উন্নয়ন প্রশাসন হচেছ প্রশাসনিক ব্যবস্থার আধুনিক রূপ। প্রশাসনের সাথে উন্নয়নের প্রশ্নটি জড়িত। উন্নয়ন বলতে বোঝায়
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরির্বতন। এক সময় মনে করা হত উন্নয়ন মানেই হচেছ দেশের অর্থনৈতিক
উন্নয়ন। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতিতে পরির্বতন এনে যে উন্নয়ন সাধন করা হয়, সামগ্রিক বিচারে তাকেই উন্নয়ন হিসাবে চিহ্নিত
করা হয়। দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন, দারিদ্র দূরীকরণ ইত্যাদির জন্য রাষ্ট্র অর্থনীতিতে পরির্বতন
আনার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের সাথে স¯র্পকিত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গুধুমাত্র অর্থনীতিতে পরির্বতন আনলেই
দেশের উন্নয়ন স¤ভব নয়। দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে সামগ্রিক বিচারে দেশটি শিক্ষা ক্ষেত্রে, নারী উন্নয়নে, দারিদ্র হ্রাসে,
নিরক্ষরতা দূরীকরণে কিংবা স্বাস্থ্যখাতে কতটুকু অগ্রগতি সাধন করেছে, তার উপর। গত কয়েকবছর ধরেই জাতিসংঘের
সহযোগী অংঙ্গ সংগঠন ইউএনডিপি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানব উন্নয়ন সূচক প্রকাশ করে থাকে। প্রতি বছর উপরে উল্লেখিত
খাতগুলোতে একটি রাষ্ট্র কতদূর অগ্রগতি সাধন করেছে, মানব উন্নয়ন সূচক এ তা উল্লেখ করা হয়। এবং সেই সূচক অনুযায়ীই
নির্ধারিত হয় একটা রাষ্ট্র কতটুকু উন্নয়ন সাধন করেছে। সে সাথে সামাজিক ন্যায় বিচার ও বন্টন ব্যস্থার উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সামাজিক খাতে উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক খাতকে অবজ্ঞা করারও সুযোগ নেই। সামাজিক খাতে উন্নয়ন সত্তেও
যদি অর্থনীতি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা না যায়, তাহলে তা উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করবে। সামগ্রিক বিচারে তাই উন্নয়ন
বলতে একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক তথা সাংস্কৃতিক উন্নয়নকেই বোঝায়। উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি উন্নত
দেশগুলোতেও এই উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন প্রক্রিয়া গতিশীলতা পাচেছ না
নানা কারণে। একদিকে রয়েছে কুসংস্কার, গোঁড়ামী, অন্যদিকে রয়েছে প্রশাসনিক অ-ব্যবস্থা। সে সাথে উন্নয়ন অগ্রাধিকার
উন্নত কলাকৌশল প্রয়োগের অভাব ইত্যাদি কারণেও উন্নয়ন প্রক্রিয়া তার গতি পাচেছ না। তাই প্রশাসনিক বিজ্ঞানের
বিশেষজ্ঞরা উন্নয়নমুখী প্রশাসনকে অভিহিত করেছেন উন্নয়ন প্রশাসন হিসাবে। অর্থাৎ যে প্রশাসন দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন
প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেয়, সেই প্রশাসনই হচেছ উন্নয়ন প্রশাসন। তবে এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, গুধুমাত্র উন্নয়নের
ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করলেই চলবে না, এর জন্য চাই দক্ষ প্রশাসক ও দক্ষ প্রশাসনিক
কাঠামো। দক্ষ প্রশাসক অর্থাৎ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকলে, সঠিক নীতি প্রণয়ন করা হলেও তা বাস্তবায়িত
হবে না। তাই মানব সম্পদ উন্নয়ন ও এর আওতাভুক্ত উন্নয়ন প্রশাসনের সাথে স¤র্পকিত বিশেষজ্ঞরা সাধারণত উন্নয়নশীল
দেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য যে বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বদেয়া
হয়, তা হচেছ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন। কারণ, উন্নয়নশীল বিশ্বের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এখনও গ্রামে বাস করে।
সুতরাং গ্রামকে অবজ্ঞা করে যদি শুধুমাত্র শহর কেন্দ্রিক উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলা হয়, তাহলে সামগ্রিক বিচারে তাকে
উন্নয়ন বলা যাবে না। গ্রামকে প্রাধান্য দিয়েই উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একই সাথে কৃষিখাতকেও অগ্রাধিকার
দিতে হবে। কেননা, উন্নয়নশীল বিশ্বের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এখনও কৃষিখাতের সাথে স¤র্পকিত। বাংলাদেশের কথা
যদি আমরা বিবেচনায় আনি, তাহলে দেখা যাবে দক্ষ শ্রমশক্তির শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগ কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত। প্রশাসন এক্ষেত্রে
সরকারের পক্ষ হয়ে জাতীয় আয় বৃদ্ধির জন্য সঠিক ও বাস্তবমুখী নীতি গ্রহণ করবে এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে
সেই নীতি বাস্তবায়ন করবে। সরকার নীতি গ্রহণ করবেন বটে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য দরকার দক্ষ প্রশাসন। এই প্রশাসন
সাথে স¤পক্ত থাকবে দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। সেই সাথে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে মানুষের দোড়
গোড়ায় পৌছে দেবে প্রশাসন।
এখানে উন্নয়ন প্রশাসনের সাথে সনাতন প্রশাসনের একটি পাথর্ক্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। সনাতন প্রশাসন সাধারণতঃ রুটিন
মাফিক কাজ করে থাকে। অথার্ৎ রাষ্ট্র ও সরকার তাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করে, রুটিন মাফিক সেই দায়িত্ব পালন করে
থাকে। সনাতন প্রশাসন সরকারের গৃহিত নীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় বটে, কিন্তু এ নীতির কার্যকারিতা কতটুকু, এ নীতি
আদৌ জনগণের মঙ্গল বয়ে আনবে কিনা, সে ব্যাপারেও সনাতন প্রশাসনের সাথে স¤র্পকিত ব্যক্তিবর্গের কোন উৎসাহ থাকে
না। তারা নিয়ম মাফিক কাজ স¤পাদন করে। যে কোন সংস্কারের প্রশ্নে তাদের উদ্যোগ কিংবা উৎসাহ পরিলক্ষিত হয না।
এরা সনাতন ব্যবস্থা বজায় রাখতেই চান। আর উন্নয়ন প্রশাসন হচেছ উদ্যমশীল ও কর্মমুখী। এরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে
পরির্বতন আনার পক্ষপাতি। উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক ধরনের সৃজনশীলতা কাজ করে। এ ক্ষেত্রে তারা শুধু সঠিক
নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতিটিই গ্রহণ করেন না, এই নীতি কতটুকু সফলতা বয়ে আনছে কিংবা লক্ষ্যে কতটুকু পৌঁছান
গেছে, সে ব্যাপারেও তাদের উদ্যোগ থাকে। যেমন একটি দৃষ্টান্তএখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দারিদ্র দূরীকরণের ব্যাপারে
সরকার সা¤প্রতিককালে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। প্রতি বছর বাজেটে দারিদ্র দূরীকরণের জন্য থোক বরাদ্ধ দেয়া থাকে।
এখানে উন্নয়ন প্রশাসনের দায়িত্ব হচেছ এই কর্মসূচি পর্যালোচনা করা, সরকার যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা কোন সফলতা
বয়ে আনছে কিনা, তা মনিটরিং করা, এবং প্রয়োজনে সেই কর্মসূচিতে পরির্বতন আনার সুপারিশ করা। উন্নয়ন প্রশাসনের
কাজই হচেছ সরকারের গৃহীত নীতি তার লক্ষ্যে পৌছাঁতে পারছে কিনা, তা দেখা। এ ক্ষেত্রে গৃহীত নীতি যদি কোন ফল বয়ে
না আনে, তাহলে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য নীতি নির্ধারকদের কাছে প্রস্তাব পেশ করা। সনাতন প্রশাসন সাধারণত এটি
করে না। তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে মাত্র।
এক কথায় বলা যেতে পারে, সনাতন প্রশাসন নিয়মমুখী আর উন্নয়ন প্রশাসন কার্য স¤পাদনমুখী। অর্থাৎ এখানে চ‚ড়ান্ত
ফলাফলকেই প্রাধান্য করা হয়েছে। আর এ ফলাফল নির্ভর করে একটি সঠিক পরিকল্পনা, নীতি, কর্মসূচী ও প্রকল্পের উপর।
আর সেই সাথে রয়েছে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোন নীতির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের এই সক্রিয় অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে। তবে উন্নয়ন প্রশাসন সমস্যামুক্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশে এ
প্রশাসন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয। এর কারণ নি¤œরূপ:
আমলাতন্ত্রের অতিরিক্ত কেন্দ্রীকতার কারণে উন্নয়নমুখী নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি করে।
উন্নয়ন প্রশাসনের সফলতার জন্য যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, প্রশাসনিক কর্মীদের মধ্যে সেই প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অনেক সময়
অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।
একটা সুষ্ঠ সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মীদের দ্ব›দ্ব সঠিক নীতি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । এমনকি
স্থানীয় অরাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী গ্রæপ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করে ।
সামাজিক অস্থিরতা, সন্ত্রাস উন্নয়ন প্রশাসনকে বাধাগ্রস্থ করে ।
এসব অন্তরায় দূর করার উদ্যোগ নেয়া উচিত। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে ও ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন প্রশাসনের
সুফল পৌছেঁ দিতে হলে, সরকারকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতে হবে ।
সারকথা
উন্নয়ন প্রশাসন হচেছ প্রশাসনিক ব্যবস্থার আধুনিক রূপ। উন্নয়ন প্রশাসন জনগণের মঙ্গলের জন্য বাস্তবমুখী নীতি, ও পরিকল্পনা
গ্রহণ করে ও জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেই নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. মানব উন্নয়ন সূচক কে প্রণয়ন করে?
ক. জাতিসংঘের ইউএনডিপি;
খ. নিজ নিজ রাষ্ট্র;
গ. যুক্ত রাষ্ট্র;
ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
২. মানব উন্নয়ন সূচকের মাধ্যমে একটি দেশেরক. দারিদ্র পরিমাপ করা যায়;
খ. আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অবস্থা জানা যায়;
গ. উন্নয়ন প্রশাসন স¤র্পকে ধারণা পাওয়া যায়;
ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
৩. বাংলাদেশে জিডিপি তে কৃষিখাতের পরিমাণ শতকরা
ক. ৩২ ভাগ;
খ. ৬০ ভাগ;
গ. ৮০ ভাগ;
ঘ. ১০ ভাগ।
৪. বাংলাদেশে মোট শ্রম শক্তির মাঝে কৃষিক্ষেত্রে শ্রমশক্তির পরিমাণ শতকরা
ক. ৬৪ ভাগ;
খ. ৫৪ ভাগ;
গ. ৪০ ভাগ;
ঘ. ১০ ভাগ।
উত্তরমালা : ১. ক ২. খ ৩.ক ৪.ক
রচনামূলক প্রশ্ন
১. সনাতন প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রশাসনের মধ্যে পাথর্ক্য নির্ণয় করুন ।
২. উন্নয়ন প্রশাসনের গুরুত্বআলোচনা করুন ।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র