ইব্ন রুশ্দ কি দার্শনিক প্লেটো দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন? খোলাফায়ে রাশেদীনকে ইবনে রুশ্দ কিভাবে চিত্রিত করেছেন?

আধুনিককালের জন্য সংরক্ষণ করেছেন এবং রেনেসাঁস-এর পটভ‚মি তৈরিতে সাহায্য
করেছেন, তা জানতে পারবেন।
ভ‚মিকা ঃ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন
ইব্ন রুশ্দ-এর পুরো নাম আবুল ওয়ালীদ মুহাম্মদ ইব্ন আহমাদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন রুশ্দ।
তিনি ‘‘আরাস্তু’’ (এ্যারিস্টটল) এর ভাষ্যকার। মধ্যযুগের পাশ্চাত্য জগতে আবৎৎড়বং
(আভারুজ) নামে পরিচিত। ইব্ন রুশ্দ ছিলেন কুরআন সম্পর্কিত নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ
এবং অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম প্রকৃতিবিজ্ঞানী। তিনি একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী,
জীববিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, ধর্মতত্ত¡বিদ ও দার্শনিক। ইব্ন রুশ্দ কর্ডোভাতে জন্মগ্রহণ করেন
৫২০ হিজরী সনে এবং ১১২৬ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ৫৯৫ হিজরী সনে এবং ১১৯৮
খ্রিষ্টাব্দে।
স্পেনের এক নামকরা পরিবারে ইব্ন রুশ্দের জন্ম। তাঁর পিতামহ ছিলেন বিখ্যাত মালিকী
ফকীহ আইনবিশারদ। কর্ডোভার দুনিয়াখ্যাত প্রধান মসজিদেরও ইমাম ছিলেন তিনি। ইব্ন
রুশ্দের পিতাও একজন ফকীহ্ এবং কাজী ছিলেন। আল মুরাবীদ ও আল মোহাদ সুলতানদের
রাজত্বকালে ইব্ন রুশ্দের দাদা ও বাবা যথাক্রমে ইমাম ও কাজীর পদে আসীন হন। এ ভাবে
সরকারী প্রশাসনের সঙ্গে তাদের উভয়ের একটা সক্রিয় যোগাযোগ ছিল। কর্ডোভা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইব্ন রুশ্দ কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন,
তর্কশাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র ইত্যাদিতে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
প্লেটো ও এ্যারিস্টটলের পূর্ণাঙ্গ রচনার ভাষ্য
আল মোহাদ খলিফা আবু ইয়াকুব ইউসুফ এবং তার সন্তান আবু ইউসুফ ইয়াকুব আল মনসুরের
আমলে ইব্ন রুশ্দ রাজ পরিবারের চিকিৎসকরূপে নিয়োজিত থাকেন। আল মোহাদ
খলিফাগণ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হওয়ায় ইব্ন রুশ্দের চিকিৎসাজ্ঞান, ফিকাহ ও দর্শনে তার
পারদর্শিতা খলিফাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুলতান ইয়াকুব ইউসুফের নির্দেশে ইব্ন রুশ্দ
প্লেটোর ‘‘রিপাবলিক’’ ও এ্যারিস্টটলের ‘‘নিকোমেকিয়ান এথিকস’’ এর পূর্ণাঙ্গ ভাষ্য রচনা
করেন। ইব্ন রুশ্দ ১১৬৯ খ্রীষ্টাব্দে সেভিলের এবং ১১৭১ খ্রীস্টাব্দে কর্ডোভার কাজীর পদ
লাভ করেন। তিনি স্পেনের আন্দালুসিয়ার কাযী-উল-কুযযাতের পদে নিযুক্ত হন ১১৮২
খ্রীষ্টাব্দে।
রুশ্দের রচনাবলী
ইব্ন রুশ্দের রচনাবলীর কালানুক্রমিক হিসাব তৈরী করেছেন এম. আলোনসো। তিনি মোট
কত সংখ্যক গ্রন্থ লিখেছেন তা খুব নিশ্চিতভাবে বোঝার উপায় নেই। প্রফেসর ই. রেনাঁ এবং
প্রফেসর জর্জ সারটন জানিয়েছেন যে, ইব্ন রুশ্দের গ্রন্থের সংখ্যা ৬৭। প্রফেসর ব্রকেলম্যান
৩৯টি এবং ইব্ন আবী উসায়বিয়া ৪৭টি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন। রেনাঁ ও সারটনের মতে
ইব্ন রুশ্দের গ্রন্থের মধ্যে দর্শন গ্রন্থ ২৮টি, চিকিৎসাবিজ্ঞান ২০টি, আইন ও ফিকাহ গ্রন্থ ৮টি, ধর্মবিষয়ক ৫টি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ৪টি, ব্যাকরণ ২টি, পদার্থবিদ্যা ২টি এবং প্রাণীবিদ্যা
সম্পর্কেও বই রয়েছে।
ইব্ন রুশ্দের গ্রন্থসমূহের মধ্যে প্লেটোর ‘‘রিপাবলিক’’ ও এ্যারিস্টটলের ‘‘নিকোমেকিয়ান
এথিকস’’-এর ভাষ্য, ‘‘কিতাবুল ফালসুফা’’, ‘‘ফাসল আল মাকাল’’ ‘‘কিতাবুল মুকাদ্দিমা ফিল
ফিকাহ’’ এবং ‘‘কিতাবুল কুল্লিয়াত ফিত-তিব্ব’’ অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে ইব্ন রুশ্দ
যে ২০টি গ্রন্থ রচনা করেন, তার মধ্যে ‘‘কিতাবুল কুল্লিয়াত ফিত-তিব্ব’’ অন্যতম। যদিও এটা
ইব্ন সিনার ‘‘কানুন’’ অপেক্ষা নি®প্রভ, তথাপি ১১৬২ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে লিখিত ৭ খন্ডের এই
গ্রন্থে নিæোক্ত বিষয়ের বিশদ সমাবেশ ঘটেছে। (১) শরীরবিদ্যা (এনাটমি), (২) শরীরবৃত্ত
(ফিজিওলজি), (৩) সাধারণ রোগবিদ্যা (জেনারেল প্যাথলজি), (৪) নিদান রোগ নির্ণয়
(ডায়াগনসিস), (৫) ভেষজ বিজ্ঞান (মেটিরিয়া মেডিকা), (৬) স্বাস্থ্যবিদ্যা (হাইজিন) এবং
ভৈষজ (থেরাপেটিকস)।
ইব্ন রুশ্দ-এর চিন্তার বৈচিত্র্য
ইব্ন রুশ্দ আল ফারাবীর যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক মতবাদে আগ্রহী ছিলেন। প্লেটোর ‘‘রিপাবলিক’’
গ্রন্থের ভাষ্য রচনাকালে ফারাবীর নৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
তবে রুশ্দ প্রধানত: ইব্ন বাজ্জার চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন এবং তাঁর রিসালাতে প্রজ্ঞার
সঙ্গে মিলনের বিষয়ে এবং একাকীত্বের শাসন (রিজিম অব সলিডারিটি) সম্বন্ধে তাঁর রচিত
গ্রন্থের ভাষ্য রচনা করেছিলেন।
ইব্ন রুশ্দ কুরআনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ্র অস্তিত্ব, হুকুম,
গুণাবলী, কার্যাবলী, বিশ্বসৃষ্টি, নবী প্রেরণ, তক্দীর, সুবিচার-অবিচার, ভবিষ্যৎ জীবন,
আখিরাত ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সুফীবাদের বিরোধিতা করা, সৃষ্টি অনন্ত বলে
ধারণা দেয়া, আল্লাহকে বিশ্বজগতের অংশ মনে করা ইত্যাদিসহ ইসলামী ধারণা বিষয়ে
নানাবিধ বিতর্কিত মত দেয়ায় ইব্ন রুশ্দ সম্পর্কে মুসলিম বিশ্বে সেকালে এবং পরবর্তীতেও
নানা ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। গ্রীসীয় প্লেটো-এ্যারিস্টটলীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হবার
কারণে ইব্ন রুশ্দের চিন্তায় ইসলামী ব্যাখ্যা ও মানবিক সীমাবদ্ধতার দর্শনের মধ্যে সমন্বয়
করতে গিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি হয়। এ ছাড়া রুশ্দের মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তিবাদের
ব্যাখ্যাকে মহিমা দিতে পাশ্চাত্যেও তাকে ইসলাম বিরুদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষ দার্শনিক বানিয়ে ফেলা
হয়। ফলে একদিকে মুসলিম বিশ্বে আলীমদের দ্বারা তাঁর সমালোচনা হয় তীব্রভাবে, অন্যদিকে
গোঁড়া খ্রীষ্টানরাও তাঁকে বিভ্রান্ত বলে ঘোষণা দেন।
এ ভাবে ইব্ন রুশ্দের নামে ‘সত্যের দ্বৈত তত্ত¡’ অর্থ্যাৎ ‘প্রত্যাদেশের সত্য’ এবং ‘দর্শনের
সত্য’ - এমন ধারণা প্রচলিত হয়ে যায়। ইব্ন রুশ্দ গ্রীক দর্শনের প্রভাবে এর সঙ্গে ইসলামের
ধারণাকে সমন্বয় করতে যাওয়াতেই ভ্রান্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে দ্বৈত সত্যের ধারণা তৈরি হয়।
মুসলিম আলীমগণ ইব্ন রুশ্দকে ভুল বুঝেছিলেন খুব সম্ভবত: তাঁর আল গাজ্জালীর বিরোধিতা
করায় এবং তাঁর দার্শনিক যুক্তির সঙ্গে শরীয়ার বিরোধ রয়েছে মনে করে। ওদিকে গোঁড়া
খ্রীষ্টান যাজকরা তাঁকে ধর্মীয় ব্যাখ্যা থেকে নয়, বরং সাম্প্রদায়িক ধর্মবিদ্বেষ থেকেই
বিকৃতভাবে তুলে ধরেছিলেন। সে সময় প্যারিসের চার্চ ইব্ন রুশ্দের প্রচারিত সূত্রসমূহ থেকে
২১৯টি সূত্রকে ধর্মবিরুদ্ধ প্রতিপন্ন করে বাতিল বলে ঘোষণা দেয়। এতদসত্তে¡ও এ্যারিস্টটলের
দর্শনের উপর ইব্ন রুশ্দের ভাষ্যসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে বাধ্যতামূলকভাবে থেকে
যায়। ‘এভেরোয়িজম’ ইতালীর উত্তরাঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শক্ত ভিত্তি গেড়ে বসে। এ
ছাড়া পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইব্ন রুশ্দের ব্যাখ্যাসম্বলিত এরিস্টটলীয় দর্শন জ্ঞানার্জনের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়। ভ্রান্ত ধারণার নিরসন
পরবর্তীকালে অবশ্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় জগতে বিশেষজ্ঞগণ তাঁদের ধারণা পাল্টে
ফেলেন। ইব্ন রুশ্দ সম্পর্কে দ্বৈত সত্যের ধারণা পরিত্যক্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা এই স্বীকৃতি
সর্বত্রই দেন যে, ইব্ন রুশ্দ আসলে এক আর অভিন্ন সত্যের ধারণাই তুলে ধরেছেন। এটাকে
‘শরীয়ার সত্য’ বলা যায়। আল গাজ্জালীর বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘তাহাফুত আল তাহাফুত’’
গ্রন্থে ইব্ন রুশ্দ আল্লাহ্ প্রেরিত ‘ওয়াহি’ বা প্রত্যাদেশ এবং রিসালতকে অস্বীকার করেন নি।
আবার এ দু’টিকে তিনি ‘দর্শনের সত্য’ -এর কাতারেও নামিয়ে আনেন নি। উল্টো ইব্ন
রুশ্দের বক্তব্য হচ্ছে শরীয়ার বিধানই আদর্শ রাষ্ট্রের সংবিধানের জন্য সর্বমৌলিক ও চ‚ড়ান্ত।
গাজ্জালীর সঙ্গে রুশ্দ আলাদা হচ্ছেন এখানেই যে, গাজ্জালী দর্শনের ভিতর শরীয়ার বিধানের
অস্বীকৃতি আর বিরোধিতার সন্ধান পান। ওদিকে রুশ্দ দর্শনে শরীয়ার জন্য প্রশ্নহীন সমর্থন
লক্ষ্য করেন।
ইব্ন রুশ্দ এ ভাবে মুসলিম বিশ্বে তাঁর পূর্বসুরী চিন্তাবিদ ইব্ন সিনার এবং ইউরোপে তাঁর
উত্তরসুরী সেইন্ট থমাস এ্যাকুইনাসের সঙ্গে স্বীয় চিন্তার সঙ্গতি বিধান করেন। ওই দু’জনের
মতো তিনিও ধর্ম বিশ্বাস ও দর্শনের সমন্বয় সাধনের পথে এগোন। ইব্ন রুশ্দ বস্তুত: দর্শনের
প্রত্যেক ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে গ্রীক কাঠামোর উপর ইসলামী প্রত্যাদেশের মুকুট পরিধান করান।
ডবি- উ. মন্টোগোমারী ওয়াট ‘‘ইসলামিক সার্ভে’’-তে এজন্যেই মত দেন যে, ইব্ন রুশ্দের
জীবন ও চিন্তার গভীরে এই একই ধারণা পরিব্যাপ্ত ছিল যে, দর্শন ও প্রত্যাদেশ উভয়ই সত্য।
যাহোক, আলীমদের বিরূপ সমালোচনার মুখে খলীফা আল মনসুর ইব্ন রুশ্দকে নির্বাসন
দিলেও পরবর্তীকালে আবার তাঁকে রাজ দরবারে ফিরিয়ে এনে কাজীর পদে অধিষ্ঠিত করেন।
প্রত্যাদিষ্ট শরীয়া আইনের প্রাধান্য
ইব্ন রুশ্দের চিন্তা-দর্শনের একটা মূল্যায়ন করেছেন আরউইন রোজেনথাল তাঁর “পলিটিক্যাল
থট ইন মিডিয়াভাল ইসলাম” গ্রন্থে। তাঁর মতে, আদর্শ প্রত্যাদিষ্ট আইনরূপে শরীয়ার প্রাধান্য
এবং আদর্শ রাষ্ট্রের আদর্শ সংবিধানরূপে শরীয়ার রাজনৈতিক ভ‚মিকার স্বীকৃতি প্রদানে আল
ফারাবী অপেক্ষা কোনোক্রমেই কম সচেতন ছিলেন না ইব্ন রুশ্দ। ইব্ন রুশ্দের দ্ব্যর্থহীন
সূত্র ও স্পষ্ট বক্তব্যের ভিতর দিয়ে এমন সচেতনতারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে। এতে করে এটাও
সন্দেহাতীতভাবে বোঝা গেছে যে, ইসলাম ধর্মীয় দার্শনিকরূপে তাঁর গুরুত্ব ইব্ন সিনার চেয়ে
কম নয় মোটেও।
ইব্ন রুশ্দও প্রত্যাদেশ ও দর্শনের মধ্যেকার সম্পর্ক আলোচনাকালে প্রত্যাদিষ্ট আইনকে
সর্বদাই বেশি মূল্য দিয়েছেন। তিনি এটি সুস্পষ্টভাবেই অবগত ছিলেন যে, ওয়াহী বা
প্রত্যাদেশের উৎস হচ্ছে আল্লাহ্র অসীম ও অভ্রান্ত প্রজ্ঞা। আর অন্যদিকে সৃষ্ট মানবের অসীম
ও ভ্রান্ত যুক্তিই দর্শনের উৎস। রুশ্দ এটাও বুঝতেন যে, প্রত্যাদেশ ঘটায় অখন্ড ও সামগ্রিক
সত্যের প্রকাশ। বিপরীতে দর্শনের সত্য খন্ডিত ও আংশিক। রুশ্দ আরো মনে করতেন যে,
‘কালামপন্থী’ ধর্মতাত্তি¡কদের বিতর্ক নয়, ডেমোনস্ট্রেটিভ আর্গুমেন্ট বা প্রতিপাদক যুক্তিই
প্রত্যাদেশের সঙ্গে দর্শনের সঙ্গতি বিধানের উপায়। এটি অবশ্য অস্বীকার করার জো নেই যে,
রুশ্দ সিনা, ফারাবী এদের চেয়েও গ্রীক দর্শন দ্বারা অধিক প্রভাবিত ছিলেন এবং সে কারণে
ইসলাম ও গ্রীক দর্শনের সমন্বয়ের চেষ্টায় অধিক প্রয়াসীও ছিলেন।
রুশ্দ-এর রাষ্ট্রচিন্তা
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসলামী আদর্শ রাষ্ট্রের সঙ্গতি বিধানের প্রশ্নটি রুশ্দের চিন্তায়
এসেছিল। রাষ্ট্রদর্শনে তিনি ‘কনসেপ্ট অফ প্রফেসী’ বা প্রত্যাদিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী তত্ত¡কে বিবেচনায়
আনেন। রুশ্দের মতে ভবিষ্যদ্বক্তা বা নবী-রাসুলদের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কে
জানতে পারে। কাজেই রিসালতই শরীয়া আইনের বাহক। নবী-রাসুলগণের নেতা, সর্বশেষ
ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং শেষ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনের বাহক হওয়ায় এবং তাঁর মাধ্যমে দ্বীন
ইসলামকে পূর্ণতা দেয়ায় ও আল্লাহ মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান হিসাবে ঘোষণা দেওয়ায়
হযরত মুহাম্মদ (সা:) আনীত বিধান সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য শরীয়া বিধান। এর
ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্রই কেবল আদর্শ রাষ্ট্রের চ‚ড়ান্ত মডেল হতে পারে। ইব্ন রুশদের চ‚ড়ান্ত মত
থেকে এটা একেবারেই স্বচ্ছ যে, গ্রীক দর্শনের মানবিক সসীমতায় গিয়ে ঢুকলেও তিনি আল
ফারাবী ও ইব্ন সিনার মতোই রাসূল করীম (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র এবং
খুলাফা-ই-রাশিদীন কর্তৃক অনুসৃত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই প্রকৃত আদর্শ রাষ্ট্ররূপে স্বীকার করে
নিয়েছেন।
প্লেটোর ‘‘রিপাবলিক’’ হচ্ছে গ্রীক দর্শন চিন্তার কাল্পনিক আদর্শ রাষ্ট্রীয় সংগঠনের ছবি। আর
রাসূল করীম (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং খুলাফা-ই-রাশিদীন কর্তৃক অনুসৃত শরীয়াভিত্তিক
রাষ্ট্র কাঠামো ইসলামী সভ্যতার আদর্শ রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক সংগঠনের প্রকৃষ্টতম বাস্তব নমুনা।
রুশ্দ-ও একথা বুঝতেন যে, প্লেটোর পলিটিয়া বা আদর্শ রাষ্ট্র এবং ইসলামের শরীয়াভিত্তিক
আদর্শ রাষ্ট্র মোটেও এক নয়। একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত প্রত্যাদেশ-নির্ভর শরীয়ার বিধানের উপর
‘খিলাফত’ বা ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি। বিপরীতে প্লেটোর “রিপাবলিক” ‘নোমোস’ বা মানবীয়
বিধানের উপর নির্ভরশীল। রুশ্দ বুঝেছিলেন যে, মানবীয় বিধান প্রত্যাদেশের স্থানে পৌঁছাতে
পারবে না কখনো। প্রত্যাদেশ মর্যাদার দিক থেকে উর্ধ্বে। তিনি এরিস্টটলের “নিকোমেকিয়ান
এথিকস”-এর যে ভাষ্য রচনা করেন, সেখানে এই সত্যের বিস্তার দেখা যায়। মূল্যায়ন
মধ্যযুগের খ্রিষ্টীয় চার্চের অচলায়তন, গীর্জা ও চার্চের দ্ব›েদ্বর সীমাহীন বিভ্রান্তি ও বিড়ম্বনার
মধ্যে মুসলিম চিন্তাবিদ আল কিন্দী, আল ফারাবী, ইব্ন সিনা, ইব্ন বাজ্জা - এসব পূর্বসুরীর
অনুসরণ করে ইব্ন রুশ্দ গ্রীক দর্শনকে বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে এনেছেন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
করে সংরক্ষণ করেছেন। না হলে গ্রীক দর্শন হারিয়ে যেতো চিরকালের মতো। ইউরোপীয়
রেনেসাঁস ও রিফর্মেশনের ভিত্তিই দাঁড়াতো না। আধুনিক ইউরোপ তথা পাশ্চাত্য জগত
অন্যান্য মুসলিম চিন্তাবিদদের পাশাপাশি ইব্ন রুশ্দের কাছেও ঋণী। কিন্তু এই ঋণ স্বীকার
করলেও আধুনিক পাশ্চাত্য রুশ্দের চিন্তার ভ্রান্ত ও বিকৃত ব্যাখ্যা করে এটাকে “এভেরুজবাদ”
আখ্যা দিয়ে সিকিউলার বা ধর্মনিরপেক্ষ বলে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছে। অথচ ইব্ন রুশ্দের
ব্যাখ্যায় ইসলামী শরীয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রই আদর্শ রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠতম মডেল এবং এমনকি
তাঁর নিজের পৃষ্ঠপোষক আল মনসুরের রাষ্ট্রকেও তিনি ‘স্টেট ইন এরার’ বা আদর্শবিচ্যুত রাষ্ট্র
বলে ঘোষণা দিতে বাদ রাখেন নি।
সারকথা
ইব্ন রুশ্দ মনে করেন যে, প্লেটোর “রিপাবলিক” হচ্ছে গ্রীক দর্শন চিন্তার কাল্পনিক
আদর্শ রাষ্ট্রীয় সংগঠনের ছবি। আর রাসূল করীম(সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং খুলাফা-ইরাশিদীন কর্তৃক অনুসৃত শরীয়াভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো ইসলামী সভ্যতার আদর্শ রাষ্ট্রীয়
রাজনৈতিক সংগঠনের প্রকৃষ্টতম নমুনা। রুশ্দ একথাও বুঝতেন যে, প্লেটোর পলিটিয়া
বা আদর্শ রাষ্ট্র এবং ইসলামের শরীয়াভিত্তিক আদর্শ রাষ্ট্র মোটেও এক নয়। একমাত্র
আল্লাহ্ প্রদত্ত প্রত্যাদেশ-নির্ভর শরীয়ার বিধানের উপর ‘খিলাফত’ বা ‘ইসলামী রাষ্ট্রের
ভিত্তি। বিপরীতে প্লেটোর “রিপাবলিক” ‘নোমোস’ বা মানবীয় বিধানের উপর নির্ভরশীল।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। ইব্নে রুশ্দ জন্ম গ্রহণ করেন -
ক) ইরানে;
খ) ইরাকে;
গ) স্পেনে;
ঘ) বুখারায়।
২। ইবন রুশ্দ বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে?
ক) কর্ড্রােভা বিশ্ববিদ্যালয়;
খ) বিশ্ববিদ্যালয়ে;
গ) বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়;
ঘ) মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ইব্ন রুশ্দ কি দার্শনিক প্লেটো দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন?
২। খোলাফায়ে রাশেদীনকে ইবনে রুশ্দ কিভাবে চিত্রিত করেছেন?
রচণামূলক প্রশ্ন
১। ইব্ন রুশদ-এর রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।
সঠিক উত্তর : ১। গ, ২। ক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]