নৈতিকতার ধারণা, আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক

আইন, নৈতিকতা, মানদন্ড।
নৈতিকতার ধারণা
নৈতিকতা ব্যক্তিগত একটি বিষয়। পৃথিবীতে ভালো-মন্দ যাচাই করার কোন শ্বাশত মানদন্ড না থাকার ফলে
একজনের দৃষ্টিতে যে বিষয়টি ভালো অন্য জনের দৃষ্টিতে তা খারাপ হতে পারে। তবে ভালো-মন্দের একটি গড়পড়তা
মানদন্ড সব সমাজে প্রায় একই রকম। সততা, সদাচারী, সৌজন্যমূলক আচরণকারী, প্রতিশ্রæতি রক্ষাকারি ব্যক্তিকে সব
সমাজই নৈতিক গুনসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করে। এ রকম ব্যক্তি কোন বিষয়টি সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য ভালো বা মন্দ তা
নির্ণয় করতে পারে। এই ভালো ও মন্দের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারাটাই হল ব্যক্তির নৈতিকতা। নৈতিকতাকে বিভিন্ন
সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। উদাহরণস্বরূপডি এন সিডলি’র মতে “সঠিক ও বেঠিক এর মাঝে পার্থক্যই হল নৈতিকতা”।
আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক
আইন ও নৈতিকার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে দেখা যায় এ দুটি প্রত্যয়ের মাঝে দুই ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে। একটি হল মিল বা সুসম্পর্ক; অন্যটি অমিল বা পার্থক্য।
আইন ও নৈতিকতার সুসম্পর্ক
উদ্দেশ্যগত: আইন ও নৈতিকতা উভয়েরই উদ্দেশ্য হল সৎ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ও দেশ গঠন। আইনের লক্ষ্য হচ্ছে
মানুষকে সৎ, যুক্তিসংগত, নিয়মের মাঝে রাখা। অন্যদিকে, নৈতিকতারও একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। নীতিবান ব্যক্তি তার
কর্মে ও কথায় সবসময় সৎ, সদাচারী, সৌজন্যমূলক ও সৎচিন্তাশীল হয়ে থাকে। এসব গুণ সমাজজীবনে শান্তিপূর্ণ
সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য। সাধারণত সমাজে যেসব বিষয়গুলো আইন বিরোধী, সেগুলো সাধারণত নীতিবিরোধীও হয়।
যেমন, প্রতারণা বিষয়টি নীতিবিরোধী আবার তা আইন বিরোধীও। বাংলাদেশে কেউ প্রতারণা করলে ফৌজদারী কার্যবিধির
৪২০ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। এ ধরনের বিবেচনা থেকে অধ্যাপক আর জি গেটেল বলেন, “আইন ও
নৈতিকতার মাঝে নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান।”
প্রভাবগত: সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে নীতি-নিষ্ঠ আখ্যা দেওয়া হয়। নীতি-নিষ্ঠতা মানুষের কাছ থেকে
স্বাভাবিক প্রত্যাশা। কিন্তু স্বার্থের দ্ব›দ্ব, সীমাহীন চাহিদা, হিংসাতœক মনোভাবের কবলে পড়ে অনেক সময় মানুষ নীতিবোধ
বিসর্জন দেয়। আইনের হস্তক্ষেপে মানুষ অনেক সময় নীতিবোধ বিসর্জিত হওয়াটা বুঝতে শিখে।
আইন ও নৈতিকতার পার্থক্য
আইন ও নৈতিকতার মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য নীচে উল্লেখ করা হল:
ক) কার্যক্ষেত্রগত পার্থক্য: আইন ও নৈতিকতার কার্যক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আইন কেবল মানুষের বাহ্যিক আচারআচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ঘটনা ঘটে যাবার পর ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্যদিকে, নৈতিকতা মানুষের অন্তর্জীবন ও
বহি:জীবন উভয়কে প্রভাবিত করে। যেমন, মাদক গ্রহণ করা আইনত দন্ডনীয়, তারপরও অনেকে মাদক গ্রহণ করে। কিন্তু
যে ব্যক্তির মনে এই চিন্তাটি থাকে যে, মাদক তার নিজের পরিবারের, সমাজের ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর সে ব্যক্তি
সাধারণত নেশা করে না। আইন মানুষের অন্যায় কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু অন্যায় চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
খ) অনুমোদনগত পার্থক্য: আইন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। তা না হলে আইন কার্যকর
করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, নৈতিকতা বিষয়টি ব্যক্তিগত। এর জন্য কারও অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আইন প্রয়োগের
জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজন হয়। কিন্তু নীতির প্রয়োগের জন্য এমন কিছুর প্রয়োজন নেই।
গ) অবস্থান ও কালভেদে পার্থক্য: একই বিষয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম আইন হতে পারে। যেমন, মদ্যপান বাংলাদেশে
আইনত দন্ডনীয়। এখানে মদ্যপানকে নৈতিকতা পরিপন্থী হিসাবেও বিচেনা করা হয়। পক্ষান্তরে, পশ্চিমা বিশ্বে মদ্যপান
সাধারণ সামাজিকতার অংশ এবং এই অভ্যাসের সাথে নৈতিকতা লঙ্ঘনের প্রশ্ন যে সমাজে অবান্তর।
ঘ) প্রকৃতিগত পার্থক্য: প্রকৃতিগত দিক থেকেও আইন ও নৈতিকতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নীতিশাস্ত্র সকল কাজকে
ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, শালীন-অশালীন ইত্যাদি মানদন্ডে বিভক্ত করে থাকে। কিন্তু আইন পরিবেশ
পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রণীত ও প্রযোজ্য হয়।
ঙ) সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টতার মানদন্ড: আইন সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। বেশিরভাগ আইনই লিপিবদ্ধ থাকে। কোন বিষয়ের জন্য
কোন আইন প্রযোজ্য হবে তা নির্দিষ্ট থাকে। অন্যদিকে, নৈতিকতার নির্দিষ্ট কোন মানদন্ড নেই। একই বিষয় একজনের
নিকট গ্রহণযোগ্য হলেও অন্য জনের নিকট তা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। দুইটি ভিন্ন সমাজে নৈতিকতার ভিন্ন মানদন্ড
থাকতে পারে।
চ) নৈতিকতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক: নৈতিকতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিন্তু আইন ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। সকল ব্যক্তির জন্য একই আইন সমভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ আইন সর্বজনীন।
সার-সংক্ষেপ
মানব সমাজে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোর ভালো-মন্দ বিচার করার শ্বাশত কোন মানদন্ড নেই। কোনটি ভালো,
কোনটি মন্দ হিসেবে বিবেচিত হবে, তা ব্যক্তির মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করে। এটি বিচার করতে পারাটাই
নৈতিকতা। নৈতিকতা আপেক্ষিক ও পরিবর্তনশীল। স্থান-কালভেদে নৈতিকতার মানদন্ডে পার্থক্য দেখা যায়। অনেকে
নৈতিকতার সাথে আইনের একটি সম্পর্ক স্থাপন করেন। আবার এ দুটির মাঝে বৈপরীত্যও আছে। কেননা আইন মেনে
চলার বাধ্যবাধকতা যেমন রয়েছে, তেমনি তা লিপিবদ্ধ হওয়াও বাধ্যতামূলক। কিন্তু নৈতিকতার ক্ষেত্রে এরূপ কোন বিষয় নেই।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। রহিম খুব অভাব-অনটনের মাঝে আছে। সে কাজের অনেক খোঁজ করলো কিন্তু কোন কাজ পেল না। এই মূহূর্তে
খাবার কেনার মতো তার হাতে কোন টাকা নেই। তাই ভাবলো বাজারের দোকান থেকে চাল চুরি করবে। রহিমের এই চিন্তাটিকে কি বলা যায়
র) অপরাধমূলক রর) আইনসিদ্ধ ররর) নীতিবিরুদ্ধ
নিচের কোনটি সঠিক
(ক) র (খ) রর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র ও ররর
২। “আইন ও নৈতিকতার মাঝে নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান।” একথা কে বলেছেন?
ক) ফুঁকো খ) রাসেল
গ) গেটেল ঘ) নিটশে

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]