স্বাধীনতা, অধিকার, যৌক্তিক, অপরিহার্য, সংবিধান।
স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ
’স্বাধীনতা’ নামক প্রত্যয়টি পৌরনীতি ও সুশাসন এর আলোচনায় খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। রাষ্ট্রে
একজন নাগরিকের অস্তিত্ব বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত স্বাধীনতা থেকেই প্রকাশ পায়। স্বাধীনতা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল
‘খরনবৎঃু’। স্বাধীনতাকে শাব্দিক অর্থে বলা যায় নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করা। কিন্তু একজনের স্বাধীনতার সাথে অন্যের
স্বাধীনতা ভোগের বিষয় যেহেতু জড়িত তাই পৌরনীতিতে স্বাধীনতা মানে যা খুশি তাই করা নয়। স্বাধীনতা মানে যৌক্তিক
ও আইনসিদ্ধভাবে কোন কিছু করাকেই বুঝায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকগণ নানা ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে।
যেমন- চলাফেরার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম সংক্রান্ত স্বাধীনতা। জাতীয় স্বাধীনতা আবার একটু ভিন্ন। এটি
অর্জন করা কঠিন। সাধারণত স্বাধীনতার আন্দোলন বা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।
নাগরিক বা জাতি সে যা-ই হোক না কেন, এদের স্বাভাবিক অস্তিত্বের জন্য স্বাধীনতা অপরিহার্য। তাই দেখা যায় পৃথিবীর
অধিকাংশ দেশের সংবিধানেই নাগরিকদের স্বাধীনতা ভোগের বিষয়ে নানান ধরনের ধারা সংযুক্ত থাকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এইচ জে লাস্কি বলেছেন “স্বাধীনতা হল অধিকারের ফল”।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী টি এইচ গ্রিন বলেন, “যা উপভোগ করার এবং সম্পন্ন করার যোগ্য তা উপভোগ ও সম্পাদন
করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে”।
প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বাধীনতা ভোগ করতে চায়। স্বাধীনতা হচ্ছে ব্যক্তির অধিকার। জীবনের সুকুমার বৃত্তিগুলোর বিকাশের জন্য
এটি অপরিহার্য। আদর্শ নাগরিক সৃষ্টিতে স্বাধীনতা ভোগের বিকল্প নেই। স্বাধীনতার বিপরীত হল পরাধীনতা বা
স্বাধীনতাহীনতা। স্বাধীনতাহীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। পরাধীনতার গøানি থেকে মুক্তির জন্য অনেক জাতি যুগের পর যুগ
সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আবার আতœপরিচয়ের এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য নাগরিকদের স্বাধীনতা প্রদান করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা:
স্বাধীনতাহীনতায় মানুষ দাসে পরিণত হয়। সকল মৌলিক অধিকার যেমন প্রয়োজন স্বাধীনতাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ।
নাগরিকগণ স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারলে রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। পরাধীনতায় ব্যক্তি নিজেকে মেলে ধরার
সুযোগ পায় না, ফলে তার স্বাভাবিকতা বিঘিœত হয়। স্বাধীনতা চর্চার মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি বা একটি জাতি তার
সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পায়।
স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ
একটি রাষ্ট্রে নাগরিকগণ বিভিন্ন ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে। স্থান, কাল, পাত্রভেদে এটি আবার ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন-
(১) ব্যক্তিগত স্বাধীনতা (২) সামাজিক স্বাধীনতা (৩) রাজনৈতিক স্বাধীনতা (৪) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (৫) জাতীয়
স্বাধীনতা ও (৬) পৌর স্বাধীনতা
১. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা
এই স্বাধীনতা একান্তই ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ভোগে অন্যের উপর কোন প্রভাব পড়ে না। যেমন, ধর্ম সংক্রান্ত
স্বাধীনতা কিংবা মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
২. সামাজিক স্বাধীনতা
মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য সামাজিক স্বাধীনতা অপরিহার্য। যেমন, জীবন ধারণ, সম্পত্তি ভোগ কিংবা সামাজিক
কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা। সামাজিক স্বাধীনতা মানুষকে সুন্দর জীবনের পথ দেখায়। তার মনের সুকুমার বৃত্তির
বিকাশ ঘটায়।
৩. রাজনৈতিক স্বাধীনতা
ভোটার হবার স্বাধীনতা, ভোটদানের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দল গঠনের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো রাজনৈতিক
স্বাধীনতার অন্তর্গত। ন্যায়সঙ্গতভাবে একজন নাগরিক সব ধরনের স্বাধীনতা ভোগের অধিকার রাখে। নেতৃত্বের বিকাশের
জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকা উচিত। একনায়কতান্ত্রিক, সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকগণ রাজনৈতিক
স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয়।
৪. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
এ ধরনের স্বাধীনতার মধ্যে পেশা বাছাই ও জীবিকার স্বাধীনতা অন্যতম। মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অর্থনৈতিক
স্বাধীনতার বিকল্প নেই। তাছাড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে শ্রেণি-বৈষম্য বেড়ে গিয়ে যেকোন শ্রেণি শোষণ-বঞ্চনার
পরিস্থিতি তৈরি হয়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার আইনগত ভিত্তি রয়েছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে অন্যান্য স্বাধীনতাও
খর্ব হয়।
৫. জাতীয় স্বাধীনতা
বর্তমানে রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে জাতি রাষ্ট্র। অর্থাৎ তারা স্বাধীন জাতি হিসেবে রাষ্ট্র গঠন করেছে। একটি জাতির নিজস্ব পরিচয়
প্রতিষ্ঠার সক্ষমতাই হল জাতীয় স্বাধীনতা। জাতি হিসেবে স্বাধীন থাকা যেমন গর্বের, তেমনি তা অর্জন করাও কষ্টসাধ্য।
স্বাধীনতা অর্জনের পথে অনেক জাতিকে বিপুল আতœদান করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ
শহীদের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে।
৬. পৌর স্বাধীনতা
জীবনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, ধর্ম সংক্রান্ত অধিকারগুলো পৌর স্বাধীনতার অন্তর্গত। ব্যক্তিজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ
ও সমাজে সুখ-শান্তি নিশ্চিতকরণে এই সব স্বাধীনতা অপরিহার্য।
স্বাধীনতা নাগরিকের অধিকারস্বরূপ। ফলে এই স্বাধীনতা ভোগের জন্য কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা জরুরি। রাষ্ট্র
যাতে নাগরিকের এই সব স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে সে ব্যাপারে নাগরিকদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
সার-সংক্ষেপ
স্বাধীনতা মানে যৌক্তিক ও আইনসিদ্ধভাবে কোন কিছু করাকেই বুঝায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকগণ নানা ধরনের
স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। স্বাধীনতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ব্যক্তি স্বাধীনতা, জাতীয় স্বাধীনতা,
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ধর্ম সংক্রান্ত স্বাধীনতা। অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কিংবা উপনিবেশিক রাষ্ট্রে
নাগরিকেরা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। “স্বাধীনতা হল অধিকারের ফল” উক্তিটি কার?
ক) রুশো খ) ম্যাকিয়াভেলি
গ) লক ঘ) লাস্কি
২। ‘ক’ দেশটির নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসংখ্যা ও একটি সরকার রয়েছে। কিন্তু তবু দেশটি পৃথিবীর বুকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে
নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। দেশটিতে কোন স্বাধীনতার অভার রয়েছে?
ক) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা খ) আইনগত স্বাধীনতা
গ) জাতীয় স্বাধীনতা ঘ) রাজনৈতিক স্বাধীনতা
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র