আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দিন। ম্যাক্সওয়েবার বর্ণিত আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।

আধুনিক শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রগুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করে থাকে। আমলাতন্ত্রএকটি মাধ্যম বিশেষ। আমলাতন্ত্রবলতে
এমন একটি ব্যাপক সংগঠনকে বোঝায় যার মাধ্যমে শাসকবর্গবা বিধি প্রণেতারা নিজেদের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার চেষ্টা
করেন। আমলাতন্ত্রের গুরুত্বসম্পর্কেঅধ্যাপক ফাইনার উল্লেখ করেন যে, “স্থায়ী সরকারী কর্মচারীদের সাহায্য ছাড়া আধুনিক
সরকারের অস্তিত্বরক্ষা করা অসম্ভব।” জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রেআমলাব্যবস্থা সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণভূমিকা
রাখে। এ কারণে, আমলাতন্ত্রকে আধুনিকীকরণের বাহন হিসাবে গণ্য করা হয়।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হল স্বেচ্ছামূলক সংগঠিত গোষ্ঠী। অধ্যাপক আলমন্ড এদেরকে এক ধরনের স্বার্থকামী গোষ্ঠী বলে অভিহিত
করেছেন। আধুনিক রাষ্ট্রেচাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ভিত্তিক পদ্ধতি ও কলাকৌশল অবলম্বন করে স্বার্থআদায় করে থাকে। উন্নত ও
উন্নয়নশীল সকল রাষ্ট্রেই সরকারের বিভিন্নবিভাগের উপর এদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আধুনিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের ন্যায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যে কোন সরকার ব্যবস্থাতেই আমলাতন্ত্রের
গুরুত্ব অপরিসীম। আমলাতন্ত্র ছাড়া দেশের শাসন পরিচালনা করা অসম্ভব। আধুনিক শাসনব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র প্রাণকেন্দ্ররূপে
বিবেচিত হয়। আমলামন্ত্রের ইংরেজী প্রতিশব্দ ইঁৎবধঁপৎধপু, শব্দটি ফরাসী ইঁৎবধঁ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হল
দপ্তর নির্ভর সরকার। আমলাতন্ত্র বলতে স্থায়ী বেতনভূক্ত দক্ষ ও পেশাদার কর্মচারীদের সংগঠনকে বুঝায়। সাধারণভাবে
সরকারের নীতি নির্ধারণ এবং সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মচারীগণ আমলা নামে অভিহিত। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আমলাতন্ত্রকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন। প্রফেসর ফাইনার বলেন, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি স্থায়ী, বেতনভূক্ত
এবং দক্ষ চাকুরীজীবি শ্রেণী।” প্রফেসর গার্ণারের মতে, “সরকারের সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা নির্ধারণে এবং সাধারণভাবে সরকার
পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মচারীগণই আমলানামে অভিহিত।” প্রফেসর অগ আমলাতন্ত্রের সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“রাষ্ট্রীয় কর্মচারীবৃন্দ হচ্ছে সুদক্ষ পেশাদারী অধীনস্ত কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতি নিরপেক্ষ থাকেন।”
আলন্ড ও পাওয়েলের মতে, “আমলাতন্ত্র বলতে ব্যাপক সংগঠনকে বুঝায় যার মাধ্যমে শাসকশ্রেণী নিজেদের সিদ্ধান্তকে কার্যকর
করে থাকে।”
ম্যাক্সওয়েবারের ধারণা
জার্মান সমাজতত্ত¡বিদ ম্যাক্স ওয়েবার তাঁর ঊংংধুং রহ ংড়পরড়ষড়মু নামক গ্রন্থে একটি আদর্শ কাঠামো হিসেবে আমলাতন্ত্রের
কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আমলাতন্ত্রের প্রকৃতি ও সাংগঠনিক রূপরেখা সম্পর্কে তিনি বিশদভাবে আলোচনা
করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ তত্ত¡ প্রকাশ করেছেন। তিনি কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আমলাতন্ত্রের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ
করেছেন। আসুন আমরা এবার ম্যাক্সওয়েবার কর্তৃক বর্ণিত আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করি।
 কর্ম পরিধি ঃ আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি বিদ্যমান থাকে। সাধারণ বিধি দ্বারা সংগঠনের কার্যপদ্ধতি
নির্ধারিত ও নির্দেশিত হয়। প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব ও অধিকার বিধিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে। একজন কর্মকর্তা
আগে থেকেই তার ক্ষমতার পরিসীমা ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন। বিধি অনুসারে প্রত্যেক কর্মচারী তাঁর কার্য
সম্পাদন করে থাকে।
 নিয়োগ পদ্ধতি ঃ আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারী নিয়োগের মূল মাপকাঠি হচ্ছে মেধা। লিখিত, মনসস্তাত্তি¡ক পরীক্ষা ও
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে মেধা যাচাই করা হয়। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, কারিগরি ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে চাকুরীর
অন্যতম যোগ্যতা ও শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত: নিরপেক্ষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
 পদ সোপান নীতি ঃ আমলাতন্ত্রের পদসোপান নীতি অনুসারে বিভিন্ন পদের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। এ
সংগঠনে উর্ধ্বতন ও অধস্তন সম্পর্ক বিরাজ করে। প্রতিটি নি¤œতর পদই কোন উচ্চতর পদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সহজ
কথায় বিভিন্ন পদের মধ্যে কর্তৃত্বগত সম্পর্ক নির্দিষ্ট থাকে।
 কর্মবন্টন বা বিভাগীয়করণ ঃ সংগঠনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় বা সামগ্রিক কার্যাবলীকে বিভিন্ন বিভাগ, সংস্থা
বা দফতরে বিভাজিত ও বন্টন করা হয়। সেখানে বিশেষ পদে কেবল বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেক কর্মচারী
তার কর্তব্য দক্ষতার সাথে পালনের ব্যাপারে দায়ী থাকেন।
 টেকনিক্যাল জ্ঞান ঃ আমলাতন্ত্রে টেকনিক্যাল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে চাকুরীর অন্যতম যোগ্যতা বা শর্ত হিসেবে গণ্য করা
হয়। কর্মচারীদের কারিগরী জ্ঞান লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়। ম্যাক্সয়েবারের মতে আমলা ব্যবস্থায়
টেকনিক্যাল জ্ঞান ও যোগ্যতার গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 লিখিত বিধিবিধান ঃ সংগঠনের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সৃপ্রতিষ্ঠিত বিধি বিধান থাকে। সংগঠনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গকে
ঐ সব বিধিমালা মেনে চলতে হয়। এসব বিধি মেনে চলার জ্য তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
 বেতন-ভাতা ঃ আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রধানত: বিভিন্ন পদের দায়িত্ব ও মর্যাদা অনুযায়ী শ্রেণী
বিন্যাস করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের বেতনক্রম ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে।
 নিরপেক্ষতা ঃ আমলারা উত্তেজনা ও আবেগের প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
পক্ষপাতিত্ত¡ বর্জন করে তাঁরা সবার সঙ্গে সেবামূলক সম আচরণ ও ন্যায়বিচার করতে প্রয়াসী হন। তারা অরাজনৈতিক,
নির্দলীয় ও নিয়মসিদ্ধভাবে কাজ করে থাকেন।
 অফিসিয়াল রেকর্ড ঃ এ সংগঠনে প্রশাসনিক কার্যাবলী, সিদ্ধান্ত এবং বিধিবিধান লিখিতভাবে রেকর্ড করে উপস্থাপন করা
হয়। সংগঠনের লিখিত নিয়ম-কানুন ও কাজগুলো অফিস নামক একটি সংস্থায় সংগঠিত হয়।
 পেশাদারিত্ব ঃ আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে নিয়োজিত কর্মচারীরা পেশাদার হিসেবে কাজ করে এবং চাকুরিজীবী শ্রেণীতে
পরিণত হয়। চাকুরিই তাদের জীবিকার বাহন। সিনিয়রিটি, কৃতিত্ব, মেধা ও যোগ্যতার মানদন্ডে তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া
হয়। পদোন্নতির বিষয়টি প্রধানত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিচার বিবেচনার উপর নির্ভরশীল।
ম্যাক্সওয়েবার কর্তৃক প্রদত্ত আমলাতন্ত্রে কাঠামো ও আচরণের বিন্যাস পরিলক্ষিত হয়। তাঁর আমলাতান্ত্রিক ধারণা ও ব্যাখ্যাবিশ্লেষণকে সর্বজনীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য এর বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই
তাৎপর্যপূর্ণ। ওয়েবারের আমলাতন্ত্রকে আদর্শ প্রকৃতির আমলাতন্ত্র বলা হয়।
সারকথা
আমলাতন্ত্রএমন এক ধরনের ব্যবস্থা যা প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। যেখানেই সরকার রয়েছে, সেখানে আমলাতন্ত্র রয়েছে।
জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের প্রচেষ্টায় আমলাতন্ত্র সার্থকরূপ লাভ করেছে। তিনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আমলা ব্যবস্থাকে বিচার করেছেন।
সঠিক উত্তরে টিক ( ) চিহ্ন দিন
১. আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি স্থায়ী বেতনভূক্ত এবং দক্ষ চাকুরীজীবি শ্রেণী। - এই সংজ্ঞাটি কে দিয়েছেন ?
ক. প্রফেসর আগ;
খ. প্রফেসর ফাইনার;
গ. প্রফেসর গার্ণার;
ঘ. প্রফেসর অষ্টিন।
২. ঊংংধুং রহ ঝড়পরড়ষড়মু গ্রন্থের লেখক কে ?
ক. ম্যাক্স ওয়েবার;
খ. হান্টিং টন;
গ. গার্ণার;
ঘ. ফাইনার।
৩. শাসক শ্রেণী তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে থাকেন কোন সংগঠনের মাধ্যমে ?
ক. রাজনৈতিক সংগঠন;
খ. পার্লামেন্টের মাধ্যমে;
গ. আমলাতান্ত্রিক সংগঠন দ্বারা;
ঘ. মন্ত্রীসভার মাধ্যমে।
৪. ম্যাক্সওয়েবার কে ?
ক. একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী;
খ. দার্শনিক;
গ. মনোস্তাত্তি¡ক;
ঘ. সমাজতত্ত¡বিদ।
উত্তরমালা ঃ ১. খ, ২. ক, ৩. খ, ৪. ঘ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দিন।
২. ম্যাক্সওয়েবার বর্ণিত আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]