বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও দিকসমূহ বর্ণনা কর

বাংলাদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়। সময় ১৯২০ সালের
১৭ মার্চ। জন্মস্থান ঢাকা হতে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে।
তাঁর মা সাহেরা খাতুন গৃহবধু। পিতা শেখ লুৎফর রহমান। পিতা ছিলেন জেলা জজ আদালতের
সেরেস্তাদার। কিশোর মুজিবের সাহসিকতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ১৯৩৯ সালে। শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী
ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলে স্কুলের ছাত্র শেখ মুজিবুর
রহমান তাঁদের পথ রূদ্ধ করে স্কুল বোর্ডিং এর ছাদ মেরামত করার দাবি করেন। এ ভাবে মুজিবের
রাজনীতির হাতেখড়ি হল বাংলার প্রবাদপ্রতিম দুই নেতার কাছে।
১৯৪২ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হন। গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম
লীগের ডিফেন্স কমিটির সম্পাদক
স্পষ্টবাদী, সাহসী ও উদ্যমী মুজিব
কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার
সময় বেকার হোস্টেলে থাকতেই
অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা
ও দেশপ্রেমের কারণে সোহ্রাওয়ার্দী,
ফজলুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দের আস্থা
অর্জন করেন। ১৯৪৬ সালের সাধারণ
নির্বাচনে ফরিদপুর জেলার কর্মভার দলের
পক্ষ হতে তার উপর অর্পিত হয়।
ইতোমধ্যে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের
সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায়
নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৪৭ সালে তিনি
¯œাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
মুজিবসহ কয়েকজন ছাত্রনেতার উদ্যোগে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র
লীগের’ জন্ম হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় পাকিস্তানের গভর্নর
জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র ‘উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ করার ঘোষণার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় ভ‚মিকা রাখেন। সরকার তাঁকে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পরবর্তীতে একই বছর
১১ সেপ্টেম্বর জেলে পাঠায়। ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ এর ২৩ জুন প্রধানত: মুসলীম লীগের
প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়। কারাবন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু দলের মুসলীম লীগের প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়।
যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ এর ফেব্রæয়ারীর শেষে মুক্তির পর মুজিব প্রাদেশিক আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনকে
সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, নেজামে ইসলামী, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও গণতন্ত্রী দল ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী
মোর্চা, ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করে। নির্বাচনে পরিষদের ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি
আসন লাভ করে। সরকারি দল মুসলিম লীগ পায় মাত্র নয়টি আসন। একজন কোটিপতি মুসলিম লীগ
নেতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেরো হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হলেন। তিনি
১৯৫৫ সালে কেন্দ্রীয় গণপরিষদেরও সদস্য নির্বাচিত হন। শেখ মুজিব এ সময় ‘কেন পূর্ববঙ্গের
অটনমি চাই’ শীর্ষক এক পুস্তিকা আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে প্রকাশ করে পূর্ব বাংলার উপর
উপনিবেশিক শোষণ ও পশ্চিম পাকিস্তানের বাজারে পরিণত করার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন
করতে শুরু করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে
দলের নাম হতে ‘মুসলিম’ কথাটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব আনলে প্রায় সর্বসম্মতভাবে তা গৃহীত হয়।
প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তারিখে সামরিক আইন জারী করেন। বিশ দিন
পর সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে
ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের নীল-নকশা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত একটি ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’
সংবিধান ১৯৬২ সালের ১ মার্চ তারিখে প্রবর্তিত হয়। সামরিক আইন জারীর সাথে সাথে মুজিবকে
গ্রেফতার এবং ১৪ মাস কারাভোগের পর ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান। ‘ঊষবপঃড়ৎধষ
ইড়ফরবং উরংয়ঁধষরভরপধঃরড়হ ঙৎফবৎ (ঊইউঙ)’-র অধীনে সোহ্রাওয়ার্দী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ
রাজনীতির অযোগ্য ঘোষিত হলেন। ১৯৬২-র ২৪ জুন মুজিবসহ পাকিস্তানের নয়জন নেতা ঘোষণা
করেন যে, গণপ্রতিনিধি ছাড়া আর কেউ শাসনতন্ত্র প্রণয়নের অধিকার রাখেন না। মুজিবের প্রস্তাবক্রমে
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি দলকে পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত
নেয়। পার্লামেন্টারী ধরণের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পূর্ব পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার
দাবী উত্থাপিত হয়।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ও পরবর্তী তাসখন্দ চুক্তির প্রেক্ষাপটে পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক নেতারা
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রæয়ারী লাহোরে এক জাতীয় সম্মেলন আহবান করলে বাঙালির জাতীয় মুক্তি ও
পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সভায় তাঁর ঐতিহাসিক
“ছয় দফা” কর্মসূচি উত্থাপন করেন। কর্মসূচিটি ১৮ মার্চ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের
কাউন্সিল অধিবেশনে “আমাদের বাঁচার দাবী- ছয় দফা কর্মসূচী” শিরোনামে ব্যাখ্যাসহকারে বিলি করা
হয়।
১৯৬৮ সালের ১৯ জানুয়ারী প্রায় দু’বছর কারাবাস শেষে মুক্ত হয়ে বেরুতেই আইয়ুব সরকার ঢাকা
সেনানিবাসে নিয়ে শেখ মুজিব ও আরো ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের করে।
অভিযোগ, এরা ভারতের আগরতলায় বসে ভারত সরকারের যোগসাজশে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন
করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। প্রধান আসামী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ এর ২৮ জানুয়ারী এক দীর্ঘ
জবানবন্দীতে তাঁর সংগ্রামী নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও পূর্ব বাংলার প্রতি শাসকগোষ্ঠীর উপেক্ষা ও
বঞ্চনা এবং অপশাসনের বিষয়ে নিজের ও তাঁর দলের দৃষ্টিভংগির বিবরণ দেন।
গণআন্দোলনের শক্তি বুঝতে পেরে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ১৯ ফেব্রæয়ারী রাওয়ালপিন্ডিতে বিরোধীদলীয়
নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় বসার আহŸান জানান। ২২ ফেব্রæয়ারী এক ঘোষণায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
প্রত্যাহার ও মুজিবসহ সকল আসামীকে মুক্তি দেয়া হল। পরদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভ‚ষিত।
আহŸানে রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে
ভ‚ষিত করে। এক সামরিক অভ্যুত্থানে ২৫ মার্চ আইয়ুবকে অপসারণ করে সেনাপ্রধান জেনারেল
ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হন। তিনি কঠোর হাতে জনশৃ খলা রক্ষা ও যথাশীঘ্র সাধারণ নির্বাচন
অনুষ্ঠানের সংকল্প ব্যক্ত করেন।
ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর ৩০ মার্চ ‘আইনগত কাঠামো আদেশ’ জারী করে জানান যে, জাতীয় ও
প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন যথাক্রমে ৭ ও ১৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু ২৮ অক্টোবর রেডিও
ও টেলিভিশনে এক ভাষণে পূর্ব বাংলার প্রতি অবহেলার সংখ্যাতাত্তি¡ক বিশ্লেষণ ও আলোচনার মাধ্যমে
তাঁর দলের কর্মসূচীর রূপরেখা তুলে ধরেন। কয়েকদিন পর ১২ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরের উপক‚লবর্তী
এলাকায় প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে আনুমানিক দশ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ
জনগণকে পূর্বাভাস দেয় নি, মানুষকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে নি, এমনকি ত্রাণকর্ম পরিচালনার
ক্ষেত্রেও গুরুতর অবহেলা ও নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দুর্গত মানুষের সেবায়
ঝাপিয়ে পড়ে শক্তিশালী কেন্দ্রের প্রবক্তাদেরকে ধিক্কার দেন। এরূপ প্রেক্ষাপটে ৭ ডিসেম্বর ও ১৭
ডিসেম্বর যথাক্রমে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব বাংলার জন্য
জাতীয় পরিষদের ১৬২টি সাধারণ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০টিতে জয়ী হয়। মহিলা
আসনসহ পূর্ব বাংলার মোট ১৬৯টি আসনে মধ্যে ১৬৭টিতে জয়ী হয়ে এই দল জাতীয় পরিষদের
নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে
আওয়ামী লীগ ২৯৮টি লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এর ৩রা জানুয়ারী রমনা রেসকোর্সে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী
লীগ দলীয় সদস্যগণের ‘শপথ গ্রহণ’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ১১ জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া
ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনার পর তাঁকে পাকিস্তানের ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ বলে অভিহিত
করেন। তিনি ১৩ ফেব্রæয়ারী ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ৩রা মার্চ
ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ভ‚ট্টো বলেন যে, তার দল অধিবেশনে যাবে না,
কারণ ঢাকায় যাবার পর তিনি ও তার সহকর্মীগণ ‘জিম্মী’ হয়ে পড়বেন। পয়লা মার্চ দুপুরে পাকিস্তান
বেতারে প্রচারিত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য
স্থগিত করেন। বঙ্গবন্ধু পরদিন ২রা মার্চ ঢাকায় ও ৩রা মার্চ সারাদেশে সর্বাত্বক হরতাল আহŸান
করলেন এবং তিনি ৭ মার্চ তারিখে রমনা রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা
করবেন বলে জানান।
২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসমাজ বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা
করে এবং সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করে।
৩রা মার্চ বঙ্গবন্ধু অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে পূর্ব বাংলার সকল দপ্তরে তালা লাগে।
ব্যাংক, বিমান, ডাক, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেলপথ সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর উপর প্রবল
চাপ ছিল স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য। এমনি অবস্থায় ৭ মার্চ ১৯৭১ রমনা রেসকোর্সে লক্ষ লক্ষ মানুষের
উপস্থিতিতে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়ে বলেন যে, জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতার
জন্যই এবারের সংগ্রাম পরিচালিত হবে। সংগ্রাম কমিটি গঠন ও যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর
মোকাবেলা করার আহŸান জানান তিনি। সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে
নেয়া, হত্যাকান্ডের তদন্ত ও জনপ্রতিনিধিগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলেই তবে তিনি বিবেচনা
করবেন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়া যাবে কিনা। ১৫ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য ৩৫টি বিধি জারী করেন।
১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার শাসনকার্য পরিচালনার জন্য ৩৫টি বিধি জারী
করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন ঢাকায় এলেন। ২২ ও ২৩ মার্চ গুঞ্জরিত হয় যে, মুজিবইয়াহিয়া সমঝোতা হতে যাচ্ছে। কিন্তু মুজিবকে না জানিয়েই ইয়াহিয়া ২৫ এর রাতে ঢাকা থেকে
ফিরে যাবার আগে তার কমান্ডারদেরকে বাঙ্গালি নিধনের নির্দেশ দিলেন। গর্জে উঠলো সৈন্যদের
মারণাস্ত্র। বঙ্গবন্ধু মাঝরাতের পর অয়্যারলেসে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাঠিয়ে দিলেন চট্টগ্রামে
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানীদের নৃশংসতা রোধের ও
বাঙ্গালীদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের আবেদন করলেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ঘরে
ঘরে দুর্গ গড়ে তোলে। সুদীর্ঘ নয় মাস বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম করে কায়েম করে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে বাইরের পৃথিবী হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাকিস্তানের কারাগারে
বন্দী রেখে গোপনে তাঁর বিচারের প্রহসন চালানো হয়। তাঁকে পৃথিবী হতে সরিয়ে দেয়াই ছিল তাদের
পরিকল্পনা। কিন্তু স্বাধীন জাতির মহানায়ক হিসেবে তিনি ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারী দেশে প্রত্যাবর্তন
করলেন। দেশে ফিরেই সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন দেশের
পুনর্গঠনে আত্বনিয়োগ করেন।
বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মাত্র ৬৭ দিনের মধ্যে তাঁর বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার গুণে ভারতীয়
সৈন্যদের প্রত্যাহার নিশ্চিত করলেন। তিনি দ্রæত একটি সংবিধান প্রবর্তনের প্রতি মনোনিবেশ করে
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে নিয়ে গণপরিষদ গঠন করেন। বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকীতে
গণপরিষদ জাতিকে একটি উৎকৃষ্ট গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেয়। পাকিস্তান হতে লক্ষ লক্ষ
বাঙ্গালির প্রত্যাবর্তন ও তাদের পুনর্বাসন, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, হাজার হাজার অস্ত্র উদ্ধার,
অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপায়ন, আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের
জন্য স্বীকৃতি ও সহায়তা সংগ্রহ ইত্যাদি দুরূহ কাজে বঙ্গবন্ধুকে দিবারাত্র পরিশ্রম করতে হয়েছে।
একটি জাতির মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানের জন্য বিশ্ব শান্তি পরিষদের কাছ থেকে তিনি জুলিও কুরী
পুরস্কার পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষকে অন্ধভাবে ভালোবেসে নিজের নিরাপত্তার কথা উপেক্ষা করেছেন।
তাঁর অনুগৃহীতদের সবার মধ্যে দেশ-প্রেমের সমান অনুভ‚তি তিনি সৃষ্টি করতে সমর্থ হন নি। ফলে
এদের কেউ কেউ তাঁর মহত্বকে পূঁজি করে স্বার্থ উদ্ধার ও দেশের ক্ষতি করেছে। এসব সত্তে¡ও
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন বাঙ্গালি জাতিকে
দিশাহীন ছন্নছাড়া অবস্থা হতে উদ্ধারের নিরলস চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের প্রথম
প্রহরে এক সামরিক অভ্যুতথানে ধানমন্ডীর বাসভবনে তিনি নিমর্মভাবে সপরিবারে নিহত হন।
সারকথা: মানবসভ্যতায় বিকাশ প্রক্রিয়ায় এক এক জন যুগস্রষ্টার আবির্ভাব সমাজকে দ্রæত এগিয়ে
নিয়ে যায়। এসব মনীষীর জীবনকথা সমাজের অগ্রগতিতে তাঁদের ভ‚মিকা উদ্ভাসিত হয়; আবার
জনগোষ্টিগুলির আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দিকসমূহেরও উন্মোচন ঘটে। বাংলাদেশের ইতিহাসে
তেমন এক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কৃতজ্ঞ দেশ এই মহান নেতাকে জাতির পিতার আসনে
অধিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য বাঙালি জাতি তাঁর কাছে ঋণী।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। শেখ মুজিবুর রহমান কবে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ?
(ক) ১৯৩৯ সালে; (খ) ১৯২০ সালে; (গ) ১৯৪২ সালে; (ঘ) ১৯৪৭ সালে।
২। ১৯৪৯ সালে কোন স্থানে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয় ?
(ক) শাহবাগ হোটেল; (খ) রোজ গার্ডেন; (গ) ইডেন হোটেল; (ঘ) বাহাদুরশাহ্ পার্ক।
৩। ১৯৫৫ সালে শেখ মুজিবের প্রকাশিত প্রচার পুস্তিকার নাম-----
(ক) সোনার বাংলা শশ্মান কেন ? (খ) ছয়দফা- আমাদের বাঁচার দাবী;
(গ) কেন পূর্ববঙ্গের অটনমি চাই; (ঘ) পাকিস্তান সৃষ্টির যৌক্তিকতা।
৪। ছয়দফা কর্মসূচী প্রথম কোথায় উত্থাপিত হয় ?
(ক) লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সম্মেলনে; (খ) প্রেসিডেন্ট আইউবের দপ্তরে;
(গ) আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে; (ঘ) সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটিতে।
৫। শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু আখ্যায়িত করা হয় ------
(ক) আওয়ামী লীগের সভায়; (খ) গোলটেবিল বৈঠকে;
(গ) রেসকোর্স ময়দানের জনসভায়; (ঘ) বাংলাদেশের গণপরিষদে।
৬। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শাসন কাজ নির্বাহের জন্য বঙ্গবন্ধু ৩৫টি বিধি জারী করেন-----
(ক) ৩ মার্চ ১৯৭১; (খ) ৭ মার্চ ১৯৭১; (গ) ১৫ মার্চ ১৯৭১; (ঘ) ২৫ মার্চ ১৯৭১।
৭। পাকিস্তানের কারাগার হতে বঙ্গবন্ধু কবে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন ?
(ক) ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১; (খ) ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১; (গ) ৭ মার্চ ১৯৭২; (ঘ) ১০ জানুয়ারী
১৯৭২।
৮। বঙ্গবন্ধু নিহত হন----------
(ক) নিজ বাসভবনে (খ) টুঙ্গিপাড়ায় (গ) লন্ডনের রাজকীয় হাসপাতালে (ঘ) নিজ
অফিসে।
উত্তর : ১. গ, ২. খ, ৩. গ, ৪. ক, ৫. গ, ৬. গ, ৭. ঘ, ৮. ক।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]