সংস্কার আন্দোলন কি? মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা

সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
মধ্যযুগের শেষ প্রান্তে এবং আধুনিক যুগের সূচনা পর্বে ইউরোপে যে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ
আন্দোলন দেখা দেয়, যে প্রক্রিয়ায় আরবী ভাষা ও মুসলিম বিশ্বের মাধ্যমে (মুসলিম দার্শনিকবিজ্ঞানীদের কৃত অনুবাদ, ব্যাখ্যা, ভাষ্যের দ্বারা) প্রাশ্চাত্য তার অতীত গ্রীক-রোমান যুগের
যুক্তিনির্ভরতা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে পুন: অনুসন্ধানকরত: নতুন পুঁজিবাদী জীবন,
সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতির পরিমন্ডল গঠনে প্রয়াস পায়, সেই নব জাগরণ আন্দোলনের
সহযাত্রী আন্দোলনের নাম প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ক্যাথলিক
খ্রিস্ট ধর্মের অচলায়তন ভাঙ্গার উদ্যোগ গৃহীত হয়। খ্রিস্টীয় চার্চ বা গীর্জা এবং
পাদ্রী/যাজকতন্ত্র/পোপের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্ব›দ্ব ও মীমাংসার প্রক্রিয়া চলে। মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয়
আবদ্ধতার বাইরে বেরিয়ে ইউরোপ তথা পাশ্চাত্যে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে।
এই প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার কিংবা রিফর্মেশন বা সংস্কার আন্দোলন ছিল খ্রিস্টীয় বিশ্বের ব্যাপার
এবং এ আন্দোলনে কিছু কিছু ভিন্ন চিন্তা রেখে জন ক্যালভিন, ফিলিপ মেলাঙ্কটন, উলরিক
যুয়িংলি, জন নক্স এ সব মনীষীরা জড়িত থাকলেও মূলত: মার্টিন লুথার ও জন ক্যালভিন এ
ক্ষেত্রে সমধিক খ্যাত।
ব্যক্তি জীবন, বিশেষ প্রভাব ও রচনাবলী
জার্মানীর আইজলবেন নগরীতে ১৪৮৩ সালে মার্টিন লুথারের জন্ম। মার্টিন লুথার ইতালীয়
নিকোলো ম্যাকিয়াভেলীর সমকালীন হওয়া সত্তে¡ও শেষোক্তের ন্যায় রেনেসাঁস দ্বারা
প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত ছিলেন না। ‘দি প্রিন্স’, ‘এমিলি’-র রচয়িতা ম্যাকিয়াভেলী যেখানে রাষ্ট্রকে
খ্রিস্ট ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে পুরোপুরি পৃথক করে ফেলেন, সেখানে মার্টিন লুথার খ্রিস্ট
ধর্মানুরূপী হিসেবে ধর্মের কাজেই জীবন কাটান এবং খ্রিস্ট ধর্মের মধ্যযুগীয় জঙ্গমতা থেকে
একে মুক্ত করার প্রয়াস চালান। লুথারের ধর্ম, রাজনীতি, রাষ্ট্র, সরকার সম্পর্কিত ধারণা পাওয়া
যায় তাঁর ত্যাদি
গ্রন্থ হতে।
রোমান চার্চের অচলায়তন
ইউরোপীয় রেনেসাঁসের প্রভাব তথাকার জাগতিক বৈষয়িক জীবনের সকল ক্ষেত্রে পড়লেও
রোমান চার্চ যেন তার অচলায়তন নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল। রেনেসাঁস সাংস্কৃতিক আন্দোলন
হওয়ায় তা ইউরোপের খ্রিস্টীয় জীবনে ছাপ রাখতে পারেনি। রোমান চার্চ পূর্ববৎ টিকে থাকে।
‘‘সিভিলাইজেশন ডিওরিং দি মিড্ল এইজেজ’’ ("
গ্রন্থে জি.বি. এ্যাডামস বলেন, মধ্যযুগেই যে সব অচলায়তন তৈরী করে রেখেছিলো খ্রিস্টীয়
চার্চ এখনও জীবনাদর্শ, সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার, মতবাদ সম্পর্কে সেই অপরিবর্তিত নীতিসমূহেই
দাঁড়িয়ে থাকার প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করে। গীর্জা আগের মতোই খ্রিস্টীয় সাম্রাজ্যিক চিন্তার ধারক
হিসেবে ইউরোপকে এক অখন্ড খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় এবং পোপকে ক্রিস্টেনডম বা খ্রিস্টরাজ্যের
একজন নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখতে চায়। এ ধরনের চিন্তা-জঙ্গমতার কারণেই রোমান চার্চ
প্রতিক্রিয়াশীল বিবেচিত হয় এবং ইউরোপে ক্যাথলিসিজম বিরোধী প্রোটেস্টান্ট রিফর্মেশন বা
সংস্কার আন্দোলনের ফলে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূরীভ‚ত হয়ে আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্র এবং
আধুনিক ইউরোপের আবির্ভাব দেখতে পায় সমগ্র পৃথিবী।
সংস্কার আন্দোলনের তাৎপর্য
গোড়াতে রাজনীতির সঙ্গে যোগ না থাকলেও এবং কেবল চার্চ বা গীর্জার সংস্কার ও খ্রিস্ট
ধর্মতত্তে¡র পুন:বিশ্লেষণের আন্দোলন হলেও শেষাবধি মার্টিন লুথারের রিফর্মেশন মুভমেন্টের
গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য স্বচ্ছ হয়। রেনেসাঁর ইউরোপে জাতীয় ভ‚খন্ড ও জাতীয় রাষ্ট্র এতদিন
দুর্বল অবস্থানে থাকলেও এবার সংস্কার আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় তা শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে।
একচ্ছত্র জাতীয় রাজতন্ত্র (এবসলিউট ন্যাশনাল মনার্কী) প্রতিষ্ঠা পায়। “পলিটিক্যাল থট ফ্রম
গারসন টু গ্রোশিয়াস” গ্রন্থে জে.এন. ফিগীস বলেন, চার্চ ও খ্রিস্টীয় ধর্মতত্তে¡র বৈপরিত্য ও
বৈরিতার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে ইউরোপের রাজনীতি।
বিধাতার সঙ্গে ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক
রোমান ক্যাথলিসিজমের বিপরীতে সৃষ্ট মার্টিন লুথারের প্রোটেস্টান্ট ধর্ম সংস্কার আন্দোলন
বিধাতার সাথে ব্যক্তি মানুষের সরাসরি সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয়। এতে অনিবার্য মাধ্যম হিসেবে
পোপের আবশ্যকতাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়। এতে করে ব্যক্তি বিশেষ স্বীয় বিবেক
অনুসারে খ্রিস্টীয় রিলিজিয়াস স্ক্রীপচার্স বা ধর্মবাণীকে ব্যাখ্যা করার অধিকার অর্জন করে। এত
কিছুর পরও ইউরোপের তৎকালীন রাষ্ট্র শাসকগণ খ্রিস্ট ধর্ম সম্পর্কিত সংস্কার আন্দোলনের
ব্যাপারে নিস্পৃহা রয়ে যায়।
জাতীয় রাষ্ট্রসমূহের সংযোগ
এ পর্যায়ে মার্টিন লুথার ইউরোপের জাতীয় রাষ্ট্রসমূহের শাসকগণকে সংস্কার আন্দোলনে
বিজড়িত করার মানসে কিছু কাজ করেন। কেন না এসব শাসকদের সক্রিয়তা ছাড়া সংস্কার
আন্দোলন সাফল্যের দ্বারে পৌঁছাতে পারছিলো না। লুথার তাই এ ঘোষণা দেন যে, খ্রিস্টীয়
চার্চের যে বিশাল ভ‚সস্পৃত্তি ও অন্যান্য সম্পদ পোপের অথবা গীর্জার কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে
রয়েছে, সেটা বৈধ নয়। চার্চের অধীনে থাকা এ সব সম্পদের আসল মালিকানা রাষ্ট্র
শাসকগণের এবং সেসবের ব্যবস্থাপনা ও বণ্টন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আবশ্যক। লুথারের এই
কৌশলের ফলে রাষ্ট্রের শাসকবর্গ এযাবৎ চার্চের আওতাধীন বিশাল সম্পদের দখল লাভের
সম্ভাবনায় সংস্কার আন্দোলনকে সফল করতে এগিয়ে আসেন। এভাবে ইংল্যান্ড ও জার্মানীর
রাজন্যবর্গ প্রোটেস্টান্ট সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ নিয়ে জাতিভিত্তিক প্রোটেস্টান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠার
বিষয়ে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেন। এবার নতুন এসব প্রোটেস্টান্ট গীর্জার প্রধান নিযুক্ত হন তারা
নিজেরাই। এতে করে স্বভাবতই ইউরোপীয় জাতীয় রাষ্ট্রের শাসকদের কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, মর্যাদা
বেড়ে যায়। যদিও ইউরোপের সকল ভ‚খন্ডে জাতীয় রাজতন্ত্রের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়াটা যে
সংস্কার আন্দোলনকে ভিত্তি রেখে সম্ভব হয়, সেটা বলা যাবে না। যেমন, ফ্রান্সে আর স্পেনে
রাজার কর্তৃত্ব বাড়লেও চার্চ ক্যাথলিকদের দখলেই থেকে যায়। কিন্তু ক্যাথলিসিজম কিংবা
প্রোটেস্টান্টিজম যাই হোক না কেন যেখানেই চার্চ ও রাষ্ট্রের দ্ব›দ্ব হয় সেখানেই জয়-পরাজয়
নির্বিশেষে বাস্তবে রাষ্ট্রশাসকের ক্ষমতা বর্ধনই সত্য হয়ে দাঁড়ায়। গভীর বিশ্লেষণে দেখা যায়,
সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবেই এটা ঘটেছে।
ব্যক্তি বিবেকের জাগরণ
লুথারের খ্রিস্টধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ফলে ইনডিভিজ্যুয়াল কনসিয়েন্স বা ব্যক্তি বিবেকের
নামে পার্থিব ও রাষ্ট্রীয় যাবতীয় বিষয়ে ব্যক্তি নিজস্ব বিবেক অনুযায়ী স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার
ও সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ পায়। সংস্কার আন্দোলনের সুগভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য এখানেই
নিহিত। লুথার খ্রিস্টীয় ধর্মীয় জীবনে যে অধিকার ব্যক্তিকে প্রদান করেন, রাজনৈতিক জীবনে
এর ফলেই ব্যক্তি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কর্তৃত্বের বিপরীতে ব্যক্তি বিবেকের স্বাধীনতার
দাবি উচ্চারিত হয়।
লুথারের বক্তব্য অনুযায়ী পুরো রোমান চার্চ কোনো ধর্ম বাণীর ব্যাখ্যায় কিছু বললেও তা যদি
ব্যক্তির নিজস্ব বিবেকজাত ব্যাখ্যার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে ব্যক্তি তা মানতে বাধ্য নয়।
এ ভাবে ব্যক্তির বিবেক সমর্থিত আইনই দৈব আইন এবং সেটাই সে মানবে। এ ব্যাপারে
চার্চের মতের সঙ্গে ভিন্নতা থাকলেও কিছু করণীয় নেই। ‘‘এ হিস্টোরী অব পলিটিক্যাল থট’’
গ্রন্থে ফিলিস ডোয়েল বলেন, খ্রিস্টধর্মের বিশাল ও জটিল বিষয়সমূহে বিধাতার অনুমোদন
প্রকৃত অর্থে কোন্টা, এ নিয়ে ব্যক্তি কথা বলার অধিকারী। ধর্মীয় ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার
ক্ষমতাও তার রয়েছে, যেমন রয়েছে ন্যায়বিচার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার। লুথার ও
তাঁর সহযোগীরা মনে করতেন, ধর্ম ও ন্যায়বিচার পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। সংস্কার আন্দোলনের
অন্যতম প্রাণপুরুষ মার্টিন লুথারের রচনাসমূহ খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কিত হলেও এগুলোর গভীর
রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল। খ্রিস্টধর্মের বাণীর স্বাধীন ব্যাখ্যা দান ও চার্চের ভিতরকার অন্যায়অনাচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার এবং সেসব অপসারণের যে অধিকার তিনি ব্যক্তি মানুষকে দেন
সেটার ফলেই পরিশেষে ব্যক্তি সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে নিজের বুদ্ধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত
নেয়ার এবং এযাবৎকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়-অনাচার দূর করার অধিকারের
ব্যাপারে সচেতনতা অর্জন করে। লুথার ধর্মের বিষয়ে শেষ কথা বলার অধিকার কেবল পোপ
ও চার্চের পুরোহিতদের হাতে না রেখে তা মানুষের মাঝে প্রসারিত করেন। তাঁর মতে, সব
মানুষই একেক জন পুরোহিত এবং আইন বিষয়ে নিশ্চিত কর্তৃত্বের ভিত্তিতে মতামত ব্যক্তকরণ
ব্যক্তির অধিকারভুক্ত।
জার্মানীর কৃষক বিদ্রোহ ও নিষ্ক্রিয় আনুগত্যের তত্ত¡
মার্টিন লুথারের সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে বিস্তৃত ব্যক্তি স্বাধীনতার ধারণা গ্রহণ করেই
জার্মানীর কৃষক সমাজ সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জনের উদ্দেশ্যে ১৫২৫ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা
করে। জার্মানীর এই কৃষক বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় লুথার যে ভ‚মিকা নেন, তাতে করেই তাঁর
চিন্তার পরস্পবিরোধিতা ধরা পড়ে। কৃষক বিদ্রোহের ফলে সৃষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক
বিশৃঙ্খলা দেখে আতঙ্কিত লুথার ইত:পূর্বে উচ্চারিত তাঁর সকল বিশ্বাস ও আদর্শের বিপরীতে
গিয়ে ঘোষণা দেন যে, কৃষক বিদ্রোহ যুক্তিযুক্ত নয়। কৃষকদের কোনো অধিকার নেই সামাজিক
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে নেবার। আইনসঙ্গতভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয়
শাসকবর্গের প্রতি ‘মৌল আনুগত্য’ বা ‘নিষ্ক্রিয় আনুগত্য’ প্রদর্শনই কৃষকদের দায়িত্ব। এ ভাবে
লুথার ব্যক্তির বিবেক ও স্বাধীনতার পক্ষ পরিত্যাগ করে রাষ্ট্র শাসকের পক্ষে চলে যান। তিনি
এখন ঘোষণা দেন যে, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অন্যায়-অনাচার অপনোদনের অধিকার
রাষ্ট্র শাসকের। ব্যক্তির এ ক্ষেত্রে করণীয় নেই। লুথারীয় দর্শন ও রাষ্ট্রচিন্তা এ ভাবেই
স্ববিরোধিতার স্বাক্ষর রাখে।
নিষ্ক্রিয় আনুগত্যের সংশোধন
পরবর্তীকালে জার্মানীর প্রোটেস্টান্ট রাজা ও সম্রাটের পারস্পরিক দ্ব›েদ্বর মুখোমুখি হয়ে লুথার
তাঁর ‘নিষ্ক্রিয় আনুগত্য’ নীতির পুন:সংশোধন করেন। এবার লুথারকে বলতে হয় যে, নিষ্ক্রিয়
আনুগত্যের নীতি যদিও প্রত্যেক খ্রিস্টানের পক্ষে অবশ্য পালনীয়, তবুও তাদের আত্মরক্ষার
প্রশ্ন উঠলে কিংবা রাজার শাসন স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়লে খ্রিস্ট অনুসারীদের অধিকার রয়েছে
বিদ্রোহ করার। লুথার আরো ঘোষণা দেন, সম্রাট আইন অমান্য করলে তার প্রতি আনুগত্য
প্রদর্শনও বাধ্যতামূলক নয়। আসলে লুথার কড়া জার্মান জাতীয়তাবাদী হওয়ায় তাঁকে স্বভাবতই
জার্মান রাজাদের পক্ষ নিতে হয়েছিল। তবে তাঁর এই নীতিই পরবর্তীকালে রাজকীয় স্বৈরতন্ত্রের জন্মদানে সহায়ক হয়।
প্রতিক্রিয়া ও রাষ্ট্রাধিকার
গোড়াতে লুথার ধর্মীয় বিষয়ে ব্যক্তি বিবেক ও স্বাধীনতার যে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন, তার ফলে
রাষ্ট্র কর্তৃত্ব দারুণভাবে ব্যহত হয়। এদিকে সংস্কার আন্দোলনের পরোক্ষ ফল হিসেবে যখন
রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট ছাড়া বহুসংখ্যক গোঁড়া খ্রিস্টীয় ডিনোমিনেশন তৈরি হয়,
বহু ফেরকা ও বিভক্তি দেখা দেয়, তখন আত্মহননে বিজড়িত খ্রিস্টীয় সমাজকে সুশৃঙ্খল করার
জন্য নতুনভাবে রাষ্ট্র কর্তৃত্বের ক্ষমতা বৃদ্ধির মতবাদকে সামনে টেনে আনতে হয়। লুথার
এবার বলেন যে, রাষ্ট্র সহিষ্ণুতার সীমা ঠিক করে দেবে এবং ধর্মদ্রোহ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে
প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করারও অধিকারী হবে।
মূল্যায়ন
মার্টিন লুথারের দর্শন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন এমন হতে পারে যে, তিনি মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয়
চার্চের অচলায়তন ও গোঁড়ামী থেকে খ্রিস্ট সমাজকে মুক্ত করেন। চার্চের উপর রাষ্ট্রীয় প্রাধান্য
দিয়ে তিনি ষোল শতকের রাজকীয় স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা রাখেন। লুথার রাষ্ট্রের প্রতি
যে দৈব পবিত্রতা আরোপ করেন, সেটাই পরবর্তীকালে জার্মান ভাববাদ বিশেষত: হেগেলের
মধ্যে প্রকাশিত হয়। এতদ্ব্যতীত, ‘‘ওয়েস্টার্ন পলিটিক্যাল থিওরী’’ গ্রন্থে এল. সি. ম্যাকডোনাল্ড
বলেন, লুথার ব্যক্তি বিবেক ও স্বাধীনতার উপর যে গুরুত্বারোপ করেন, তা হতেই
পরবর্তীকালে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব ঘটে।
সারকথা
রোমান ক্যাথলিসিজমের বিরুদ্ধে মার্টিন লুথারের প্রোটেস্টান্ট ধর্ম সংস্কার আন্দোলন
মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয় চার্চের অচলায়তন ও গোঁড়ামী থেকে খ্রিস্ট সমাজকে মুক্ত করে। চার্চের
উপর রাষ্ট্রীয় প্রাধান্য দিয়ে তিনি ষোল শতকের রাজকীয় স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা
রাখেন। লুথার রাষ্ট্রের প্রতি যে দৈব পবিত্রতা আরোপ করেন, সেটাই পরবর্তীকালে
জার্মান ভাববাদ বিশেষতঃ হেগেলের মধ্যে প্রকাশিত হয়। ওদিকে লুথার ব্যক্তিবিবেক
ও স্বাধীনতার উপর যে গুরুত্বারোপ করেন, তা হতেই পরবর্তীকালে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের
উদ্ভব হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। ঋৎববফড়স ড়ভ ঞযব ঈযৎরংঃরধহ গধহ গ্রন্থের লেখক কে?
ক) অগাষ্ট কোঁতে; খ) মার্টিন লুথার;
গ) মাদুয়া মারসিলিও; ঘ) সেন্ট অগাস্টিন।
২। জার্মানীর কৃষক সমাজ ন্যায় বিচার অর্জনের জন্য কত সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে?
ক) ১৬২৫; খ) ১২২৫;
গ) ১৫২৫; ঘ) ১৪২৫।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সংস্কার আন্দোলন কি?
২। বিধাতার সঙ্গে ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সম্পর্কের অর্থ কি?
৩। মার্টিন লুথার কেন ক্যাথলিক গীর্জাকে অস্বীকার করেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।
সঠিক উত্তর: ১। খ, ২। ঘ।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]