জাতিসংঘ সনদের প্রস্তাবনা ও সনদের ১ ও ২ নং ধারায় এ সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতিগুলো স্পষ্টভাবে করে উল্লেখ করা
হয়েছে। এ বিশ্বসংস্থার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। মূলত দু’টি বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশ্বযুদ্ধের কারণে
সমগ্র মানব জাতির জীবনে যে অবর্ণর্নীয় দুঃখ-দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছিল, তার ভয়াবহতা অনুধাবন করেই বিশ্বনেতৃবৃন্দ জাতিসংঘের
লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে যেসব বিষয় তখন প্রাধান্য পেয়েছিল, তা হলো যে কোন ধরণের যুদ্ধকে
নিরুজসাহিত করা, ছোট ছোট দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আগ্রাসী দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, একটি নিরাপত্তা বলয়
সৃষ্টি করা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিসাধন করা, আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে
দেশগুলোকে ধারণা দেয়া, উপরন্তু ছোট ছোট দেশগুলোর প্রগতি ও উন্নয়ন সাধনে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করা ইত্যাদি।
বিশ্বনেতৃবৃন্দ এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জাতিসংঘের সনদ রচনা করেন। জাতিসংঘ সনদে বলা হয়েছে এসব লক্ষ্যগুলো
বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিটি রাষ্ট্র সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করবে। প্রতিটি রাষ্ট্র সৎ প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করবে এবং
শান্তিতে বসবাস করবে। অর্থাৎ কোন রাষ্ট্র আগ্রাসী ভ‚মিকা নেবে না ও সম-মর্যাদার ভিত্তিতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্কগড়ে তুলবে। সনদে বলা হয়েছে আর্ন্তজাতিক শান্তিও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য সকল রাষ্ট্রের শক্তি ঐক্যবদ্ধ করতে
হবে। অর্থাৎ আগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ছোট ছোট রাষ্ট্রের নিরাপত্তা একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব। এই
ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই বিশ্বশান্তির অন্যতম রক্ষাকবচ। জাতিসংঘ সনদে সশস্ত্রবাহিনী ব্যবহারকেও নিরুজসাহিত করা হয়েছে।
ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে সশস্ত্রবাহিনীর ব্যবহার যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্মক্স দিয়েছিল। এজন্য নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া সশস্ত্রবাহিনীকে
ব্যবহার না করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ যাতে একটি রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে
সহযোগিতা করতে পারে, জাতিসংঘের সনদে এই বিষয়টিরও উল্লেখ আছে।
জাতিসংঘের সনদের ১নং ধারায় চারটি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেঃ
আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা বজায় রাখা;
প্রত্যেক জাতির আতœনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকার করে সাম্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা;
অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। সেই সাথে মানবাধিকার ও মানুষের
মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা;
উপরে উল্লেখিত উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য এই আর্ন্তজাতিক সংগঠনকে সকল জাতির ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে
পরিণত করা।
অন্যদিকে জাতিসংঘ সনদের ২নং ধারায় সাতটি মৌলিক নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১নং ধারায় যে সব উদ্দেশ্যের কথা
বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য এই নীতিগুলো অপরিহার্য। জাতিসংঘ সনদে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, প্রতিটি দেশ
এই সাতটি মৌলিক নীতিকে সামনে রেখেই তাদের রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করবে। এই সাতটি নীতি হচ্ছে যথাক্রমেঃ
প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ও সমতা নীতির উপর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত;
প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের অধিকারের ব্যাপারে জাতিসংঘ সনদে যে বিধান ও বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে,
তা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে;
আন্তর্জাতিক শান্তিও নিরাপত্তা যাতে বিঘিœত না হয়, সেদিকে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রলক্ষ্য রাখবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো অন্য
রাষ্ট্রের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এমন কিছু করবে না, যাতে শান্তিও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়;
প্রতিটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে;
জাতিসংঘে গৃহীত প্রতিটি সিদ্ধান্তসদস্য রাষ্ট্রগুলো সমর্থন করবে;
জাতিসংঘের সদস্য নয় এমন দেশ বিশ্বশান্তিও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে যাতে এই নীতিগুলো অনুসরণ করে জাতিসংঘ সে
ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে;
জাতিসংঘ কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু শান্তিও নিরাপত্তা যদি বিঘিœত হয়, তাহলে
জাতিসংঘ ঐ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
সারকথা
জাতিসংঘের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতি হচ্ছে বিশ্ব শান্তিও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জাতিসংঘ প্রতিটি জাতির আতœনিয়ন্ত্রণ অধিকার
স্বীকার করে এবং সমতার ভিত্তিতে প্রতিটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার নীতিতে বিশ্বাসী। জাতিসংঘ প্রতিটি দেশের
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতিসংঘ কোন দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবে না।
কিন্তু যদি ঐ রাষ্ট্র বিশ্ব শান্তিও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দেয়, তাহলে ঐ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপকে স্বীকার
করে নেয়া হয়েছে।
সঠিক উত্তরে টিক () চিহ্ন দিন
১. জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য হলো
ক. বিশ্বশান্তিও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা;
খ. শুধুমাত্র যুদ্ধ বিধ্বস্তদেশকে সাহায্য করা;
গ. যুদ্ধ ঘোষণা করা;
ঘ. দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দেয়া।
২. জাতিসংঘ সনদে বলা হয়েছেক. সম মর্যাদার কথা;
খ. এক দেশের একক কর্তৃত্বের কথা;
গ. বৃহৎ পাঁচটি দেশের যৌথ কর্তৃত্বের কথা;
ঘ. বৃহৎ শক্তির কর্তৃত্বের কথা।
৩. জাতিসংঘ ১নং ধারায় বলা হয়েছেক. একাধিক উদ্দেশ্যের কথা;
খ. ৪টি উদ্দেশ্যের কথা;
গ. একটি উদ্দেশ্যের কথা;
ঘ. কোন উদ্দেশ্যের কথা বলা হয় নি।
৪. জাতিসংঘ সনদের ২নং ধারায় বলা হয়েছে -
ক. একাধিক নীতির কথা;
খ. দুটি নীতির কথা;
গ. সাতটি নীতির কথা;
ঘ. উপরের কোনটিই নয়।
উত্তরমালা : ১.ক ২.ক ৩.ক ৪.গ
রচনামূলক প্রশ্ন
১. জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেসংক্ষেপে আলোচনা করুন।
২. জাতিসংঘের নীতিগুলো আলোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র