কল্যাণ রাষ্ট্র : ধারণা ও কার্যাবলি

অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক কল্যাণ, আয়ের ভারসাম্য, জনকল্যাণ, মৌলিক
অধিকার, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন।
কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা
এক সময় রাষ্ট্রের প্রধান কাজ ছিল অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বহিঃশত্রæর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা
করা। কিন্তু একটি সময়ে বিশেষত: বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে, এই ধারণা বিকশিত হতে শুরু করে যে, কেবলমাত্র
শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা বা বহি:শত্রæর আক্রমণ প্রতিহত করা রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হতে পারে না। এ সময় থেকেই নাগরিকের
অর্থনৈতিক উন্নতি ও সামাজিক কল্যাণ সাধন রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হিসাবে পরিগণিত হতে থাকে। যেসব রাষ্ট্র
নাগরিকদের সঠিক জীবন মানের উন্নতির জন্য এসব দায়িত্ব হাতে তুলে নেয় সেগুলোকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলে।
উদাহরণস্বরূপ, কল্যাণ রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বেকার ভাতা প্রদান, শিক্ষার
উন্নয়নে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা এবং চিকিৎসার উন্নয়নে মাতৃসদন,
হাসপাতাল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করে। কল্যাণ রাষ্ট্র তার সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে এবং সম্পদ বন্টনের
ক্ষেত্রে নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দানের নীতিতে বিশ্বাসী। একটি আর্দশ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের
জন্য খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধা প্রদান করে। বেকারত্ব, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে একজন ব্যক্তি জীবিকা
অর্জনে ব্যর্থ হলে কল্যাণ রাষ্ট্র তাঁর পাশে দাঁড়ায়।
কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য : কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা ব্যাখ্যা করলে এর কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমনÑ
১. কল্যাণকর: জনগণের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ করা কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
২. জীবন-যাত্রার উন্নত মান: কল্যাণ রাষ্ট্রের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত। কারণ কল্যাণ রাষ্ট্র জনগণের জীবন-যাত্রার
মান উন্নয়নের জন্য সম্পদের বন্টনের ক্ষেত্রে নি¤œবিত্ত বান্ধব অনেক নীতি অনুসরণ করে।
৩. ব্যক্তিত্বের বিকাশ: কল্যাণ রাষ্ট্রেই প্রত্যেক ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ পায়। কারণ এ ধরনের রাষ্ট্রে বৃহত্তর
স্বার্থ ব্যতীত রাষ্ট্র জনগণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না।
৪. আয়ের ভারসাম্য: কল্যাণ রাষ্ট্রে ধনী ও গরীবের মধ্যে সম্পদ ও আয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভারসাম্য বজায় থাকে।
৫. পরিকল্পনা: জনকল্যাণার্থে কল্যাণ রাষ্ট্র বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে।
৬. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী: কল্যাণ রাষ্ট্রে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র সামাজিক পর্যায়ে নানা ধরণের
সুযোগ-সুবিধা চালু করে। এসব সুবিধাদি ব্যবহার করে জনগণ উপকৃত হয়। রাষ্ট্রের চালু করা সামাজিক নিরাপত্তার
বেষ্টনীর মধ্যে দরিদ্র কিংবা বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে বিনামূল্য চিকিৎসা সুবিধা সব কিছুই অন্তর্গত। এ ধরনের
বেষ্টনী থাকলে সাধারণ জনগণ ব্যক্তি মালিকানা খাতের যথেচ্ছ মুনাফাবাজির মধ্যে পড়ে না।
উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ যে রাষ্ট্রে পরিলক্ষিত হবে, তাকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলে।
কল্যাণ রাষ্ট্রের কার্যাবলি
জনগণের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণার্থে কল্যাণ রাষ্ট্র যেসব কাজ করে সেগুলো নি¤েœ বর্ণিত হল:
১. জনকল্যাণ সংক্রান্ত: কল্যাণ রাষ্ট্র জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনকল্যাণার্থে কাজ করে। এজন্য কল্যাণ রাষ্ট্র বিভিন্ন
পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করে।
২. অর্থনৈতিক নিরাপত্তা: প্রত্যেক নাগরিক যাতে অর্থনৈতিক কাজে অংশ নিতে পারে, সেজন্য কল্যাণ রাষ্ট্র কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা করে। তাছাড়া বেকারদের বেকার ভাতা ও প্রবীণদের বিশেষ ভাতা প্রদানের মত নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করে।
৩. বৈষম্য দূরীকরণ: কল্যাণরাষ্ট্র ধনীদের উপর অধিক কর আরোপ করে এবং উক্ত কর গরীবদের কল্যাণার্থে ব্যয় করে।
এভাবে কল্যাণ রাষ্ট্র ধনী-গরীরের বৈষম্য হ্রাস করে।
৪. জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত: সুস্থ দেহ ও মনের অধিকারী ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সুস্থ জাতি। এ লক্ষ্যে কল্যাণ রাষ্ট্র বিভিন্ন
হাসপাতাল, হেলথ ক্লিনিক, শিশু সনদ, মাতৃসদন স্থাপন করে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, সংক্রামক রোগ
প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৫. যোগাযোগ সংক্রান্ত: যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বলা হয় সভ্যতার চাবিকাঠি। যে রাষ্ট্র যত উন্নত সে রাষ্ট্রের যোগাযোগ
ব্যবস্থাও উন্নত। কল্যাণ রাষ্ট্র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, রেল, বিমান, ডাক, তার
টেলিফোন, ইন্টারনেটসহ তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করে।
৬. শিল্প ও বাণিজ্য: কল্যাণ রাষ্ট্র শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য কল-কারখানা স্থাপন ও বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করে।
তাছাড়া শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যাংক, বীমা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করে।
৭. শিক্ষা সংক্রান্ত: অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ
করে। তাছাড়া শিক্ষার প্রসারে লক্ষ্যে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে।
৮. কৃষি উন্নয়ন: খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কল্যাণ রাষ্ট্র কৃষির উন্নয়ন সাধনে সচেষ্ট থাকে। এজন্য রাষ্ট্র জলসেচ,
খালখনন, বাঁধ নির্মাণ, সুলভ সার, বীজ, কীটনাশক সরবরাহ, কৃষিঋণ প্রভৃতির ব্যবস্থা করে থাকে।
৯. বিবিধ: নাগরিকের মৌলিক অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা বিধান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয়
মালিকানার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা কিংবা চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা কল্যান রাষ্ট্রের
বৈশিষ্ট্য।
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, শ্রেণি-বর্ণ-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল জনগণের উন্নতি সাধন করাই কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য।
সার-সংক্ষেপ
যে রাষ্ট্র ব্যক্তি ও সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে তাকে কল্যাণ রাষ্ট্র বলে। কল্যাণ রাষ্ট্রের
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলÑ (১) জনকল্যাণ সাধন (২) উন্নত জীবন-যাত্রার মান (৩) ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ
(৪) মৌলিক চাহিদা পূরণের উদ্যোগ (৫) উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ (৬) আইনের শাসন প্রভৃতি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা মূলতÑ
ক) প্রাচীনকালের খ) মধ্যযুগের
গ) আধুনিক কালের ঘ) বিংশ শতাব্দীর
২। কল্যাণ-রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যÑ
র) জনগনের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন রর) জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ররর) জনগনের আয় ও সম্পদের ভারসাম্য রক্ষা
কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) রর ও ররর
গ) র ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রফেসর শামীম আহমেদ এবং প্রফেসর এম আর ইসলাম পরস্পর ভিন্ন ধরনের বক্তব্য পেশ
করেন। প্রফেসর শামীম বলেন, রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করতো। কালক্রমে তারা নানাবিধ
অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মানুষ নিজেরাই রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, প্রফেসর এম আর
ইসলাম বলেন, ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে উপজাতি, উপজাতি থেকে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে।
ক. রাষ্ট্র কি?
খ. বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদের মূল বক্তব্য বর্ণনা করুন?
গ. প্রফেসর শামীমের বক্তব্যে কোন মতবাদের প্রতিফলন হয়েছে? ব্যাখ্যা করুন।
ঘ. প্রফেসর এম আর ইসলাম-এর বক্তব্যটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এর স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করুন।
২। ‘ক’ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। জনগণের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা পূরণ এবং ধনী-
দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে উক্ত রাষ্ট্র সফল হয়েছে। এদেশের মানুষ অত্যন্ত শান্তিতে
জীবন-যাপন করছে।
ক. পুঁজিবাদ কী?
খ. সমাজতন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন ধরনের রাষ্ট্রের প্রতিফলন হয়েছে? ব্যাখ্যা করুন।
ঘ. উক্ত রাষ্ট্রের কার্যকলাপের সাথে বাংলাদেশের তুলনামূলক আলোচনা করুন।
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.১ ঃ ১। গ ২। ঘ ৩। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.২ ঃ ১। গ ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৩ ঃ ১। ক ২। ক ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৪ ঃ ১। ঘ ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৫ ঃ ১। ঘ ২। ক ৩। ঘ ৪। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৬ ঃ ১। ঘ ২। ক ৩। খ ৪। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৭ ঃ ১। ক ২। ক ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৮ ঃ ১। ক ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.৯ ঃ ১। ক ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.১০ ঃ ১। খ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.১১ ঃ ১। খ ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৬.১২ ঃ ১। ঘ ২। ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]