রাজনৈতিক দর্শনের ইতিহাসে ফরাসী দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাক রুশো (১৭১২-১৭৭৮) এক উজ্জল
নক্ষত্র। তিনি অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃ-মাতৃহীন ভবঘুরে রুশো শুধুমাত্র
আপন প্রতিভাবলে রাষ্ট্রদর্শনে নিজের ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হয়েছিলন। ফরাসী বিপ্লবের
বুদ্ধিবৃত্তিক পটভ‚মি সৃষ্টিকারী অন্যতম চিন্তাবিদ এ দার্শনিক তাঁর সামজিক চুক্তি মতবাদের জন্য
বিখ্যাত হয়ে আছেন। মানুষের মুক্ত ও স্বাধীন জীবনের জন্য সর্বদা আকাংখী রুশো বিজ্ঞান,
শিল্প ও সভ্যতার বিকাশকে মানুষের স্বাধীন সত্তার বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খল' বলে মনে করতেন। আর
এ শৃঙ্খল থেকে মানুষের স্বাধীনতাকে মুক্ত করতে তিনি তাঁর লেখনী পরিচালনা করেছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে অসমতার উৎপত্তি রাজনৈতিক অর্থনীতি সামাজিক চুক্তি (ঞযব ঝড়পরধষ
ঈড়হঃধপঃ), ইত্যাদি প্রসিদ্ধ।
রুশোর রাজনৈতিক দর্শন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি যুক্তিবাদের প্রতি গভীর
বিতৃষ্ণা পোষণ করতেন। অনেকে একে যুক্তির বিরুদ্ধে রুশোর বিদ্রোহ বলে অভিহিত
করেছেন। এ মনোভাবই ছিল তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার মূল উৎস ও উদ্দেশ্য। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে
যে, মানুষের জ্ঞান -বিজ্ঞান, মেধা, বুদ্ধি প্রভৃতির উপর রুশোর কোন প্রকার আস্থা ছিল না।
তিনি ভাবতেন এগুলো মানুষের জীবনের জন্য প্রতিবন্ধক। এগুলো মানুষকে অমানুষ করে
তোলে বলে রুশো মনে করতেন। আর এর সমাধান হিসেবে তিনি প্রাকৃতিক রাজ্যে ফিরে
যাওয়ার সুপারিশ করেছেন। তাই প্রাকৃতিক রাজ্য ও সামাজিক চুক্তি রুশোর দর্শনের মূল
প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব পোষণকারী রুশো নৈতিকতার প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠেন।
তিনি মনে করতেন মানুষের সুখী ও স্বাধীন জীবন যাপনের জন্য শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও নৈতিকতার
বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী সামাজিক চুক্তি মতবাদী দার্শনিক তথা হব্স্
এবং লক থেকে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কারণ হব্স্ ও লকের মতে সমাজ জীবনে মৌলিক
লক্ষ্য ছিল উপযোগ তথা শান্তিও নিরাপত্তার উপযোগ। প্রকৃতির রাজ্যে এর অভাবই রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার মূল কারণ। অন্যদিকে রুশোর মতে সমাজ গঠনের একমাত্র লক্ষ্য হলো মানুষের
নৈতিকতার পরিপূর্ণ বিকাশ। এ ক্ষেড়েত্র আমরা রুশোর চিন্তায় প্লেটোর পূর্ণাঙ্গ এবং
এরিস্টটলের মনোভাবের আংশিক প্রকাশ দেখতে পাই।
প্রকৃতির রাজ্য
দার্শনিক রুশো তাঁর পূর্ববর্তীদার্শনিকদ্বয়- হব্স্ এবং লকের মত প্রকৃতির রাজ্যে বিশ্বাস
করতেন। তবে তাঁর প্রকৃতির রাজ্যের প্রকৃতি উল্লিখিত দু'জন দার্শনিক থেকে ভিন্নতর।
হব্স্রে ন্যায় তিনি প্রকৃতির রাজ্যের মানুষকে স্বার্থপর, কলহপ্রিয় ও আত্মকেন্দ্রিক মনে করেন
নি। আবার লকের ন্যায় যুক্তিবাদী বলেও ভাবেন নি। রুশোর মতে স্বার্থপরতা ও কলহবিবাদ
ইত্যাদি সমাজ স্থাপনের পর দৃষ্টিভ‚ত হয়। ক্ষমতা লিপ্সা ও সম্পত্তি জড়ো হওয়ার ফলে মানুষের
মধ্যে যুক্তিবোধ এবং স্বার্থপরতার জন্ম নেয়। সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধির ও তা সংরক্ষণের মানসে
মানুষ অন্যের সাথে যুদ্ধ ও কলহে লিপ্ত হতে শুরু করে এমতাবস্থায় মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মালেও
সর্বত্রই ‘শৃঙ্খলিত' হতে থাকে। অথচ সিভিল রাষ্ট্রের জন্মের পূর্বেমানুষের জীবন ছিল সহজ
ও সরল। তাদের মধ্যে কোনরূপ অহংকার বোধ ছিল না। তারা ছিল ভীরু, সংঘর্ষ-বিমুখ এমন
যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে
বিরূপ মনোভাব
পোষণকারী রুশো
নৈতিকতার প্রতি
অনুরক্ত হয়ে
উঠেন।
কি এ অবস্থা ছিল নীতিপূর্বাবস্থা। ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করার মত বুদ্ধিও
মানুষের মধ্যে ছিল না।
সামাজিক চুক্তি
রুশো তাঁর ‘দি সোসাল কন্ট্রাক্ট’ পুস্তকে রাষ্ট্রীয় সংস্থার গোড়াপত্তনের বিষয় নিয়ে আলোচনা
করেছেন। তাঁর মতে সামাজিক চুক্তির ফলেই উক্ত সংগঠনের জন্ম হয়। কিন্তুপ্রশ্নহলো কেনো
এবং কি ভাবে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল? এ চুক্তির ফলাফলই বা কি? রুশো বলেছেন যে,
সময়ের পরিবর্তনের সাথে প্রকৃতির রাজ্যের অবস্থা বদলাতে থাকে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিবোধ,
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মানুষের সাম্য, স্বাধীনতা ও সুখ শান্তিচ্যালেঞ্জের মুখোমুখি
হতে থাকে। আত্মরক্ষার প্রতিপক্ষ শক্তি প্রবল হওয়ার ফলে ব্যক্তি এককভাবে সে শক্তিকে
মোকাবিলা করতে পারছিল না। এমতাবস্থায় মানুষ বুঝতে পারলো যে, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে
নিজেদের জোটবদ্ধ হতে হবে। কারণ তারা বুঝতে পারলো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে নতুন কোন
শক্তি তৈরী করা সম্ভব নয়। কেবল মাত্র বিরাজমান শক্তিগুলোকে একত্রিত করা যায়। এ বোধ
থেকেই অনুষ্ঠিত হয় সামাজিক চুক্তি (ঝড়পরধষ পড়হঃধপঃ)। কিন্তুজোটবদ্ধ হওয়ায় তারা কারো
অধীনস্থহল না। অতীতের ন্যায় তাদের স্বাধীনতা অব্যাহত থাকলো। এই সম্মিলিত জীবন
ব্যবস্থা স্বাধীনতা হননকারী হয়ে উঠলো না। কারণ তিনি বলেন, এ অবস্থায় প্রত্যেকে
সমবেতভাবে নিজ নিজ জীবন ও ক্ষমতা সাধারণ ইচ্ছার চূড়ান্তপরিচালনার কাছে সপে দেয়।
তবে যুথবদ্ধ জীবন-ব্যবস্থায় প্রত্যেকে সার্বিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যা দিল তা
আবার ফিরে পেল। যৌথ শক্তি ব্যক্তিগত শক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই রাষ্ট্রীয় সংগঠন
অবশ্যই অধিক ফলপ্রসু। এ কারণেই মানুষ বিনা দ্বিধায় রাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পন করলো।
রুশোর সামাজিক চুক্তি মতবাদটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তাঁর এ তত্ত¡ হব্স্ ও লক থেকে
অনেকটা স্বতন্ত্র। চুক্তির ফলেই রাষ্ট্রসৃষ্টি হয়েছিল। এক্ষেত্রে তাঁরা সবাই একমত পোষণ
করলেও চুক্তির ধরন ও চুক্তির উদ্ভব, ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কেতাঁেদর সকলের ধারণা একরূপ
নয়। হবস্ জনগণকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেছেন। রুশোর চুক্তিকারী কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ
জনগণ-সরকারের হাতে চরম ক্ষমতা দেয়নি বা সরকারের সমালোচনা করা অথবা বিদ্রোহ
করার অধিকার থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করেনি। রুশোর সামাজিক চুক্তি অনেকটা লকের
অনুকরণে গড়া। উভয়েই জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস মনে করেছেন। উভয়েই
বলেছেন জনগণ প্রয়োজনে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকারী। বলাবাহুল্য, জনপ্রিয়
সার্বভৌমত্বের তত্ত¡ রুশো লকের নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন। তবে উভয়ের তত্তে¡র মধ্যে
পার্থক্য খুবই ষ্পষ্ট। লক বুর্জেয়া বিকাশের ধারায় গণতান্ত্রিক চেতনা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
লকের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধারণার চেয়ে রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত¡ পৃথক ইঙ্গিতবাহী। তা'ছাড়া
রুশো লকের মত বিপ্লবের বাণী প্রচার করেননি। সরকারের উপর আস্থাহীন হলে জনগণ লকের
মতে বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে পরিবর্তন করতে পারবে। অন্যদিকে রুশোর জনগণ সদা
সর্বদা সক্রিয়। সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে লক শর্তারোপ করলেও রুশো কোন প্রকার
শর্তদেন নি। তাঁর মতে জনগণ কোন প্রকার শর্তের অধীন নন। তাঁরা যখন চাইবেন তখনই
ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। সুতরাং দৃশ্যত লকের চেয়ে রুশোর কাছে জনগণ আরও
বেশী ক্ষমতাশালী ও স্বাধীন।
রুশোর মতে, সামাজিক চুক্তির ফলে জনগণ লাভবান হয়। তিনি বলতে চান চুক্তির ফলে
মানুষ পায় স্বাধীনতা ও বিষয় সম্পত্তির উপর পূর্ণ মালিকানা। সর্বোপরি জনগণ নৈতিক
স্বাধীনতা লাভ করে। নৈতিক স্বাধীনতাকে রুশো প্রকৃত স্বাধীনতা বলে মনে করতেন।
সার্বভৌমত্বসম্পর্কেরুশোর ধারণা
রুশোর মতে সাধারণ ইচ্ছা এবং সার্বভৌমত্বের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। রুশোর সার্বভৌমত্ব
জনগণ ব্যতীত অন্য কারও উপর ন্যস্তনয়। তাঁর মতে ব্যক্তি, সংস্থা বা সরকার কখনও
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে না। রুশোর সার্বভৌম তত্ত¡বিশ্লেষণ করলে নি¤œলিখিত
বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়:
প্রত্যেকে
সমবেতভাবে নিজ
নিজ জীবন ও
ক্ষমতা সাধারণ
ইচ্ছার চূড়ান্ত
পরিচালনার কাছে
সপে দেয়।
লকের চেয়ে
রুশোর কাছে
জনগণ আরও বেশী
ক্ষমতাশালী ও
স্বাধীন
● রুশোর মতে সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর যোগ্য নয়। কারণ সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তর যোগ্য
হলে যারা এ ক্ষমতার মালিক অর্থাৎ জনগণ সার্বভৌমত্বহারিয়ে ফেলবে। এ জন্য তিনি
সার্বভৌমত্বকে হস্তান্তর যোগ্য করতে চান নি।
● রুশোর মতে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃতিই এমন যে তা কখনও ভুল করতে পারে না। অর্থাৎ
সার্বভৌমত্বঅভ্রান্তপ্রকৃতির, ‘সার্বভৌম কখনও অন্যায় করতে পারে না।' কারণ সাধারণ
ইচ্ছা সব সময়েই মানুষের সামগ্রীক কল্যাণমুখী।
● সার্বভৌম ক্ষমতা অভিভাজ্য। এ ক্ষমতাকে ভাগ করা যায় না। এখানে তিনি সার্বভৌম
ক্ষমতাকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ এর বিভক্তির অর্থদাঁড়ায় একে
শক্তিহীন করা। বলাবাহুল্য- এ ধারণার দ্বারা মন্টেস্কুর ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির প্রতি
কটাক্ষ করা হয়েছে।
● সার্বভৌম ক্ষমতা চরম এবং চূড়ান্ত, সকলেই এর নির্দেশ মানতে বাধ্য। কোনটি ব্যক্তির
জন্য গুরুত্বপূর্ণও মঙ্গলময় তা কেবল সার্বভৌম শক্তিই বিচার করবে। সাধারণ ইচ্ছার
নির্দেশ সকলেই মেনে চলতে বাধ্য। এ চরম ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
● তবে রুশো সার্বভৌম ক্ষমতার কতিপয় সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন। সার্বভৌম
ক্ষমতা কল্যাণ বিরোধী কোন নির্দেশ দিলে জনগণ তা মানতে বাধ্য হবে না। তা'ছাড়া
সার্বভৌম ক্ষমতা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি লংঘন করবে না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে রুশোর সার্বভৌমত্বের প্রকৃতি উপলব্ধি করা যায়। তার প্রণীত
সার্বভৌমত্ববিমূর্ত‘সাধারণ ইচ্ছা নির্ভর’ এবং কিঞ্চিত স্ববিরোধপূর্ণ।
সাধারণ ইচ্ছা
রুশোর রাজনৈতিক দর্শনে সাধারণ ইচ্ছা তত্ত¡টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রুশোর সাধারণ ইচ্ছার
ধারণাটি জটিল প্রকৃতির। এ তত্ত¡টি রুশোর চিন্তাধারাকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছে।
রুশোর মতে সাধারণ ইচ্ছা এবং সকলের বা অধিকাংশের ইচ্ছা এক নয়। সাধারণ ইচ্ছা হল
রাষ্ট্রের সেই ইচ্ছা যা জনগণের কল্যাণের জন্য পরিচালিত হয়। তাই সকলের ইচ্ছা (ডরষষ ড়ভ
ধষষ) এবং সাধারণ ইচ্ছা এক নাও হতে পারে। সকলের ইচ্ছার মধ্যে যদি
সাধারণ ও অভিন্নস্বার্থনা থাকে এবং তা যদি বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থেপরিচালিত হয়
তবে সে ইচ্ছা সাধারণ ইচ্ছা হতে পারে না। সুতরাং কোন ইচ্ছাকে সাধারণ ইচ্ছা হতে হলে
তাকে অবশ্যই মানুষের অভিন্নস্বার্থেও সামগ্রীক কল্যাণের মনোভাব ধারণ করতে হয়।
সকলের ইচ্ছা অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা উপরোক্ত গুণ সম্পন্ননাও হতে পারে। রুশোর মতে
সাধারণ ইচ্ছা বৃহত্তর ব্যক্তিস্বার্থবিদ্বেষী নয়। কার্যত: সংকীর্ণব্যক্তি স্বার্থের বশবর্তী হয়ে কাজ
করলে তা ঐ ব্যক্তির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যায়। অন্যদিকে সাধারণ ইচ্ছায় বশবর্তী হয়ে কাজ
করলে ঐ কাজ তার স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। তাই মানুষকে দিয়ে সাধারণ
ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয় বস্তুত তার নিজের ভালোর জন্যেই। এই অবস্থাকে
রুশো ‘যথার্থস্বাধীন হতে বাধ্য করা’ কে বুঝিয়েছেন (ঞড় ভড়ৎপব সধহ ঃড় নব ভৎবব)।
রুশোর সাধারণ ইচ্ছা মতবাদ নানা দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। তাঁর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত¡টি
বিমূর্ত। এটি কি ভাবে বাস্তবে প্রয়োগ হতে পারে যে বিষয়ে স্পষ্ট কোন ধারণা তাঁর কাছ থেকে
পাওয়া যায় নি। ‘মানুষকে স্বাধীন করতে বাধ্য’ করার অভিলাস স্বৈরশাসক ও স্বেচ্ছাচারিতা ও
সর্বাত্মকবাদী ব্যবস্থার জন্ম দিতে পারে। তাই অনেকে মনে করেন রুশোর এ তত্ত¡টি অসংগতি
ও স্ববিরোধিতাপূর্ণ।
রুশোর দর্শনের সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন
বিখ্যাত দার্শনিক টি, এইচ, গ্রীনের মতে রুশোর প্রভাব আমেরিকার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাকারীদের
উপর পড়েছিল। তাছাড়া ফরাসী বিপ্লবের প্রেরণাদাতাদের অন্যতম হিসেবে রুশোর নাম
উচ্চস্বরে উচ্চারিত হয়ে থাকে। স্বাধীনতা সম্পর্কেরুশের ধারণা তুলনাহীন। রুশো প্রকৃতপক্ষে
মানুষকে নৈতিক গুণসম্পন্নও দায়িত্বশীল করতে চেয়েছিলেন। সামগ্রীক কল্যাণই রাষ্ট্রের মূল
সার্বভৌম ক্ষমতা
চরম এবং চূড়ান্ত।
সকলের ইচ্ছার
মধ্যে যদি সাধারণ
ও অভিন্ন স্বার্থ না
থাকে এবং তা যদি
বিশেষ ব্যক্তি বা
গোষ্ঠীর স্বার্থে
পরিচালিত হয় তবে
সে ইচ্ছা সাধারণ
ইচ্ছা হতে পারে
না।
উদ্দেশ্য এ সত্যটি তিনি বার বার উচ্চারণ করতে চেয়েছেন। রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ কর্মের
সাথে জনগণকে সম্পৃত্ত করার স্পৃহা রুশোকে প্রচলিত গণতন্ত্রপন্থী দার্শনিকদের চেয়েও এক
ধাপ উপরে ঠাই করে দিয়েছে। তবে রুশোর বিরুদ্ধে স্ববিরোধিতার অভিযোগ পুরোপুরি খন্ডন
করা যায় না। সাধারণ ইচ্ছার তত্ত¡ ও সার্বভৌমত্তে¡র ধারণাকে তিনি বাস্তবমুখী এবং সুস্পষ্ট
করতে পারেন নি। সমালোচনা থাকা সত্তে¡ও রুশোর অবদান মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খার
ইতিহাসে অনবদ্য।
সারকথা
সামাজিক চুক্তি মতবাদী ফরাসী দার্শনিক রুশো সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্বের বানীর জন্য
বিখ্যাত হয়ে আছেন। মানুষের স্বাধীনতাকে সত্যিকার ও পরিপূর্ণভাবে অর্থবহ করাই ছিল
তাঁর রাষ্ট্রদর্শনের মূল লক্ষ্য। সকল মানুষের স্বার্থেরাজনৈতিক সংগঠনকে পরিচালনার
জন্য তিনি সাধারণ ইচ্ছা তত্বপ্রচার করেছেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন স্ববিরোধী
ও তা স্বৈরশাসকের জন্ম দিতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। রুশোকে কোন্ বিপ্লবের অন্যতম স্থপতি মনে করা হয়?
ক) আমেরিকান বিপ্লব; খ) ফরাসী বিপ্লব;
গ) রুশ বিপ্লব; ঘ) চৈনিক বিপ্লব।
২। রুশোর মতে সাধারণ ইচ্ছা বলতে বোঝায়Ñ
ক) সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা; খ) সমগ্রমানুষের ইচ্ছা;
গ) জ্ঞানী ও গুণী জনের ইচ্ছা; ঘ) জনগণের-তথা সকলের কল্যাণের ইচ্ছা।
৩। ‘মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায় কিন্তুসর্বত্রই যে ‘শৃঙ্খলিত' রুশোর মতে এ ‘শৃঙ্খলের' অর্থ
কি?
ক) দাম্পত্য শৃঙ্খল; খ) ধর্মের শৃঙ্খল;
গ) পারিবারিক শৃঙ্খল; ঘ) সমাজ, সভ্যতা ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খল।
সঠিক উত্তর - ১। গ, ২। ঘ, ৩। ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন:
১। রুশোর উল্লেখযোগ্য পুস্তকগুলো কী?
২। সাধারণ ইচ্ছা বলতে রুশো কি ধরনের ইচ্ছাকে বুঝিয়েছেন?
৩। রুশোর মতে প্রাকৃতিক রাজ্য কেমন ছিল?
৪। রুশোর মতে সার্বভৌমের প্রকৃতি কেমন?
৫। রুশোর বিরুদ্ধে কি ধরনের সমালোচনা আছে?
৬। রুশো ও হব্স্রে মধ্যে তুলনা করুন।
৭। রুশো ও লকের মধ্যে তুলনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন:
১। রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত¡টি সামালোচনাসহ আলোচনা করুন
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র