সমাজ
‘সমাজ’ প্রত্যয়টিকে কোন একটি মাত্র সংজ্ঞা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। এর কোন সর্বজন স্বীকৃত
সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজকে বিভিন্ন অর্থে বুঝাতে চেয়েছেন। নিæে কয়েক
জন সমাজবিজ্ঞানীর ‘সমাজ’ সম্পর্কিত ধারণা উল্লেখ করা হলো।
ম্যাকাইভার
ম্যাকাইভার ’র মতে সমাজ অর্থ সহযোগিতা, এটা এক ধরণের জটিল সামাজিক সম্পর্ক
যা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে।
গিডিংস
গিডিংস (’র মতে, সমাজ বলতে বোঝায় এমন একটি সংগঠিত জনগোষ্ঠী যারা সাধারণ
স্বার্থ বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য পারষ্পরিক সহযোগিতায় রত।
ওয়েস্টারমার্ক
ওয়েস্টারমার্ক ( মনে করেন, সমাজ হচ্ছে এমন একদল ব্যক্তির সমষ্টি যারা
পারষ্পরিক সহযোগিতা দ্বারা জীবন যাপন করে। মোট কথা, সমাজ মূলত: একটি বিশেষ সংগঠন, যা
বিভিন্ন ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। যেহেতু পারষ্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে মানুষ সমাজে
বসবাস করে সেহেতু সমাজ নামক সংগঠনের বিধিবিধান সবাইকে মেনে চলতে হয়। সমাজ অর্থ
সহযোগিতা এ জন্য যে সমাজ হলো পারষ্পরিক ধ্বংস সাধনের মানসিকতার পরিবর্তে পারষ্পরিক
সৃজনশীলতা, সৌহার্দ ও সহযোগিতা। এমন এক জনগোষ্ঠী দ্বারা ‘সমাজ’ গঠিত হয়, যারা একটি
সাধারণ সংস্কৃতির অনুপ্রেরণায় একই প্রথা, জীবন প্রণালী দ্বারা একই সাথে বসবাস করে।
জিসবার্ট
জিসবার্ট (এরংনবৎঃ)’র মতে মানুষের সাথে মানুষের মিথষ্ক্রিয়ার ফলে উদ্ভুত সম্পর্ককে সামাজিক
সম্পর্ক বলা যায়। একে অপরের সাথে ভাবের আদান প্রদান থেকেই সম্পর্ক সামাজিক হয়। এ জন্যে
সমাজ হচ্ছে প্রধানত: একটি মানসিক প্রপঞ্চ।
মার্কসবাদী ধারণা
মার্কসবাদী ধারণায়, সমাজকে সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতামূলক মনে করা হয় না। যেমন, পুঁজিবাদী
সমাজ ব্যবস্থায় সহযোগিতাময় অবস্থার পরিবর্তে শ্রেণী সংঘাত বিদ্যমান। এজন্য মার্কসবাদী চিন্তা
বিদরা মনে করেন, সমাজের মধ্যে সহযোগিতা এবং সংঘাত উভয়ই থাকতে পারে।
সুতরাং সমাজ হচ্ছে এমন একদল ব্যক্তির সমষ্টি যারা পারষ্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বসবাস করে, এ
সম্পর্ক হল মূলতঃ সৌহার্দ ও সহযোগিতার। তবে এখানে দ্ব›দ্ব ও সংঘাতও আছে। সমাজের
বিধিবিধান সবাইকে মেনে চলতে হয়।
সমাজ হলো
পারষ্পরিক ধ্বংস
সাধনের মানসিকতার
পরিবর্তে পারষ্পরিক
সৃজনশীলতা।
সমাজ কাঠামো
সমাজ পরিবর্তনশীল। এখানে কোন কিছুই অপরিবর্তনীয় নয়। চিরস্থায়ী নয়। গ্রীক দার্শনিক
হিরাক্লিটাস সমাজকে তুলনা করেছিলেন প্রবাহমান নদীর সাথে। সমাজের পরিবর্তন দু‘ভাবে হতে
পারে। প্রথমত: সমাজ পরিবর্তন হতে পারে সংষ্কারমূলক অর্থাৎ পুরোনো সমাজ কাঠামোর ভিতরেই
পরিবর্তন সাধন। দ্বিতীয়ত: বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন। সমাজ পরিবর্তন
অবশ্যম্ভাবী বলেই সমাজ কাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ আবশ্যক।
সমাজ প্রাকৃতিক বস্তুর ন্যায় মূর্ত নয়। সমাজ একটি বিমূর্ত প্রত্যয়। তাই প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের কাঠামো
সম্পর্কে যে ভাবে ধারণা পাওয়া যায় অর্থাৎ একটি বস্তু কি উপাদান দ্বারা তৈরি, উপাদানগুলো কী ভাবে
একে অপরের সাথে যুক্ত বা সম্পর্কিত সমাজ কাঠামো সম্পর্কে সেরকম দৃশ্যমান ধারণা পাওয়া সম্ভব
নয়। যেহেতু ব্যক্তি নিয়েই মানব সমাজ বা সামাজিক গোষ্ঠী গড়ে উঠে, সেহেতু সমাজ কাঠামো বলতে
আমরা বুঝি, আন্ত:ব্যক্তি সম্পর্ক বা ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত শ্রেণী বা গোষ্ঠীর মধ্যকার সম্পর্ক। এই
সম্পর্কগুলো আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়।
সমাজ কাঠামোর বিশেষ কোন আকার বা অবয়ব নেই। আবার সমাজ কাঠামো কোন অলীক কল্পনা
নয়। তাই সমাজ কাঠামোর বাস্তব রূপ অংকন করা দূরূহ। এজন্যই সমাজ কাঠামো সম্পর্কে প্রকৃত
ধারণা লাভ করতে হলে সমাজে বিরাজিত কতগুলো সত্তা সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেমনজাতি, ধর্ম, রাষ্ট্র, পরিবার, শ্রেণী, সংস্কৃতি, সামাজিক সম্পর্ক, প্রচলিত বিশ্বাস-অবিশ্বাস ইত্যাদি।
সমাজের মূল কাঠামো কি পরিবর্তনশীল?
সমাজের মূল কাঠামো পরিবর্তনশীল কী না এ প্রশ্নের উত্তরে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে।
ক্রিয়াবাদী তাত্তি¡করা মনে করেন, সমাজের সত্যিকার মূল কাঠামো পরিবর্তন করা যায় না। তাঁরা মনে
করেন ভিন্ন ভিন্ন মূল্যবোধ ব্যবস্থা এবং আদর্শগত অবস্থানের কারণে সমাজে দ্ব›দ্ব তৈরি হয় এবং
পরিবর্তন সাধিত হয়। অন্যদিকে, মার্কসবাদী সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের
ধারণায় বিশ্বাসী। তাঁরা মনে করেন, শ্রেণী স্বার্থের ফলে রাজনৈতিক ধারা এবং সমাজ পরিবর্তিত হয়।
সমাজে শ্রেণী বৈষম্যের অবসান ঘটলে সাম্যবাদী সমাজ কাঠামো গড়ে উঠবে। সে সাথে সামাজিক
ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো
বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো আলোচনায় বাংলাদেশকে গ্রামীণ সমাজ এবং নগর সমাজ এ দু‘টি ভাগে
বিভক্ত করা হয়েছে।
গ্রামীণ সমাজ কাঠামো
বাঙালি জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস তৈরি করতে হলে, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ কাঠামো
গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই গ্রামে বাস
করে এবং কৃষিনির্ভর জীবন যাপন করে। গ্রামীণ বাংলাদেশে ‘ভ‚মি’ প্রধান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত
হয়। ভ‚মি মালিকানার ভিত্তিতেই সাধারণত: গ্রামীণ জনগণের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়। ভ‚মি
মালিকানার ভিত্তিতেই গ্রামের উৎপাদন সম্পর্ক এবং আর্থিক সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। বর্তমানে
গ্রামীণ সমাজে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ভ‚মিহীন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এবং
জনগণের দারিদ্র্যবস্থায় তেমন কোন উন্নতি ঘটছে না। যদিও সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন
কার্যক্রম পল্লী অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে তথাপি এ সব কার্যক্রমের দ্বারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশের
ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না।
কৃষি নির্ভর গ্রামীণ বাংলাদেশে ভ‚মি মালিক এবং বর্গাচাষীদের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক সমাজ
কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্গাচাষীর জীবন বহুলাংশে ভ‚মি মালিকের ই্চছা বা মর্জি নির্ভর। এ
ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, প্রশাসনিক, পারিবারিক প্রয়োজনে বর্গাচাষীদের ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের
অবস্থা সামন্ত সমাজ কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়।
সমাজ কাঠামো
বলতে আমরা বুঝি
আন্ত:ব্যক্তি সম্পর্ক
বা ব্যক্তি কর্তৃক
গঠিত শ্রেণী বা
গোষ্ঠীর মধ্যকার
সম্পর্ক।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর আরেকটি দিক মহাজনী প্রথা। যুগ যুগ ধরে গ্রামীণ দরিদ্র
জনগোষ্ঠী মহাজনী প্রথার মধ্যে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। জমি চাষের প্রাথমিক মূলধন, প্রাকৃতিক
দুর্যোগ, ফসলহানি ইত্যাদি কারণে দরিদ্র জনগণ মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে।
পরিবর্তিতে এই ঋণ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়ে দরিদ্র কৃষককে চিরস্থায়ী খাতে পরিণত করে। অনেক
সময় দেখা যায় বংশানুক্রমিকভাবে ঋণের এ বোঝা বহন করতে হয়। যদিও ইদানীং কালে বিভিন্ন
এন,জি,ও, তৎপরতার ফলে প্রথাগত মহাজনী ব্যবস্থার প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তবে এন,জি,ও,দের
ঋণ কর্মসূচীতে সুদের হার অত্যন্ত চড়া হওয়ায় দরিদ্র জনসাধারণের অসুবিধা সম্পূর্ণ লাঘব হয় নি।
নগর সমাজ কাঠামো
গ্রামীণ বাংলাদেশে ‘ভ‚মি’ই অর্থনৈতিক ভিত্তি। নগরেও ভ‚মি অন্যতম মূল্যবান সম্পত্তি হিসাবে
বিবেচিত। তবে নগরাঞ্চলে মূল্যবান সম্পত্তি হিসাবে আরো অন্তুর্ভুক্ত করা যায় - শিল্প কারখানা, ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, ট্রান্সপোর্ট, শপিং কমপ্লেক্স। বাংলাদেশের নগরাঞ্চলেও গ্রামের মত অসম বন্টন
ব্যবস্থা বিদ্যমান। একদিকে মুষ্টিমেয় একটি অংশ অতি ধনীতে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত,
নিæমধ্যবিত্ত শহুরে জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে এবং তাদের জীবন যাত্রার মানও
ক্রমশ নি¤œমুখী। সে সাথে গ্রাম থেকে আগত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এ সব
প্রবণতার ফলে বাংলাদেশের নগর সমাজ কাঠামোতে সার্বক্ষণিক শিক্ষা, রাজনৈতিক প্রভাব, আর্থিক
অবস্থা ইত্যাদি বাংলাদেশের নগর সমাজের ক্ষমতা কাঠামো নির্ধারণে প্রভাব ফেলে।
সারকথা: সমাজ হলো পারষ্পরিক ধ্বংসসাধনের মানসিকতার পরিবর্তে পারষ্পরিক সহনশীলতা।
সমাজ একটি বিমূর্ত প্রত্যয়। যেহেতু মানুষই সমাজের মূল উপাদান সেহেতু সমাজ কাঠামো বলতে
আমরা বুঝি, আন্ত:ব্যক্তি সম্পর্ক বা ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত শ্রেণী বা গোষ্ঠীর মধ্যকার সম্পর্ক।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এবং নগর সমাজ কাঠামোয় কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। গ্রামে ‘ভ‚মি’ই প্রধান
সম্পদ এবং ভ‚মি মালিকানার ভিত্তিতেই সাধারণত: সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে শহরে
ভ‚মি মূল্যবান সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত হলেও শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা,
ট্রান্সপোর্ট, শপিং কমপ্লেক্স ইত্যাদিও মূল্যবান সম্পত্তি রূপে পরিগণিত হয়।
বর্গাচাষীর জীবন
বহুলাংশে
ভ‚মিমালিকের ইচ্ছা
বা মর্জি নির্ভর।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ‘সমাজ’ অর্থ
ক) সহযোগিতা;
খ) হিংসা;
গ) ধ্বংস-সাধন;
ঘ) পরস্পরের ক্ষতি সাধন ।
২. সমাজের বৈশিষ্ট্য
ক) অপরিবর্তনীয়তা;
খ) পরিবর্তনশীলতা;
গ) অস্থিতিশীলতা;
ঘ) কোন্দল।
৩. গ্রামীণ বাংলাদেশে প্রধান সম্পদ
ক) ভ‚মি;
খ) খাল-বিল;
গ) দালান- বাড়ী;
ঘ) গরু-ছাগল।
সংক্ষিপ্ত উত্তমূলক প্রশ্ন
১. সমাজ কাঠামো বলতে কি বুঝায়?
২. সমাজ এর সংজ্ঞা কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর প্রকৃতি বর্ণনা করুন।
উত্তর: ১। ক) ২। খ ৩। ক
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র