ইবনে খালেদুনের জীবনী আসাবিয়া বা গোষ্ঠী সংহতি বলতে কী বুঝেন?

কালজয়ী চিন্তাবিদ ও বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ইবনে খালদুন ছিলেন একাধারে দার্শনিক,
ইতিহাসবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী। তাঁর পূর্ণনাম ওয়ালী উদ্দিন আবুযায়দ আবদুর রহমান ইবনে
মোহাম্মদ ইবনে খালদুন। তিনি ১৩৩২ সালে ২৭ মে, উত্তর আফ্রিকার তিউনিস শহরে এক
সম্ভ্রান্তপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। শৈশবে পিতার
তত্ত¡াবধানে তিনি তিউনিস নগরীতে লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি ইবনে খালদুনকে ধর্ম, দর্শন
ও ইতিহাসসহ বিভিন্নবিষয়ে শিক্ষাদান করেন। ইবনে খালদুন অল্প বয়সেই পবিত্র কুরআন
মুখস্তকরেন। সুযোগ্য শিক্ষকদের নিকট থেকে তিনি ধর্মতত্ত¡, আইন, কলা, বিজ্ঞান, দর্শন ও
সমাজতত্তে¡র বহুবিধ শাখায় শিক্ষা লাভ করেন। তিউনিসের সুলতান আবুইসহাক ইব্রাহীম
তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে মাত্র বিশ বছর বয়সে তাঁকে রাজদরবারে গুরুত্বপূর্ণপদে নিয়োগ
করেন। তাঁর সংস্কারমুক্ত ও যুক্তিবাদী মন এবং অদম্য জ্ঞান পিপাসা তাঁকে বারবার এক দেশ
থেকে আর এক দেশে টেনে নিয়েছে। এক সময় তিনি গ্রানাডায় গমন করেন। গ্রানাডার
সুলতান মোহাম্মদ ইবনে খালদুনের সূ² কুটনীতি জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ক্যাস্টিলের রাজা
পেড্রোর দরবারে রাষ্ট্রদূত হিসাবে প্রেরণ করেন। তিনি গ্রানাডায় মাত্র দুই বছর অবস্থান করার
পর পুনরায় তিউনিসে ফিরে যান এবং প্রত্যক্ষ রাজ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। অতঃপর
রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি সালামার নির্জন দূর্গেজ্ঞান সাধণায় মগ্নহন। তিনি ইতিহাস,
দর্শন ও সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কেগবেষণা করেন। দীর্ঘচার বছর অক্লান্তপরিশ্রমের পর ১৩৮০
খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থআলমুকাদ্দিমা রচনা করেন। এই গ্রন্থটি বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারে এক অমূল্য সম্পদ।
১৩৮২ সালে তিনি মিশরের রাজধানী কায়রো যান। এবং আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান
অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। ১৩৮৪ সালে তিনি মিশরে বিচারপতি নিযুক্ত হন এবং আইন
শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণসংস্কার সাধন করেন। তাঁর অসধারণ পান্ডিত্যের কারণে তিনি মিশরের
কাযীউল কুয়ত বা প্রধান বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন। এই সম্মানিত পদে দায়িত্বপালনরত
অবস্থায় তিনি ১৪০৬ সালে মিশরে ইন্তেকাল করেন। রাষ্ট্রদর্শনে তাঁর মৌলিকত্ত¡, সর্বজনীনতা
এবংঅভিনবত্বের কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ তাঁকে প্রাচ্যের এরিস্টটল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইবনে খালদুন জীবনে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন তার সুস্পষ্ট ছাপ তাঁর রচনাবলীতে
পরিলক্ষিত হয়। কথিত আছে তাঁর যুক্তিবাদী দার্শনিক মতবাদের জন্যতৎকালীন আলেম
সমাজ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে।
ইবনে খালদুনের রাজনৈতিক দর্শনে মৌলিক অবদান হল - (১) আসাবিয়া বা গোষ্ঠী
সংহতি।(২) রাষ্ট্রের উৎপত্তি (৩) রাষ্ট্রের প্রকারভেদ ও স্বাভাবিক আয়ুস্কাল (৪) রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি (৫) ইতিহাসের যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা (৬) সমাজ বিজ্ঞানের সঙ্গে ইতিহাসের সস্পর্ক। খালদুন ধর্মতত্ত¡, আইন, কলা, বিজ্ঞান দর্শন সমাজতত্তে¡র বহুবিধ শাখায় শিক্ষা লাভ করেন
ইবনে খালদুনের আসাবিয়া বা গোষ্ঠী সংহতি তত্ত¡
সমাজ ও রাষ্ট্রসম্পর্কেইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত¡রাস্ট্রদর্শনে একটি গুরুত্বপূর্ণঅধ্যায়।
উত্তর আফ্রিকার কতকগুলো উদাহরণ ধরে ঐতিহাসিক ও সামাজিক পরিবর্তনকে এ সংহতি
বৈশিষ্ট্যের মানদন্ডে তিনি প্রমান করেছেন যে ‘আসাবিয়া’ সংহতির শক্তিই একটি সামগ্রিক
নৈতিকতার আদর্শবাদকে বাস্তবায়ন করার শক্তি। আসাবিয়া মানব হৃদয়ের এমন এক অনুভ‚তি
যা পরিবার, গোত্র ও জাতি সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে। তিনি গোষ্ঠী সংহতি ও একাত্মতার
চেতনাকে আসাবিয়া বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে গোষ্ঠী সংহতি থেকেই রাষ্ট্রীয় শক্তির
মূল অনুপ্রেরনা অর্জিত হয়। ইবনে খালদুন একটি ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীকে বুঝাবার জন্য ‘আসাবিয়া’
শব্দটি ব্যবহার করেছেন। মানুষের মনে সহযোগিতার অভিপ্রায় জাগ্রত করানোর জন্য
অনুপ্রেরনা থাকা অপরিহার্য। এই অনুপ্রেরনাকে তিনি আসাবিয়া বলে উল্লেখ করেছেন।
‘আসাবিয়া’ তত্তে¡র প্রকৃত স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে অধ্যাপক রোজেত্থাল উল্লেখ করেন, “কোন
ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে অভিন্নবন্ধনে আবদ্ধ কতকগুলো সমভাবাপন্নমানুষের সক্রিয়
সমর্থন প্রয়োজন। প্রাথমিক পর্যায়ে বংশগত ও পারিবারিক বন্ধনের কারণে গোষ্ঠী সৃষ্টি ও তা
সংহত হয়। এর ফলে যে অভিন্নদৃষ্টিভঙ্গির সূচনা ঘটে তা ঐক্যবদ্ধ কর্মপ্রয়াসের মধ্যদিয়ে
প্রকাশ পায়। আর এই গোষ্ঠীচেতনা রাষ্ট্রও রাজবংশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভ‚মিকা পালন
করে থাকে। ইবনে খালদুন একেই ‘আসাবিয়া’ বলে অভিহিত করেন।” আর রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠাই
হচ্ছে এর মূল লক্ষ্য।
ইবনে খালদুনের মতে ‘আসাবিয়া’ বা গোষ্ঠী সংহতি ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ এ দুটি নীতির যে
কোন একটির ভিত্তিতে গঠিত হতে পারে। সমাজ ও রাস্ট্রের ঐক্য ও সংহতি স্থাপনে ধর্মের
প্রভাব অপরিসীম। নবী বা রাসুলগণ যে ধর্মীয় মিশন নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন ধর্মীয়
প্রচন্ড ঐক্য বিধানকারী শক্তি নিহিত থাকে। তিনি উল্লেখ করেন যে ধর্মীয় প্রেরনায় উদ্বুদ্ধ না
হলে আরবজাতির পক্ষে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতো না। বর্তমান বিশ্বেআমরা যে জাতি রাষ্ট্রের
সংগে পরিচিত তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্তৃত্বপ্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ভিত্তিতে গোষ্ঠী
সংহতির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। এ সব রাষ্ট্রকে তিনি বলতে চান ক্ষমতাভিত্তিক রাষ্ট্র। ইবনে
খালদুন উল্লেখ করেন, গোষ্ঠীর উম্মেষ ঘটে পরিবার বা গোত্রীয় আত্মীয়তা বোধের মাধ্যমে।
তারপর গোত্রীয় এলাকা সম্প্রসারিত হয়ে রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। আর এই সংহতি গড়ে উঠে
ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে। এভাবে একটিমাত্র গোষ্ঠীকেন্দ্রিক মানুষের স্থলে উদ্ভব
ঘটেছে একাধিক গোষ্ঠী মানুষের। আর এসব বিভিন্নগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে দেখা দেয় অনিবার্য
সংঘাত। একটি গোষ্ঠী যখন অন্য একটি গোষ্ঠীর উপর বিজয় লাভ করে, তখনই ঐ গোষ্ঠীর
রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই বল প্রয়োগ অন্য সকল ক্ষমতাকে পরাজিত করে। আর অন্য সব
গোষ্ঠীর উপর চূড়ান্তভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে। তাঁর মতে এভাবে সংঘাত তত্তে¡র সূচনা
হয়েছে। ইবনে খালদুনের মতে প্রত্যেক রাষ্ট্রই অন্যসব রাষ্ট্রের উপর সার্বভৌম কর্তৃত্বপ্রতিষ্ঠা
করতে চায়। কাজেই তাদের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্যহয়ে উঠে। শক্তিমান গোষ্ঠী দখল করে নেয়
অন্যসব রাষ্ট্র। এরই ফলে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমাজ ও রাষ্ট্রসম্পর্কেখালদুনের অভিমত
ইবনে খালদুন রাষ্ট্রতত্ত¡ বিশ্লেষণে যে ধর্মীয় সংস্কারমুক্ত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা
সত্যিই বিস্ময়কর। তিনিই মধ্যযুগের প্রথম চিন্তাবিদ যিনি রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মধ্যযুগীয়
পাশ্চাত্য দার্শনিকগণের সকল কাল্পনিক তত্ত¡কে অযৌক্তিক বলে ঘোষণা করেন। তাঁর মতে
মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের তাগিদে এবং পারস্পরিক সহযোগীতাও নির্ভরশীলতা থেকে
রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। খালদুনের মতে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘সংহতি’ বা আসাবিয়াত। এই সংহতি বিভিন্নসম্পর্কযুক্ত কারণে সংঘটিত হয়। তিনি সমাজ-জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে রাষ্ট্রের পক্ষ শক্তি ছাড়া মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে উঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতি স্থাপনে ধর্মের প্রভাব অপরিসীম
মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করেছেন। মানুষ ও অন্যান্য জীবের পার্থক্য হলো যে,
মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী দ্বিতীয়ত, মানুষ ক্ষমতার এক শাসকের নিয়ন্ত্রনে সুস্থজীবনযাবনে আগ্রহী। তৃতীয়ত, জীবন ধারনের প্রয়োজনে মানুষ সংঘবদ্ধভাবে থাকতে আগ্রহী।
এরিস্টটলের ন্যায় তিনি বলেন যে, মানুষ স্বভাবত সামাজিক জীব, সমাজ ছাড়া কোন মানুষের
পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব নয়।
ইবনে খালদুনের মতে মানুষের জীবনে সীমাহীন চাহিদা রয়েছে। অথচ এই চাহিদা মিটানোর
ক্ষমতা নিতান্তই সীমাবদ্ধ। চার্লস ইসাভী ইবনে খালদুনের আল মুকদ্দিমার সূত্র ধরে
বলেন,“শুধুমাত্র এক দিনের জীবন যাত্রার কথা যদি ধরা যায় তাহলে দেখা যায় যে, এই এক
দিনের বাঁচার জন্য খাদ্যের দরকার। এর জন্য গম, গম ভাংগানোর যন্ত্র, রুটি তৈরি এবং
অন্যান্য সরঞ্জামাদি আবশ্যক। এর অর্থএই দাড়ায় যে, এক দিনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য
শ্রমিক, পাচক, ছুতার, কামার, কুমার, কারিগর, বিভিন্নজনবলের প্রয়োজন। কিন্তুকোন
একজন মানুষের পক্ষে এই বহুমুখী চাহিদা এককভাবে মেটানো সম্ভব নয়। এ কারনে এর জন্য
দরকার হয় আসে-পাশের মানুষদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যৌথভাবে কাজ করা। সকলে মিলে
মিশে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।”
খালেদুনের মতে, মানুষের এই পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার মনোভাব থেকে সমাজ
গড়ে উঠেছে। কিন্তুসামাজে সকল মানুষ যুক্তি ও শুভ বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয় না। কিছু
সংখ্যক লোক পশু-সুলভ প্রবৃত্তির তাড়নায় সমাজে নানা রকম অন্যায়, অবিচার, জুলুম, করার
চেষ্টা চালায়। সমাজে শান্তি-শৃংখলা বিঘিœত করে। তাই সমাজে শান্তিও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য
নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দমনকল্পে এবং প্রয়োজনের তাগিদে রাষ্ট্রের
উৎপত্তি ঘটে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সমাজে অপরাধ প্রবণতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমন করা যায়
না। রাষ্ট্রের পক্ষে শক্তি ছাড়া মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে উঠে। রাষ্ট্রের
মাঝেই মানুষ নিজেকে বিকশিত করে। ইবনে খালদুন রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে
রাষ্ট্রও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। বস্তুর সাথে আকারের যে সম্পর্কসমাজের
সাথে রাষ্ট্রের যে সম্পর্ক। সমাজ ছাড়া রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না। তিনি বলেন, কেননা সমাজ
ব্যতীত মহান রবের খিলাফতের দায়িত্বসম্পাদন করা মানুষের পক্ষে সমম্ভবপর নয়।
রাষ্ট্রও সরকার
ইবনে খালদুন রাষ্ট্রবা সরকারকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন (১) ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র(২)
যুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্রএবং (৩) দার্শনিকদের আদর্শরাষ্ট্র(সিয়াসা মাদানিয়া বা মাদানী ফাযিলা)।
তাঁর মতে মানুষের উপর শাসকের কর্তৃত্ব স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত,
আর পুরস্কার ও শাস্তিসম্পর্কেমানুষের যে ধর্মবিশ্বাস রয়েছে, সে বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের
কাছে আনুগত্য দাবি করা হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রকে তিনি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রহিসেবে উল্লেখ করেন।
আবার এমন রাষ্ট্ররয়েছে যা যুক্তিভিত্তিক আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে শাসকগণ আইনের
মাধ্যমে তাদের থেকে আনুগত্য দাবি করে। তাঁর মতে, এ ধরনের রাষ্ট্রকে যুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্র
বলে। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রইহকাল ও পরকাল উভয়েই সুফল লাভ করা যায়। কিন্তুযুক্তিভিত্তিক
রাষ্ট্রেশুধুইহকালেই সুফল লাভ করা যায়। তৃতীয় ধরনের রাষ্ট্রসিয়াসা মাদানিয়া বা আদর্শ
রাষ্ট্রসর্ম্পকে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য তাদের নিজ নিজ প্রকৃতি অনুসারে
অবশ্য করণীয় কি, তা নির্ধারণ করা। এরূপ নির্ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে আদৌ কোন
শাসকের প্রয়োজন না হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রকে আদর্শরাষ্ট্রবলা হয়। দার্শনিকদের ধারণা
অনুসারে আদর্শরাষ্ট্রখুব একটা দেখা যায় না। দার্শনিকগণ শুধুকল্পনার উপর ভিত্তি করে
আদর্শরাষ্ট্রসম্পর্কেআলোচনা করে থাকেন। এর বাস্তব প্রতিফলন সম্ভবপর নয়।” রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের তাগিদে এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। আল্লাহ্র খিলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য সমাজের প্রয়োজন।
ইবনে খালদুন হচ্ছেন অন্যতম চিন্তাবিদ যিনি রাষ্ট্রনীতিতে এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংগঠিত
সমাজের সার্বিক জীবনে অর্থনীতির গুরুত্বের বিষয় উপলব্দি করেন। ইবনে খালদুন মনে করেন
যে, কোন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তার বলিষ্ঠ অর্থনীতি।
সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকে সুস্থঅর্থব্যবস্থার মাধ্যমে। অর্থনৈতিক কারণে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক
জীবনের রূপ পরিবর্তিত হয়। তিনি উল্লেখ করেন করভার যখন লঘুহয় তখন মানুষের
কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ অধিক মাত্রায় শাসকদের প্রতি আনুগত্য দেখায়। কিন্তুকরের
বোঝা যখন বেশি হয় তখন কর্মস্পৃহা হ্রাস পায়। তার ফলে উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়।
জীবনযাত্রার মানে নি¤œগতি দেখা দেয়। ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যারা
একদিন রাজাকে সমর্থন করতেন তারা তখন তাকে পরিত্যাগ করেন। যার ফলে একদিন
রাজার বংশ ও রাষ্ট্রউভয়েরই পতন ঘটে।
ইবনে খালদুন হযরত মুহাম্মদ (স:) এবং তাঁর চারজন খলিফা কর্তৃক প্রবর্তিত ইসলামী
অর্থনীতিকেই আদর্শঅর্থনীতি বলে মনে করেন। কারণ, এই অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে
আল্লাহর বাণী কুরআন এবং মহানবীর হাদিস। আল্লাহ প্রদত্ত বিধানবলে জনগণ স্বত:স্ফ‚র্তভাবে
এই করব্যবস্থাকে মেনে নেয়। এ ব্যবস্থায় করভার অত্যন্তলঘুহয়ে থাকে এবং রাষ্ট্রকর্তৃক
সম্পদের সুষ্ঠুও ন্যায় সঙ্গত বন্টনের জন্য প্রয়াস চালানো হয়। তিনি বলেন যে সুখী ও
সমৃদ্ধশালী স্থিতিশীল রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী কর ব্যবস্থা সর্বোত্তম পদ্ধতি। তা'ছাড়া
ইসলাম ধর্মীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যথাযথভাবে কার্যকর করা হলে সমাজকে দুর্নীতি ও
শোষণমুক্ত করা যায়। ফলে ক্রমশ সমাজ থেকে দারিদ্রবিমোচনের পথ উম্মুক্ত হয় এবং
সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
ইবনে খালদুন তাঁর বিশ্বইতিহাসের মধ্যে শুধুযে রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে অর্থনীতি আলোচনা
করেছেন তাই নয় উক্ত গ্রন্থেতিনি মূল্য তত্ত¡, যোাগান ও চাহিদা তত্ত¡, আমদানী ও রফতানী
ইত্যাদি বিষয়ে ও আলোচনা করেছেন। অর্থনৈতিক গবেষণায় ইবনে খালেদুনের এ মৌলিক
অবদানের কথা স্মরণ করে শেরওয়ানী বলেন, “আমরা যদি ইবনে খালদুন কর্তৃক প্রবর্তিত
অর্থনৈতিক তত্ত¡গুলোর গভীরে প্রবেশ করি তাহলে দেখতে পাব যে, তিনি তাঁর যুগের তুলনায়
অনেক বেশী অগ্রগামী ছিলেন।”
সারকথা
ইবনে খালদুন তাঁর রাজনৈতিক দর্শনে গোষ্ঠী সংহতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ
করেছেন। আর এ সংহতি গড়ে উঠে ইতিহাসের ক্রম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রদর্শন
বিশ্লেষণে তিনি ধর্মীয় সংস্কারমুক্ত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন
যে, যে কোন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তার বলিষ্ট
অর্থনীতি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তার বলিষ্ঠ অর্থনীতি সুখী ও সমৃদ্ধশালী স্থিতিশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী কর ব্যবস্থা সর্বোত্তম পদ্ধতি
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। ইবনে খালদুন কত সালে জন্ম গ্রহণ করেন?
(ক) ১৩৩২; (খ) ১৩৩৪;
(গ) ১৩৮০; (ঘ) ১৩৮২।
২। ১৩৮২ সালে তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন?
(ক) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়; (খ) বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়;
(গ) আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়; (ঘ) জাইতুন বিশ্ববিদ্যালয়।
৩। মানুষের সাভাবিক জীবনের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে -এই উক্তিটি কে
করেছেন?
(ক) হব্স্; (খ) জনলক;
(গ) রুশো; (ঘ) ইবনে খালদুন।
৪। ইবনে খালদুন রাষ্ট্রকে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন?
(ক) ২ টি; (খ) ৩ টি;
(গ) ৫ টি; (ঘ) ৪ টি।
৫। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি হচ্ছেÑ
(ক) শান্তিশৃঙ্খলা; (খ) জাতীয় সংহতি;
(গ) রাষ্ট্রীয় সংহতি; (ঘ) বলিষ্ঠ অর্থনীতি।
উত্তরমালা ঃ ১। ক ২। গ ৩। ঘ ৪। খ ৫। খ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ইবনে খালেদুনের জীবনী সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করুন।
২। আসাবিয়া বা গোষ্ঠী সংহতি বলতে কী বুঝেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ইবনে খালদুনের রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা করুন। <

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]