বৈজ্ঞানিক দৃষ্টবাদ, ব্যক্তিজীবন ও বৈশিষ্ট্য
সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতি হিসেবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টবাদের জনক অগাস্ট কোঁতের জন্ম ১৭৯৮ সালে
ফ্রান্সের মন্টপোলিয়ারে। ঊনিশ শতকে আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন গণিত,
পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, নৃতত্ত¡, জ্যোতির্বিদ্যা মানবিক চিন্তা ও ধারণাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত
করে। এক নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হয় জৈবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মানুষের সমাজ জীবনে
মানবিক সমস্যার সমাধানকল্পে। রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ রাষ্ট্রতত্তে¡র মৌল নীতির জন্য বিজ্ঞানের
জগতে প্রবেশ করেন। রাষ্ট্র ও কর্তৃত্বের নয়া ব্যাখ্যা প্রদান এবং মানুষের সমস্যাসমূহের
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও সমাধানের জন্য যারা এই তথাকথিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহারে সর্বাধিক
এগিয়ে আসেন তাদের মধ্যে অগাস্ট কোঁতে, হার্বার্ট স্পেনসার, ওয়াল্টার বেইজহট, গ্রাহাম
ওয়ালাস প্রমুখের নাম খ্যাত। ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্যে কোঁতের মূল গ্রন্থ “পজিটিভ
ফিলোসফি” ছয় খন্ডে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৮৫১ থেকে ১৮৫৪ সালের মধ্যে তাঁর অপর
প্রধান গ্রন্থ “পজিটিভ পলিটি” চার খন্ডে প্রকাশিত হয়।
স্বীয় রচনায় রাষ্ট্রতত্তে¡র বিজ্ঞানধর্মী বিশ্লেষণকে অগাস্ট কোঁতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টবাদ ) বলে আখ্যা দেন। এই ধারার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের
অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতি প্রয়োগকরত: মানুষের সমাজ এবং সামাজিক সমস্যারাজির সমাধান
অনুসন্ধান করা হয়। ‘‘পলিটিক্যাল ফিলোসফিজ’’ গ্রন্থে ব্যাখ্যাকৃত চেস্টার সি. ম্যাক্সীর ভাষায়,
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টবাদই ঊনিশ শতককে বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। দৃষ্টবাদ পদ্ধতির মূল বিশেষত্বই
হচ্ছে সমাজ জীবন সম্পর্কে নানা তথ্য জোগাড় করে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে
যথার্থ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন বিমূর্ত ধারণার (ধনংঃৎধপঃ রফবধং)
অথবা অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের কোনো অবকাশ রাখেনি এই পদ্ধতি।
দৃষ্টবাদী দর্শনের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে অভিজ্ঞতাবাদ। জার্মান দার্শনিক গাইডো ডি রাগীরোর
মতে, দৃষ্টবাদ এরূপ এক দার্শনিক প্রবণতা যা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত এবং
প্রাকৃতিক ও মানবিক উভয় প্রকারের দৃশ্যমান জগত সম্পর্কে এক
ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য।
দৃষ্টবাদী তিনপর্ব তত্ত¡
কোঁতের দর্শন সেইন্ট সিঁমোর মূল চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত। সিঁমোই তাঁকে প্রথমতঃ শিক্ষা প্রদান
করেন যে, সামাজিক ঘটনাসমূহ প্রাকৃতিক ঘটনার ন্যায়ই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং প্রাকৃতিক
ঘটনার ব্যাপারে প্রযোজ্য পদ্ধতিতে সামাজিক ঘটনারাজিরও শ্রেণীবিন্যাস ও বিশ্লেষণ করতে
হবে। দ্বিতীয়ত: সিঁমোই তাকে শেখান যে, দর্শনের আসল উদ্দেশ্য হলো সামাজিক জীবনের
নিয়মসমূহ আবিষ্কার করা এবং রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নৈতিক ব্যবস্থাসমূহের যুক্তিসঙ্গত পুনর্গঠন
সাধন করা।
এ দু’টি মূল শিক্ষা নিয়ে কোঁতে তাঁর দর্শনের “তিন পর্ব তত্ত¡”
প্রদান করেন। মানবিক চিন্তাধারা এই তিন পর্বের মাধ্যমে বিকশিত হয় - (১) ধর্মতাত্তি¡ক
(২) আধ্যাত্মিক এবং (৩) বৈজ্ঞানিক বা
দৃষ্টবাদ পর্ব (
ধর্মতাত্তি¡ক পর্বে মানুষ সকল কিছুকে ব্যাখ্যা করে অতিপ্রাকৃতিক কারণের সহায়তায়।
সর্বপ্রাণবাদ (ধহরসরংস) হতে আরম্ভ করে বহুঈশ্বরবাদ এর ভিতর দিয়ে
একেশ্বরবাদে পৌঁছায় মানুষ। বিকাশের প্রথম এই পর্বটির সময়কাল অতি
আদিম যুগ থেকে মধ্যযুগ অবধি প্রসারিত। বলপ্রয়োগ এ পর্বে সামাজিক সম্পর্কসমূহকে নিয়ন্ত্রণ
করে। শক্তি বা বাহুবলের জোরে বিজয়ও প্রতিষ্ঠা অর্জনই এ যুগের মূল বৈশিষ্ট্য। শিল্পের
ভ‚মিকা এখানে নিতান্তই কম, আর উৎপাদনকারীগণ থাকে দাসের ভ‚মিকায়।
ইতিহাস এগোয় ক্রমধারায়। মানুষ বিকাশের দ্বিতীয় পর্বে পৌঁছায়। এক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক বিমূর্ত
ধারণা একেশ্বরবাদ বা বহুঈশ্বরবাদের স্থানে আসন নেয়। এ সময় প্রকৃতি ঈশ্বরের আসন পায়।
সামাজিক চুক্তি, প্রাকৃতিক অধিকার, জনগণের সার্বভৌমত্ব - এসব কল্পকথাসমূহ এ যুগের
সমাজ দর্শনে প্রাধান্যশীল হয়ে উঠে। সামরিক এবং শিল্পযুগের সন্ধিক্ষণ এটা। বিকাশের প্রথম
পর্বের দাসপ্রথা এবারের দ্বিতীয় পর্বে ভ‚মিদাস প্রথায় রূপ পায় এবং ভ‚মিদাসেরা অর্জন করে
খানিকটা পৌর অধিকার। এ পর্বে শিল্পের ভ‚মিকা আগের চেয়ে বেশি হলেও, তা এখনও
সামরিক লক্ষ অর্জনার্থেই ব্যবহৃত। কোতেঁর মতে, এই দ্বিতীয় পর্ব অন্তর্ববর্তীকালীন ও
অনিশ্চিত এবং এর বিস্তার সমগ্র আঠারো শতক জুড়ে।
কোতেঁর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বটি বিজ্ঞান বা শিল্প সমাজের পর্ব। তিনি একে দৃষ্টবাদী (ঢ়ড়ংরঃরারংঃ)
বলেও আখ্যা দেন। এ পর্বে পূর্বের বিমূর্ত সকল প্রকার আধ্যাতিœক ধারণাকে বাদ দিয়ে নিজেকে
পুরোপুরি বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে নিয়ে আসে মানুষ। এ যুগে পর্যবেক্ষণের পথেই
ঘটনারাজির ও বিষয়াদির বিচার-বিশ্লেষণ করে মানুষ। এই প্রক্রিয়ায় মানুষ বৈজ্ঞানিক
নিশ্চয়তায় বিশিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। আর. চ্যামবি- স তাঁর “স্যোশাল থট” গ্রন্থে ব্যাখ্যা দেন
যে, কোঁতের দৃষ্টবাদী চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে মানুষ স্বীয় সীমার মাঝে সর্বোচ্চ জ্ঞানের আকর হিসেবে
অভিজ্ঞতা থেকে উত্থিত বৈজ্ঞানিক বিধিকে মেনে নেয়। জন এইচ.হ্যালোয়েল তাঁর ‘‘মেইন
কারেন্টস ইন মডার্ন পলিটিক্যাল থট’’ গ্রন্থে বলেন, তৃতীয় এই পর্বে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
ব্যবহারপূর্বক পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা ও সামাজিক সৌহার্দ্যরে দিকে অগ্রগতির আকাঙ্খখা প্রকাশ করে
মানুষ। শিল্পের ভ‚মিকা হয় প্রাধান্যশীল। সমাজের তৎপরতা মূলত: উৎপাদন লক্ষ্যে পরিচালিত
হয়। ঊনিশ শতকের বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের ইতিহাসকে নিশ্চিতরূপে দৃষ্টবাদের পর্বে
উপস্থিত করে।
কোঁতের এই তৃতীয় পর্ব তথা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টবাদ পর্বেই অস্থিরতা ও কলহ-কোন্দলের সমাপ্তি
টেনে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা ও সামাজিক সৌহার্দ্যরে জীবনে পৌঁছানোর জন্য তিনি এক নতুন
বিজ্ঞানের আবশ্যকতা অনুভব করেন। এরই ফলে প্রথমে ‘ বা
এবং পরে শব্দটি তিনি উদ্ভাবন করেন। কোঁতে প্রদত্ত সূত্র হচ্ছে
অগ্রগতির মাধ্যমে শৃঙ্খলা বিকাশ লাভ করে’’
কোঁতের ভাষায় অগ্রগতির এই নির্ভুল তত্তে¡র মাধ্যমে ‘ঝড়পরধষ ঝঃধঃরপংদ এবং ‘ঝড়পরধষ
উুহধসরপং’ এর মধ্যে যখন সংযোগ সাধিত হয়, তখনই কেবল দৃষ্টবাদী বিজ্ঞানের মাধ্যমে
সামাজিক শক্তির এরূপ এক সামঞ্জস্যপূর্ণ সংগঠন সম্পন্ন হয় যখন কি-না সমাজ বিজ্ঞানের
গঠন সমাপ্তি পায়। কোঁতে সমাজবিজ্ঞানকে সকল বিজ্ঞানের রাণী হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি
বলেন, মধ্যযুগে ধর্মতত্ত¡ যে ভ‚মিকা পালন করতো, আধুনিক জগতে সমাজবিজ্ঞান সেই
গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকায় অবতীর্ণ। তিনি সবরকম বিজ্ঞানকে এক স্তরক্রমিক পর্যায়ে (যরবৎধৎপযরপধষ
ড়ৎফবৎ) বিন্যস্ত করেন। তাঁর মতে, এহেন বিন্যাস কেবল ইতিহাসের ক্রমই নির্দেশ করে না,
এটা বিকাশের এক যৌক্তিক ক্রমও তুলে ধরে। অন্য কথায় বিজ্ঞান সহজ সরল অবস্থা থেকে
ক্রমশ জটিল অবস্থার দিকে এগোয়। তাঁর মতে, এই ক্রমের গোড়াতে গণিত এবং এরপর
আসে জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা ও সমাজ বিজ্ঞান। কোঁতের মতে,
দৃষ্টবাদ পর্বে পৌঁছানোর জন্য সমাজবিজ্ঞানসহ সকল বিজ্ঞানকেই তিন পর্বের নিয়মের মাঝ
দিয়ে এগোতে হয়।
তাঁর অদ্ভ‚ত ধর্মবিশ্বাস ও এর অসঙ্গতি
কোতেঁ প্রচলিত খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিক যুগের প্রযোজনের নিরীখে অপর্যাপ্ত ও
অনুপযোগী মনে করলেও নতুন এক অদ্ভুত ধর্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়ার প্রয়াস চালান। কোতেঁর
মতে, ধর্মবিশ্বাস ব্যতীত মানুষ বাচেঁ না। তিনি বলেন, মানুষের জ্ঞান ও বিবেকের মধ্যে অর্থাৎ
মন ও অন্তরের ভিতর সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই ধর্ম আবশ্যক। কেননা শুধু ধর্মের মাধ্যমেই
ব্যক্তি নিজের জীবনের চ‚ড়ান্ত পূর্ণতা আর পরিতৃপ্তি হাসিল করতে পারে। তবে কোঁতে খ্রিস্ট
ধর্ম বর্জন করেন কারণ এর সনাতন বিশ্বাসসমূহ বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলে না। তাই কোঁতে
‘‘মানবতার ধর্ম’’ নামে এক নয়া ধর্মমত প্রদান করেন। তিনি তাঁর আবিষ্কৃত সমাজবিজ্ঞানের
বিধানসমূহকে ধর্মবিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে মানুষকে এক নতুন উপাসনায় উদ্বুদ্ধ করতে চান।
সেক্ষেত্রে ‘মেসায়াহ’ নন, মানবতাই লক্ষ্য। কোঁতে মানবতা বলতে সে সব মানুষকে বোঝান
যারা যুগে যুগে অগ্রগতি অর্জনে অবদান রেখেছেন। এল.ডবিøউ. ল্যাঙ্কাস্টারের ভাষায়, মানবিক
অগ্রগতির এই ধারণাই কোঁতের সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করে।
অগাস্ট কোঁতের তথাকথিত মানবতার ধর্মে তিনি খ্রিস্টীয় ঈশ্বরের স্থলে মানবতাকে এবং
খ্রিস্টীয় ত্রিত্ববাদ (ঞৎরহরঃু) স্থলে ‘‘গ্রেট বীয়িং’’, ‘‘গ্র্যান্ড ফেটিশ’’ এবং ‘‘গ্র্যান্ড মিডিয়াম’’
ত্রিত্ববাদ তুলে ধরেন। খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জীর স্থানে তিনি তের মাস বিশিষ্ট দৃষ্টবাদী বর্ষপঞ্জীর প্রচলন
চান। কোঁতের মতে, মানবতার ধর্মে ঈশ্বরের প্রশংসা না করে মানবতা ও সরকারী সেবা কর্মের
প্রশংসা গাইতে হবে। এ উদ্দেশ্যে তিনি স্তুতিসঙ্গীত (যুসহং) রচনার কথাও বলেন। কোঁতের
মতে, মানবতার ধর্মে যারা পুরোহিত হবেন তাদেরকে বিজ্ঞানের সকল শাখায় প্রশিক্ষিত হতে
হবে এবং সর্বত্র নতুন মানবতার ধর্মকে সমর্থন করতে হবে। কোঁতে তাঁর নব ধর্মে নারীর
মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং এমনকি নির্দেশ দেন যে, পুরুষরা নারী জাতির উপাসনা করবে।
কোঁতের এই তথাকথিত মানবতার ধর্ম ও নারী পূজার পাগলামীকে স্কটল্যান্ডের প্রখ্যাত
দার্শনিক এডওয়ার্ড কেয়ার্ড তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, এটা মোটেই কোনো ধর্ম
নয়। প্রফেসর হ্যালোওয়েলের ভাষায়, কোঁতের এসব বক্তব্য আত্মপ্রবঞ্চনার সামিল।
রাষ্ট্র ও শাসন পরিকল্পনা
কোঁতে তাঁর দৃষ্টবাদী দর্শন দ্বারা বড় বড় রাষ্ট্রসমূহ ভেঙ্গে ছোট করতে চেয়েছেন। ইউরোপের
বৃহৎ পাঁচ রাষ্ট্র ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানী, ইতালীকে ভেঙ্গে ৭০টি প্রজাতন্ত্রে ভাগ করা
এবং পুরো দুনিয়াকে ৫০০ প্রজাতন্ত্রে ভাগ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কোনো প্রজাতন্ত্রে ৩০
লাখের উপর জনসংখ্যা হবে না। দেশের জনগণকে তিনি “প্যাট্রিশিয়ান” ও “প্রলিটারিজ” -
এই দুই শ্রেণীতে বিভক্তকরণ এবং এদের অনুপাত ১ ঃ ৩০ হবে বলে মত দেন।
প্যাট্রিশিয়ানদের হাতে তিনি কৃষি, বাণিজ্য এবং ম্যানুফেকচারিং -এর কেন্দ্রীয় দায়িত্ব ন্যস্ত
করেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি দেশের শাসনক্ষমতা ‘ট্রায়াম্ভিরেট’ এর বা ত্রয়ী সংস্থার হাতে
ন্যস্ত করার পরামর্শ দেন এবং এটি হবে দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক রিপাবলিকে ৩০
জন ব্যাঙ্কারের সমন্বয়ে এই ‘ট্রায়াম্ভিরেট’ গঠিত হবে। চিন্তার প্রসারতায় ও অনুভ‚তির উদারতায়
৪২ বছর বয়সে তিনজন সর্বোচ্চ যোগ্যতার অধিকারী ব্যাঙ্কার “মানবতার সর্বোচ্চ পুরোহিত”
রূপে ক্ষমতাসীন হবে এবং কৃষি, বাণিজ্য ও ম্যানুফ্যাকচারিং
-এর দায়িত্বে থাকবে।
সমালোচনা ও তাৎপর্য
অগাস্ট কোঁতের রাজনৈতিক চিন্তা ও রাষ্ট্রদর্শনের গভীর আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায়
যে, তিনি বা ঔৎকেন্দ্রিক মানসিকতার একজন মানুষ। তাঁর অনেক
বক্তব্যই অবাস্তব এবং নিছক হাস্যকর। এগুলো ক্ষেত্র বিশেষে তাঁর মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে
সন্দেহ জাগায়। কোঁতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতাবাদকে কাজে লাগিয়ে তাঁর দৃষ্টবাদী
দর্শন দ্বারা সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার ও খ্রিস্টধর্মকে কল্পকাহিনী ও অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের হাত থেকে
মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রচিন্তাকে বস্তুনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। চৌদ্দ শতকের
মুসলিম বিজ্ঞানী দার্শনিক ইব্ন খালদুন ও আঠারো শতকের ফরাসী দার্শনিক মতে্যঁস্কু
সমাজবিজ্ঞানকে জ্ঞানের স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস পেলেও ‘সমাজবিজ্ঞান’
(ঝড়পরড়ষড়মু) শব্দ থেকে শুরু করে জ্ঞানের জগতে এর স্বতন্ত্র বিজ্ঞানসম্মত শাখার অবস্থান লাভ
কোঁতের চেষ্টারই ফল। স্পেনসার, পার্সনস, দুর্খাইম, গুস্তাব লেবন, ওয়ার্ড - এসব
সমাজবিজ্ঞানী কোঁতের অনুসরণেই সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছেন।
তবে কোঁতে তাঁর দৃষ্টবাদী দর্শনে মানসিক ভারসাম্যহীনতার স্পষ্ট প্রমাণ রেখেছেন। ধর্মকে
তথা খ্রিস্টধর্মকে বাদ দিয়ে নাস্তিকের অবস্থান নিলেও তথাকথিত মানবতার ধর্ম-এর মাধ্যমে
তিনি বিধাতাকে সরিয়ে দিয়ে ঞৎরহরঃু বা ত্রিত্ববাদের অদ্ভ‚ত ব্যাখ্যা দেন। তাঁর কর্তৃক উল্লেখিত
‘গ্রেট বীয়িং’-এর বিমূর্ত সত্তা কোনোভাবেই আস্তিকতা কে প্রতিষ্ঠা করে না। নারীকে
সমাজ কল্যাণ ও সর্ব মঙ্গলের উৎস বানিয়ে তিনি তাদেরকে দেবীর আসনে বসিয়ে পুরুষ কর্তৃক
তাদের কাছে নতজানু হয়ে পূজা বা উপাসনার যে তত্ত¡ দিয়েছেন, তাতে করে নারীকে ‘গ্রেট
বীয়িং’ বানানোর প্রচেষ্টা চললেও বিষয়টি মানসিক অসুস্থতারও বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে বলে
অনেকে মনে করে থাকেন।
মূল্যায়ন
এতদ্ব্যতীত কোঁতের ‘তিন পর্ব’ ভিত্তিক বিবর্তন ও প্রগতি তত্ত¡ও পরবর্তীকালের সমাজবিজ্ঞানী
ও নৃবিজ্ঞানীরা গ্রহণ করেন নি। কোঁতে যখন বলেন, দৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যেই মানুষের স্থান
সীমিত থাকবে; দৃষ্টের বাইরে কোনো কিছু অনুমানের ক্ষমতা মানুষের নেই, তখন তাঁর দৃষ্টবাদ
বাস্তবিকই অবৈজ্ঞানিকতার পরিচায়ক হয়ে উঠে। আবার, সামাজিক পরিবর্তন আর প্রগতি যে
এক কথা নয়, এটাও কোঁতে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া কোঁতে তথাকথিত মানবতার
ধর্মের বাগাড়ম্বর করলেও তিনি সমাজকে উচুঁ-নীচু দুই শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। প্যাট্রিশিয়ান
ও প্রোলিটারিজ - এই দুই ভাগে সমাজকে ভাগ করার মাধ্যমে মাত্র স্বল্প সংখ্যক মানুষকে
মর্যাদা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের আসনে বসিয়ে সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে কোঁতে
শ্রমজীবী ও শোষিত পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। অর্থাৎ মানব সমতা কোঁতের দর্শনে বরাবর
অনুপস্থিত থেকেছে। এরপরও কোঁতের দৃষ্টবাদী দর্শনের মাধ্যমেই সমাজবিজ্ঞান আনুষ্ঠানিক
যাত্রা শুরু করেছে, এটা বলা যেতে পারে।
সারকথা
অগাস্ট কোঁতে দৃষ্টবাদী দর্শন তুলে ধরেন তাঁর লেখায়। তিনি আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের
উদ্গাতা। কোঁতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতাবাদকে কাজে লাগিয়ে তাঁর দৃষ্টবাদী
দর্শন দ্বারা সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার ও খ্রিস্টধর্মকে কল্পকাহিনী ও অতীন্দ্রিয় বিশ্বাসের হাত
থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রচিন্তাকে বস্তুনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কোঁতের
দৃষ্টবাদ পদ্ধতির মূল বিশেষত্বই হচ্ছে সমাজ জীবন সম্পর্কে নানা তথ্য যোগাড় করে
পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে যথার্থ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। তবে কোঁতের
দৃষ্টবাদী দর্শনে পরস্পর বিরোধিতা, অবাস্তবতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার স্পষ্ট প্রমাণ
রয়েছে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। আগস্ট কোঁতের জন্ম কত সালে?
ক) ১৭৯৮;
খ) ১৮৯৮;
গ) ১৯৯৮;
ঘ) ১৬৯৮।
২। আগস্ট কোঁতের দর্শন প্রভাবিতক) প্লাটোর দর্শন দ্বারা;
খ) এরিস্টটলের দর্শন দ্বারা;
গ) সক্রেটিসের দর্শন দ্বারা;
ঘ) সেইন্ট সিমোর দর্শন দ্বারা।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিবাদ কী?
২। কোঁতের তিন পর্ব তত্ত¡ কী?
৩। মানবতার ধর্ম বলতে কোঁতে কী বুঝতে চেয়েছেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কোঁতের রাজনৈতিক দর্শন ও সৃষ্টি ভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা করুন।
সঠিক উত্তর
১। ক, ২। ঘ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র