বলপ্রয়োগ মতবাদের মূল বক্তব্য দোষ-ত্রæটি বিশ্লেষণ করতে পারবেন। বিবর্তনমূলক মতবাদের মূল বক্তব্য বিবর্তনমূলক মতবাদের বিভিন্ন উপাদানের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা

মুখ্য শব্দ (কবু ডড়ৎফং)
বল, জয়-পরাজয়, সবল-দুর্বল, বিবর্তন, কালক্রমে, রক্তের সম্পর্ক।
বল প্রয়োগ মতবাদের মূল বক্তব্য
এ মতবাদের মূল কথা হচ্ছে, বল বা শক্তির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। এ মতবাদে ধরে নেয়া হয়েছে যে,
আদিমকালে মানুষ কলহপ্রিয় ও ক্ষমতালিপ্সু ছিল। সবলরা বল প্রয়োগ করে দুর্বলদের অধীন করে আনুগত্য স্বীকার করাতে
বাধ্য করত। এ প্রবণতার কারণে এক গোত্র অন্য গোত্রের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হত এবং পরাজিত গোত্র বিজয়ী গোত্রের
অন্তর্ভূক্ত হয়ে গড়ে উপজাতি। উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ বা যুদ্ধের ফলে পরাজিত উপজাতি বিজয়ী উপজাতির অন্তর্ভূক্ত
হয়ে গড়ে উঠত এক বৃহৎ উপজাতি। একটি অঞ্চলে একজন উপজাতি প্রধান প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা করত। এভাবে এক একটি
অঞ্চল নিয়ে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ডেভিড হিউমের মত চিন্তাবিদরা বলপ্রয়োগ মতবাদের সমর্থক। হিউমের মতে, দখলদারিত্ব
বা বলপ্রয়োগ ছাড়া অতীতে বা বর্তমানে কখনোই কোন রাষ্ট্র গঠিত হয় নি।
সমালোচনা: বলপ্রয়োগ মতবাদকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করা হয়।
১। অসম্পূর্ণ মতবাদ: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, কেবলমাত্র বলের মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়নি। রাষ্ট্র সৃষ্টির
অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে বল একটি উপাদান মাত্র। এ মতবাদে অন্যান্য উপাদান তথা আদিম সমাজে রক্তের
সম্পর্ক, ভাষা, জাতীয়তা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চেতনার মত উপাদানগুলোকে অস্বীকার করা হয়েছে।
২। মানবতা বিরোধী: এ মতবাদে মানব জাতির খারাপ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেমনÑ ঝগড়া-বিবাদ, ক্ষমতালিপ্সা,
অত্যাচার ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, এ মতবাদে মানব জাতির উদারতা ও মহত্ব সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি। এজন্য এ
মতবাদকে মানবতা বিরোধী মতবাদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩। স্বৈরতন্ত্রের সমর্থক: এ মতবাদে বলকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যার কারণে শাসক শক্তির সাহায্যে যে কোন সিদ্ধান্ত
জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারে, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। তাই বলা যায়, বল প্রয়োগ মতবাদ স্বৈরতন্ত্রের সমর্থক।
৪। শান্তি বিরোধী: এ মতবাদ যুদ্ধকে সমর্থন করে। মানুষ যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়। এভাবে দেখলে এ মতবাদ শান্তি
বিরোধী।
বল প্রয়োগ মতবাদের গুরুত্ব: বল প্রয়োগ মতবাদের বহুবিধ সমালোচনা থাকলেও, এই মতবাদের সর্মথনে ইতিহাস ও বর্তমানে নানা নজির পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক রাষ্ট্রগুলো অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বহি:শত্রæর হাত থেকে রক্ষার জন্য বল বা শক্তি
ব্যবহার করে। এজন্য আধুনিক রাষ্ট্রগুলো সামরিক বাহিনী গঠন করে। শক্তির দ্বারা রাষ্ট্র সৃষ্টির নজির ইতিহাসে অহরহ।
টমাস হবস ও নিকোলা ম্যাকিয়াভেলীর মত তাত্তি¡কেরা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শক্তিশালী শাসকের কথা বলেছেন।
তবে বলপ্রয়োগ মতবাদের নজির থাকলেও একথা বলা যায় না যে, কেবলমাত্র বল প্রয়োগের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি
হয়েছে। কারণ কেবলমাত্র বল বা শক্তি জনগণকে খুব বেশি দিন সংগঠিত রাখতে পারে না। মূলত, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও
স্থায়িত্ব নির্ভর করে জনগণের ইচ্ছার উপর। সর্বশেষে তাই বলা যায় রাষ্ট্রের ভিত্তি সম্মতি, বল নয়।
বিবর্তনমূলক মতবাদ
এ মতবাদে মূল বক্তব্য হলÑ রাষ্ট্র হঠাৎ করে সৃষ্টি হয় নি। ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন শক্তি ও উপাদানের
সাহায্যে ধীরে-ধীরে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়Ñ ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে
উপজাতি, উপজাতি থেকে জাতি এবং জাতি থেকে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। অধ্যাপক জেমস গার্নার এ মতবাদের সমর্থনে বলেন,
“রাষ্ট্র বিধাতা কর্তৃক সৃষ্টি হয়নি, কোন দৈহিক শক্তির দ্বারা সৃষ্টি হয় নি, অথবা পারস্পরিক চুক্তির ফলেও রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় নি,
কিংবা পরিবার সম্প্রসারিত হয়ে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় নি বরং ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ফলে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।”
বিবর্তনমূলক মতবাদ অনুসারে যে উপাদানগুলো আদিতে রাষ্ট্র সৃষ্টিতে কাজ করেছিলো, তার কয়েকটি আলোচনা করা হলঃ
১। রক্তের বন্ধন: পরিবারের ভিত্তি হল রক্তের সম্পর্ক। পরিবার সম্প্রসারিত হয়ে গোষ্ঠী সৃষ্টি হয় এবং রক্তের সম্পর্ক
গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে। রক্তের সম্পর্কের কারণে গোষ্ঠীর প্রধানের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে গোষ্ঠী থেকে সম্প্রদায়, সম্প্রদায় থেকে উপজাতি এবং উপজাতি থেকে জাতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এসে
এক একটি জাতি একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে রক্তের বন্ধন সক্রিয় ভূমিকা রেখে ছিল। অধ্যাপক ম্যাকাইভার
বলেন, “রক্তের সম্পর্ক সমাজ সৃষ্টি করল এবং সমাজ অবশেষে রাষ্ট্র সৃষ্টি করল।”
২। ধর্মের বন্ধন: রাষ্ট্রের বিবর্তনের ধারায় ধর্মের বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তের সম্পর্ক
শিথিল হতে থাকে, সে মুহূর্তে ধর্ম রক্তের বন্ধনের শূণ্যতা পূরণ করে। ধর্ম চর্চার প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে ধর্মীয় সমাজ ও
ধর্মীয় নেতা। পরবর্তীতে ধর্মীয় সমাজ সুদৃঢ় হয়ে সৃষ্টি হয় রাষ্ট্র।
৩। যুদ্ধ-বিগ্রহ: যুদ্ধ-বিগ্রহ রাষ্ট্র সৃষ্টির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আদিম সমাজে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-দ্ব›দ্ব লেগেই থাকত। যে
ব্যক্তি যত শক্তিশালী ছিল, তার তত ক্ষমতা ও আধিপত্য থাকত। তাই গোত্রের সাথে গোত্রের, উপজাতির সাথে
উপজাতির যুদ্ধ বা সংঘর্ষ হত। বিজিতরা বিজয়ীদের অন্তর্ভূক্ত হত। এভাবে বিভিন্ন জাতির সৃষ্টি হয়। অতপর
জাতিসমূহের স্থলে এক একটি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।
৪। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ: এক সময় মানুষ পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ করে জীবন-যাপন করত। সভ্যতার একটি
পর্যায়ে মানুষ কৃষিকাজ শুরু করলে, স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সমাজ পরিবর্তনের
ধারাবাহিকতাতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ও সমাজে বহু শ্রেণির সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে মানুষ আইন, শাসক ও
বিচারকের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে। এসবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ভিত গড়ে ওঠে।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি আলোচনায় বিবর্তনমূলক মতবাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকখানি। বস্তুত; এ মতবাদের মধ্যে অন্যান্য সকল
মতবাদের কিছু মাত্রায় প্রতিফলন ঘটেছে। যেমন, রক্তের বন্ধন আলোচনাতে পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক মতবাদের সন্ধান
পাওয়া যায়, ধর্মের বন্ধনে বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদের আভাস মিলে। যুদ্ধ-বিগ্রহ বিষয়ক আলোচনাতে বলপ্রয়োগ
মতবাদের ইঙ্গিত রয়েছে। এছাড়াও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও রাজনৈতিক চেতনা সংক্রান্ত বক্তব্যে বিবর্তনমূলক মতবাদের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
বল প্রয়োগ মতবাদের মূল বক্তব্য হল বল বা শক্তির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বিবর্তনমূলক মতবাদের মূল
বক্তব্য হল রাষ্ট্র হঠাৎ করে সৃষ্টি হয় নি। ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন শক্তি ও উপাদানের সাহায্যে ধীরে ধীরে
রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বল প্রয়োগ মতবাদের মূল বক্তব্য হলÑ
র) বল বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে
রর) শক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র টিকে আছে
ররর) সবল দুর্বলকে অত্যাচার করত
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) রর ও ররর
গ) র ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
২। “রাষ্ট্র বিধাতা কর্তৃক সৃষ্টি হয় নি” Ñকে বলেছেন?
ক) জেমস গার্নার খ) জাঁ পল সাঁত্রে
গ) কার্ল মার্কস ঘ) ফ্রেভরিক এঙ্গেলস
৩। বল প্রয়োগ মতবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যÑ
র) মানবজাতির খারাপ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে
রর) এ মতবাদ স্বৈরতন্ত্রের সমর্থক
ররর) আধুনিককালে এ মতবাদের প্রভাব লক্ষণীয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৪। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য মতবাদÑ
ক) বিবর্তন মূলক মতবাদ খ) বিধাতার সৃষ্টিমূলক
গ) সামাজিক চুক্তি ঘ) বলপ্রয়োগ মতবাদ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]