গণতন্ত্রের সফলতার ক্ষেত্রে সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব কতটুকু?

গণতন্ত্রের সফলতার শর্তাবলী
বর্তমানকালে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার মধ্যে গণতন্ত্রসর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বোত্তম শাসনব্যবস্থা হলেও- একে যথার্থরূপে বাস্তবে
রূপ দে’য়া খুব সহজ কাজ নয়। হেনরী মেইন বলেন, ‘‘সকল প্রকার সরকার ব্যবস্থার মধ্যে গণতন্ত্রসবচেয়ে কঠিন’’গণতন্ত্রকে যথাযথভাবে সফল করে তুলতে হলে
কতকগুলো শর্ত পালন করতে হয়। গণতন্ত্রের সাফল্যের এ সকল শর্তাবলী নিচে আলোচনা করা হলো:
 গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য : গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ছাড়া গণতন্ত্রের সাফল্য কখনই আসতে পারে না। জনসাধারণকে গণতন্ত্রের
মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে অপরের মধ্যেও আত্মপ্রত্যয়ের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হতে
হবে।
 শিক্ষার প্রসার : গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজন সুনাগরিকের। কিন্তু সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা
হল নির্লিপ্ততা, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, সংকীর্ণ দলীয় মনোভাব। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত
গণতান্ত্রিক শিক্ষার। গণতান্ত্রিক শিক্ষা বলতে কেবল পুথিগত বিদ্যার্জন বুঝায় না। এ শিক্ষা হবে যথার্থ নাগরিকতাবোধ
বিস্তৃতি শিক্ষা। এরূপ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ ব্যক্তি, স¤প্রদায় বা গোষ্ঠী অপেক্ষা দেশের সামগ্রিক স্বার্থকে গুরুত্বপূর্ণবলে
মনে করে। তারা নিজ নিজ অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কেসজাগ থাকে, যা গণতন্ত্রের জন্য অত্যাবশ্যক।
 সু-সংগঠিত রাজনৈতিক দল ও বহুদলীয় ব্যবস্থা : বর্তমান যুগে গণতন্ত্রের সফল কার্যকারিতার জন্য দেশে সুষ্ঠু দলীয়
ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। কেননা, রাজনৈতিক দলই জনমত গঠনে সাহায্য করে। এর মাধ্যমেই সরকারকে
নির্বাচকমন্ডলীর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এছাড়াও বহুদলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের সফলতার জন্য অপরিহার্য। একাধিক
রাজনৈতিক দলের বিকাশের মাধ্যমে গণতন্ত্রআরও বেশী কার্যকর হতে পারে।
 সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। সৎ,
ন্যায়পরায়ণ, সাহসী, বিবেকবান, দূরদর্শী এবং নিষ্ঠাবান নেতৃত্বই কেবল পারে গণতন্ত্রকে বাস্তব রূপ দিতে। অধ্যাপক
গেটেল বলেন, গণতন্ত্রের সাফল্য শাসকবৃন্দের দক্ষতা ও জনগণের সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল।”
 সৎ, সুদক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ সরকারী কর্মচারী : শাসনকার্য সুদক্ষভাবে পরিচালনার জন্য যে শিক্ষা ও বিশেষ জ্ঞানের
দরকার হয়, অনেক সময়ই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিগণের তা থাকে না। তাই শাসনকার্য পরিচালনার জন্য
সরকারী কর্মচারীদের উপর তাদের বিশেষ ভাবে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সরকারী কর্মচারীরা যদি সৎ, সুদক্ষ ও
কর্তব্যপরায়ণ এবং জনকল্যাণকামী না হন, তাহলে গণতন্ত্রতার ইস্পিত লক্ষ্যে কখনই উপনীত হতে পারবে না।
 আইনের শাসন : গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনের চোখে সবাইকে
সমানভাবে দেখতে হবে। প্রত্যেকটি লোক যেন মনে করতে পারে যে, সে আইনের ছত্রছায়ায় একান্তনিরাপদে বাস
করছে। কারও খেয়াল ও মর্জির খেসারত যেন অন্য কাউকে দিতে না হয়।
 সহিষ্ণুতা ও সমঝোতা মনোভাব : গণতন্ত্রেসকলেই যাতে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ মতাদর্শ প্রচার করতে পারে, ইচ্ছানুযায়ী
যে-কোন আদর্শকে সমর্থন করতে পারে, সেজন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। এ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন আত্মসংযম
এবং সহিষ্ণুতার। গণতন্ত্রেসরকার ও বিরোধীপক্ষকে সহিষ্ণু হতে হয় এবং আপোসধর্মী মনোভাব প্রদর্শন করতে হয়।
সরকারকে মান্য ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা বিরোধী পক্ষের যেমন কর্তব্য, তেমনি বিরোধী পক্ষের মতামতকে
যথাযোগ্য মূল্য দেয়াও সরকারের কর্তব্য। এ রকম পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকলে গণতন্ত্রকখনই
সফল হতে পারে না।
 রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার : গণতন্ত্রের সফলতার জন্য নাগরিকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের শুধু
স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, সেগুলোকে বাস্তবে কার্যকরী করা প্রয়োজন। এ জন্য অবশ্যই বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা,
চলাফেরা করার স্বাধীনতা, সংঘ-সমিতি গঠনের স্বাধীনতা, সর্বোপরি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন জান-মাল রক্ষার অধিকার, ধর্মের অধিকার ও সামাজিক
সাম্যের অধিকার ইত্যাদি।
 অর্থনৈতিক সাম্য : গণতন্ত্রকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক সাম্যের প্রতিষ্ঠা। যে সমাজে অর্থনৈতিক
ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান, দেশের সম্পদ কতিপয় পুঁজিপতির নিয়ন্ত্রণাধীন, সেখানে মানুষ কখনই সুষ্ঠুগণতান্ত্রিক জীবনযাপন
করতে পারে না। লাস্কি যথার্থই বলেন, “গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক ধনবৈষম্য দূর করা দরকার।”
 ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : অনেকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম শর্ত বলে মনে করেন। তাদের
মতে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হলে জনগণ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ
করতে পারে। ফলে তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
 লিখিত সংবিধান : লেকী, হেনরী মেইন প্রমুখ লেখক গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য লিখিত সংবিধানের প্রয়োজনীয়তার কথা
উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন, সংবিধান লিখিত হলে সাধারণ মানুষ নিজেদের অধিকার, কর্তব্য, সরকারী ক্ষমতার সীমাএসব সম্পর্কেসম্যক অবহিত হতে পারবে। ফলে সরকার সহজে স্বৈরাচারী হতে পারবে না।
 জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা : জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য কোন সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হলে বিভিন্নদল ও গোষ্ঠীর
অবাধ প্রতিযোগিতায় জাতীয় কল্যাণ ব্যাহত হতে পারে এবং এর ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতবিক্ষত হতে বাধ্য। তাই
গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।
 স্বাধীন বিচার বিভাগ: স্বাধীন বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণশর্ত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে
গণতন্ত্রের কার্যকারিতা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
 ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ: সরকারের ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বএর বিভিন্নবিভাগের মধ্যে স্বতন্ত্রীকৃত না থাকলে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বিঘিœত
হয়। এ সম্পর্কেফরাসী রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মন্টেস্কু তার প্রসিদ্ধ ‘ঞযব ঝঢ়রৎরঃ ড়ভ খধংি’ গ্রন্থেবিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার
আলোচনা থেকে এটা বুঝা যায় যে, গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ প্রয়োজন।
 বিচার বিভাগের প্রাধান্য: মৌলিক মানবাধিকারের সংরক্ষণের জন্য বিচার বিভাগের প্রাধান্য অনস্বীকার্য। বিচার বিভাগের
প্রাধান্য সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করে। বিচার বিভাগের প্রাধান্য রক্ষার জন্য বিচার বিভাগকে সরকারের
নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। বিচার বিভাগের প্রাধান্যকে গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম শর্ত মনে করা হয়।
সারকথা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্নসময়ে বিভিন্নযুক্তিতর্কের অবতারণা সত্তে¡ও গণতন্ত্রগ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয়
সে সম্পর্কেকোন স্থির সিদ্ধান্তউপনীত হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের পক্ষে অদ্যাবধি সম্ভব হয়নি। এরিস্টটল, জন স্টুয়ার্ট মিল, বেন্থাম,
টকভিল, হার্বার্ট স্পেনসার,লাস্কি, বার্কার, ব্রাইস প্রমুখ রাষ্ট্রনীতিবিদেরা গণতন্ত্রকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ শাসন’ বলে প্রমাণ করার জন্য
নানা প্রকার যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। অন্যদিকে লেকী, উইলি, ফাগুয়ে, কার্লাইল, নীটসে, হল, প্রেস্কট প্রমুখ পন্ডিতগণ ভিন্ন
ভিন্নদৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রকে চরমভাবে সমালোচনা করে এ শাসন ব্যবস্থার অসারতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১. গণতন্ত্রসফল করার পূর্বশর্ত কি?
ক. চাকুরীর ব্যবস্থা করা; খ. অজ্ঞ জনগোষ্ঠী কে সংগঠিত করা;
গ. দারিদ্র দূরীকরণ; ঘ. ব্যাপক ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ।
২. ‘‘গণতন্ত্রকে সফল কারার জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক ধন বৈষম্য দূর করা দরকার’’ উক্তিটি- কার?
ক. অধ্যাপক গার্নারের; খ. প্লেটোর;
গ. লর্ড ব্রাইসের; ঘ. লাস্কির।
৩. গণতন্ত্রের সাফল্য শাসকবৃন্দের দক্ষতা এবং জনগণের সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল- উক্তিটি কে করেছেন-?
ক. এরিস্টল; খ. অধ্যাপক গেটেল;
গ. মিল; ঘ. অধ্যাপক গার্নার।
৪. গণতন্ত্রের জন্য নিচের কোন্ কথাটি সঠিকক. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যথেষ্ট পরিমাণে স্থায়ী; খ. গণতন্ত্ররাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির সহায়ক;
গ. গণতন্ত্রেসুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শাসিতের সার্বিক কল্যাণ সাধন সম্ভব;
ঘ. উপরের সবগুলোই।
উত্তরমালা ঃ ১। ঘ ২। ঘ ৩। খ ৪। ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. গণতন্ত্রের সফলতার ক্ষেত্রে সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব কতটুকু?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. গণতন্ত্রের সফলতার শর্তাবলীর বর্ণনা দিন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]