকে।
আল কুরআনের সূরা আলি ইমরানের ২৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে বলা
হয়েছে ঃ ‘বল, হে আল্লাহ্, সকল মুল্কের মালিক। তুমি যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্র দান কর, আর যার
কাছ থেকে ইচ্ছা রাষ্ট্র ক্ষমতা কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা সম্মানিত কর, আর যাকে ইচ্ছা
অপমানিত কর। সকল কল্যাণ তোমারই ইখতিয়ারধীন। তুমিই সকল কিছুর উপর
সর্বক্ষমতাবান’।
সূরা আল আনআম-এর ১৮ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র
ক্ষমতার অধিকারী’। সূরা আর রাদ-এর ৩১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘বরং সমস্ত ক্ষমতাইখতিয়ার তো আল্লাহ্রই হাতে রয়েছে’। সূরা আল আরাফ-এর ৫৪ নাম্বার আয়াতে বলা
হয়েছে ঃ ‘সাবধান, সৃষ্টি তাঁরই এবং সার্বভৌম ক্ষমতাও তাঁর’। সূরা আত্ তীন-এর ৮ নাম্বার
আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘আল্লাহ্ কি সব শাসনকর্তার বড় শাসনকর্তা নন?’। সূরা আল ইউসুফের
৪০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘বস্তুতঃ সার্বভৌমত্বের কর্তৃত্ব আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো নেই’।
সূরা আশ্ শূরা-র ৪৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব
আল্লাহরই’। সূরা বণী ইসরাঈলের ১১১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘তাঁর সার্বভৌমত্বের
কোনো অংশীদার নেই’। সূরা আল আন‘আমের ৫৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘হুকুম তো
আল্লাহ তা’আলারই’। সূরা আল কাহ্ফ-এর ২৬ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘তিনি নিজ
হুকুমে কাউকে শরীক করেন না’।
আল কুরআনে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বের স্পষ্টতম ঘোষণা মেনে নিয়ে মদীনায় নব প্রতিষ্ঠিত
ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের মালিকও ছিলেন আল্লাহ্। অর্থাৎ আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বই
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল ছিল। আইন ও বিধানের মালিকও
আল্লাহ্তা’আলা। সূরা বণী ইসরাঈলের ৬৫ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ঃ ‘হে নবী, আমার
বান্দার উপর তোমার কোনো আধিপাত্য নেই, তোমার প্রতিপালকের আধিপত্যই যথেষ্ট’।
আল্লাহ্র প্রতিনিধি
মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রে কুরআনের এ ঘোষণা স্বীকার করে নিয়ে কুরআনেরই ঘোষণা অনুযায়ী
‘খিলাফতুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ্র প্রতিনিধি হিসেবে নবী করীম (সাঃ) মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের
সরকার প্রধান পদে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা ছোয়াদ-এর ২৬
নাম্বার আয়াত, সূরা আরাফের ৬৯ এবং ৭৪ নাম্বার আয়াত, সূরা ইউনুসের ১৪ নাম্বার আয়াত,
সূরা আনআমের ১৬৫ নাম্বার আয়াতসহ নানাস্থানে আল্লাহ জমীনে খলিফার মাধ্যমে শাসন
পরিচালনা তথা প্রতিনিধিত্বের কথা জানিয়েছেন। ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা তাই উত্তরাধিকার,
বংশীয় বা পারিবারিক সম্পত্তি কিংবা জবর দখলের বিষয় নয়। এটি আসমানী আমানত এবং
আল্লাহ্র খলিফা হিসেবে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও শাসন পরিচালনার গুরু দায়িত্বের স্মারক।
সরকার প্রধান হিসেবে সাফল্য
উপরোক্ত অর্থেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এর রাষ্ট্র ও সরকার
প্রধান হিসেবে যাবতীয় দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। কুরআনের তথা শরীয়ার
আইনের ব্যাখ্যা প্রদান ব্যবস্থা, দৈনন্দিন সরকারী প্রশাসন পরিচালনা, সরকারী কর্মচারীদের
নিয়োগ-বদলী-পদোন্নতি-নির্দেশনা সমাধা, উৎপাদন-অর্থনীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ, সুসংবদ্ধ
প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন ও পরিচালনা, চুক্তি স্বাক্ষর, পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ, দূত প্রেরণ,
সামাজিক শান্তি-শৃংখলা রক্ষা ও সম্পর্ক উন্নয়ন, বিচার বিভাগ পরিচালনা, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা,
দ্বীনী দাওয়াত, জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি যাবতীয় কার্য সমাধা করেছেন। মদীনায়
নির্মিত মসজিদ-উন-নববী ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সরকারের হেড কোয়ার্টার। এখানে যেমন
মুসলিমদের জামাত হতো, সালাত আদায় করা হতো, তেমনি এখান থেকে যাবতীয় সরকারী
হুকুম, কর্মব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রীয় ফরমান জারী, বিভিন্ন গোত্র প্রধান ও বিদেশী রাষ্ট্র প্রধানদের
পত্র প্রদান, বিদেশী দূতদের স্বাগত জানানো ইত্যাদি কাজও সমাধা করা হতো।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) জীবনের ১০টি বছর মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন দক্ষতার
সাথে। রাষ্ট্রে নিয়ম-কানুন ও ব্যবস্থাপনা তিনি এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন যে, তিনি যখন
যুদ্ধক্ষেত্রে নিজে নেতৃত্ব দিতে গেছেন তখন এবং এমন কি তাঁর ইন্তেকালের পরও খুলাফা-ইরাশিদীন তাঁর খলিফা হিসেবে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রকে যথাযথভাবে পরিচালনা করতে
পেরেছিলেন।
মদীনা সংবিধান নামে পরিচিত রাসূল করীম (সাঃ)-এর ‘কিতাব’ অনুসারে তিনি ইসলামী
রাষ্ট্রের আসমানী পরিচালক (ডিভাইন ডিরেক্টর) এবং সামরিক বাহিনীর প্রধান (সুপ্রীম
কমান্ডার) ছিলেন।
ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও সেনাবাহিনী
তৎকালীন পরিবেশে শত্রæ পরিবেষ্টিত পরিমন্ডলে মুহাম্মদ (সাঃ) মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের
অস্তিত্ব, নিরাপত্তা ও সংহতির জন্য স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাহিনী (স্ট্যান্ডিং আর্মি) গড়ে তুলেছিলেন।
তিনি এক দশকের মধ্যেই ইসলামী রাষ্ট্রের সামরিক সংগঠনকে এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন
যে, অতি উন্নত এক সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পেয়েছিল বিশ্ববাসী। সময়ের
প্রয়োজন ও সামরিক প্রতিরক্ষাগত রণকৌশল বিবেচনায় রেখে তিনি সামরিক কর্মকর্তা ও
কর্মচারীদের নিয়োগ দিতেন। সেনাবাহিনীর কাঠামোর মধ্যে ছিল ঃ সেনানায়কবৃন্দ(উমারা
আল-সারিয়া), সামরিক কর্মকর্তাগণ (উমারা আল মায়মানাহ, মায়সারাহ, মুকাদ্দামাহ ও
সাকাহ্), পতাকাবাহী (সাহিব আল লিওয়া ওয়া’আর-রায়াহ), স্কাউট (তালিআহ্), গুপ্তচর
(উয়ূন), পথ প্রদর্শক(দালীল) যুদ্ধলব্ধ ধনসম্পদ ও যুদ্ধবন্দীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা(আসহাবু’ল মাগানিম ওয়া’ল আসারা), যুদ্ধাস্ত ও যুদ্ধাশ্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(আসহাবু’স সিলাহ ওয়া’ল ফারাস) এবং দেহরক্ষীগণ(আসহাবু’ল হারাস)।
মহানবী (সাঃ) তাঁর যুদ্ধকালে সেনা পরিচালনায় অনেক সময় “আল খামিস” পদ্ধতি অনুসরণ
করে সেনাবাহিনীকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো ছিল কাল্ব(কেন্দ্র),
মায়মানাহ(দক্ষিণবাহু), মায়সারাহ (বামবাহু), মুকাদ্দামাহ্ (অগ্রবর্তী বাহিনী) ও
সাকাহ্(পশ্চাদরক্ষী)। নবী করীম(সাঃ) তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনার জীবনে ৮০টি যুদ্ধ পরিচালনা
করেছেন। ‘গাজওয়াত’ বা বড় যুদ্ধ যাতে তিনি নিজে সেনাপতি হিসেবে অংশ নিয়েছেন এমন
যুদ্ধের সংখ্যা ২৭টি। এছাড়া অন্যগুলি ছিল ‘সারায়া’। সেগুলিতে তিনি সাহাবী ও সেনাধ্যক্ষদের
অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়ে(আমীর আল আসকার বা সেনাপতি নিযুক্ত করে)
পাঠিয়েছেন। তিনি কনভেশনাল ফ্রন্টাল ওয়ার, গেরিলা ওয়ার, সাইকোলজিক্যাল ওয়ার, সব
কৌশলই প্রয়োজন মত ব্যবহার করেছেন। ট্রেঞ্চ খোঁড়া, হিট এ্যান্ড রান - সব পদ্ধতিই ব্যবহার
করেছেন। ঈমানের বলে বলীয়ান সুশৃঙ্খল ইসলামী সেনাবাহিনীর বিন্যাস, পরিচালনা পদ্ধতি
ও রণকৌশল এমন উন্নতভাবে গৃহীত হতো যে, একের পর এক বিজয় মুসলমানরা
পেয়েছিলো। বদরের যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ শুরু হয়। এভাবে মক্কা
থেকে হিজরতের মাত্র ৮ বছরের মধ্যেই ফতে মক্কা বা মক্কা বিজয় সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া
পুরো আরব উপদ্বীপকে মুসলিম বাহিনী বিজয়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করে মদীনাকেন্দ্রিক ইসলামী
রাষ্ট্রের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। কুফর ও তাগুতের পরাজয় এবং তৌহিদের বিজয় সূচিত
হয়। নবী করীম (সাঃ) তাঁর সেনাবাহিনী দূরবর্তী অঞ্চলে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকা কালে ইসলামী রাষ্ট্র
ও এর রাজধানীর প্রতিরক্ষার জন্য ‘আল হারাস’ নামক নিয়মিত গ্যারিসন প্রস্তুত রাখতেন। এ
ছাড়া সেনা শৃঙ্খলার জন্য ছাউনি ও শিবির অধিনায়ক, নৈশ প্রহরা, সৈন্য গণনা, প্রশিক্ষণ,
জনবল বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ব্যবস্থা রেখেছিলেন। মদীনার ইসলামী সেনাবাহিনী ইনফেন্ট্রি
বা পদাতিক (মুশাত) ক্যাভেলরী বা অশ্বরোহী (আল-খায়ল), তীরন্দাজ (রুমাত), বর্মধারী
সৈন্য(আহলু’ল সিলাহ্) এবং সর্বশেষে সাপ্লাই কোর বা রসদবাহী (রিসসাহ) এসব ডিভিশনে
বিভক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় ছাড়া প্রদেশিক সামরিক সংক্রান্ত প্রশাসন প্রাদেশিক গভর্নরের অধীনে
‘বিলায়াত’ ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত করতেন নবী (সাঃ)। ইসলামী সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখায়
গোত্রীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেন রাসূল (সাঃ)। ইসলামী রাষ্ট্রের অস্ত্র ভান্ডারকে ক্রমাগত
যুদ্ধ বিজয়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করা হয়েছিল। সেগুলোর দায়িত্বে থাকতো নির্দিষ্ট সামরিক
কর্মকর্তাগণ। এছাড়া সামরিক অভিযানকালে দেহরক্ষী প্রথাও চালু করেছিলেন তিনি।
মদিনা ইসলামী রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রশাসন
মদিনার ইসলামী রাষ্ট্র নবী করীম (সাঃ)-এর আদর্শ পরিচালনায় দিন দিন প্রসার লাভ
করেছিল। এ ছাড়া সুশাসন বজায় রাখার জন্যও মদীনা রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রশাসনকে সুবিন্যস্ত
করা হয়েছিল বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। মদীনা রাষ্ট্রের মূল রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধান ছিলেন
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। ইসলামী রাষ্ট্রের সকল বিভাগ, অঞ্চল ও পর্যায়ে সুশাসন পরিচালনার
জন্য নবী করীম (সাঃ) স্বীয় ক্ষমতার ডেলিগেশন বা হস্তান্তর করেছিলেন। ইসলামী রাষ্ট্রের
বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থাপনার ভিতর কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক, বিভাগীয় ও স্থানীয় প্রশাসকগণ
ছিলেন। নবী করীম (সাঃ) নিজে ছিলেন এবং তাঁর প্রতিনিধিগণ (নায়িবীন)। এ ছাড়া ছিলেন
উপদেষ্টা (মুশীর), সচিব (কাতিব), দূত (রুসুল), কমিশনার বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,
জেলা প্রশাসক (আমীল), কবি (শুয়ারা) ও বক্তা (খুতাবা) এবং আরো বিভিন্ন পর্যায়ে
কর্মকর্তাবৃন্দ। অন্যদিকে প্রদেশিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন প্রাদেশিক গভর্নর
(ওয়ালী), স্থানীয় প্রশাসকগণ (রউসা,) গোত্র গোষ্ঠী জনগণের স্থানীয় প্রতিবিধিবৃন্দ (নকীব),
বিচারকগণ (কাযী), রাজার কর্মকর্তা (সাহিবুল সুক‘ বা আল-আন সূক। এরা নির্দিষ্ট নিয়মে
সুনির্দিষ্ট শর্তে মোটামুটি স্থায়ীভাবে নিয়োজিত হতেন। এরা দায়ী থাকতেন স্বীয় উপরস্থ
কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাছে। জনগণের কাছেও তাদেরকে জবাবদিহি করতে হতো।
এরা জনগণ ও এলাকার সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করতেন। ইসলামী
রাষ্ট্রে বিভিন্ন পর্যায়ে কোষাধ্যক্ষও নিয়োজিত থাকতেন। রাষ্ট্রের দৌত্যকর্ম করার জন্য সিফারাহ
নামক পুরোনো প্রতিষ্ঠানটিকে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র যুগেই রিসালাহ(দূতাবাস) নামে ও
ভ‚মিকায় পরিবর্তিত করা হয়। ইসলামের আহŸান, সন্ধি, চুক্তি, নিরাপত্তা, সংবাদ প্রেরণ,
প্রচারসহ নানা কাজ করতো দূতাবাসগুলো। ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো এবং মদীনার
ইসলামী রাষ্ট্রের ন্যায্য অবস্থানের পক্ষে তৎপরতা চালানোই ছিল তাদের মূল দায়িত্ব।
মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রে রাসূল (সাঃ) তাঁর প্রশাসনে আরো কিছু বেসামরিক কর্মকর্তা/কর্মচারী
নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরা হলো ঃ আযিন (আহবানকারী), বাউয়াব (দ্বার রক্ষী) এবং হাসিব
(ফটক রক্ষী)।
বিচার বিভাগ
মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রে কা‘যার বা বিচার বিভাগকে অত্যন্ত উন্নতমানের করে গড়ে তোলা
হয়েছিল। নবী করীম (সা:) নিজে ছিলেন প্রধান বিচারক। এ ছাড়া কুযাত বা বিচারকমন্ডলী
নিয়োজিত ছিলেন রাষ্ট্রের সর্বত্র। তারা তাঁদের সৎচরিত্র, ইসলামী শরীয়া এবং হুদুদ বা দন্ডবিধি
সম্পর্কে প্রগাঢ় জ্ঞান, উন্নত গুণাবলী, বিচার নৈপুণ্যের জন্যই বিচারক পদে অধিষ্ঠিত হতেন
বা থাকতেন। আল্লাহ্র দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট আল কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী সমাজে-রাষ্ট্রে ইনসাফ
বা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক বা বিচারালয়কে উপযুক্তরূপে গড়ে তোলা হয়েছিল।
বাজার প্রশাসন
মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রে রাসূল (সা:) বাজার প্রশাসনকে যথাযথভাবে গড়ে তুলেছিলেন।
বাজারের হাল-চাল পরিদর্শন, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, গুদামজাতকরণ ও মুনাফাখোরী
নিষিদ্ধকরণ, অসাধু বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক তৎপরতা বন্ধ তরা, সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ওজন
নিশ্চিতকরণ ও ভেজাল প্রতিরোধ ইত্যাদির তদারকী ছিল বাজার প্রশাসনের কাজ। মদীনার
ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থতৈক কাঠামোর মূল অবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কৃষিকাজ, খেজুর ও অন্যান্য
ফল-ফসল উৎপাদন, পশুচারণ ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধতা ছিল। রাজার, মেলা, আমদানীরপ্তানী এসব চলতো নিয়মিত। রাসূল (সা:)-এর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় সুদখোরী,
গুদামজাতকরণ ও কালোবাজারী, শ্রমজীবী ও দরিদ্রদের শোষণ ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়।
জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ হতে থাকে। যাকাত, সাদকাহ্ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সাহায্যের
মাধ্যমে সম্পদের পুনর্বন্টন ও সুসমবন্টন সম্পন্ন হয়।
ইসলামী রাষ্ট্রের আয়ের উৎসহ
মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের আয়ের উৎসহ ছিল : যাকাত, সাদকাহ্ বা দান, মালে গণীমত বা
যুদ্ধলব্দ নগদ অর্থ ও দ্রব্য সামগ্রী, যুদ্ধলব্ধ ভ‚সম্পত্তি, জিযয়া কর, খারাজ বা ভ‚মি রাজস্ব,
রাষ্ট্রীয় বূ-সম্পত্তি বা আল-ফাই (স্টট ল্যান্ডস বা ক্রাউন ল্যান্ডস)। উম্মালাউস সাদাকাত বা
কর সংগ্রাহকগণ সারা দেশে নিযুক্ত থাকতেন কর আদায়ের জন্য। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সকল
করা সংগ্রাহকগণই নিয়োগপত্র পেতেন। এতে তাদের নিজেদের জন্য এবং জনগণের সরকারী
নির্দেশও লেখা থাকতো। এ ভাবে উভয় পক্ষই দায়িত্বশীল হতেন। সাদকাহ্ সংগ্রহের বিষয়টি
লিপিবদ্ধ করার জন্য কাতিববর্গ নিযুক্ত ছিলেন। কর প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য খারাস
এবং খারিস অর্থাৎ কর নির্ধারণ ও কর নির্ধারকের ব্যবস্থা ছিল। কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তার মধ্যে
ইসলামী রাষ্ট্রের চারণভ‚মি(হিমা) দেখাশোনা ও পাহারার জন্য সাহিবুল হিমা (চারণভ‚মির
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নিয়োজিত থাকতেন। এ ছাড়া স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বায়তুল মাল বা বা রাষ্ট্রীয়
কোষাগারের অঙ্কুর সৃজিত হয় মদীনার রাষ্ট্রে। খুলাফা-ই-রাশিদীনের সময় এটা খুবই সংঘঠিত
রূপ পায়।
শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ও ধর্মীয় সংগঠন
আল-কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াতই হচ্ছে সূরা আল আলাকের ‘ইকরা’ শব্দটি। সমগ্র
কুরআনে শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জ্ঞানী, অনুসন্ধানী, গবেষক,
ইল্ম চর্চাকরী ও আলীমকে খুবই মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। নবী করীম (সা:) অনেক হাদীসে
শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনকে উচ্চতর মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি সকল মুসলিম নগরীর জন্য জ্ঞানার্জন
ফরজ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বত্র শিক্ষাদানের জন্য মসজিদকে
শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া দ্বীন ইসলাম প্রচার বা দাওয়াতের জন্য
মুবাল্লিগ (প্রচারক) এবং মুকরী বা মুয়াল্লিম (শিক্ষক) নিয়োগ করে চারদিকে পাঠানো হতো।
জ্ঞান বিতরণ ও ইসলামের শিক্ষা বিতরণের জন্য মুবাল্লিগ বা মুয়াল্লিমরা কাজ করতেন।
নওমুসলিমদের শিক্ষারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। দুরাঞ্চল থেকে আসতে না পারার কারণে
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে দ্বীনী শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
মুফতি ও ফতোয়া
মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রে কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় ও দ্বীন
জারী রাখার প্রয়োজনে ইসলামী জ্ঞান ও বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা, রায়, পরামর্শ দেয়ার উদ্দেশ্যে
মুফতিগণ বা ইসলামী আইনবেত্থা ও ফতোয়া প্রদানকারীগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে
তুলেছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা:)। এ ছাড়া মদীনায় রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত বহু সংখ্যাক মসজিদে সালাতে
ইমামতি করার জন্য, জামাত পরিচালানার জন্য, খুতবার জন্য ইমামগণ নিযুক্ত হতেন। আযান
ও ইকামমের জন্য থাকতেন মুয়াযযিনগণ। মুসলিম বর্ষপঞ্জীর শেষ মাসে ইসলামের চতুর্থ
রোকন বা স্তম্ভ তথা হজ্জ্ব পরিচালনার জন্য হজ্জ্ববিষয়ক সংগঠনা গড়ে তোলা হয়। হযরত
মুহাম্মদ (সা:) আমীরুল হজ্জ্ব নামক কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। কুরবানী সুষ্ঠ‚ভাবে
সম্পাদনের জন্যও আরেকজন কর্মচারী নিযুক্ত করেছিলেন।
মূল্যায়ন
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায, নবী করীম (সা:) তাঁর জীবনকালে মদীনায় সর্ব অর্থে
একটি সমৃদ্ধ ইসলামী আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিলেন এবং আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে তিনি
ছিলেন সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান, সেনা প্রধান, প্রধান বিচারক ও প্রধান দ্বীন প্রচারক ও শিক্ষক।
এ রাষ্ট্রে কুরআন বিঘোষিত নীতি অনুযায়ী সালাত কায়েম, যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি পরিচালনা,
ন্যায়ের (মারুফ) প্রতিষ্ঠা আর অন্যায়ের (মুনকার) প্রতিরোধসহ জনগণের ইহকাল ও
পরকারের কল্যাণার্থে, নিরাপত্তা-শান্তি-স্বস্তি-সুখের জন্য এক ন্যায়যুগ শরায়ী আইনী ও সরকারী
কাঠামোকে দৃঢ় ভিত্তি দান করা হয়েছিল। ফলে খুনোখুনি, দাস ব্যবস্থা, লুটতরাজ, হানাহানি,
জ্বিনা বা ব্যভিচার, মদ্যপান, সুদ, ঘুষ, জুয়া, মুর্তিপূজা, নারীর অবমাননা, শিশু হত্যা,
বয়স্কের লাঞ্চনা, এতিমের দূরবস্থা, দরিদ্রের বঞ্চনা, বংশ কৌলিন্যের বড়াই ইত্যাদি যাবতীয়
অনাচারের অপনোদন ও অপসারণ হয়। রাসূল করীম (সা:) কেবল ইসলাম প্রচারই করেন
নি।
তিনি খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে মদীনায় কুরআন ভিত্তিক ইতিহাসের প্রথম পূর্নাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র
কায়েম করেছিলেন। এখানে রাজানীতি ও ধর্ম তথা প্রকৃষ্ট অর্থে দ্বীন একসঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে
জড়িত ছিল। এটি কোন অবস্থাতেই ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল না। রাষ্ট্রশাসন আর মসজিদ একসঙ্গে
যুক্ত ছিল, যেহেতু ইসলাম আদ দ্বীন। এটি কমপ্লিট কোড অবলাইফ বা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
এটি মুকাম্মাাল নিযাম-ই-হায়াত। লক্ষণীয় যে, খ্রিস্টানদের মতো যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন বা
মৃত্যুদিনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বি সি/এ ডি-এর মতো ‘ক্রিশ্চিয়ান এরা’ তৈরির মতো গ্রহণ করা
হয় নি। ইসলামের হিজরী সন যখন মদীনায় হিযরত করে রাসূলুল্লাহ (সা:) দ্বীনী রাজনীতিক
চেতনায় আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বভিত্তিক মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একই ঐতিহাসিক মূহুর্তের
স্বাক্ষ্যবাহী। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র দ্বীন ও নৈতিকতার অবিচ্ছেদ্য সম্মিলনের অনুপম
বহি:প্রকাশ। এর ফলে মদীনায় আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে প্রকৃষ্টতম মনোথিইজম বা
তৌহিদী দ্বীন কায়েম হয়েছিল, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, দ্বীনের বিজয় নিশ্চত হয়েছিল,
ইনসাফ কায়েম হয়েছিল।
আর. এ. নিকোলসন তাঁর “এ লিটারারী অব দি এ্যারাবস” গ্রন্থে মদিনায় রাসূল করীম (সা:)
কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকেই মুসলিম রাষ্ট্রের সূচনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এইচ এ আর
গীব এবং এরিখ উলপেবের ভাষায়, মুহাম্মদ (সা:)-এর নামের সঙ্গে বিজড়িত ধর্মীয় বিপ্লবই
একটি রাষ্ট্র কাঠাামোর সূচনা সম্ভব করে। ভন শিগেলের মতে, মুসলিম শরীয়াই শতাব্দীর পর
শতাব্দী জুড়ে ইসলামী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংবিধান নির্মাণ করেছে। ভন
ক্রেমারের মূল্যায়ন হচ্ছে, মুহাম্মদ (সা:) কেবল নতুন ধর্মই প্রিতিষ্ঠিত করেন নি, বরং রাষ্ট্রও
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আদিল সালাহি তাঁর “মুহাম্মদ ম্যান এ্যান্ড দি প্রফেট” গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন নবী করীম (সা:)-
এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসাটাই ইতিহাসের প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টার দিগন্ত
উম্মোচন করে।
সারকথা
হযরত মুহাম্মদ (সা:) তাঁর কর্তৃক প্রণীত মদিনা সনদ-এর ভিত্তিতে মদিনায় একটি পূর্ণাঙ্গ
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রত্যাদিষ্ট আল কুরআন অনুযায়ী এই রাষ্ট্র গঠিত, বিকশিত
ও পরিচালিত হয়। মদীনা সনদের মাধ্যমে ইসলামী উম্মাহ গড়ে উঠে। আল্লাহর
সার্বভৌমত্ব ছিল মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্র আইনই ছিল এ
রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। হযরত মূহাম্মদ (সা:) খিলাফাতুল্লাহ বা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসবে
দশ বছর ধরে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তিনি ছিলেন এই রাষ্ট্রের এবং এর সরকারের
প্রধান। এই রাষ্ট্রে স্থায়ী সেনাবাহিনী, সুনির্দিষ্ঠ বেসামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, খামার
প্রশাসন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, শিক্ষা ও ধর্মীয় ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক সম্পর্কসহ
ব্যবস্থাপনার যাবতীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গঠন ও কার্যকর করা হয়েছিল। রাষ্ট্র, রাজনীতি,
সমাজের সঙ্গে দ্বীন ইসলামের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের ভিত্তিতে, ইসলামী শরীয়া মোতাবেক
এই ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালিত হত। রসুল (সা:) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মদীনার প্রথম পূর্ণাঙ্গ
রাষ্ট্রছিল আল কুরআন ভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্রের চিরায়ত মডেল। খোলাফায়ে রাশেদীন
থেকে শুরু করে ইবনে সিনা, ইবনে রুশ্দ, আল কিন্দি, আল গাজ্জালী (রা:) ইমাম আবু
হানিফা (রা:) সহ পরবর্তীকালের সকল ইসলামী চিন্তাবদি ও গবেষক রাসূল্লাহ (সা:) এর
মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এবং সেটাকেই আদর্শ হিসেবে
গ্রহণ করেছেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। কোন শতকে মদিনায় পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র কায়েম হয়েছিল?
ক) নবম শতকে; খ) সপ্তম শতকে;
গ) ষষ্ঠ শতকে; ঘ) অষ্টম শতকে।
২। হযরত মুহাম্মদ (সা:) মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন -
ক) ১০ বছর; খ) ১৫ বছর;
গ) ১২ বছর; ঘ) ৯ বছর।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। মদীনা সনদ কি?
২। ইসলামী রাষ্ট্রের স্বরূপ বিশ্লেষণ করুন।
৩। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব বলতে কি বুঝেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচলনার ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর ভ‚মিকা আলোচনা
করুন।
সঠিক উত্তরমালা
১। খ, ২। ক
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র