ইমাম গাযালীকে হজ্জাতুল ইসলাম বলা হয় কেন? গাযালী কিভাবে খ্যাতির শীর্ষে আরহণ করেন?

আবুহামিদ মুহম্মদ ইবনে আল গায্যালী (রহ:) ১০৫৮ খ্রিষ্টাব্দে খোরাসানের অন্তর্গত তুষ
নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের এক সংকট কালে চিন্তাবিদ গাযালীর আবির্ভাব ঘটে।
তিনি ইসলাম পরিপন্থী সকল প্রকার অপশক্তি থেকে ইসলামকে মুক্ত করতে সচেষ্ট হন। অল্প
বয়সেই তিনি কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান আয়ত্বকরেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর
তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য নিশাপুর গমন করেন। সেখানে তৎকালীন প্রখ্যাত আলেম ইমামুল
হারমাইনের তত্ত¡বধানে বিভিন্নবিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গায্যালী (রা:) তাঁর
সান্নিধ্যে থেকে অল্পদিনের মধ্যেই শ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ইমামুল হারমাইন
তাঁর ছাত্রের সুখ্যাতিতে নিজেকে গৌরবাম্বিত মনে করতেন।
বাগদাদের প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মূলক গাযালীরগুণে আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বাগদাদের বিখ্যাত
নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করেন। উক্তপদে তিনি মাত্র ৪ বছর বহাল
থেকে খ্যাতির শীর্ষেআরোহন করেন। ইমাম গাযালীরখ্যাতি শুধুমুসলিম বিশ্বেই সীমাবদ্ধ ছিল
না, তা ছিল বিশ্বব্যাপী। তাঁর মূল্যবান গ্রন্থগুলো পৃথিবীর বিভিন্নভাষায় অনুদিত হয়েছে।
মৌলিক অবদানের জন্য গাযালী অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ বলে স্বীকৃত। বিষ্ময়কর প্রতিভার
অধিকারী ইমাম গাযালী ৮১ খানা গ্রন্থরচনা করেছেন। এর মধ্যে ‘এহ্ ইয়াউ উলুমুদ্দীন' অমর
গ্রন্থ। এ পুস্তক তাঁর জীবনের কঠোর সাধনালব্ধ চিন্তাধারার এক বাস্তব, সার্থক এবং সমুজ্জ্বল
নিদর্শন। বিশিষ্ট চিন্তাবিদ মইনুদ্দীন ইরাকী বলেন,‘ “ইমাম গাযালীর এহ্ ইয়াউ উলুমুদ্দীন
গ্রন্থখানা মুসলিম জাহানের সর্বশ্রেষ্ট রচনা।” তিনি সমস্তভ্রান্তও অসার বিষয়গুলো সংশোধন
করেছিলেন। অধ্যাপক ম্যাকজেনাল্ড এবং ডি বেয়ারের মতে গাযালী নি:সন্দেহে ইসলামের
শ্রেষ্ট চিন্তাবিদ। ইসলামী মূলতত্তে¡র ব্যাখ্যাকারী হিসেবে তাঁর নাম শীর্ষস্থানীয়।
ইমাম গাযালী (রহ:) ইসলামকে আল্লাহর কোরআন ও রাসুলের হাদিসের শিক্ষার ভিত্তিতে
পুন;প্রতিষ্ঠিত করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর অবিরাম সাধনা ও প্রশংসনীয় অবদানের জন্য তাঁকে
হজ্জাতুল ইসলাম বা ইসলামের রক্ষক বলা হয়। তিনি দর্শনের উপর ধর্মের প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত
করেন। তারঁ মতে ইন্দ্রিয়ানুভ‚তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করা যায় না। তিনি
উল্লেখ করেন যে, মানুষের হৃদয়ে এমন একটি শক্তি আছে যার মাধ্যমে সে সত্যের জ্ঞান লাভে
সমর্থহয়। তাঁর এ বক্তব্য বস্তুবাদী ও অভিজ্ঞানবাদী দর্শনের বিপরীতে আদর্শিক ও ভাববাদী
দর্শনের প্রতি এক জোড়ালো সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে। ইমাম গাযালী (রহ:) প্রকৃত সত্যের
সন্ধানে দশ বছর যাবৎ বিভিন্নস্থানে সফর করেন। তিনি মদিনায় এসে আধ্যাত্মিক সাধনায়
মগ্নহন। তাঁর মনে হল তিনি যা কিছুলিখেছেন এবং যা কিছুঅর্জন করেছেন তা তাঁর জন্য
যথেষ্ট নয়। তাঁর মতে গভীর তন্ময় অবস্থায় হৃদয়ের অনুভ‚তির মাধ্যমেই পরম সত্তার জ্ঞান
লাভ করা যায়। জীবনের শেষ দিকে ইমাম গাযালী (রহ:) উজীরে আযম ফকরুল আলমের
অনুরোধে ১১০৫ খ্রিষ্টাব্দে নিশাপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অবশেষে তিনি
জন্মস্থান তুষ নগরে ফিরে আসেন। তিনি অধ্যাত্মিক সাধনা ও দীক্ষাদানে আত্মনিয়োগ করেন।
খ্যাতনামা সুফিসাধক, দার্শনিক ইমাম গাযালী (রা:) ১১১১ খ্রি: ইন্তেকাল করেন। রাষ্ট্রদর্শন
শাসকের যোগ্য শাসনে সমাজ হবে উন্নত ও সুন্দর
ইমাম গাযালী রাষ্ট্রের উৎপত্তি, প্রকৃতি, রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও শাসকের গুণাবলী সম্পর্কিত
তাৎপর্যপূর্ণআলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত রাষ্ট্রীয় দর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণঅধ্যায় হিসেবে
বিবোচিত হয়ে আসছে। তিনি গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটলকে অনুসরণ করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি
সম্পর্কেমতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, মানুষের পারস্পরিক স্বত:র্স্ফ‚ত
সাহায্য ও সহযোগিতার উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। তাঁর মতে ধর্ম, রাষ্ট্রও সমাজ
এক অবিচ্ছেদ্য সূত্রে আবদ্ধ। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও জীবনের নিরাপত্তা বজায় রাখতে রাষ্ট্রের
জন্ম হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটলের ন্যায় গাযালী উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে
সাধারণ জীবন যাপনের জন্য এবং উন্নত জীবন যাত্রার লক্ষ্যে তা বিদ্যামান আছে। তিনি
আরও বলেন যে, সুন্দর জীবন যাপনের জন্য সৃষ্টিকর্তার বিধি-বিধান বা নির্দেশ অনুযায়ী রাষ্ট্রের
শাসন পরিচালনা করা একান্তপ্রয়োজন। সমাজের শান্তিও অগ্রগতি অক্ষুন্নরাখার জন্য
সুশৃ´খল ও দক্ষ শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজন।
ইমাম গাযালী “তিবরুল মসবুক” গ্রন্থেশাসকের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,“শাসক
হবেন ধর্মপ্রাণ, জ্ঞানী, দূরদৃষ্টিসম্পন্নও সুবিচারক। তাঁর নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণ নিরাপত্তা লাভ
করবেন। তাঁর মতে শাসক হবেন একজন পরাক্রমশালী ব্যক্তি। শাসকের যোগ্য শাসনে সমাজ
হবে উন্নত ও সুন্দর।আদর্শশাসক পরম নিষ্ঠার সাথে স্রষ্টার নির্দেশ অনুসরণ করবেন এবং
প্রেরিত মহামানবের দৃষ্টান্তও নীতি অনুসারে শাসন কার্যাদি পরিচালনা করবেন। তিনি উল্লেখ
করেন যে, শাসকের ক্ষমতা কোন ক্রমেই সীমাহীন হবে না। তাঁর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হবে
আল্লাহর আইন ও শরিয়তের বিধান ও সমাজ জীবনের প্রচলিত মৌলিক নীতিমালা দ্বারা।
সুতরাং তিনি পার্থিব এবং অপার্থিব উভয় জগতকেই গুরুত্বদিয়েছেন।
তাঁর মতে, ন্যায়পরায়ন শাসক আল্লাহর প্রতিনিধিস্বরূপ। অন্যায়কারী শাসক শয়তানের
প্রতিনিধি। শাসন ব্যবস্থায় তিনি কোনরূপ স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় দেন নি। ইমাম গাযালী
ইকতিসাদ নামক গ্রন্থেবলেন যোগ্য শাসক না থাকলে রাষ্ট্রেবিশৃ´খলা দেখা দিবে। সমাজ
সীমাহীন দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে
ন্যায়নীতির সুষম প্রয়োগ অপরিহার্য। ইমাম গাযালী ইসলামের মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (স:)
কে একজন ন্যায়পরায়ন ও আদর্শমন্ডিত শাসক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি শাসকগোষ্ঠীকে
হযরত মুহাম্মদ (স:) এর আদর্শও নীতি অনুসরণ ও অনুকরণ করার কথা বলেন। তিনি রাষ্ট্রীয়
সত্তাকে মানব দেহের সাথে তুলনা করে বলেন যে, মানব দেহের বাদশাহ হচ্ছে বিবেক। এর
নিয়ন্ত্রণে থাকে শরীরের বিভিন্নঅঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বিভিন্নসমস্যার সৃষ্টি
হয়। অনুরূপভাবে রাষ্ট্রীয়শাসন ব্যবস্থার বিভিন্নবিভাগ শাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক্ষেত্রে
শাসকের যোগ্যতার অভাবে রাষ্ট্রেঅশান্তিও অস্থিরতা বিরাজ করে। তিনি মানুষের দুই প্রকৃতি
সম্পর্কেবলেন যে, এ প্রবণতা থেকে সমাজে অশান্তিও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাই
তিনি প্রয়োজন বোধে বল প্রয়োগ করে হলেও সমাজে শান্তিপ্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন।
সারকথা
ইমাম গাযালী (রহ:) ইসলামকে কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিকে পুণ: প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি দর্শনের উপর ধর্মের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেন। ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে
তাঁর নাম শীর্ষস্থানীয়। ইমাম গাযালী (রহ:) মতে গভীর তম্ময় অবস্থায় হৃদয়ের অনুভ‚তির
মাধ্যমে পরম সত্তার জ্ঞান লাভ করা যায়। তাঁর প্রশংসনীয় অবদানের জন্য তাঁকে হুজ্জাতুন ইসলাম বা ইসলামের রক্ষক বলা হয়। ইসলামী রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ। ধর্ম, রাষ্ট্র ও সমাজ এক অভিচ্ছেদ্য সূত্রে আবদ্ধ মানব দেহের বাদশাহ হচ্ছে বিবেক
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। ইমাম গাযালী (রহ:) কার তত্ত¡াবধানে বিভিন্নবিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন?
(ক) ইমামুল হারমাইন; (খ) আল ফারাবী;
(গ) ইবনুল আরাবী; (ঘ) ইমাম আবুহানিফা।
২। গাযালীর কোন গ্রন্থটি অমর গ্রন্থহিসেবে সুপরিচিত?
(ক) রুবাইয়াত; (খ) মসনবী;
(গ) তিবরুল মসবুক; (ঘ) এহ ইয়াউ উলুমুদ্দীন।
৩। গাযালীর মতে পরম সত্তার জ্ঞান লাভ করা যায় কিভাবে?
(ক) যুক্তির মাধ্যমে; (খ) স্বজ্ঞার মাধ্যমে;
(গ) জ্ঞানের মাধ্যমে; (ঘ) প্রজ্ঞার মাধ্যমে।
৪। গাযালী শাসকের গুণাবলীর চিত্রঅংকণ করেছেন কোন গ্রন্থে?
(ক) এহ ইয়াউউলুমুদ্দীন; (খ) তিররুল মসবুক;
(গ) ইকতিসাদ; (ঘ) কিময়ায়ে সাআদাত।
উত্তরমালা- ১। ক ২। ঘ ৩। খ ৪। খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ইমাম গাযালীকে হজ্জাতুল ইসলাম বলা হয় কেন?
২। গাযালী কিভাবে খ্যাতির শীর্ষে আরহণ করেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইমাম গাযালীর রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]