গণতান্ত্রিক সরকারে আইনপরিষদের গুরুত্ববর্ণনা করুন।

আইন পরিষদের সংজ্ঞা
প্রাচীনকালে আইন প্রণয়ন সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হত না। কারণ তখন আইন ছিল রাজার বা
নির্বাহীর আদেশ। তাছাড়া সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ঐতিহ্য ও প্রথা আইন বলে বিবেচিত হত। কখনও নির্বাহী বা
ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিজেদের যুক্তি ও বিচারবোধ দ্বারা যে সব নিয়মকানুন তৈরী করতেন তাই আইন বলে বিবেচিত হত। ঐ
সময় আজকের তুলনায় রাষ্ট্রের আয়তন ছিল ক্ষুদ্র, লোকসংখ্যা ছিল কম, মানুষের জীবন ছিল সহজ সরল প্রকৃতির। রাজার
আদেশকে জনসাধারণ শিরোধার্য বলে মেনে নিত। কালক্রমে রাষ্ট্রের আয়তন, লোকসংখ্যা, কাজ ও মানবজীবনের জটিলতা
বাড়তে থাকে। মানুষ রাজা, নির্বাহী বা ম্যাজিস্ট্রেটদের বেঁধে দেয়া নিয়ম নীতির ছকে চলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। এ অবস্থায়
বিকাশ লাভ করে প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের আইন-কানুন তৈরী করার জন্য জনগণ তাঁদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের
দায়িত্বপ্রদান করে। কখনওবা রাজা কিংবা শাসক জনগণের মনোভাব ও মেজাজ আঁচ করে কিছু সংখ্যক লোককে আইন
প্রণয়নের জন্য মনোনীত করেন। মোটকথা একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত সংস্থাকে দেশের আইন তৈরীর ভার
দেয়া হয়। সরকারের শাসনকাজের দায়িত্ববর্তায় পৃথক আরেকটি সংস্থার হাতে। এ থেকেই গড়ে ওঠে আজকের আইনপরিষদ।
বিকাশের এ ধারার সাথে সঙ্গতি রেখে বলা যায় যে, সরকারের যে সংস্থা রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন প্রণয়ন
করে, প্রচলিত নিয়মকানুন সংশোধন করে এবং প্রয়োজনে বাতিল করে নতুন বিধান প্রবর্তন করে তাকেই আইন পরিষদ
বলে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ, ভারতের পার্লামেন্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কিংবা ব্রিটেনের পার্লামেন্ট এমনি একেকটি
আইন পরিষদের নাম।
আইনপরিষদের গুরুত্ব
বিভিন্নকার্যাবলীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের অস্তিত্ত¡উপলদ্ধি করা যায়। সে কাজগুলো সম্পাদন করে সরকার। সরকার পরিচালিত হয়
তিনটি পৃথক বিভাগের মাধ্যমে। আইন পরিষদ এদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান বিভাগ। সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে
আইনপরিষদের প্রাধান্য বেশি। কারণ, আইন পরিষদ আইন তৈরি করলে তবেই শাসন বিভাগ তার সাহায্যে রাষ্ট্রশাসন
করবে, জনগণকে পরিচালিত করবে। বিচার বিভাগ সেই আইনের ব্যাখ্যা করবে ও প্রয়োজনে সেই আইন দ্বারা অপরাধের
বিচার করবে। এ ব্যাপারে গার্নার বলেন, অর্থাৎ সরকারের যে সব বিভাগের
মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের ইচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যকরী হয় তাদের মধ্যে আইন পরিষদের স্থান নিঃসন্দেহে সবার উপরে। আইন
পরিষদ যে সব কাজ করে তা বিচার করলে এ বিভাগটিকে সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে মৌলিক বলে বিবেচিত হবে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গিলক্রিস্ট বলেন, আইন প্রণয়ন হচ্ছে বাস্তবিকপক্ষে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজ, এ
বিভাগকে বাদ দিয়ে শাসন ও বিচার বিভাগ টিকতে পারে না। জে. এ. কোরী (ঔ.অ. ঈড়ৎৎু) এর মতে, তত্ত¡গতভাবে
আইনপরিষদই সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাধান্য বিস্তারকারী। আইন তৈরী ও সরকারী অর্থের ব্যয় বরাদ্দ করে
আইনসভা শাসনবিভাগের কাজকে সুবিন্যস্তকরে, জনগণের মঙ্গলের জন্য কি কি করা হবে তা নির্ধারণ করে এবং কোন্ কোন্
সীমাবদ্ধতার মধ্যে সরকারকে কাজ করতে হবে তা স্থির করে।
আইনপরিষদের সবচেয়ে বড় গুরুত্বযে, এটি সরকারের অপরিহার্য বিভাগ। বিশেষত গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য আইন পরিষদ
হচ্ছে উত্তম পরিমাপক সংস্থা। এ সংস্থা যেহেতুজনগণের প্রতিনিধিত্ত¡করে তাই এর কাজের প্রকৃতি ও শাসন বিভাগের উপর
নিয়ন্ত্রণের মাত্রা দ্বারা উপলব্ধি করা যায় সরকার প্রকৃত গণতান্ত্রিক না স্বৈরতান্ত্রিক। অবশ্য বর্তমানে শাসন বিভাগের কাজের
ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির ফলে আইন পরিষদের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকের মত
ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি একবিংশ শতকে এসে আইন পরিষদ আর ধরে রাখতে পারে নি। তা সত্তে¡ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেআইনসভায়
দলীয় সংখ্যাগরিষ্টতা সরকারি কাজের সর্বোত্তম সহায়ক বলে বিবেচিত হয়। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেআইনসভাকে উপেক্ষা করার
কোন সুযোগ নেই। কারণ, এর মৌলিক কাজগুলো সরকারের অন্য বিভাগের দ্বারা সম্পাদন করা সম্ভব নয়।
আইনপরিষদের কার্যাবলী
আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় আইনবিভাগ সবার ঊর্দ্ধে। গণতন্ত্রেতো বটেই, সর্বাত্মকবাদী একনায়কতন্ত্রের এর গুরুত্বকম নয়।
কারণ একনায়কদের ক্ষমতা বিস্তার ও সংরক্ষণে আইনসভার বিকল্প নেই।
 আইন প্রণয়ন সংক্রান্তকাজ: আইনপরিষদের সর্বপ্রথম ও প্রধানতম কাজ আইন প্রণয়ন। গণতন্ত্র- একনায়কতন্ত্র সহ
সকল প্রকার সরকার ব্যবস্থায়ই আইন প্রণয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করে আইনসভা।এ বিভাগ নতুন আইন প্রণয়নের
পাশাপাশি পুরনো আইন সংশোধন, সংস্কার ও বাতিল করার দায়িত্বপালন করে। সংসদীয় সরকারে শাসন বিভাগের
নেতৃবৃন্দও আইনসভার কাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন; এমনকি তারাই নেতৃত্বদেন। কারণ, সেখানে সরকারী সকল বিল
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরাই উত্থাপন করেন। কিন্তুরাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকারে এটা সম্ভব নয়।
 সংবিধান সংক্রান্তকাজ : সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান প্রণয়নের কাজটি আইনপরিষদই করে থাকে।
তবে সে সময় এর নাম হয় গণ-পরিষদ। সংবিধানের যে কোন প্রকার সংশোধন, সংযোজন কিংবা কোন ধারা বা
শব্দ বিমোচন ও প্রতিস্থাপন আইন বিভাগের কাজ। এতদ্সংক্রান্তপ্রস্তাব শাসন বিভাগ পেশ করলে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করে আইন বিভাগ।
 সরকার গঠন : মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থায় সরকার গঠন আইনসভার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বলা যায়, একেবারে
প্রাথমিক ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্তআইনসভা তার কাজই শুরু করতে পারে না। এ
ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে। এ মন্ত্রিপরিষদই সরকারী নীতি নির্ধারণ করে এবং তা
আইন আকারে রূপদানের ক্ষেত্রে নেতৃত্বপ্রদান করে।
 অর্থসংক্রান্তকাজ : প্রত্যেক সরকারের আইনপরিষদই জাতীয় অর্থভান্ডার অর্থাৎ ট্রেজারীর অভিভাবক ও ব্যবস্থাপক।
দেশের আয়-ব্যয় নির্ধারণী বাজেট প্রণয়ন এবং তা আইন সভায় পেশ করা ও এর সম্মতি গ্রহণ শাসন বিভাগের অন্যতম
দায়িত্ব। আইন সভার অনুমোদন ছাড়া সরকার কোন কর আরোপ ও সংগ্রহ করতে পারে না। সরকারি অর্থের ব্যয়বরাদ্দ
আইন সভার অনুমোদন না পেলে কার্যকরী হয় না। কংগ্রেসের অনুমোদন না পেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি ক্ষমতাশালী
রাষ্ট্রপতিও সরকারি কোষাগার থেকে কোন অর্থ ব্যয় করতে পারেন না। বিভিন্নসংসদীয় কমিটির তথা সরকারি হিসাব
কমিটির মাধ্যমে আইনসভা সরকারের আয় ও ব্যয় সংক্রান্তবিষয়ে নজরদারী করে এবং জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করে।
 শাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রণ : সংসদীয় সরকারে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ পরষ্পর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে কাজ করে।
এ পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সকল কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট শাসন বিভাগের দায়বদ্ধতা ও
জবাবদিহিতা। এতে আইন বিভাগ প্রত্যক্ষভাবে শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন বিভাগের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও
আস্থা না থাকলে মন্ত্রিপরিষদ ক্ষমতাসীন থাকতে পারে না। মন্ত্রীরা তাঁদের সরকারি কার্যাবলীর জন্য একক ও যৌথভাবে
আইন সভার নিকট দায়ী থাকেন। আইন পরিষদ মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ, সমালোচনা, পদত্যাগ দাবি, সরকারি বিল
বা বাজেট সংশোধন কিংবা প্রত্যাখ্যানের হুমকি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতিতে,
বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট কোন উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে পারেন
না। কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতীত কোন অর্থবিল কার্যকরী হয় না। আইন সভায় বিভিন্নস্থায়ী কমিটি সরকারি কাজের
বিচার বিশ্লেষণ করে সে মোতাবেক আইন প্রণয়নের জন্য সুপারিশ পেশ করে।
 বিচার সংক্রান্তকাজ : আইনপরিষদের কিছু বিচার বিভাগীয় কাজও রয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ রাষ্ট্রপতির
বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘন, গুরুতর অসুস্থতা ও রাষ্ট্রীয় কর্ম সম্পাদনে অসামর্থের অভিযোগ আনলে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে
অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষে তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের ভোটে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করতে পারে। ব্রিটেনে আইনসভার
উচ্চ কক্ষ হাউস অব লর্ডস আইনজ্ঞ লর্ডদের নিয়ে আপীল মামলার উচ্চতম আদালত বা প্রিভি কাউন্সিল গঠন করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকংগ্রেসের দ্বিতীয় কক্ষ সিনেট রাষ্ট্রপতি এবং উচ্চতর সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হলে তার বিচার করে থাকে।
 নির্বাচন সংক্রান্তকাজ : আইন পরিষদের নির্বাচন সংক্রান্তকাজ সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশে ও ভারতে আইনপরিষদ
(জাতীয় সংসদ এবং পার্লামেন্ট ও বিধানসভা) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার পদে নির্বাচনও
আইনসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আইন প্রণয়নে জটিলতা নিরসনের জন্য আইন পরিষদে অনেক সময় বিভক্তি
ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। নির্বাচন সংক্রান্তকাজের এটি অন্যতম দিক।
 জাতীয় বিতর্ক ও আলোচনার ফোরাম: আইনপরিষদ একটি দেশের কেন্দ্রবিবন্দু। জাতীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে
আলোচনা, বিতর্ক ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে আইন প্রণেতাগণ সিদ্ধান্তেপৌছান এখানে। এখানে জনগণের মতামত
ও স্বার্থের সম্মিলন ঘটে। এখানে মতবিনিময় ও বিতর্কের বিবরণ বিভিন্নসংবাদ ও গণমাধ্যমে জনগণের নিকট পৌঁছে।
ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ও সচেতনতার বিকাশ ঘটে। জনগণের কথা সরকারকে ও সরকারের
কার্যাবলীর বিস্তারিত বিবরণ জনগণের কাছে পৌঁছাবার সেতু হিসাবে কাজ করে আইন বিভাগ।
 জনমত গঠন: বর্তমান যুগ আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস ও শাসন বিভাগের প্রাধান্য বৃদ্ধির যুগ। এখানে মন্ত্রিপরিষদ তথা
নির্বাহী বিভাগের গুরুত্ববিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া সত্তে¡ও সরকারের স্থিতি ও স্থায়িত্বরক্ষায় জনমত গঠনের কাজটি
আইনসভার সদস্যদের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়। আইনপরিষদের সদস্যগণ নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সরকারের পক্ষে-
বিপক্ষে জনগণকে সংগঠিত করে। ফলে নির্ধারিত মেয়াদে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, স্বস্তির সাথে কাজ করা সম্ভব হয় শাসন বিভাগের পক্ষে।
 বিবিধ কার্যাবলী : আইনপরিষদ নির্ধারিত কাজের বাইরে অন্যান্য নানাবিধ কার্যাবলী সম্পাদন করে। সদস্যদের নির্বাচনী
যোগ্যতা নির্ধারণ, অপরাধমূলক ও অসৌজন্যপূর্ণ কাজের জন্য নিন্দা জ্ঞাপন, নিজ দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ ও
ভোটদানের অপরাধে বহিস্কার, স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারের অনুপস্থিতিতে সভা পরিচালনার জন্য সভাপতি প্যানেল
মনোনয়ন, বিভিন্নকমিটি গঠন, কমিটির বৈঠকে যোগদান এবং এতে গৃহীত সিদ্ধান্তস্পীকারের মাধ্যমে সভাকে
অবহিতকরণ, রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে স্পীকার কর্তৃক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ
প্রস্তাব আনয়ন, জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্নবিষয়ে কমিশন গঠন ইত্যাদি কাজ আইনপরিষদের আওতাভুক্ত।
পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যেক দেশেই আইনপরিষদ গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে। দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতা রক্ষায় এর ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রণীত আইনকে কাজে লাগাবার ব্যবস্থা আইনসভা করে থাকে।
তাই গিলক্রাইস্ট বলেন,
আইন প্রণয়ন পদ্ধতি
আইনপ্রণয়নের সার্বজনীন কোন পদ্ধতি নেই। বিভিন্নদেশের আইনপরিষদ বিভিন্নভাবে আইনপ্রণয়ন করে থাকে। মোটামুটি
একটি ধারণা লাভের উদ্দেশ্যে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের আইনপরিষদ কর্তৃক আইনপ্রণয়ন পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা
হল।
আইন প্রথমে খসড়া প্রস্তাব আকারে আইনপরিষদে উত্থাপন করা হয়। আইনের এ প্রস্তাবকে বিল (ইরষষ) বলে। বিল সাধারণত
দু’প্রকার হয়। ১. পাবলিক বিল ২. প্রাইভেট বিলসমগ্রদেশে বা দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের
জন্য প্রযোজ্য এমন আইনের প্রস্তাব যখন উত্থাপিত হয় তখন তা হয় পাবলিক বিল। যে সব আইন নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি,
সংস্থা, গোষ্ঠী বা স্থানীয় এলাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেগুলোর প্রস্তাবই প্রাইভেট বিল।
পাবলিক বিলকে আবার দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১. সরকারি বিল ও ২. বেসরকারি সদস্য বিল যে বিল বা আইনের প্রস্তাব সরকারের কোন মন্ত্রী উত্থাপন করেন তাকে সরকারি বিল বলে। অন্যদিকে আইনপরিষদের
অন্য কোন সাধারণ সদস্য যদি কোন প্রস্তাব উত্থাপন করেন তবে তা হবে বেসরকারি সদস্য বিল।
প্রস্তাব হিসাবে উত্থাপিত হবার পর কয়েকটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে একটি বিল আইনে পরিণত হতে পারে। প্রথম পর্যায়ে বিলের
খসড়া তৈরি করতে হয়। সরকারী বিল হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিলের রূপরেখা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য
মন্ত্রিসভায় পেশ করেন। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মচারিগণ খসড়াটি তৈরি করেন। তৈরি হবার পর
পুনরায় সম্মতির জন্য মন্ত্রিসভায় পেশ করতে হয়। বেসরকারি সদস্য বিল সংশ্লিষ্ট সদস্য নিজেই প্রস্তুত করেন।
মন্ত্রিসভার সম্মতি পাবার পর আইনপরিষদে প্রস্তাব আকারে বা আগে নোটিশ দিয়ে ঐ মন্ত্রী কিংবা ঐ সদস্য বিল উত্থাপনের জন্য
স্পীকারের মাধ্যমে আইনপরিষদের অনুমতি চান। অনুমতি পেলে বিলটি উত্থাপনের যৌক্তিকতা দেখিয়ে মন্ত্রী বা সদস্যকে
ব্যাখ্যা প্রদান করতে হয়। এ ব্যাখ্যার উপর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তারপর স্পীকারের অনুমতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটি
উত্থাপন করা হয়। এসময় মন্ত্রী বা সদস্য শুধুমাত্র বিলটির শিরোনাম পড়ে দেন। পড়ার আগে অবশ্য খসড়া বিলের কপি
সকল সদস্যকে বিতরণ করা হয়। বিল পেশ করার এ পর্যায়কে প্রথম পাঠ বলে।
এরপর বিলটির উত্থাপক বিলের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তুইত্যাদি সম্পর্কে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। তারপর বিলের উপর বিতর্ক শুধু
হয়। বিতর্কের পর বিলটি গ্রহণ করা হবে কিনা তার উপর ভোট নেওয়া করা হয়। সরকারী বিলগুলো সাধারণত গৃহীত হয়।
বেসরকারি সদস্য বিল-এর ক্ষেত্রে গৃহীত না হবারই সম্ভাবনা থাকে। বিল গ্রহণ বা বর্জনের এ পর্যায়কে দ্বিতীয় পাঠ বলে।
দ্বিতীয় পাঠে অনুমোদিত বা গৃহীত হবার পর বিলটিকে স্থায়ী কমিটিতে পাঠান হয়। কমিটিতে বিলটির খুঁটিনাটি বিশদভাবে
আলোচিত হয়। এ সময় কমিটি বিলটির উপর বা এর অংশবিশেষের উপর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে। এর কোন
অংশ গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে। এভাবে বিশদ বিচারবিবেচনার পর কমিটি বিলটি সম্পর্কে প্রতিবেদন পেশ করে।
এরপর কমিটির প্রতিবেদনের উপর আইনপরিষদে ধারাওয়ারী আলোচনা হয়। প্রতিবেদনে কমিটি যেসব সংশোধনের
প্রস্তাব রাখে তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কের পর প্রতিটি ধারায় সংশোধনী প্রস্তাবও আনা যেতে পারে। সবকিছু নিয়ে আলোচনা
ও বিতর্কের পর প্রতিটি ধারা ও সংশোধনী প্রস্তাবসম্পর্কে ভোট নেয়া হয়।
বিল পাসের এটি হল শেষ পর্যায়। শেষ পর্যায়ে বিলটির উপর আবার সাধারণ আলোচনা হয়। এ পর্যায়েও সংশোধনী আনা
যায়। তবে তা মৌখিকভাবে। কিন্তুএ পর্যায়ে বিলের কোন ধারার পরিবর্তন করা যায় না। পরিবর্তন করতে হলে তা আবার
কমিটিতে পাঠাতে হয়। পরিবর্তন প্রয়োজন হলে বিলটিকে চূড়ান্তভাবে গ্রহণের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট গ্রহণ করা হয়। পক্ষে বেশি
ভোট পড়লে বিলটি আইনপরিষদে গৃহীত হয়েছে বলে স্পীকার ঘোষণা করেন। সর্বশেষ এ পর্যায় তৃতীয় পাঠ নামে পরিচিত।
এ পর্যায় শেষ হলে এককক্ষ বিশিষ্ট্য আইনপরিষদের ক্ষেত্রে স্পীকার বিলটিকে সত্যায়ন করে রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতির জন্য পাঠিয়ে
দেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনপরিষদ হলে নিম্নকক্ষে বিল পাস হবার পর উচ্চকক্ষে পাঠানো হয়। উচ্চকক্ষে গৃহীত হবার পরই তা
রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়। এভাবে আইনের একটি প্রস্তাব বিভিন্নপর্যায় শেষে রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতিসূচক
স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয়।
সারকথা
উপরের আলোচনা হতে এটা ষ্পষ্ট যে, আইনপরিষদ সরকারের মূল বিভাগ। এ বিভাগ প্রণীত আইন দ্বারা রাষ্ট্রশাসিত হয়,
বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে চলে। এ বিভাগের মূল কাজ আইন প্রণয়ন, প্রচলিত আইনের সংশোধন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন। কিন্তু
এর পাশাপাশি এর অন্যান্য কাজও রয়েছে। তার মধ্যে শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ, তদারকি, কোন কোন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান
নির্বাচন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হেফাজত, সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্রপতি ও
উচ্চপদস্থসরকারী কর্মকর্তা এমনকি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের বিচারকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তও বিচারকার্যও
আইনপরিষদ করে থাকে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার পুরোপুরি আইন পরিষদের উপর নির্ভরশীল। আইনপরিষদ তার মূলকাজ
আইনপ্রণয়ন বিভিন্নস্তর বা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। আইন বিল বা প্রস্তাব আকারে উত্থাপিত হবার পর কমিটিতে প্রেরণ,
আলোচনা, বিতর্ক, সংশোধনী ইত্যাদির পর সমগ্রপরিষদের ভোটে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতির মাধ্যমে আইন নাম
ধারণ করে। আইনপরিষদের কার্যকারিতা একটি সফল সরকারের পরিমাপক।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. সরকারের মধ্যে কোন বিভাগের প্রাধান্য বেশি ?
ক. মন্ত্রিসভার;
খ. বিচারবিভাগের;
গ. আইনপরিষদের;
ঘ. নির্বাচক মন্ডলীর।
২. আইনপরিষদের মূল কাজ কোনটি ?
ক. আইন প্রণয়ন;
খ. আইনের সংশোধন;
গ. আইন পরিমার্জন;
ঘ. আইন বাস্তবায়ন তদারকি।
সঠিক উত্তর ঃ ১.গ ২.ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. আইন পরিষদ কি?
২. আইন পরিষদের দুটি উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ দিন।
৩. সরকারী ও বেসরকারী বিলের মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. গণতান্ত্রিক সরকারে আইনপরিষদের গুরুত্ববর্ণনা করুন।
২. “সরকারের সব কটি বিভাগের মধ্যে নিঃসন্দেহে আইনসভাই সর্বোচ্চ স্থানটি অধিকার করে আছে।” উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ করুন।
৩. কিভাবে আইন প্রণীত হয় ? ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]