মিশ্র অর্থনীতির ধারণা, সুবিধা-অসুবিধা বর্ণনা করতে পারবে

রাষ্ট্রীয় মালিকানা, ব্যক্তি মালিকানা, অবাধ প্রতিযোগিতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ।
মিশ্র অর্থনীতির ধারণা
যে অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত মালিকানা এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি বিরাজ
করে তাকে মিশ্র অর্থনীতি বলা হয়। মিশ্র অর্থনীতিতে পুঁজিবাদের মত সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা, মুনাফা অর্জন ও ব্যক্তি
উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে। আবার বেসরকারি পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যাবলির উপর কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।
মিশ্র অর্থনীতি রাষ্ট্রের কিছু কিছু বৃহৎ শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সরকারিভাবে পরিচালিত হয়।
মিশ্র অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
মিশ্র অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে: প্রথমত, মিশ্র অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ পাশাপাশি
অবস্থান করে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি মালিকানার উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। তৃতীয়ত, মিশ্র
অর্থনীতিতে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী উৎপাদন করা হয়। চতুর্থত, দ্রব্যমূল্য ও মুনাফা নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হয়। পঞ্চমত, মিশ্র অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি খাতের পরিকল্পনা করা হয়।
সুতরাং মিশ্র অর্থনীতিতে উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক, বীমা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পাশাপাশি বিরাজ করে।
মিশ্র অর্থনীতির পক্ষে যুক্তি
মিশ্র অর্থনীতির কতগুলো গুণ লক্ষ্য করা যায়। মিশ্র অর্থনীতির সমর্থকরা মিশ্র অর্থনীতর পক্ষে কতগুলো যুক্তি প্রদর্শন করে।
প্রথমত, মিশ্র অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে বিধায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে যতœশীলতা লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে দ্রব্যের
মান উন্নত হয়। দ্বিতীয়ত, মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একই দ্রব্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদিতহয়। এর ফলে
বেসরকারি উদ্যোক্তার দ্রব্যমূল্য বেশি হলে বিক্রির সম্ভাবনা কম থাকে। এ কারণে দ্রব্যমূল্যের উপর ব্যক্তি মালিকানাখাতের
যথেচ্ছ নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা কম থাকে। তৃতীয়ত, মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণ ও মত
প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। ব্যক্তির জীবনকে পরিপূর্ণভাবে বিকাশ করার জন্য যেসব অধিকার প্রয়োজন, ব্যক্তি সেগুলো মিশ্র
অর্থনীতিতে পেয়ে থাকে। চতুর্থত, মিশ্র অর্থনীতি রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণের মধ্যে থেকেই অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ দেয়।
পঞ্চমত, মিশ্র অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উৎপাদন হয় বিধায় ক্রেতার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী দ্রব্য বাজারে
পাওয়া যায়। ষষ্ঠত, মিশ্র অর্থনীতিতে সরকারের কাজের চাপ কম থাকে। কারণ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে
উৎপাদন কাজ সম্পাদিত হয়। এ ব্যবস্থায় সরকার জনকল্যাণকর কার্য সম্পাদন করতে পারে। শেষত: মিশ্র অর্থনীতিতে
রাষ্ট্র দিক-নির্দেশনার ভূমিকায় থাকে বিধায় বেসরকারি খাত মুনাফার ক্ষেত্রে একচেটিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
মিশ্র অর্থনীতির বিপক্ষে যুক্তি
মিশ্র অর্থনীতির যেমন কতকগুলো গুণ রয়েছে, তেমনি কতগুলো দোষ রয়েছে। সমালোচকরা মিশ্র অর্থনীতির বিপক্ষে
বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। প্রথমত, মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পূর্ণ স্বাধীনতার দরুণ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য
কার্যকর থাকে। এ ব্যবস্থায় মালিক শ্রেণি অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে দুর্নীতি, কালোবাজারী, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি
নৈতিকতা বিরোধী কাজ করতে পারেণ। দ্বিতীয়ত, মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মতই মালিক দিন-দিন
সম্পদশালীতে পরিণত হয়। অন্যদিকে, শ্রমিক ক্রমশ দরিদ্র হতে থাকে। এর ফলে সমাজে ভারসাম্য নষ্ট হয়। তৃতীয়ত, এ
ব্যবস্থায় অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে বিধায় একই দ্রব্য বিভিন্ন গুণের ও মানের হয়। এর ফলে ক্রেতারা একদিকে বিভ্রান্ত
হয়। চতুর্থত, মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত মালিকানার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানা থাকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের
কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করে না। এ কারণে অধিকাংশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে লোকসান হয়।
পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদদের মতে, মিশ্র অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও পরে
উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়া অনেক দেশ সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়কারী হিসাবে মিশ্র
অর্থনীতি গ্রহণ করেছিল। গত শতাব্দীর শেষের দিকে, বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের পর থেকে, এক সময়ের
মিশ্র অর্থনীতির দেশগুলোতে পুঁজিবাদের সর্বশেষ ধারাটি, অর্থাৎ নব্য উদারনীতিবাদ গ্রহণের প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
সার-সংক্ষেপ
মিশ্র অর্থনীতি হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানা ভিত্তিক পুঁজিবাদ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা ভিত্তিক সমাজতন্ত্রের এক ধরনের সমন্বয়। এতে
ব্যক্তিগত উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত খাতে যাতে মুনাফাতন্ত্র কায়েম করতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্র
হস্তক্ষেপ করতে পারে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা উভয়ই বিরাজ করেÑ
ক) সমাজতন্ত্রে খ) পুঁজিবাদে
গ) মিশ্র অর্থনীতিতে ঘ) অভিজাততন্ত্র
২। বর্তমানে পৃথিবীতে কোন ধরনের অর্থ ব্যবস্থা বেশি প্রচলিত?
ক) সমাজতন্ত্র খ) পুঁজিবাদ
গ) মিশ্র অর্থনীতি ঘ) আমলাতন্ত্র

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]