যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সা¤প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে আলোচনা করুন।

ভূমিকাঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকারগুলোর মধ্যে শাসন ক্ষমতা বন্টন করা সত্তে¡ও
আজকাল কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাবৃদ্ধির একটি সাধারণ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতা বন্টন
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকার সংবিধান থেকে ক্ষমতা লাভ করে থাকে। তত্ত¡গতভাবে
এ কথা সত্য হলেও, বাস্তব চিত্রটি একটু ভিন্নতর। এ প্রবণতা লক্ষ্য করে রাষ্ট্রবজ্ঞানী উইলোবী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের
ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি সাধারণ প্রবণতা।’’ । কেন্দ্রীয় সরকারের এই ক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রসার এককেন্দ্রিক
সরকার প্রতিষ্ঠার নামান্তর। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্রীকরণ প্রবণতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থিনয়, বরং এর
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। জাতীয় প্রশ্নেবিরোধী দল পর্যন্তকেন্দ্রের ক্ষমতা বাড়ানো পথে জোরালো
সমর্থন দিয়ে থাকে। সামাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজনের তাগিদে কেন্দ্রমুখী প্রবণতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,
কানাডা, ভারত, প্রভৃতি সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এ প্রবণতা দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির
প্রবণতা সম্পর্কে অধ্যাপক ফাইনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রএর সমগ্রএলাকাব্যাপী সমন্বিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার দিকে দ্রæত ধাবিত
হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গেটেল বলেন, ‘‘বৃহদায়তন শিল্প, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বৃহৎ বাজার এবং
অঞ্চলগুলোর মধ্যে পরষ্পর বন্টিত নির্ভরশীলতা সরকারের কার্যাবলীর উপর প্রভাব বিস্তার না করে পারে না।’’
একথা সত্য যে সা¤প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় করণ প্রবণতা অত্যন্তপ্রবল এবং বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা
গঠনের কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তা ক্রমশ বৃদ্ধি হয়েছে।
অধ্যাপক কে, সি, হুইয়ার যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতার চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
যথা যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক কার্য এবং ব্যাপক প্রয়াস, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিল্পক্ষেত্রে যান্ত্রিক বিপ্লব। লক্ষ্যনীয়
ব্যপার হল এই যে, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কিছু উপাদান ও শক্তি রয়েছে। যে সকল উপাদান কেন্দ্রীয় সরকারকে
অত্যাধিক ক্ষমতাবান এবং রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করেছে তা নিম্ন আলোচনা করা হল।
 যুদ্ধ: কেন্দ্রীকরণ প্রবণতার একটি বড় কারণ হল যুদ্ধ। যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রের স্বার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখন্ডতা ও রাষ্ট্রীয়
নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন হয় দ্রæত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্তগ্রহণের। ফলে স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতা এসে যায়
কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। আধুনিক কালে যুদ্ধ হচ্ছে অত্যন্তব্যয় বহুল ব্যাপার। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় খরচ এবং এর জন্য
কর নির্ধারণ কেন্দ্রীয় সরকারই করে থাকে। যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রের সার্বিক অবস্থা জরুরী ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভূক্ত হয়। যুদ্ধের
সময় রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম যে অনিবার্য পরিস্থিতি এবং সমস্যার সৃষ্টি হয় তা কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেই সমাধান করা
সম্ভব। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাবৃদ্ধি পেয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি যুদ্ধের সময় এত ব্যাপক ক্ষমতা
প্রয়োগ করেন যে, তিনি প্রায় বিধিসম্মত এক নায়কে পরিণত হন।
 অর্থনৈতিক মন্দা: অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দাজনিত পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট পরিমাণে
সাহায্য করে থাকে। আর্থিক সংকটের ফলে ব্যাপক বেকারত্ব, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি যে সমস্যার সৃষ্টি হয়
তা মোকাবিলা করার শক্তি আঞ্চলিক সরকারের থাকে না। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে দেশকে মুক্ত করার দায়িত্ব
কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ন্যস্তহয়। সীমিত সম্পদের কারণে আঞ্চলিক সরকারগুলো কেন্দ্রের হাতে থাকায় আঞ্চলিক সরকারগুলোর উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়।
 কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা: আধুনিক রাষ্ট্রহচ্ছে কল্যাণকামী রাষ্ট্র। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের নীতি ও আদর্শ গৃহীত হওয়ায়
সেবামূলক কার্যক্রমের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এ সকল কার্যের মধ্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা
করা, জনকল্যাণ ও শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ, দারিদ্রও বেকারত্বজনিত সমস্যা দূর করা, সামাজিক ন্যায়-বিচার নিশ্চিতকরা,
জীবন যাত্রার নূন্যতম মান বজায় রাখা ইত্যাদি। এ সকল কাজ বেশ ব্যয়বহুল। অধিকাংশ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাতেই দেখা
যায় প্রাদেশিক সরকার এ সব সমাজ সেবা মূলক কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য সহযোগীতার উপর নির্ভরশীল
হয়ে পড়ে। এ কারণে প্রাদেশিক সরকারের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
 অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আধুনিক কল্যাণ
রাষ্ট্রের সাফল্যের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য
সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। জাতীয় ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের
প্রয়োজন। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্তকরা হয়। এভাবে অখন্ড পরিকল্পনার মাধ্যমে আঞ্চলিক
সরকারের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
 যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে জাতীয় ঐক্যের পথ সুগম করেছে। কম্পিউটার,
ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট অডিও-ভিডিও কনফারেন্স, টেলিকনফারেন্স প্রভৃতি মিডিয়ার দ্রæত স¤প্রসারণের ফলে কেন্দ্র
ও প্রদেশের মধ্যে ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। দেশের গুরুত্বপূণ কার্যাবলী সহজেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসে
পড়েছে। আঞ্চলিকতা ও সংকীর্ণতা দূরীভূত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে বৃহত্তর ঐক্যের সোপান। এভাবে বেড়ে গেছে কেন্দ্রীকরণ
প্রবণতা।
 আঞ্চলিক সরকারের অসামর্থ: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্রীকরণ প্রবণতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল কেন্দ্রীয়
সরকারের প্রাবল্য এবং আঞ্চলিক সরকারগুলোর ব্যর্থতা। কেন্দ্রও প্রদেশের অবস্থানগত মর্যাদা, শক্তি সামর্থের পার্থক্যের
কারণে আঞ্চলিক সরকারগুলো নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রের বাধা অতিক্রমে অসমর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের
প্রাধান্য কেন্দ্রীয় প্রবণতার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আর একটি কারণ।
 বিচার বিভাগের পর্যালোচনা: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। আদালত হিসেবে
সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার যোগাযোগ ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমিকদের সমস্যা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কেন্দ্র
ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব প্রভৃতি বিষয়ে আইন প্রণয়ন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্রীকরণে এর গুরুত্বপূর্ণ
প্রভাব রয়েছে। মার্কিন সরকারের কেন্দ্রীকরণে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কানাডা এর প্রকৃষ্ট
উদাহরণ। অস্ট্রেলিয়ার সংবিধানবা ‘আন্তদেশীয় আর্থিক সম্মতির’ নীতি থাকার
কারণে কেন্দ্রঅধিক শক্তিশালী হচ্ছে।
সারকথা
পৃথিবীর সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারই কেন্দ্রের দিকে ধাবমান। সরকারের কেন্দ্রমুখী প্রবণতা কোন কৃত্রিম বিষয় নয় বরং আজকের
বিশ্বের চলমান বাস্তবতা। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধির এবং পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রীয়করণ প্রবণতার প্রধান কারণ বলে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. ক্ষমতা বন্টন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোন সরকার ব্যবস্থায় ?
ক. গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় খ. এককেন্দ্রীক সরকার ব্যবস্থায়
গ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় ঘ. মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায়।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের একটি সাধারণ প্রবণতা। এই বক্তব্যটি কার?
ক. উইলোবী; খ. গার্ণার;
গ. লাস্কি; ঘ. গেটেল।
৩. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতার চারটি কারণের কথা কে বলেছেন ?
ক. ডাইসী; খ. কে, সি, হুইয়ার;
গ. বার্কার; ঘ. গেটেল।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতা সর্ম্পকে কে আলোচনা করেছেন ?
ক. উড্রো উইলসন; খ. ফাইনার;
গ. উইলোবী; ঘ. কে, সি, হুইয়ার।
উত্তরমালা: ১.গ; ২.ক; ৩.খ; ৪.খ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতার কারণ হিসেবে কল্যাণ মূলক রাষ্ট্রের ধারণা ব্যাখ্যা
করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সা¤প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]