সংষ্কৃতি
সমাজ বিজ্ঞান বা নৃবিজ্ঞানে ‘সংষ্কৃতি’কে ব্যাপক অর্থে বিবেচনা করা হয়। যে কোন সম্পূর্ণ জীবন যাত্রা
এবং জীবন যাত্রার সবগুলো দিকই ‘সংষ্কৃতি’র উপজীব্য বিষয়।
এডওয়ার্ড বি. টেইলর (ঊফধিৎফ ই. ঞুষড়ৎ)’র মতে, সংষ্কৃতি হল সমাজের পূর্ণাঙ্গ দিকের জটিল
ব্যবস্থা এবং সংষ্কৃতি তৈরি হয় সমাজের প্রথা, ধর্মীয় বিশ্বাস, চারুকলা, নৈতিকতা, আইন ব্যবস্থা
ইত্যাদির সমন্বয়ে।
মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গী
মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গীতে, ‘সংষ্কৃতি’ র সাথে অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। যে কোন সমাজে
অর্থনৈতিক ভিত্তিই হচ্ছে তার মৌল কাঠামো, এই মৌল কাঠামোকে ঘিরে গড়ে উঠে অধিকাঠামো।
আর এই অধিকাঠামোই হলো সংষ্কৃতি। উদাহরণ স্বরূপ, কোন সমাজে যদি পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা চালু
থাকে তাহলে সেই পুঁজিবাদী মৌল কাঠামোকে ভিত্তি করে গড়ে উঠবে পুঁজিবাদী সংষ্কৃতি।
‘সংষ্কৃতি’ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণাকে নিæলিখিত ভাবে ব্যক্ত করা যায়‘সংষ্কৃতি’ হচ্ছে জীবন যাত্রা প্রণালী। আবার জীবনযাত্রা প্রণালী মানুষের পেশার উপর নির্ভরশীল। তাই
সংষ্কৃতির সাথে পেশা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। যেমন, বাংলাদেশের সমাজে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণীর জীবন
প্রণালীতে পার্থক্য বিদ্যমান। যদিও তাদের মধ্যে ভাষা, নরবংশ, ভৌগলিক বাসস্থান, ইতিহাসঐতিহ্যগত ঐক্য রয়েছে ।
সমাজের সদস্য হিসাবে বসবাস করার ফলে মানুষ সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা,
আদর্শ, আচার ব্যবস্থা ইত্যাদি আত্বস্থ করে। তাই বলা যায়, সামাজিকীকরণের দ্বারা মানুষ সমাজ
থেকে যা অর্জন করে তাই সংষ্কৃতি।
সভ্যতা
সভ্যতা বলতে বোঝায়, মানবিক প্রয়াসের দ্বারা অর্জিত সাফল্য-যার বস্তুগত রূপায়নের দ্বারা সংষ্কৃতির
উন্নতির পর্যায় নির্দেশ করা যায়। এ কারণে সভ্যতা এবং সংষ্কৃতির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
মানুষ নিজের সৃজনশীলতা দ্বারা যে সামগ্রিক সমাজ জীবন গড়ে তোলে তার বস্তুগত প্রতিফলনকে
সভ্যতা বলা যায়। এই অর্থে বাসস্থান, অফিস, কল-কারখানা, যান বাহন, রাস্তাঘাট সব কিছু মিলে যে
বস্তুগত সংষ্কৃতি-তাই সভ্যতা।
ম্যাকাইভার
ম্যাকাইভার -এর ও মতে, আমরা যা সেটাই সংষ্কৃতি এবং যা আমরা ব্যবহার করি, যা
আমাদের আছে, তাই সভ্যতা।
ম্যাথিউ আরণল্ড
ম্যাথিউ আরণল্ড (মনে করেন, কোন বস্তু বা পদার্থ থাকা বা অর্জন করাই
সভ্যতা, সভ্যতা একটি বাহ্যিক পরিবেশ বা অবস্থা।
যে কোন সমাজে
অর্থনৈতিক ভিত্তিই
হচ্ছে তার মৌল
কাঠামো।
বস্তুতঃ সভ্যতা বাহ্যিক বলেই তা যান্ত্রিক। মানুষের উদ্দেশ্য বা উপযোগিতা পূরণের কলাকৌশলকে
সভ্যতা বলা যায়। সভ্যতার ফল যে কেউ গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট এলাকার সংষ্কৃতি
অন্য এলাকায় সহজে গৃহীত নাও হতে পারে। যেমন, পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতার কলাকৌশল আমরা
আয়ত্ব করতে চাই এবং এর ফল ভোগ করতে চাই। কিন্তু পাশ্চাত্য সংষ্কৃতির অনেক দিকই আমাদের
কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
উপসংষ্কৃতি
‘সংষ্কৃতি‘র মত ‘উপ সংষ্কৃতি’ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজই
‘বহুজাতি’ ভিত্তিক। এ কারণে একই সংষ্কৃতির ভেতরে বিভিন্ন ধরণের উপ সংষ্কৃতির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা
যায়। যেমন, পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোতে বহুজাতি বা এথনিক গোষ্ঠী বসবাস করে। এদের
সকলেরই উপসংষ্কৃতি বিদ্যমান। যদিও সবাই বৃহত্তর সাংষ্কৃতিক পরিমন্ডলে বসবাস করছে। উদাহরণ
স্বরূপ, লন্ডন শহরে বাঙালি, আফ্রিকান ইত্যাদি ধরনের এথনিক জনগোষ্ঠী বাস করে। এরা প্রত্যেকেই
নিজস্ব সাংষ্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সংক্ষেপে বলা যায়, উপসংষ্কৃতি হলো এক
ধরনের জীবনযাত্রা যা ‘বৃহত্তর’ সংষ্কৃতি বা জীবনযাত্রা থেকে আলাদা। এদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত
করা যায়। যদিও এরা সমাজের বৃহত্তর সাংষ্কৃতিক পরিমন্ডলের অংশ।
বিকল্প সংষ্কৃতি
‘বিকল্প সংষ্কৃতি’ও এক ধরণের উপসংষ্কৃতি। কিন্তু সব উপ সংষ্কৃতিই বিকল্প নয়। বিকল্প সংষ্কৃতি বলতে
আমরা বুঝবো, যখন কোন জনগোষ্ঠীর একটি অংশ নির্দিষ্ট অভিরুচি বা আদর্শের ভিত্তিতে বিকল্প
জীবনযাত্রা প্রচলনে তৎপর হয়। যেমন, ষাটের দশকে আমেরিকায় হিপ্পি আন্দোলন। সে সময়,
ভোগবাদী বস্তুবাদী সমাজের সমস্যা এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সহিংসতায় হতাশ, উচ্চবিত্ত আমেরিকান
পরিবারের সন্তানরা এক ধরনের ‘সাম্যবাদী’ সমাজ তৈরির চেষ্টা করে। তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি ত্যাগ
করে এবং দলবদ্ধ ভাবে বাস করতে শুরু করে।
বাংলাদেশের সংষ্কৃতি
বাংলাদেশের সংষ্কৃতি আলোচনার প্রথমেই গ্রাম এবং শহর এই বিভাজন সামনে চলে আসে। কেননা
গ্রামীণ এবং নগর সংষ্কৃতির মধ্যে অনেক প্রভেদ বিদ্যমান। সেজন্যই বাংলাদেশের সংষ্কৃতির
আলোচনাকে গ্রাম এবং শহর এ দু‘ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক
প্রেক্ষাপটে সংষ্কৃতিকে বুঝবার চেষ্টা করা হয়েছে।
গ্রামীণ সংষ্কৃতি
বস্তুতঃ সমগ্র বাংলাদেশ হচ্ছে একটি বিশাল গ্রাম। জনসংখ্যার ৮০ ভাগের ও বেশী অংশ গ্রামে বসবাস
করে। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে ভ‚মি
নির্ভর মর্যাদা-সম্পর্ক বিদ্যমান। এখনো পর্যন্ত ভ‚মি মালিকানার নিরীখেই গ্রামীণ সংষ্কৃতিতে উচ্চতর
অধঃস্তন স্থান নির্ণীত হয়। ধনী চাষী এবং ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষীর মধ্যে মুরুব্বী মক্কেল সম্পর্ক
বিদ্যমান। আবার এদের দৈনদিন জীবন-যাপন প্রণালী খাদ্যাভাস, পোষাক-পরিচ্ছেদেও বিভিন্নতা
আছে। এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণ মূলত: অর্থনৈতিক। গ্রামের সামাজিক প্রথা, প্রতিষ্ঠান, অনুষ্ঠান
গুলোতে যদিও সমরূপতা আছে। তবু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ধনী পরিবার এবং দরিদ্র পরিবারের
মধ্যে মাত্রাগত পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন, গ্রামের ধনী পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠান এবং দরিদ্র পরিবারের
বিয়ে অনুষ্ঠানের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। তবে গ্রামীণ বাংলাদেশে বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংষ্কৃতিতে
অর্থনৈতিক বিভিন্নতা সত্তে¡ও একধরনের পরিবর্তন এসেছে। ঘরবাড়ি, আসবাব পত্র, তৈজস দ্রব্য,
পোষাক ব্যবহারে পূর্বের সাথে পার্থক্য সুষ্পষ্ট। মাটির তৈজস দ্রব্যের স্থলে স্টীল বা এ্যালুমিনিয়ামের
তৈজস পত্রের ব্যবহার বেড়েছে। আসন- পিঁড়ির স্থলে মোড়া-চেয়ারের গ্রহণযোগ্যতা এসেছে।
আবহমান কালে মুড়ি-চিড়া-খই‘র পরিবর্তে পরাটা, চা, কলের সেমাই, বিস্কুটের প্রচলন বেড়েছে।
চিত্তবিনোদনের জগতে জারী-সারি, কবির লড়াই, যাত্রা, পালা আজ বিলুপ্ত প্রায়। সে স্থলে রেডিও,
বিশেষত: টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে।
নগর সংষ্কৃতি
বাংলাদেশের গ্রামীণ সংষ্কৃতি এবং নগর সংষ্কৃতির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। শিক্ষা, দীক্ষা,
অর্থনৈতিক অবস্থা, বিভিন্ন স¤প্রসারিত সুযোগ সুবিধার ফলে নাগরিক সংষ্কৃতি এবং গ্রামীণ সংষ্কৃতির
মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন, টিভি, স্যাটেলাইট, সিনেমা, নাটক ইত্যাদি শহুরে লোকদের
বিনোদন বা অবকাশ যাপনের উপায়। পোশাক- পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে গ্রামীণ বাংলাদেশে এখনো শাড়ী,
লুঙি, পায়জামা- পাঞ্জাবীর আধিক্য দেখা যায়। অন্যদিকে শহরে শার্ট-প্যান্ট, স্যুট, সাফারী, জিন্স,
সালোয়ার- কামিজ, টপস্-স্কার্টস ইত্যাদির বেশী ব্যবহার দেখা যায়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ
এবং বিনোদনের বিকল্প উৎসসমূহ (ভিডিও, সিডি, স্যাটেলাইট টিভি) সহজলভ্য হবার ফলে অল্প
কয়েক বছরেই বাংলাদেশের নাগরিক সংষ্কৃতিতে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন এসেছে। তবে বাংলাদেশ সহ যে
কোন সংষ্কৃতির আলোচনাতেই লক্ষ্যযোগ্য বিষয় হলো প্রতিটি সংষ্কৃতির রক্ষক থাকে এবং এই রক্ষকই
সংষ্কৃতির ব্যাখ্যা তৈরি করে। এই ব্যাখ্যা হচ্ছে - প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা। এই ব্যাখ্যা ক্ষমতার ভিত্তিতে
তৈরি হয়। সর্বোপরি সমাজের উপর প্রভ‚ত্বের আধিপত্য তৈরি হয়, এই ক্ষমতার মাধ্যমে।
সারকথা: সংস্কৃতি হচ্ছে জীবন যাত্রা প্রণালী। সামাজিকীকরণের দ্বারা মানুষ সমাজ থেকে যা অর্জন
করে তাই সংস্কৃতি। সংস্কৃতির সাথে অর্থনীতির অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক বিদ্যমান। ম্যাকাইভারের মত অনুসরণ
করে বলা যায় আমরা যা সেটাই সংস্কৃতি এবং যা আমরা ব্যবহার করি, যা আমাদের আছে তাই
সভ্যতা। বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ভ‚মি নির্ভর মর্যাদা সম্পর্ক বিদ্যমান। ধনী চাষী এবং ক্ষুদ্র ও
প্রান্তিক চাষীর মধ্যে মুরুব্বী মক্কেল সম্পর্ক টিকে আছে। ধনী ও দরিদ্র পরিবারের মধ্যে সামাজিক
প্রথা-প্রতিষ্ঠান-অনুষ্ঠানগুলোতে একধরনের সমরূপতা থাকলেও বাস্তবে বহু ফারাক রয়েছে। যেমন
গ্রামের ধনী পরিবার ও দরিদ্র পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিস্তর মাত্রাগত তথাৎ আছে।
বাংলাদেশের
উপজাতির মধ্যে
চাকমারা
সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। সংষ্কৃতি’র সাথে অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।এ মতবাদ-
ক) পুঁজিবাদী;
খ) মার্কসবাদী;
গ) সামন্ততান্ত্রিক;
ঘ) মৌলবাদী।
২। আমরা যা সেটাই সংষ্কৃতি - এ মত প্রকাশ করেন,
ক) ম্যাকাইভার;
খ) ম্যাথিউ আরণল্ড;
গ) কার্ল মার্কস;
ঘ) এডওয়ার্ড বি, টাইলর।
৩। গ্রামীণ বাংলাদেশে ধনী চাষী এবং ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষীর মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা হলোক) পিতা - পুত্র;
খ) মুরুব্বী - মক্কেল;
গ) ভাই - বন্ধু;
ঘ) গৃহস্বামী - ভৃত্য।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূল প্রশ্ন
১. বিকল্প সংষ্কৃতি বলতে কি বোঝায় ?
২. সভ্যতা কি ?
৩. সংষ্কৃতির ধারণা কি ভাবে ব্যক্ত করা যায় ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাংলাদেশের গ্রামীণ এবং নগর সংষ্কৃতি আলোচনা করুন।
উত্তর: ১।খ ২। ক ৩। খ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র