বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায় ? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় কি কি রক্ষাকবচ প্রয়োজন ?

বিচার বিভাগের গুরুত্ব
শাসনবিভাগকে যদি রাষ্ট্রের সংহতি ও নিরাপত্তার রক্ষক, রক্ত সঞ্চালনকারী ঋৎপিন্ড, সরকারের মূখ্য কর্ম নির্বাহী গণ্য করা হয়
এবং আইনবিভাগকে গণ্য করা হয় রাষ্ট্রের আইনগত পরিচয়ের উৎস ও শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণকারী অঙ্গ হিসাবে, তাহলে
বিচারবিভাগকে নাগরিকদের মুখপাত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা এবং অধিকারের রক্ষাকবচ বলে গণ্য করতে হবে। বস্তুত বিচার
বিভাগ আছে বলেই নাগরিকগণ শাসন কর্তৃত্বনিশ্চিন্তেশাসকদের হাতে অর্পণ করে, আইন রক্ষার দায়িত্বপ্রদান করে, দুষ্টের
দমন ও শিষ্টের পালনে ভ‚মিকা নির্ধারণ করে। কারণ, এসব কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার হলে কিংবা
আইন ভঙ্গ করা হলে যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তহয় তবে বিচার বিভাগ ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়াতে পারে। একটি রাষ্ট্রের
চরিত্র গণতান্ত্রিক না স্বৈরতান্ত্রিক তা বিচারবিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলী দ্বারা বোঝা যায়। বলা হয় যে, বিচার বিভাগ
শাসনবিভাগের কর্মনির্ধারক প্রভু স্বরূপ। বর্তমানে বিচারবিভাগের দক্ষতা, কুশলতা ও সক্রিয় ভূমিকাকে নাগরিক অধিকার
সংরক্ষণ এবং সমাজে শান্তিও শৃঙ্খলা রক্ষার মূল মাপকাঠি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের দক্ষতা বিচার বিভাগের
সচেতন ভূমিকার উপর নির্ভরশীল। বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার রক্ষা ও রাষ্ট্রের কর্তব্য নির্ধারণে নিয়ামক হিসাবে কাজ
করে। গণতান্ত্রিক সমাজে বিচার বিভাগের বলিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে
সমর্থ হয়। সেজন্য স্বৈরাচারী একনায়কগণ তাদের ক্ষমতাকে নিরংকুশ নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে বিচার
বিভাগের উপর।
বিচার বিভাগের কার্যাবলী
কোন কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিচার বিভাগের সাংবিধানিক কার্যাবলীকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এদের মধ্যে এলান বল
(অষষধহ ইধষষ) অন্যতম। তাঁর মতে বিচার বিভাগ চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ঃ (১) বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ও সংবিধানের
ব্যাখ্যা প্রদান, (২) প্রতিষ্ঠানগুলোর পারষ্পরিক দ্ব›দ্ব ও বিবাদ মীমাংসা, (৩) রাজনৈতিক ব্যবস্থা সমর্থন ও সংরক্ষণ এবং (৪)
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ । বিচারবিভাগ এ ছাড়াও কিছু কাজ সম্পাদন করে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ (১) আইনপ্রণয়ন,
(২) আইনের ব্যাখ্যা দান, (৩) ন্যায়বিচার সম্পাদন, (৪) পরামর্শদান, (৫) শাসনবিভাগীয় কাজ এবং (৬) তদন্তকাজ।
নিচে এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল।
 বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ও সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান: আইনবিভাগ প্রণীত আইন এবং শাসন বিভাগের কার্যক্রম আইন
ও সংবিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা বিচারবিভাগ তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এ কাজকে বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা বলে।
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রেবিচারবিভাগের এ ক্ষমতা অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষমতাবলে বিচারবিভাগ সংবিধান বিরোধী আইন
কিংবা নির্বাহী আদেশ বাতিল করে সংবিধানের মর্যাদা ও সংহতি রক্ষা করে।
 প্রতিষ্ঠানিক দ্ব›দ্ব বিবাদ মীমাংসা: যুক্তরাষ্ট্রীয় ধরনের সরকারে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও বিবাদ দেখা
দিতেই পারে। কারণ রাষ্ট্রের কাজের সীমানা ও প্রকৃতি এতই বিস্তৃত ও জটিল যে, সব সময় তার মধ্যে বিভাজন রেখা
বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সাংবিধানিক আদালত হিসাবে এদের মধ্যকার দ্ব›দ্ব নিরসন করে।
 রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমর্থন ও সংরক্ষণ: মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক দেশের বিচার বিভাগ সেই দেশের প্রচলিত রাষ্ট্র
ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। এ ব্যবস্থা যদি গণতান্ত্রিক হয় তবে বিচার বিভাগের কাজ ও ভূমিকায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রকাশ
ঘটবে। যদি তা একনায়কতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক হয় তবে বিচার বিভাগকে অন্যায়ভাবে এর জয়গানে এবং নাগরিক
অধিকার হরণ ও সংকুচিতকরণে ব্যবহার করা হবে। এই ব্যবস্থার রীতি প্রকৃতি তথা সরকারি নীতি ও কার্যাবলীর প্রতি
সমর্থন প্রদান করা বিচার বিভাগের অন্যতম কাজ। এ কাজের মধ্য দিয়ে বিচারবিভাগ সরকারের ধারাবাহিকতা ও
স্থিতিশীলতা রক্ষা করে।
 নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেনাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিচার বিভাগ অভিভাবকের ভূমিকা
পালন করে। সরকারের কোন সিদ্ধান্তবা কাজ নাগরিক অধিকার হরণ করলে আবেদনক্রমে বিচার বিভাগ তা সংবিধান
পরিপন্থিও বাতিল ঘোষণা করে। সংবিধানে লিখিত নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হলে বিচার বিভাগ ক্ষুব্ধ ব্যক্তির
পক্ষে দাঁড়ায়।
 আইন প্রণয়ন: অপরাধের বিচার করে রায় প্রদান করতে গিয়ে বিচার বিভাগকে অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কোন কোন মামলার প্রকৃতি এমন জটিল হয় যে, প্রচলিত আইনে তার রায় দেওয়া সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় বিচারক অন্য
কোন দেশের অনুরূপ মামলার দৃষ্টান্তদেখে কিংবা নিজ অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে অপরাধের প্রকৃতি নির্ণয়
করেন এবং ন্যায় রক্ষার তাগিদে রায় প্রদান করেন। বিচারকের ঐ রায় পরবর্তিতে একই ধরনের মামলায় রায় প্রদানের
ক্ষেত্রে আইন হিসাবে কাজ করে। এ ধরনের আইনকে বিচার বিভাগ প্রণীত আইন বলা হয়।
 আইনের ব্যাখ্যা দান: বিচার বিভাগ মামলার রায় প্রদানের মাধ্যমে আইনপরিষদ কর্তৃক প্রণীত আইনের ব্যাখ্যা দান করে।
প্রণীত আইন তখনই মূর্ত হয় যখন তা বিচার কাজে লাগানো হয়। বিচারক মামলার রায় দিতে গিয়ে আইনকে মূর্ত করে
তোলেন, আইনের অষ্পষ্টতা নিরসন করেন, আইন প্রণেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে প্রচলিত আইনের যথার্থতা তুলে
ধরেন।
 ন্যায় বিচার সম্পাদন: সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন ন্যায়বিচার সম্পাদন বিচার
বিভাগের মৌলিক কাজ। এক্ষেত্রে বিচারকগণ দোষী ব্যক্তির শাস্তিবিধান করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কোনক্রমেই
যেনো কোন নির্দোষ ব্যক্তি শাস্তিনা পায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। সে জন্য বাস্তব ঘটনাবলী সংক্রান্ততথ্য, নথিপত্র ও
সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হয়। যে কোন ধরনের মামলাতেই বিচারক এ কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করেন, যাতে
অপরাধের মাত্রা নির্ণয় করে প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্ত করা ও দন্ড প্রদান করা সহজ হয়।
 পরামর্শদান: বিচার বিভাগ সাংবিধানিক ও আইনগত জটিলতা নিরসনে প্রধান নির্বাহীকে পরামর্শ প্রদান করতে পারে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কোন জনগুরুত্বপূর্নবিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের নিকট পরামর্শ চাইলে কোর্ট সংবিধান অনুযায়ী ঐ বিষয়
রাষ্ট্রপতির নিকট পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে পারে। তবে এ পরামর্শ বা ব্যাখ্যা গ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
 শাসন সংক্রান্তকাজ: বিচারবিভাগ কিছু নির্বাহী কাজ সম্পাদন করে। এ সব কাজের মধ্যে রয়েছে উচ্চ আদালত কর্তৃক
অধস্তন আদালতগুলোর কার্য বিধিমালা প্রণয়ন, কর্মচারী নিয়োগ, নাবালকের সম্পত্তির জন্য তত্ত¡াবধায়ক নিয়োগ, বিচারক
নিয়োগে শাসন বিভাগকে পরামর্শ প্রদান, মামলার রায় কার্যকরকরণে শাসনবিভাগকে নির্দেশ প্রদান, রাষ্ট্রপ্রধানের
শপথগ্রহণ পরিচালনা, ইত্যাদি । তাছাড়া দৈনন্দিন কর্মপ্রবাহ সচল রাখার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগ যেসব কাজ করে
সেগুলোও শাসন বিষয়ক কাজের পর্যায়ভুক্ত।
 তদন্তকার্য: বিচার বিভাগ তার কাজের স্বরূপ ও প্রকৃতির জন্য মানুষের শ্রদ্ধা ও সম্মানের কেন্দ্রবিবন্দুতে পরিণত হয়েছে।
উপেক্ষিত ও অধিকার-বঞ্চিত মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল বিচারবিভাগ। বিচার বিভাগের এ বৈশিষ্ট্যের কারণে সমাজে
সংঘটিত বিভিন্নগুরুতর অন্যায় ও দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্বএকে পালন করতে হয় । মানুষের মনে এ দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই
একাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নহতে পারে যে, বিচারকগণ নির্ভীক, ন্যায়নিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। তবে
এসব তদন্তরিপোর্ট প্রকাশিত না হলে অথবা এ রিপোর্ট অনুযায়ী শাসনবিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিচার বিভাগের
পক্ষে প্রতিকারমূলক কিছুই করার থাকে না।
বিচারবিভাগের স্বাধীনতা: স্বাধীনতার রক্ষাকবচ
স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজে বিচার বিভাগের গুরুত্বঅপরিসীম। এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণ, অপরাধির শাস্তিবিধান ও
সংবিধান সমুন্নতকরণে বিচারবিভাগ মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ
সংরক্ষণ করে এবং তার বিকাশ ঘটায়। একটি সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং জনপ্রিয়তার উত্থান-পতন নির্ভর করে
বিচারবিভাগের কর্মদক্ষতা ও কার্যকারিতার উপর। বিচার বিভাগের উৎকর্ষ, দক্ষতা ও প্রকৃতির উন্নয়ন তথা শ্রীবৃদ্ধি সাধনের
জন্য এর স্বাধীনতা অপরিহার্য।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে সেই অবস্থাকে বুঝায় যখন বিচার বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শাসন বিভাগ,
আইনবিভাগ, বিভিন্নপ্রকার চাপ সৃষ্টিকারী, কায়েমী শক্তি ইত্যাদির প্রভাব, নিয়ন্ত্রণ, হুমকি ও চাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং
কেবলমাত্র সংবিধান, প্রচলিত আইন, মূল্যবোধ, বিবেক, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও পেশাদারিত্ত¡ দ্বারা পরিচালিত হয়। বিচারবিভাগের
স্বাধীনতা একজন বিচারককে তাঁর রায় প্রদানের ক্ষেত্রে এবং সত্যানুসন্ধান ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠায় সব রকমের সামাজিক,
রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি ও সরকার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখে। অধ্যাপক গার্ণার বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বলতে সব ধরনের
প্রভাব প্রতিপত্তি হতে রায়দানের ক্ষেত্রে বিচারকের মুক্ত থাকার ধারণা মানতে রাজী নন। তাঁর মতে, বিচারকগণ যদি প্রজ্ঞা,
সাধুতা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতার অভাবে পীড়িত হন তাহলে বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আপনা আপনি রক্ষা হয় না। এর জন্য কতকগুলো রক্ষাকবচ প্রয়োজন। নিম্নেসে সম্বন্ধে আলোচনা
করা হল।
 নিয়োগ পদ্ধতি ঃ বিচারক নিয়োগের পদ্ধতি যদি যুক্তিসম্মত না হয় তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্নহতে বাধ্য। প্রথমে
চাই উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত, জ্ঞানী, ধীশক্তি সম্পন্ন, মেধাবী, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণকে এ পেশায় নিয়োগ। সেজন্য
এমন নিয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যাতে যথাযোগ্য ব্যক্তিবর্গ এ পেশায় আসতে পারেন। বিচারক নিয়োগের জন্য
প্রধানত তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যথা ঃ (১) আইনসভা কর্তৃক নির্বাচন, (২) সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে
জনগণ কর্তৃক নির্বাচন এবং (৩) শাসনবিভাগ কর্তৃক বাছাই পদ্ধতিতে নিয়োগ। এ তিনটি পদ্ধতির মধ্যে প্রথম দুটি
বিভিন্নভাবে ত্রæটিযুক্ত বলে জনপ্রিয় নয় । বিশেষতঃ জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচনের ব্যাপারে লাস্কি বলেন, “সব ধরনের
নিয়োগ পদ্ধতির মধ্যে জনগণ কর্তৃক নির্বাচন পদ্ধতির নিকৃষ্টতার কোন ব্যতিক্রম নেই।” তৃতীয় পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন
বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিভিন্নপরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা বাছাই করা হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এ
পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা কমিশন বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে
যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ প্রার্থী বিচারকদের একটি প্যানেল তৈরি করবেন। ঐ প্যানেল হতে রাষ্ট্রপ্রধান বিচারক নিয়োগ
দান করবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর কিংবা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কোন পরিষদের সুপারিশ গ্রহণ করা
যেতে পারে। লাস্কি বলেন, “বিচারকদের নিয়ে গঠিত স্থায়ী কমিটির সম্মতিক্রমে বিচার মন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে সকল
বিচার বিভাগীয় নিয়োগ সম্পন্নহলে তাঁদের কাজে সবদিকেরই প্রতিনিধিত্ত¡ঘটতে পারে।”
 চাকরির স্থায়িত্ব: বিচারকগণ একবার নিযুক্ত হলে যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তস্বপদে বহাল থাকতে পারেন তার
সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও নিশ্চয়তা থাকা প্রয়োজন। শাসনবিভাগ যদি বিচারকগণকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা লাভ করে তবে
কিছুতেই বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা সম্ভব নয়। বিচার সম্পাদনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি কিংবা মারাত্মক চারিত্রিক স্খলনের
অভিযোগ নিরপেক্ষ তদন্তের দ্বারা উপযুক্ত ভাবে প্রমাণিত হলেই কেবল বিচারকদেরকে অপসারণ করা যেতে পারে। কোন
কোন দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার পদ্ধতিতে উচ্চতর আদালতের বিচারকদের অপসারণ করার ব্যবস্থা
রয়েছে। তবে পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যাতে বিচারকগণ রাজনৈতিক ও দলীয় কারণে বা প্রধান নির্বাহী কর্তৃক অপসারিত
হবার ভয়ে ভীত না থাকেন। নইলে কিছুতেই তিনি নির্ভীক চিত্তে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারবেন না।
 উচ্চতর বেতন ও পদোন্নতির নিশ্চয়তা: বিচারকগণ অনেক সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে ন্যায়বিচার
করতে ব্যর্থ হন। তাদের বেতন, ভাতা ও চাকরি সংক্রান্তসুযোগ সুবিধা অন্যান্য বিভাগের চেয়ে ভিন্নতর হওয়া উচিত।
এমন বেতন প্রদান করতে হবে যাতে মানসম্মান নিয়ে ভদ্রভাবে সমাজে বসবাস করা যায়। তাঁদের জন্য সর্বোচ্চ সামাজিক
মর্যাদা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় যোগ্যতার শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পদোন্নতির সুযোগ যদি অবারিত না হয় তাহলে
বিচারকদের মধ্যে হতাশা বাড়বে, কর্মোদ্যম কমে যাবে এবং ন্যায় বিচার সম্পাদনে বিঘœঘটবে। জ্যেষ্ঠতা নীতির
পাশাপাশি মেধা, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাকে পদোন্নতির মাপকাঠি করা উচিত। তাছাড়া তাঁদের চাকরি দীর্ঘস্থায়ী হওয়া
প্রয়োজন। সেই সাথে অবসর গ্রহণের পর পর্যাপ্ত ভাতা ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রভাবমুক্ত বিচার সম্পাদনে সহায়ক হতে
পারে। হ্যামিলটন নামক একজন প্রখ্যাত বিচারপতি এ প্রসঙ্গে বলেন, মানব প্রকৃতির সাধারণ ধারায় মানুষের ইচ্ছাশক্তি
তার অস্তিত্ত¡রক্ষার শক্তি দ্বারা নির্ণীত হয়। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হলে বিচারকের পক্ষে ন্যায়বিচার ও পক্ষপাত শূন্য
দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘদিন ধারণ করা সম্ভব নয়।
 বিশেষ অধিকার সংরক্ষণ: এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবী বিচারকদের জন্য তিনটি শর্ত পূরণের দাবি করেন ঃ ক.
বিচারপতিগণকে এ অধিকার দিতে হবে যাতে তাঁরা অপরাধীগণকে তাঁদের সামনে হাজির করাতে পারেন, খ. বিচারকার্য
তথা আদলতের গুরুত্বজনসমক্ষে তুলে ধরতে পারেন, এবং গ. আদালতের রায় কার্যকরকরণে বিচারকগণকে ক্ষমতা
প্রদান।
 শাসন বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা: স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার কার্যকর উপায় হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন।
বিচারকের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যদি শাসন বিভাগের কর্তৃত্ত¡বহাল করা হয় তাহলে বিচার বিভাগের
স্বাধীনতা অর্থহীন প্রলাপে পরিণত হবে। বাংলাদেশে এ প্রবণতা খুব বেশি। এখানে জেলা জজকোর্ট সহ নিম্নতম আদালত
ও ম্যাজিস্ট্রেসীর দায়িত্বেনিয়োজিত বিচারকদের চাকরি সংক্রান্তনিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
 নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পদ্ধতি: সব গণতান্ত্রিক সমাজেই বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে প্রত্যক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। এ কাজে বিচারবিভাগ নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে: ক. হেবিয়াস করপাস বা বন্দি
প্রত্যক্ষীকরণ, খ. ম্যান্ডামাস এবং প্রভৃতি অন্যতম। অধিকার বঞ্চিত বা ক্ষুব্ধ যে কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে উপরে বর্ণিত
পদ্ধতি অনুযায়ী হুকুমনামা জারি করে। বিচার বিভাগ যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে বিচারের জন্য আদালতে হাজির করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।
 উপরে বর্ণিত রক্ষাকবচগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় অপরিহার্য সন্দেহ নেই। কিন্তুরক্ষাকবচই যথেষ্ট নয়।
বিচারকগণের কর্মসম্পাদনের ইচ্ছা, স্বাধীনভাবে কর্মসম্পাদনের মত মনোবল, পেশাদারিত্ব, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি
এবং সর্বোপরি আইনের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের সম্মিলন ঘটান সম্ভব হলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাস্তব ও অর্থপূর্ণ হবে।
সারকথা
শাসনবিভাগ যেমন রাষ্ট্রের অস্তিত্ত¡ও নিরাপত্তা রক্ষায় আইনের সহায়তা প্রদানে যেমন আইনবিভাগ, তেমনি বিচারবিভাগ রাষ্ট্রের
মূল উপাদান নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। এ বিভাগ সরকারের প্রকৃত গণতান্ত্রিক না স্বৈরতান্ত্রিক
তা নির্ধারণ করে। এ দায়িত্বের অংশ হিসাবে সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা দেয়, বিবাদ মিমাংসা করে, নাগরিকগণের
অভিভাবকত্ত¡ করে এবং সর্বোপরি সম্পাদন করে ন্যায়বিচার। এসব কাজ নিরপেক্ষভাবে করার জন্য বিচার বিভাগকে
শাসনবিভাগ এবং বিভিন্নসংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রভাব হতে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সর্বোপরি প্রয়োজন হবে বিচারকগণের
নিজস্বসদিচ্ছা, মনোবল, পেশাদারিত্বএবং জনগণ, আইন ও সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকার।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. একনায়কগণ বিচার বিভাগের কার্যকারিতা হ্রাস করে কেন ?
ক. তাদের ক্ষমতা নিরংকুশ করার জন্য;
খ. বিচারকদের দুর্নীতির জন্য;
গ. বিচার বিভাগের অদক্ষতার জন্য;
ঘ. আইন বিভাগের চাপের জন্য।
২. বিচার বিভাগের মৌলিক কাজ কোনটি ?
ক. আইন প্রণয়ন;
খ. সংবিধানের ব্যাখ্যা দান;
গ. তদন্তকার্য সম্পাদন;
ঘ. ন্যায়বিচার সম্পাদন।
৩. বিচারক নিয়োগের সর্বোত্তম পদ্ধতি কোনটি ?
ক. আইনসভার সদস্যগণ কর্তৃক বিচারক নির্বাচন;
খ. জনগণ কর্তৃক নির্বাচন;
গ. রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়ন;
ঘ. বাছাই পদ্ধতিতে নিয়োগ।
সঠিক উত্তর ঃ ১.ক ২.ঘ ৩.ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. বিচার বিভাগ কি?
২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বিচারবিভাগ শাসনবিভাগের কর্ম নির্ধারক প্রভুস্বরূপ। উক্তিটি ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিচার বিভাগের গুরুত্বআলোচনা করুন।
২. একটি রাষ্ট্রেবিচার বিভাগ কি কি কাজ সম্পাদন করে ? আলোচনা করুন।
৩. বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায় ? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় কি কি রক্ষাকবচ প্রয়োজন ? আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]