তাসাউদের বাইয়াত বলতে কী বুঝায়? শাহ্ ওয়ালী উল্লাহর পরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি কী?

ভারতীয় উপমহাশের মুসলমানদের ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারের অগ্রনায়ক, প্রতিভাধর চিন্তাবিদ
ও দার্শনিক মাওলানা শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ (রহ:) ১৭০৩ সালে দিল্লীর এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত
পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহ্ আব্দুর রহিম একজন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন।
বাদশাহ আওরঙ্গজেব ইসলামী কানুন বিধিবিধান সংকলনের জন্য যে পরিষদ গঠন করেন তাঁর
পিতা মাওলানা শাহ আব্দুর রহিম (রহ:) ছিলেন ঐ পরিষদের একজন বিজ্ঞ সদস্য। পিতার
তত্ত¡াবধানে শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ কোরআন, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, ফিকাহ শাস্ত্র
ও আধ্যাত্মিক সাধনায় অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তাঁর গভীর জ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য
তাঁকে ইমাম গাযালী (রহ:) সঙ্গে তুলনা করা হয়। তিনি আল কোরআনের তরজমা এবং
হাদিসের উপর বিস্তারিত ভাষ্য রচনা করেন। ‘তাফহীমাতে এলাহিয়া’ একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
ওয়ালি উল্লাহর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল প্রায় দুইশত। তিনি আজীবন তাঁর পিতা শাহ আব্দুর
রহিমের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনকাল সমাপ্তির পর থেকে মুসলমানদের
নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে শরিয়ত পরিপন্থী নানা রকম রীতি নীতি ঢুকে পড়ে। তিনি
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। ভারতে
ইংরেজ রাজত্বকায়েম এবং ভিন্নধর্মীয়দের শাসনে ওয়ালী উল্লাহ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি
দেখলেন ইসলাম বিরুদ্ধ বহু মতবাদ ও রীতিনীতি মুসলমান সমাজ ও ধর্মকে কলুষিত করছে।
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুসলমান সমাজ থেকে অনৈসলামিক আচার প্রথা দূরকরে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী
সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর হন। তিনি সমাজে আল কুরআন নির্দের্শিত বিধি বিধান
প্রতিষ্ঠার পবিত্র সংগ্রামে অবর্তীর্নহন। ইসলাম ধর্মের পুনরুজ্জীবনের জন্য তিনি নিজেকে
আত্মনিয়োগ করলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শেসমাজ প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় শপথ
নেন।
রাষ্ট্রদর্শন
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ, যুক্তিদর্শন ও তত্ত¡দর্শনের সমম্বয়ে রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করেন।
তিনি রাজনৈতিক দর্শনকে আল কোরআনের ব্যবহারিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণকরার প্রতি
বিশেষ গুরুত্বআরোপ করেন। তিনি বলেন যে, আল কোরআনে একটি বৈপ্লবিক আহব্বান
রয়েছে। যে আহব্বান বিশ্বজনীন এবং বিশ্বমানবতার ক্ষেত্রে সুপ্রসারিত। যে কোন যুগে, যে
কোন সমাজে এই বৈপ্লবিক নীতি অনুসরণ ও অনুকরণ করলে ইসলামের প্রাথমিক যুগের ন্যায়
নবজাগরণ অবশ্যম্ভাবী। এবং তা হবে কোরআনের অর্ন্তনিহিত শক্তির বলেই। তিনি মানুষের
ব্যবহারিক জীবনে পবিত্র কোরআনের শাশ্বত শিক্ষাকে বুনিয়াদরূপে গ্রহণের জন্য নির্দেশ
প্রদান করেন। এই শিক্ষার আলোকে তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রেইনসাফ প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ উল্লেখ করেন যে, অর্থনৈতিক ভারসাম্যের অভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রেবিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় দেখা দেয়। আল কোরআনে একটি বৈপ্লবিক আহবান রয়েছে। যে আহব্বান বিশ্বজনীন এবং বিশ্বমানবতার ক্ষেত্রে সুপ্রসারিত।
তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থার যে রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন তাতে আদি ইসলামী শাসন ব্যবস্থার চিত্র
পরিস্ফুট হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের জন্য বিভিন্নত্বরিকা বা পথ যেমন, শিয়া-সুন্নী,
হানাফি, হাম্বলি, ওয়াহাবি, ওয়াহাদাতুল, ওয়াদুদ, এবং ওয়াহদাতুল সহুদ প্রভৃতির মধ্যে
সমম্বয় সাধনে প্রয়সী হয়েছিলেন। তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল একটি বিশ্বজনীন সমাজব্যবস্থার দিকে।
তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে, বহুধা বিভক্ত মানব সমাজ মানুষের জন্য কল্যাণকর
নয়। তিনি পৃথিবীর সকল মুসলমানকে একটি কওম বা জাতির সদস্য বলে উল্লেখ করেছেন।
শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ গোটা মানব সমাজকেই তার সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্য করেছিলেন। তাঁর
আহব্বান ছিল সার্বজনীন মানবতার প্রতি ।
শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ ‘তাসাউফের বাইয়ত'কে, রাজনৈতিক আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ
করেছিলেন। তাঁর নিকট ‘তাসাউফের বাইয়াত গ্রহণের অর্থছিল রাজনৈতিক মতবাদে দীক্ষা
গ্রহণ। এ কারণেই তিনি রাজনীতিতে তাসাউফ দর্শনকে প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মক্কা ও
মদীনায় অবস্থানকালে তিনি ইজতিহাদের উপযোগী পূর্ণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তিনি
আধ্যাত্মিকভাবে হযরত মুহাম্মদ (স:) থেকে প্রেরণা লাভ করেছিলেন। তিনি বিশেষ গুরুত্ব
আরোপ করে বলেন যে, কোরআনের বিপ্লব পুর্নবার আনার জন্য হযরত মুহাম্মদ (স:) এবং
তাঁর সঙ্গী সাথীদের জীবন যাত্রা প্রানালী এবং তৎকালীন সমাজব্যবস্থা আন্তরিকভাবে গ্রহণ
করতে হবে। তিনি মক্কা-মদীনার ইসলামী আন্দোলনের আদর্শকে সামনে রেখে সংস্কার বিপ্লব
শুরু করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করে তার বৈপ্লবিক
কর্মসূচি অনুসারে প্রথমে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল ফারসী ভাষায় আল
কোরআনের পূর্ণাঙ্গ তরজমা করা। এই তরজমার নাম ‘ফতেহোর রহমান।’
শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ ইসলামের পতনের জন্য রাজতন্ত্রকে দায়ী করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন
যে, যতদিন খলিফাতন্ত্রবিদ্যমান ছিল ততদিন ইসলামের গৌরব অ¤øান ছিল। আর এজন্যই
তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের আলোকে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন যে, রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য নেতাকে অবশ্যই জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। তিনি
জাহেরী বা প্রকাশ্য জ্ঞান এবং বাতেনী বা অপ্রকশ্য জ্ঞান এ দুইটি জ্ঞানের কথা উল্লেখ করেন।
এই উভয় প্রকার জ্ঞানে যিনি সিদ্ধি লাভ করেছেন তিনিই আদর্শমানব। ইসলামকে সার্থকভাবে
প্রতিষ্ঠিত করতে হলে জাহেরী ও বাতেনী উভয় জ্ঞান আয়ও করতে হবে।
শরীয়তের বিধান
শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ ইসলামী বিধিবিধানের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্বআরোপ
করেন। তাঁর পরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে শরিয়তের বিধান। তিনি কোরআনের
পরিপন্থী বিধিবিধানের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেন যে, রাষ্ট্রপরিচালিত হবে শরিয়তের
বিধান মোতাবেক। রাষ্ট্রনেতা বা আইন প্রনেতাগণ যে আইন রচনা করবেন তা অবশ্যই
কোরআন ভিত্তিক হতে হবে। শাসকের আইন যদি শরিয়তের পরিপন্থী হয় তা অগ্রাহ্য করার
অধিকার জনগণের আছে। আইন বলতে বুঝায় কোরআন বা শরিয়তের বিধান। যুক্তি ও প্রজ্ঞার
আলোকে যে আইন তৈরী হয় তাকে ইজতিহাদ বলা হয়। কোন আইন শরিয়ত বা কোরআন
সুন্নাহ মোতাবেক রচিত হয়েছে কিনা তা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গবিচার বুদ্ধি ও যুক্তির কষ্টিপাথরে
যাচাই করে নেবেন। তাঁর মতে শরিয়তের বিধান দ্বারাই চারিত্রিক উৎকর্ষসাধন হয়ে থাকে।
মানুষের কল্যাণ ও উন্নতির জন্যই এসব বিধান তৈরী করা হয়েছে। শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ
সারকথা
শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ সমাজ থেকে ইসলাম সম্মত নয় এমন আচার-প্রথা দূর করে পরিপূর্ণ
ইসলামী সামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (স:) ও
খোলাফায়ে রাশেদীনের আলোকে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব
আরোপ করেছেন। তাঁর পরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে কোরআন ও সুন্নাহ।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিট-৫ পৃষ্ঠা-১১৭
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। গভীর জ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য শাহ্ ওয়ালী উল্লাকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়?
(ক) এরিস্টটল; (খ) প্লেটো;
গ। আল ফারাবী; (ঘ) ইমাম গাযযালী।
২। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা কত ?
(ক) একশত; (খ) প্রায় দুইশত;
(গ) দুইশত; (ঘ) তিনশত।
৩। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ হেজাজে কার নিকট শিক্ষা লাভ করেন?
(ক) শাহ্ আবুতাহির; (খ) ঈমাম আবুহানিফা;
(গ) ঈমাম বোখারী; (ঘ) মাওলানা রুমী।
৪। শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাজনীতিতে কোন দর্শনকে বেশী গুরুত্বদিয়েছেন?
ক। ইবনুল আরাবীর দর্শন; খ। ইমাম গাযালীর দর্শন;
গ। ইবনে খালদুনের দর্শন; ঘ। তাসাউফের দর্শন।
৫। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহর মতে রাষ্ট্রপরিচালিত হবে কিভাবে?
ক। কোরআন অনুযায়ী; খ। হাদিস অনুযায়ী;
গ। শরিয়ত মোতাবেক; ঘ। ফিকাহ্ মোতাবেক।
উত্তরমালা - ১। ঘ ২। খ ৩। ক ৪। ঘ ৫। গ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন:
১। তাসাউদের বাইয়াত বলতে কী বুঝায়?
২। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহর পরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি কী?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১। শাহ্ ওয়ালী উল্লাহর রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]