ভারতে আর্য জনগোষ্ঠীর আগমন ব্রিটিশ শাসনে বাঙলার সমাজ জীবনে কি পরিবর্তন হয় ?

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ১৯৭১সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র
হিসাবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান লাভ করে। এই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে। ২ লক্ষ নারীর
সম্ভ্রমহানি হয়। এছাড়াও অপরিমেয় সম্পদহানি ঘটে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন মুক্ত
হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশ, দ্বি-জাতি তত্তে¡’র
ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ অঞ্চলের জনগণ আশা করেছিল যে, ব্রিটিশ শাসন
অবসান এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বাসিন্দা হবার ফলে তাদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে। আর্থ-সামাজিকরাজনৈতিক ক্ষেত্রে সকল বৈষম্যের অবসান হবে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই
বাঙ্গালিদের আশাভঙ্গ হয়। অত:পর ১৯৭১’র যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।
ইতিহাস প্রমাণ করে, নিজেদের শক্তি থাকা সত্তে¡ও বাঙ্গালি কখনো পরদেশে আগ্রাসন চালায়নি বরং
বারবার বিদেশী শক্তি দ্বারা শাসিত হয়েছে। সুপ্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন শাসক শ্রেণীর আগমনের
প্রভাব পড়েছে বাঙ্গালির সমাজ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতিতে। নিজস্ব সমাজ -সংস্কৃতির সাথে ভিনদেশী
সমাজ-সংস্কৃতির মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বাঙ্গালির ইতিহাস। বর্তমান অধ্যায়ে বাংলাদেশের সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সামাজিক ইতিহাস
এমন এক সময় ছিল, যখন ইতিহাসকে খুব সংকীর্ণ অর্থে বোঝার চেষ্টা করা হোত, সে ‘ইতিহাসে’
দেশ বা সমাজের সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবন যাপন, সুখ-দু:খ, আন্দোলন সংগ্রামের বর্ণনা ঠাঁই
পায়নি। বরং সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, রাজা বা সম্রাটের দেশ জয়, সিংহাসন আরোহন, সুখ-দু:খ,
কীর্তি-কাহিনী ইত্যাদিই ছিল মূল উপজীব্য বিষয়। সেখানে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের
ইতিহাস আলাদা ভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় নি। আধুনিক সময়ে ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গীতে অনেক
পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এখনকার ইতিহাসবিদ মনে করেন, ইতিহাস হচ্ছে অতীত ঘটনার বিজ্ঞান
ভিত্তিক বিশে ষণ ও বর্ণনা। যেহেতু ‘মানুষ’ ইতিহাসের মূল উপাদান সেহেতু সমাজের নানা শ্রেণীর -
মানুষের জীবন যাত্রার প্রতিফলন ইতিহাসে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। সংকীর্ণ ইতিহাস চর্চার বিরুদ্ধে
প্রতিক্রিয়া হিসাবে সামাজিক ইতিহাসের উদ্ভব। সামাজিক ইতিহাসে সামাজিক সম্পর্ক, মূল্যবোধ
পরিবর্তন, সামাজিক অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের বিকাশের ধারা ইত্যাদি সকল বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত।
শুধুমাত্র শাসক শ্রেণীর রাজনীতি অথবা ব্যক্তিগত জীবন সামাজিক ইতিহাসের বিষয় নয়। সামাজিক
ইতিহাসে স্থান পায় জনগোষ্ঠীর সামাজিক প্রথা -পদ্ধতি, আইন, নিয়ম-কানুন, উৎসব-প্রতিষ্ঠান, ভাষা,
ধর্ম, শিল্পকলা, আর্থ-সামাজিক সংগঠন প্রভৃতি। অষ্টাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ভিকো‘র মতে,
‘গধহ সধশবং যরং ড়হি যরংঃড়ৎু’. পরবর্তীতে মার্কস ও এঙ্গেলস একই মত ব্যক্ত করেন।
বস্তুতঃ সামাজিক ইতিহাস বলতে বোঝায় সামগ্রিক ইতিহাস, যেখানে সকল ইতিহাসই একটি
নির্ভরযোগ্য কাঠামোয় স্থান পায়। সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর হাবিবুর রহমান সামাজিক ইতিহাসকে
নিæলিখিত ভাগে ভাগ করেছেন-
ঐতিহাসিক সামাজিক কাঠামো ও সামাজিক অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান।
সমাজ পরিবর্তন।
সামাজিক পদ ও প্রত্যয় এর বিকাশ।
সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন।
বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস
বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাসকে দু‘ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা:
ক) প্রাচীন কাল থেকে মুঘল আমল
খ) ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রাচীন কাল থেকে মুঘল আমল
প্রাচীন বাংলায় জনবসতি কবে থেকে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও গবেষকগণ
বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অনুমান করেন, কমপক্ষে দশহাজার বছর পূর্বে থেকে এই বাংলা অঞ্চলে
মানুষ বসবাস শুরু করে। মানুষদের বেশির ভাগই কোল, শবর, পুলিন্দ, হাড়ি, ডোম, চন্ডাল প্রভৃতি
জাতিভুক্ত ছিল। মনে করা হয়, আর্যদের আগমনের বহু পূর্বেই বিভিন্ন গোত্রের লোকজন ভারত বর্ষের
বিভিন্ন অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। অনার্য মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী যারা তিব্বত থেকে এ আধুনিক ইতিহাসে সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষের জীবন যাত্রার প্রতিফলন ঘটে।
অঞ্চলে এসেছিল বলে মনে করা হয়, তারা পশু ‘শিকার’ ভিত্তিক জীবন যাপন করতো এবং তারপরে
আগত দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী যারা চীনা তুর্কিস্তান থেকে এ অঞ্চলে এসে থাকতে পারে, তারা খাদ্যশস্য চাষ
এবং পশুপালন প্রণালী জানতো। এই অনার্য জনগোষ্ঠী হিংস্র জীবজন্তু, নিবিড় অরণ্য, উঁচু পর্বত,
প্রাকৃতিক বিপদের আশংকা থেকে পরস্পর কাছাকাছি বাস করতো, এভাবেই প্রাচীন ভারত তথা বাংলা
অঞ্চলে উপজাতীয় সমাজগুলো তৈরি হয়। এ সমাজে চাষের জন্য যে কেউ যে কোন জমি চাষ করতে
পারতো, জমির কোন মালিকানা ছিল না। সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে এই জনগোষ্ঠী বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে
পড়তে থাকে। এভাবেই তৈরি হয় গ্রাম এবং এ গ্রামগুলোতে এক ধরনের সরকার ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়।
আর্যদের আগমন
মনে করা হয় খ্রিষ্টের জন্মের দু‘হাজার বছর আগে আর্যরা ইরান অথবা মধ্য এশিয়া থেকে ভারত বর্ষে
আসতে শুরু করে।পরবর্তীতে নিজেদের শক্তি ও বুদ্ধির জোরে আর্যরা ভারতে নিজেদের প্রাধান্য
প্রতিষ্ঠা করে অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে পদানত করে। কিন্তু বিভিন্ন পÍতাত্তি¡ক গবেষণা থেকে জানা যায়,
আর্যদের আগমনের বহু পূর্বেই একটি অতি প্রাচীন বাঙ্গালি নগর সভ্যতা বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন বাংলার
মানুষ তামা, লোহা সহ বিভিন্ন ধাতু ব্যবহার করত। এই নগর সভ্যতা ছিল সুপরিকল্পিত এবং
প্রকৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত। এছাড়াও পশ্চিম বাংলায় দশহাজার বছর আগেকার প্রাপ্ত
যুদ্ধাস্ত্রসমূহ প্রমাণ করে যে প্রাচীন বাঙ্গালিরা একটি বীর জাতি ছিল। যদিও তারা কখনো ভিনদেশে
আগ্রাসন চালায় নি। এয়োদশ শতকের প্রথম থেকে বাংলা অঞ্চলে তুর্ক-আফগানদের বিজয় সূচিত
হয়। এর পূর্বে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত পাল বংশ বাংলা শাসন করে। পূর্ববর্তী এই শাসন
ব্যবস্থাসহ মুঘল শাসনও বাঙলার সামাজিক রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করে।
ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয় লাভের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বাংলা তথা ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা লাভ করে। দীর্ঘ প্রায় দুইশত বছরের উপনিবেশিক শাসন-শোষণের ফলে বাঙ্গালি সমাজ জীবনে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়। ব্রিটিশরা শাসন এবং লুন্ঠনের সুবিধার জন্য নতুন ধরনের শিক্ষা ও প্রশাসনিক
ব্যবস্থা চালু করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়। এসবের ফলশ্রুতিতে, ইংরেজী শিক্ষিত একটি শ্রেণী বাংলাদেশে তৈরি হয়। যারা শুরুতে ব্রিটিশদের অনুগ্রহভাজন থাকলেও পরবর্তীতে ভারতের
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ব্রিটিশ উপনিবেশিক লুন্ঠনের ফলে বাংলার এককালীন স্বনির্ভর ধাঁচের অর্থনীতি ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়।
পাকিস্তানী শাসন
১৯৪৭ সালে ‘দ্বি জাতি তত্তে¡’র ভিত্তিতে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্র জন্মলাভ করে। পূর্ব
বাংলা, পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তানী শাসক চক্রও ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন-শোষণ
চালাতে থাকে। এর বিরুদ্ধে বাঙ্গালিরা তাদের বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু করে।
১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭-৭১ সময়কালে
বাঙ্গালি মুসলমান সমাজ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। এ সময়ে ধর্ম নির্ভর জাতীয়তাবাদের
পরিবর্তে ভাষা ভিত্তিক বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সারকথা: ইতিহাস হচ্ছে অতীত ঘটনার বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্লেষণ ও বর্ণনা। নানা শ্রেণীর মানুষের জীবন
যাত্রার প্রতিফলন থাকবে ইতিহাসে। সামাজিক সম্পর্ক, মূল্যবোধ পরিবর্তন, সামাজিক অনুষ্ঠানপ্রতিষ্ঠানের বিকাশের ধারা এগুলোই সবই সামাজিক ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়। বাংলাদেশের
সামাজিক ইতিহাসকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- প্রাচীন কাল থেকে মুঘল আমল এবং ব্রিটিশ
আমল থেকে বাংলাদেশ। কমপক্ষে দশহাজার বছর আগে এই বাংলা অঞ্চরে মানুষের বসবাস শুরু
বলে অনুমান করা হয়। মানুষের বেশিরভাগেই কোল, শবর, পুলিন্দ, হাড়ি, ডোম, চরুাল প্রভৃতি জাতিভুক্ত ছিল। দশহাজার বছর পূর্বে থেকে এই বাংলা অঞ্চলে মানুষ বসবাস শুরুর করে। ধর্ম নির্ভর জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে ভাষা ভিত্তিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ইতিহাসের মূল উপাদান
ক. রাজা-রাণী;
খ. প্রাচীন দালান-কোঠা;
গ. মানুষ;
ঘ. সামন্ত প্রভ‚।
২. বাঙলা অঞ্চলে মানুষের বাস শুরু
ক) ২০,০০০ বছর পূর্বে;
খ) ১০,০০০ বছর পূর্ব;
গ) ১৫,০০০বছর পূর্বে;
ঘ) ৩০,০০০ বছর পূর্বে।
৩. পলাশীর যুদ্ধ সংগঠিত হয়
ক) ১৬৫৭ সাল;
খ) ১৭৫৭ সাল;
গ) ১৮৫৭ সাল;
ঘ) ১৯৫৭ সাল।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ভারতে আর্য জনগোষ্ঠীর আগমন সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২. ব্রিটিশ শাসনে বাঙলার সমাজ জীবনে কি পরিবর্তন হয় ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা করুন।
উত্তর : ১.গ, ২.খ, ৩.খ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]