সাঁওতাল উপজাতির চাকমা এবং ত্রিপুরা উপজাতির সংস্কৃতি আলোচনা করুন।

উপজাতি
উপজাতির কোন সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন পতিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে
‘উপজাতি ’ শব্দটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
কোহেন ও ইয়ামস
নৃ- বিজ্ঞানী কোহেন ও ইয়ামস (১৯৮১)’ গ্রন্থে অর্থনৈতিক কৌশলের
দৃষ্টিকোন থেকে ‘উপজাতি’র সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁদের মতে, উপজাতি হচ্ছে এমন একটি
জনগোষ্ঠী যারা নিজেদের জীবিকার জন্যে খাদ্য সংগ্রহ, উদ্যান কৃষি এবং পশু পালনের উপর নির্ভর
করে।
রবার্ট বি. টাইলর
রবার্ট বি. টাইলর ‘’ (১৯৮০)গ্রন্থে সংস্কৃতি’র বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উপজাতির সংজ্ঞা
দান করেছেন। তাঁর মতে, তেমন একটি জনগোষ্ঠীকে উপজাতি বলা যায় যারা মোটামুটি একটি
অঞ্চলে সংগঠিত। যাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য বিদ্যমান এবং যারা মনে করে নিজেরা একই
সাংস্কৃতিক এককের অন্তর্ভুক্ত।
উপরোক্ত সংজ্ঞাদ্বয় বিশ্লেষণ করে, উপজাতির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়।
উপজাতি প্রায় নির্দিষ্ট একটি এলাকায় বসবাস করে।
উপজাতির একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিদ্যমান।
উপজাতির সকলের মধ্যে সমধরনের অর্থনৈতিক জীবন প্রণালী লক্ষনীয়। সকল সদস্য ঐক্যের
অনুভ‚তি দ্বারা পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের উপজাতি: জাতি হিসাবে বাংলাদেশের অধিবাসীদের পরিচয়ের মধ্যে ‘উপজাতি’গুলো
স্বতন্ত্র ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্বপরিচয়সহ যুক্ত নয়। সামগ্রিক ভাবে এরা রয়ে গেছে মূলধারা’র বাইরে
প্রান্তিক অবস্থানে। ইংরেজী ট্রাইব (ঞৎরনব) থেকে বাংলায় ‘উপজাতি’ শব্দটি এসেছে। নৃ-বিজ্ঞানে
‘উপজাতি’ বলতে এমন একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়, যাদের সমাজ ব্যবস্থা জ্ঞাতি সম্পর্ক নির্ভর
এবং রাষ্ট্রের উপাদানগুলো অনুপস্থিত থাকে , সে অর্থে বাংলাদেশের উপজাতিদের এ নামে অভিহিত
করা যায় না। কেননা এদের কেউই রাষ্ট্রীয় শাসনের বাইরে স্বাধীন গোষ্ঠী ভিত্তিক সমাজে বাস করছে
না। অনেক গবেষক মনে করেন, ব্রিটিশ’রা পার্বত্য চট্রগ্রামের অধিবাসীদের বর্বর, অসভ্য বিবেচনা করে উপনিবেশবাদী মানসিকতা থেকে একই অর্থে ‘উপজাতি’ শব্দটি ব্যবহার করেছিল। যার পেছনে কোন সৎ যুক্তি পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের উপজাতিসমূহের ইতিহাস
বাংলাদেশে ২০টির অধিক উপজাতি বসবাস করে। এদের অধিকাংশেরই বাস পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায়।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলাতেও (পটুয়াখালী, রাজশাহী, দিনাজপুর,ময়মনসিংহ, সিলেট ইত্যাদি)
কয়েকটি উপজাতি বাস করে। বাংলাদেশের উপজাতিগুলোর মধ্যে রয়েছে-চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বাংলাদেশের ‘উপজাতি’দের এ নামে অভিহিত করা যায় না। কেননা এদের কেউইরাষ্ট্রীয় শাসনের বাইরে স্বাধীন গোষ্ঠী ভিত্তিক সমাজে বাস করছে না।
ম্রো, চাক, খ্যাং, খুমি, লুসাই, পাংখো, বোম, রাখাইন, গারো, সাঁওতাল প্রভৃতি। এদের প্রত্যেকেরই
রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস। বিভিন্ন ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক কারণে এই
উপজাতিসমূহের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জীবনধারা আমাদের নিকট অজ্ঞাত রয়ে গেছে। নিæে তিনটি
উপজাতির ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
চাকমা
চাকমাদের অতীত ইতিহাস স্পষ্ট নয়। কিংবদন্তী অনুসারে চাকমারা বিশ্বাস করে, তারা সুদূর অতীতে
চম্পক নগর নামক রাজ্যে বাস করত। পরবর্তীতে বিজয়গিরি’র নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও আরাকানের কিছু
অংশ জয় করে এবং বিজয়ী সৈন্যরা এ অঞ্চলে বাস শুরু করে। সম্ভবত: নবম থেকে চতুর্দশ শতক
পর্যন্ত আরাকানের বেশ কিছু অঞ্চল চাকমা শাসনাধীনে ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্থানীয়
আরাকানীদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে চাকমারা প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়
বসবাস শুরু করে বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। মুঘল যুগে চাকমাদের সাথে মুঘলদের বাণিজ্যিক
সম্পর্ক ছিল। ব্রিটিশ শাসনকালে চাকমারা কেন্দ্রীয় ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য হয়। ১৯৪৭
সালে দেশভাগের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই জল
বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হলে উপযুক্ত পূনর্বাসন না হওয়ায় অন্যান্য উপজাতির মত চাকমাদের জীবনেও
দুর্ভোগ নেমে আসে। অনেক চাকমা বাস্তুহারা ও ভ‚মিহীন হয়। অনেকে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয়
নেয়। বাংলাদেশের উপজাতির মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ত্রিপুরা
ত্রিপুরা উপজাতি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিগুলোর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে তৃতীয়। এদের
টিপরা, তিপারা ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। চাকমারা এদের ‘তিবিরা’ লুসেইরা ‘তুইকুক্’ এবং
মারমারা ‘ম্রং’ নামে অভিহিত করে। (ত্রিপুরাদের মূল জনগোষ্ঠি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাস করে)।
ত্রিপুরার ইতিহাস গ্রন্থ ‘শ্রীরাজমালা’ থেকে জানা যায়, পঞ্চদশ শতকে ও রাজা রতœমানিক্যের আমলে
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর রিয়াং দলের লোকেরা মাইয়ুনী উপত্যকায় বাস করতো। রিয়াং, নাইতং, ফাতুং,
রাংখল ইত্যাদি সহ ত্রিপুরাদের মোট ৩৬ টি ‘দল ’আছে । ঔড়ধ ফব ইধৎৎড়ং কর্তৃক ষোড়শ
শতাব্দীতে অংকিত মানচিত্রে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর উত্তর ভ‚খন্ড ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন ছিল।
এখানকার রিয়াংরা রাজা গোবিন্দ মানিক্যের শাসনকালের (১৬৬০-৬৬খৃ:) প্রথম দিকে বিদ্রোহ করলে
তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠানো হয়। এরও পূর্বে ত্রিপুরার রাজা উদয়গিরি বা উদয়মানিক্যের শাসনকালে
(১৫৬৭-৭২ খৃ:) মাতামুহুরী নদীর উপত্যকায় ত্রিপুরাদের ফাতং, হারবাং, ইত্যাদি দলের লোকদের
আবাস ছিল। পরবর্তীকালে ত্রিপুরা রাজাদের শক্তি কমতে থাকলে ত্রিপুরা উপজাতি পার্বত্য চট্টগ্রামের
দক্ষিণাংশের চেয়ে উত্তরাংশেই অধিক পরিমানে স্থায়ী হয়। ব্রিটিশরা যখন পার্বত্য চট্রগ্রাম জেলার সৃষ্টি
করে, তখন এর উত্তরাঞ্চল ছিল ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত। কিন্তু সেখানে ‘মং’ সার্কেল গঠন করা
হলে, ত্রিপুরাদের আÍ পরিচয়ের উপর আঘাত তৈরি হয়। কেননা সংখ্যাগরিষ্ঠ ত্রিপুরাদের পক্ষে একজন
‘মগ’ বা ‘মারমা’কে ন তন রাজা হিসাবে মেনে নেয়া কঠিন ছিল।
সাঁওতাল
বিভিন্ন নৃ-তাত্তি¡ক সাদৃশ্যের কারণে ধারণা কথা হয় যে, সাঁওতালরা অস্ট্রিক গোষ্ঠীর লোক। অষ্ট্রিক
নরবংশের সাথে সাঁওতালদের কিছুটা মিল পাওয়া যায়। যেমন - মাথার খুলি লম্বা থেকে মাঝারী, নাক
চেপ্টা ও চওড়া, গায়ের রং কালো এবং চুল ঢেউ খেলানো। এক সময় অষ্ট্রিক গোষ্ঠীর বাস উত্তর
ভারত থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ইষ্টার দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অনেক নৃতাত্তি¡ক মনে করেন,
আনুমানিক ত্রিশ হাজার বছর পূর্বে তারা ভারত থেকে অষ্ট্রেলিয়া গিয়েছিল। অষ্ট্রিক ভাষী এই জনগোষ্ঠী
উত্তর- পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলে কি ভাবে সাঁওতাল নামে পরিচিত হয়, তার কোন একক ব্যাখ্যা নেই।
সাঁওতালরা এদেশের ভ‚মিপুত্র নয়। অনেক গবেষক মনে করেন, সাঁওতালদের আদি বাসস্থান ‘চায়চাম্পা’র অবস্থান ছিল হাজারিবাগ মালভ‚মির উত্তর পশ্চিম সীমান্তে। ইতিহাস প্রমাণ করে, সাঁওতালরা ইত:স্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বাস করেছে। ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ সরকার তাদের নির্বিঘেœ বসবাসের জন্য স্থায়ী এলাকা ঠিক করে দেয়- এই এলাকা পরবর্তীতে সাঁওতাল ত্রিপুরা উপজাতি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিগুলোর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে তৃতীয়। ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনের ফলে সাঁওতালরা আদি নিবাস ছেড়ে বাংলা, উড়িষ্যা এবং ত্রিপুরায় স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়।
পরগনা নামে পরিচিত হয়। এর পূর্ব নাম ছিল ‘দামিনিকো’। ১৮৫৫-৫৭ সালে বিহারে স্থানীয়
জমিদার, মহাজন, প্রশাসকদের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করে এবং পরাজিত
হয়, তখন ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনের ফলে সাঁওতালরা আদি নিবাস ছেড়ে বাংলা, উড়িষ্যা এবং
ত্রিপুরায় স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের উপজাতিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ব পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশেও এ প্রবণতা
অব্যাহত ছিল। একই রাষ্ট্রের বাসিন্দা হওয়া সত্তে¡ও উপজাতিদের সম্পর্কে সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে
ব্যাপক অজ্ঞতা বিদ্যমান। মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করার কোন উদ্যোগ পূর্বে গ্রহণ করা হয় নি।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ-বঞ্চনা ও বৈষম্যের অনুভ‚তি থেকে বিশেষতঃ স্বতন্ত্র
জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবীতে উপজাতি জনগোষ্ঠী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এর ফলে বহু প্রাণহানি
এবং সম্পদহানি ঘটে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে এ সশস্ত্র
সংগ্রামের রাজনৈতিক পরিসমাপ্তি হয়েছে।
বাংলাদেশের উপজাতির সংষ্কৃতি
এখানে চাকমা, ত্রিপুরা এবং সাঁওতাল এই তিনটি উপজাতির সংষ্কৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
চাকমা ভাষা
বর্তমান চাকমা জনগোষ্ঠী এক ধরণের বাংলা উপভাষায় কথা বলে এবং বাংলা হরফে ঐ বাংলা
উপভাষায় লেখার কাজ করে । পূর্বে তারা আরাকানী ভাষায় কথা বলতো যা ‘টিবে-টো- বার্মান’
ভাষার পরিবারর্ভুক্ত ছিল।
ধর্ম
চাকমারা প্রধানতঃ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। বৈশাখী পূর্ণিমা, আষাড়ী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, কাত্তির্কী
পূর্ণিমা ইত্যাদি দিবস তারা ধর্মীয় ভাবে পালন করে। চাকমা সমাজে বহুধরনের উৎসব, পূজা- পার্বণ
প্রচলিত। থানমানা, হালপালানি, ভাতদ্যা, বিঝু উৎসব উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি
চাকমা জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগত ভাবে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। তবে সরকারীভাবে জুম চাষকে
নিরুৎসাহিত করা হয়। জমির উত্তরাধিকার পুত্র সন্তানের উপর বর্তায়। কন্যারা এই অধিকার বঞ্চিত।
চাকমা সমাজে জুম জমিতে পুরোপুরি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত নয়। যে যার পছন্দমত জমি জুম চাষ
করতে পারে। তবে হাল কৃষির অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন। মোরগ - মুরগী ও শুকর পালন
চাকমা অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সামাজিক গঠন
পরিবার চাকমা সমাজের ক্ষুদ্রতম সংগঠন। এ পরিবারগুলো পিতৃতান্ত্রিক। চাকমা সমাজে বহু বিবাহ
অনুমোদিত। আধুনিক সময়ে, শিক্ষা প্রসার, মুদ্রা অর্থনীতির ব্যাপক বিকাশ ইত্যাদি কারণে সনাতন
চাকমা সংষ্কৃতির দ্রæত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
ত্রিপুরা ভাষা
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা রয়েছে । এ ভাষার নাম ‘কক্বরোক’। ‘কক্বরোক’ ভাষা ত্রিপুরাদের
বৃহত্তর ভাষা ‘বোডো’ (ইড়ফড়) দলের অন্তর্ভুক্ত।
ধর্ম
পার্বত্য চট্রগ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তবে ত্রিপুরাদের অন্যতম শাখা উসাইরা
পরবর্তীতে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। ত্রিপুরারা ১৪ জন দেবদেবীর পূজা করে । বিভিন্ন পূজায় দেবতার উদ্দেশ্য পশুপাখি বলি দেয়া হয়। সাঁওতাল সমাজে নানা ধরনের সংস্কার প্রচলিত। এরা সারা বছরই বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান উদ্যাপন করে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ -বঞ্চনা - বৈষম্যের অনুভ‚তি থেকে উপজাতি জনগোষ্ঠী সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে ।
জন্ম-মৃত্যু
ত্রিপুরা শিশুর জম্মের পর তাকে গরম জলে গোসল করিয়ে মুখে মধু দেয়া হয়। এক বোতল মদ ,
নতুন কাপড় এবং টাকার বিনিময়ে ত্রিপুরা মা ধাইয়ের কাছ থেকে শিশুকে কিনে নেন। শিশুর
নামকরণের সময় বিভিন্ন নামসহ ৫/৭ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়, যে প্রদীপ বেশী উজ্জ্বল থাকে সে নামে
শিশুর নামকরণ হয়। ত্রিপুরা সমাজে মৃতদেহ দাহ করা হয়। ত্রিপুরারা বিশ্বাস করে শেষ বিদায় কালে
শোক প্রকাশ করলে মৃতের অমঙ্গল হয়। তাই শোক থাকলেও মৃতদেহ সৎকারের সময় আনন্দ -উৎসব পালন করা হয়।
সাঁওতাল
খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদ
বাংলাদেশের সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। সেই সাথে মাছ- মাংসের ব্যবহার প্রচলিত। সাঁওতাল
রমনীরা নানারকম পিঠা তৈরি করে। দারিদ্র সাঁওতালরা পান্তা ভাত গ্রহণে অভ্যস্ত। সাঁওতাল সমাজে
নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রচলন অধিক। উৎসব-অনুষ্ঠানে ভাত পচানো মদ বা হাড়িয়া পরিবেশন করা হয়। দরিদ্র সাঁওতালরা সাধারণত: নেংটি পরিধান করে। অবস্থাপন্ন সাঁওতালদের পরিধেয় - ধুতি, লুঙ্গি। শিক্ষিত সাঁওতালরা প্যান্ট, সার্ট, পাজামা, পাঞ্জাবী ইত্যাদি পরিধান করে।
জন্ম-মৃত্যু
সাঁওতাল সমাজে সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের মধ্যে আনন্দ- উল্লাসের সৃষ্টি হয়।
পরিবারের অভিজ্ঞ রমনীরা ধাত্রীর দায়িত্ব পালন করে। শিশু’র জন্মের পর বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান
আয়োজন করা হয়। যেমন অন্নপ্রাশন। শিশুর পাঁচ অথবা পনেরো দিনে অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে নিমপাতা
দ্বারা রান্না করা ভাত আমন্ত্রিতদের পরিবেশন করা হয়। পূর্বে দাহ করার প্রচলন থাকলে ও বর্তমানে
সাঁওতাল সমাজে মৃতদেহ কবর দেয়া হয়। কবর দেয়ার আগে মৃতদেহ ধৌত করা হয়। সাঁওতালরা
বিশ্বাস করে, মৃত ব্যক্তি পরকালে জীবিত হয়ে স্বর্গে যাবে। এ জন্য মৃতদেহের সাথে সাধ্যমত টাকা -
পয়সা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র দেয়া হয়। মৃতদেহ কবরে নেয়ার পথে খৈ ছিটানো হয়।
উৎসব অনুষ্ঠান
সাঁওতাল সমাজে নানা ধরনের সংস্কার প্রচলিত। এরা সারা বছরই বিভিন্ন উৎসব- অনুষ্ঠান উদ্যাপন
করে। সাঁওতালরা জাঁকজমকের মাধ্যমে উৎসবগুলো পালন করে। বাংলা ফাল্গুন মাসে নববর্ষ
উদযাপিত হয়। সালসেই, বোঙ্গাবুঙ্গি, হোম, এরোরা, হাড়িয়া, দিবি, সোহরাই ইত্যাদি সাঁওতালদের
উলে খযাগ্য উৎসব। -
সারকথা: উপজাতির কোন সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। তবে কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের
আলোকে উপজাতিকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন, উপজাতি প্রায় নির্দিষ্ট একটি এলাকায় বাস করে।
এদের একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিদ্যমান। সমধরনের অর্থনৈতিক জীবন প্রণালী এবং সকল সদস্য
ঐক্যের অনুভ‚তি দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে প্রায় বিশটির অধিক উপজাতি বাস করে। এদের
প্রত্যেকেরই নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের উপজাতিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’র পূর্ব পর্যন্ত এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। ঈঁষঃঁৎধষ অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু গ্রন্থের লেখক
ক) কার্ল মার্কস;
খ) কোহেন ও ইয়ামস;
গ) রবার্ট বি, টাইলর;
ঘ) জন লক ।
২। সাঁওতালদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে যে জনগোষ্ঠীর
ক) অষ্ট্রিক;
খ) ককেশয়েড;
গ) মঙ্গোলীয়;
ঘ) এক্সেমো।
৩। চাকমারা প্রধানত: কোন ধর্মের অনুসারী ?
ক) হিন্দু;
খ) খ্রিষ্টান;
গ) বৌদ্ধ;
ঘ) জৈন।
৪। ত্রিপুরারা কতজন দেবদেবীর পূজা করে ?
ক) ১১;
খ) ১২;
গ) ১৩;
ঘ) ১৪।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. উপজাতি‘র সংজ্ঞা কি ?
২. সাঁওতাল উপজাতির বিভিন্ন সময়ে বাসস্থান পরিবর্তনের কারণ কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. চাকমা এবং ত্রিপুরা উপজাতির সংস্কৃতি আলোচনা করুন।
উত্তর: ১. খ ২. ক ৩. গ ৪. ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]