সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো নিæরূপ-
দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থাঃ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত ভাবে সব কাজ
কর্মের জন্য আইন-সভার কাছে দায়ী থাকেন। মন্ত্রীগণ তাদের কার্যকলাপের ব্যাপারে আইন সভায় বিভিন্নপ্রশ্নের
জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। আইন সভার আস্থা হারালে মন্ত্রিপরিষদের পতন ঘটে।
নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান: সংসদীয় সরকারের একজন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেএকটি মন্ত্রিসভা প্রকৃত
শাসন ক্ষমতার অধিকরী। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান কিছুই করতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব: এ ধরণের শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সরকারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি মন্ত্রিপরিষদের
প্রধান। তাঁর নেতৃত্বেমন্ত্রিসভা দেশ শাসনের দায়িত্বপালন করে।
বিরোধী দলের অস্তিত্ব: আইন সভায় বিরোাধী দলের অস্তিত্বথাকে। আইভর জেনিংস্-এর মতে সংসদীয় সরকারের ক্ষেত্রে
বিরোাধী দলের অস্তিত্বঅপরিহার্য। তাঁরা সরকারের সমালোচনার মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করতে পারে।
নমনীয় সংবিধান: সংসদীয় সরকার সাধারণত নমনীয় প্রকৃতির হয়। জনপ্রতিনিধিদের শাসন বলে সংবিধান সহজে
পরিবর্তন করা যায়।
দলীয় শাসন : সংসদীয় সরকার হচ্ছে দলীয় শাসন ব্যবস্থা, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট দল সরকার গঠন করে।
আইনসভার প্রাধান্য : এ সরকারে আইনসভার প্রধান্য স্বীকার করা হয়। এটি যে কোন ধরনের আইন প্রণয়ন এবং সংবিধান
সংশোধন করতে পারে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা আইনের বিল ও বাজেট প্রস্তাব করে।
সংসদীয় সরকারের গুণাবলী
সংসদীয় সরকার বহুগুণে গুণান্বিত। এ কারণেই বিশ্বের বহুদেশে এ সরকার ব্যবস্থা সাদরে গৃহীত হয়েছে।
সংসদীয় সরকার দায়িত্বশীল সরকার। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ তাদের কার্যকলাপের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে বলে
তা স্বৈরাচারী হয়ে উঠার সুযোগ পায় না।
এ শাসন ব্যবস্থার অন্যতম গুণ হল যে, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এ দুটি
বিভাগের মধ্যে প্রভেদ সুসম্পর্ক থাকার ফলে সুষ্ঠুভাবে আইন প্রয়োগের সুবিধা হয়। শাসন কার্যে এর শুভ প্রতিক্রিয়া
প্রতিফলিত হয়।
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটায়। রাজনৈতিক দল ছাড়া এ সরকার সফলতা লাভ করতে পারে
না। জনমতকে অনুকূলে রাখার জন্য সরকারী দল ও বিরোাধীদল সর্বদা তৎপর থাকে। দলীয় প্রচারণা ও রাজনীতি চর্চা
সব সময়ই অব্যাহত থাকে। ফলে জনগণের রাজনৈতিক চেতনার প্রসার ফলে।
এ শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রীদেরকে একদিকে আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করতে হয় অন্যদিকে শাসন কার্যাবলী পরিচালনা করতে
হয়। ফলে মন্ত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এ সরকার ব্যবস্থায় রাজনীতিকদের হাতে শাসনভার অর্পিত হয়। ফলে রাজনৈতিক
সংস্কৃতি পরিপুষ্ট হওয়ার সুযোগ পায়।
সংসদীয় সরকার পরিবর্তিত অবস্থায় সাথে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী। জরুরি অবস্থা বা যুদ্ধকালীন সময়ে যে কোন
পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে। এতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও অনুমোদন লাভ সহজ হয়।
সংসদীয় সরকারের ত্রæটি
সমালোচকগণ সংসদীয় সরকারের বিভিন্নত্রæটির কথা উল্লেখ করেছেন। ত্রæটিগুলো নি¤œরূপ :
সংসদীয় সরকার স্থিতিশীল নয়। আইন পরিষদের সদস্যদের আস্থা হারালে এ ধরনের সরকারের পতন ঘটে। মন্ত্রিপরিষদের
স্থায়িত্বআইন সভার মর্জির উপর নির্ভর করে। ফলে সরকার স্থিতিহীনতায় ভোগে। স্থিতিশীলতার অভাবে সরকারের পক্ষে
দীর্ঘমেয়াদী নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
এ শাসন ব্যবস্থা দলীয় মনোভাব সৃষ্টি করে। অনেক সময় দলীয় স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থের উর্দ্ধে স্থান দেয়া হয়। লর্ড ব্রাইস
বলেন, “এই পদ্ধতি দলীয় মনোভাবকে ঘনীভূত করে এবং সজীব রাখে।” সংখ্যাগরিষ্ট দল সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের উপর
অন্যায় অবিচার করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এ শাসনব্যবস্থায় নোংরা দলাদলি ও কোন্দলের সৃষ্টি হয়।
সংসদীয় সরকারের শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ সংযুক্ত হয়ে শাসন কার্যপরিচালনা করে। এর ফলে ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণনীতি লঙ্ঘিত হয় এবং শাসন বিভাগের ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগ ঘটে। সিডনী ওয়েব এ শাসন ব্যবস্থাকে
এক ব্যক্তি বা এক দলের একনায়কত্ববলে অভিহিত করেছেন।
এ শাসন ব্যবস্থায় সিদ্ধান্তগ্রহণে বিলম্ব ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো মন্ত্রিসভা ও আইনসভার অনুমোদন সাপেক্ষে গৃহীত
হয়। ফলে জরুরি অবস্থায় ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া ক্ষমতাশীন দল ও বিরোাধীদলের
মধ্যে অপ্রয়োজনীয় যুক্তিহীন বিতর্কের ফলে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয় এবং অর্থের অপচয় ঘটে।
পার্লামেন্টের ক্ষমতার অন্তরালে প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ক্যাবিনেট একচ্ছত্র ক্ষমতা চর্চা করেন। নীতি নির্ধারণ বা
আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ক্যাবিনেটই মূখ্য ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বাস্তবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা মন্ত্রিপরিষদ
শাসিত সরকারের রূপ নিয়েছে বলে অনেক বিশষজ্ঞ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ এ পরিস্থিতিকে
‘ক্যাবিনেটের স্বৈরাচার’ হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
সারকথা
সংসদীয় সরকার একটি দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা। এখানে সরকারের স্বৈরাচার হয়ে ওঠার সম্ভাবন বলতে গেলে নেই। এই
শাসন ব্যবস্থা জনগণের মতামতের উপর গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বেসংসদীয় সরকার ব্যবস্থা
গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণধর্মী শাসন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন:
ক. রাষ্ট্রপতি; খ. প্রধানমন্ত্রী;
গ. স্পীকার; ঘ. প্রধান বিচারপতি।
২. সংসদীয় সরকারে বিরোধী দলের অস্তিত্বঅপরিহার্য, এই বক্তব্যটি কার ?
ক. আইভর জেনিংস; খ. গেটেল;
গ. লাস্কি; ঘ. গার্ণার।
৩. মন্ত্রিসভার সদস্যগণ তাঁদের কার্যকলাপের জন্য দায়ী থাকেনক. প্রধানমন্ত্রীর নিকট; খ. প্রেসিডেন্টের নিকট;
গ. স্পীকারের নিকট; ঘ. আইনসভার নিকট।
৪. মন্ত্রিসভার স্থায়িত্বনির্ভর করে -
ক. আইনসভার উপর; খ. বিচার বিভাগের উপর;
গ. শাসন বিভাগের উপর; ঘ. স্পীকারের উপর।
উত্তরমালা ঃ ১.খ; ২.ক; ৩.ঘ; ৪.ক;
সংথিথ উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. সংসদীয় সরকারের দু’টি প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা করুন ।
২. সংসদীয় সরকারের দু’টি প্রধান ত্রæটি বর্ণনা করুন।
৩. সংসদীয় সরকরের দু’টি প্রধান গুণ কি? ব্যাখ্যা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সংসদীয় সরকারের গুণাবলী ও ত্রæটিগুলো আলোচনা করুন।
এসএসএইচএল
রাষ্ট্রবিজ্ঞান : রাজনৈতিক সংগঠন
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র