সরকারের ধারণা ও শ্রেণিবিভাগ



ইউনিট

সরকার (এড়াবৎহসবহঃ)
শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং নাগরিকের নৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক বিকাশ সাধনই
হল রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে সরকারের মাধ্যমে। রাষ্ট্র ও সমাজভেদে এ সরকার ব্যবস্থা
বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কোন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকলে অন্য কোন রাষ্ট্রে হয়তো একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্র দেখা যায়।
আবার শাসন ব্যবস্থায প্রধান কর্তৃত্ব কার হাতে ন্যস্ত থাকবে তার উপরও সরকারের ধরণ নির্ভর করে। তবে জনগণের
সর্বাধিক অংশগ্রহণে গঠিত সরকারই স্থায়ী ও সফল হয়ে থাকে। এই ইউনিটে সরকারের শ্রেণিবিভাগ, বিভিন্ন ধরণের
সরকারের দোষ-গুণ এবং বিভিন্ন রকম সরকারের পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সরকার, এককেন্দ্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয়, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র, নগর রাষ্ট্র, পুলিশী রাষ্ট্র,
জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
সরকারের ধারণা
যে চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হল সরকার। সরকার ব্যতীত রাষ্ট্র
পরিচালনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রের কর্মকান্ড সরকারের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। সরকার হল একটি বাস্তব রাজনৈতিক
প্রতিষ্ঠান। একে রাষ্ট্রের মুখপাত্রও বলা হয়। বৃহৎ অর্থে সরকার গঠিত হয় সকল নাগরিকের সম্মতিক্রমে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে
নির্বাচকমন্ডলী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন বা পরিবর্তন করে থাকে।
অধ্যাপক জে ডবিøউ গার্নার বলেন, “সরকার হচ্ছে একটি কার্য-নির্বাহী মাধ্যম বা যন্ত্র যার মাধ্যমে সরকারের সাধারণ
নীতিমালা নির্ধারিত হয় এবং যার দ্বারা সাধারণ বিষয়াদি নিয়ন্ত্রিত হয় ও সাধারণ স্বার্থ রক্ষিত হয়।”
অধ্যাপক আর জি গেটেল বলেন, “সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি যন্ত্র বা সংস্থা।”
পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের আইন-কানুন, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত, বিধি-নিষেধ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা যে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে
প্রকাশিত ও বাস্তবায়িত হয় তাকে সরকার বলে। সরকারবিহীন রাষ্ট্র তার কর্মকান্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হয় না।
সরকারের শ্রেণিবিভাগ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কিত বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বহুকাল ধরে সরকারের
শ্রেণিভাগের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়ে আসছে। অধ্যাপক অ্যালান বল (অষধহ ইধষষ) তাঁর "
গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সূচনা লগ্ন থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগের
একটি প্রচেষ্টা সবসময় লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত শ্রেণিবিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সরকারি কাঠামো ও রাজনৈতিক
প্রতিষ্ঠানসমূহের পন্থা-পদ্ধতির মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য বিচার-বিশ্লেষণ করা যায় এবং এর ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের
সমালোচনামূলক মূল্যায়ন করা যায়।
সরকারের শ্রেণিবিভাগ: সনাতনী ধারণা
সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে প্রাচীন ও আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকাল থেকে
সরকারের শ্রেণিবিভাগ মূলত তিনটি। প্রাচীনকালে যারা সরকারকে বিভিন্ন ভাগে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁদের মধ্যে
হিরোডোটাস (ঐবৎড়ফড়ঃঁং) এবং এরিস্টটল (অৎরংঃড়ঃষব) উল্লেখযোগ্য। হিরোডোটাস রাজতন্ত্র, কতিপয়তন্ত্র ও গণতন্ত্র এ
তিন শ্রেণিতে সরকারকে বিভক্ত করেছেন। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল সরকারকে যে শ্রেণিতে বিভক্ত করেছিলেন সেটি
বেশি প্রচলিত এবং সাড়া জাগানো।
এরিস্টটল এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ
সরকারের শ্রেণি-বিভাজনকে কেন্দ্র করে প্রাচীন এবং আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীন
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের নাম এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। পন্ডিত এরিস্টটল তাঁর প্রখ্যাত
‘পলিটিক্স’ নামক গ্রন্থে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। কথিত আছে যে, তিনি সমকালীন ১৫৮টি
নগর রাষ্ট্রের সংবিধান পর্যালোচনা করে এ শ্রেণিবিভাগ করেছেন।
এরিস্টটল দু’টি মূল সূত্র বা নীতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। সরকার ও শাসনব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে
তিনি এ দুটি মূল সূত্র উপস্থাপন করেন−
(ক) উদ্দেশ্য নীতি
(খ) সংখ্যা নীতি
(ক) উদ্দেশ্য নীতি উদ্দেশ্য নীতির অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতা শাসক বা শাসক-শ্রেণির স্বার্থে
ব্যবহৃত হচ্ছে নাকি জনসাধারণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং শাসক বা শাসকশ্রেণি কী উদ্দেশ্যে কাজ সম্পাদন করতে চায়।
এরিস্টটল উদ্দেশ্য নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকটি সরকারকে আবার দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন।
(র) স্বাভাবিক সরকার এবং
(রর) বিকৃত সরকার (
(র) স্বাভাবিক সরকার ঃ যে শাসনব্যবস্থা জনকল্যাণে নিয়োজিত এবং জনকল্যাণ সাধনের
উদ্দেশ্যে পরিচালিত সে সরকারকে এরিস্টটল স্বাভাবিক শাসনব্যবস্থা বা সরকার বলেছেন। এখানে শাসক ব্যক্তি স্বার্থের
কথা ভুলে গিয়ে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করেন। রাজতন্ত্র (অভিজাততন্ত্র ) এবং
ন্যায়তন্ত্র হচ্ছে স্বাভাবিক সরকার। ২
(রর) বিকৃত সরকার ( ঃ জনকল্যাণের পরিবর্তে যখন শাসক বা শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার
জন্যই সরকার পরিচালিত হয়, এরিস্টটল তাকে বিকৃত শাসনব্যবস্থা বা সরকার নামে অভিহিত করেছেন। স্বৈরতন্ত্র
), কতিপয়তন্ত্র এবং গণতন্ত্র হচ্ছে বিকৃত সরকার।
(খ) সংখ্যা নীতি সরকারের শ্রেণি বিভক্তিকরণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় নীতিটি হল সংখ্যা নীতি।
সংখ্যা নীতি অনুসারে রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা কতজন ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত আছে তার ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করা
হয়। সংখ্যা নীতির ভিত্তিতে এরিস্টটল তিন শ্রেণির সরকারের কথা বলেছেন।
(র) একজনের শাসন (জঁষব নু ড়হব)
(রর) কয়েকজনের শাসন (জঁষব নু ভব)ি
(ররর) বহুজনের শাসন (জঁষব নু সধহু)।
(র) একজনের শাসন (জঁষব নু ড়হব) ঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা একজনের হাতে ন্যস্ত থাকলে এবং জনকল্যাণসাধনই
শাসনব্যবস্থা বা সরকারের উদ্দেশ্য হলে তাকে রাজতন্ত্র বলে। অর্থাৎ এক ব্যক্তির স্বাভাবিক শাসনই হল রাজতন্ত্র। কিন্তু
এক ব্যক্তির দ্বারা শাসিত শাসন ক্ষমতা যদি কেবল শাসক বা রাজার স্বার্থেই ব্যবহৃত হয়, তবে তাকে স্বৈরতন্ত্র বলে।
অতএব এক ব্যক্তি শাসিত রাষ্ট্রের বিকৃত শাসনকেই স্বৈরতন্ত্র বলা হয়।
(রর) কয়েকজনের শাসন (জঁষব নু ভব)ি ঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব একজনের পরিবর্তে কয়েকজন
ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকলে এবং তা জনসাধারণের মঙ্গল বিধানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলে তাকে অভিজাততন্ত্র বলে।
অর্থাৎ মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শাসনই হল অভিজাততন্ত্র। কিন্তু এ শাসনব্যবস্থা শুধুমাত্র শাসকশ্রেণির মুষ্টিমেয়
কয়েকজনের স্বার্থ সাধনে পরিচালিত হলে তা কতিপয়তন্ত্র (ঙষরমধৎপযু) হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় কয়েক ব্যক্তির
বিকৃত শাসনই হল কতিপয়তন্ত্র।
(ররর) বহুজনের শাসন (জঁষব নু সধহু) ঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকলে এবং সর্বসাধারণের
কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলে, এরিস্টটলের মতে তা হল ন্যায়তন্ত্র। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সকল নাগরিকের
অংশগ্রহণ থাকলে ন্যায়তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরিস্টটলের মতে এর বিকৃতিরূপ হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে ক্ষমতা বহুজনের
হাতে ন্যস্ত থাকে। কিন্তু এ ব্যবস্থাতে ক্ষমতা সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে পরিচালিত না হয়ে শুধুমাত্র শাসক
সম্প্রদায়ের স্বার্থে পরিচালিত হয়।
পূর্বোক্ত দু’টি মূল নীতির ভিত্তিতে এরিস্টটল ছয় প্রকার শাসনব্যবস্থা বা সরকারের কথা বলেছেন।
এরিস্টটল প্রদত্ত সরকারের শ্রেণিবিভাগ
সংখ্যা নীতি উদ্দেশ্য নীতি
শাসকের সংখ্যা স্বাভাবিক রূপ বিকৃত রূপ
একজনের শাসন রাজতন্ত্র স্বৈরতন্ত্র
কয়েকজনের শাসন অভিজাততন্ত্র কতিপয়তন্ত্র
বহুজনের শাসন ন্যায়তন্ত্র গণতন্ত্র
এরিস্টটল এর সরকারের শ্রেণিবিভাগের সীমাবদ্ধতা
এরিস্টটলের শ্রেণিবিভাগ প্রাচীনকালে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও আধুনিক কালে গ্রহণযোগ্য হয় না। মধ্যযুগের পর থেকে এ
শ্রেণিবিভাগের বিরুদ্ধে নানা রকম বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য না করা,
সংখ্যার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ, গণতন্ত্র সম্পর্কে বিরূপ ধারণা, অবৈজ্ঞানিক ও অসম্পূর্ণ শ্রেণিবিভাগ বলে অনেক পন্ডিত মত পোষণ করেন।
সরকারের আধুনিক রূপ
এরিস্টটলের পরেও সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কিত আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রোমের পলিবিয়াস (
সিসেরো নাম উল্লেখ করা যায়। এছাড়া এরিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গিকে মোটামুটি অনুসরণ করে যাঁরা বিভিন্ন সময়ে
সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জ্যাঁ বোঁদা (, চার্লস
মন্টেস্কু টমাস হবস ), জন লক (, জন বার্জেস ( জোহান বøুন্টসলি ( প্রমুখ।
ম্যারিয়ট এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ
সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়ট -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ম্যারিয়টের শ্রেণিবিভাগ আধুনিক ও বিস্তৃত। মূলত তিনটি ভিত্তিতে তিনি সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন।
১। ক্ষমতার আঞ্চলিক বণ্টনের বিচারে ম্যারিয়ট সরকারকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। এ দু’টি ভাগ হল ঃ এককেন্দ্রিক
) সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।
২। সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির বিচারে তিনি সরকারকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। এ দুটি ভাগ হল ঃ সুপরিবর্তীয়
(ঋষবীরনষব) সরকার এবং দুষ্পরিবর্তনীয় (জরমরফ) সরকার।
৩। আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে তিনি তিন ধরনের সরকারের কথা বলেছেন ঃ স্বৈরতন্ত্র
, সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত
। কোন শাসন ব্যবস্থাতে শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ নির্বাহীর নিয়ন্ত্রণহীন প্রাধান্য থাকলে তাকে স্বৈরতন্ত্র
বলে। যে ব্যবস্থাতে আইন বিভাগের প্রাধান্য থাকে তাকে পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় সরকার বলে। আইন বিভাগ ও শাসন
বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক সম্পূরক হলে তাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলে।
তবে ম্যারিয়টের শ্রেণিবিভাগও পুরোপুরি মেনে নেওয়া যায় না। এ শ্রেণিবিভাগও সম্পূর্ণ নয়। তিনি গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র,
রাজতন্ত্র প্রভৃতির কথা বলেননি।
লীকক্ এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ
ম্যারিয়টকে অনুসরণ করে স্টিফেন লিকক (ঝঃবঢ়যবহ খবধপড়পশ) সরকারের যে শ্রেণিবিভাগ করেছেন তা আধুনিক
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বীকৃতি লাভ করেছে। তিনটি মূলনীতির ভিত্তিতে এ শ্রেণিবিভাগ করা হয়। এ তিনটি নীতি হল ঃ
১। সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহারকারী সংস্থা নির্ধারণ।
২। আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি।
৩। শাসন ক্ষমতার আঞ্চলিক বণ্টন নীতি।
লীকক্ সরকারকে প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন, গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র। গণতন্ত্রকে তিনি আবার
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ এ দু’শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। পরোক্ষ গণতন্ত্রকে আবার তিনি দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন নিয়মতান্ত্রিক
রাজতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্র (জবঢ়ঁনষরপ)। ক্ষমতার বণ্টনের বিচারে এদের উভয়কে তিনি
দু’ভাবে বিভক্ত করেছেন, এককেন্দ্রিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় । আবার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভিত্তিতে
এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার উভয়ের দু’টি রূপের কথা বলেছেন ঃ পার্লামেন্ট বা মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত
এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার।
লীকক্কে অনুসরণ করে সরকারের শ্রেণিবিভাগ ব্যবস্থাটিকে নি¤œলিখিত ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।
সরকার
একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্র
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র পরোক্ষ গণতন্ত্র
সসীম রাজতন্ত্র প্রজাতন্ত্র
এককেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয়
মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত
এককেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয়
মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত
লীকক্রে শ্রেণিবিভাজনকেও সর্বতোভাবে গ্রহণ করা যায় না। তিনি স্বৈরতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রকে সমার্থক গণ্য করেছেন।
স্বৈরতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের উপ-বিভাগ সম্পর্কে কোন মতামত ব্যক্ত করেন নি। এ কারণেই লীকক্রে শ্রেণিবিভাজনের
কার্যকারিতা সম্পর্কে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেন।
আধুনিক সরকার
সরকারের শ্রেণিবিভাজনের আধুনিক কাঠামোটি আরো ব্যাপক। বিভিন্ন মতবাদের সারাংশ সংগ্রহ করে এ ধারণা গড়ে
তোলা হয়েছে। শ্রেণিবিভাজনের এ প্রকল্প অনুযায়ী সরকারকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ঃ স্বৈরতন্ত্র
একনায়কতন্ত্র এবং গণতন্ত্র (। স্বৈরতন্ত্রের বিভিন্ন রূপ রয়েছে− রাজতন্ত্র
, সামরিকতন্ত্র এবং অভিজাত তন্ত্র । একনায়কতন্ত্র তিন ধরনের− ব্যক্তিগত
, দলগত এবং শ্রেণিগত একনায়কতন্ত্র
গণতন্ত্র একটি ব্যাপক ধারণা। নানাভাবে এবং নানাধরণে তার প্রকাশ ঘটে। গণতন্ত্রকে ব্যাপক অর্থে দুই ভাগে ভাগ করা
হয়। যথা, সীমিত বা নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্র
এদের আবার ক্ষমতা বণ্টন অনুযায়ী এককেন্দ্রিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে ভাগ করা যায়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি
অনুযায়ী এককেন্দ্রিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারকে মন্ত্রিসভা-চালিত এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে ভাগ করা যেতে পারে।
সরকারের আধুনিক শ্রেণিবিভাগ নি¤েœ একটি রেখাচিত্রের সাহায্যে বণ্টন করা হল ঃ
আধুনিক সরকার
স্বৈরতন্ত্র একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্র
রাজতন্ত্র সামরিকতন্ত্র অভিজাততন্ত্র ব্যক্তিগত দলগত শ্রেণিগত প্রজাতন্ত্র নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র
এককেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয়
মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত
মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত
এককেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয়
মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত মন্ত্রিসভা-শাসিত রাষ্ট্রপতি-শাসিত
সরকারের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে পরবর্তীকালে নতুন উপাদান সংযোজিত হয়েছে। রাজনৈতিক আচরণবাদী এবং
মার্কসবাদীগণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবিভাজনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আচরণবাদীগণ সরকারের পরিবর্তে
রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণের পক্ষে।
সার-সংক্ষেপ
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সরকার। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের
লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি ছাড়াও
আরো কয়েকটি সরকার পদ্ধতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার
ব্যবস্থা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?
(ক) ২ (খ) ৩
(গ) ৪ (ঘ) ৫
২। ‘সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি যন্ত্র বা সংস্থা’− উক্তিটি কে করেছেন?
(ক) অধ্যাপক গার্নার (খ) অধ্যাপক গেটেল
(গ) অধ্যাপক লাস্কি (ঘ) অধ্যাপক উইলোবি
৩। 'ঞযব চড়ষরঃরপং’ গ্রন্থের লেখক কে?
(ক) সক্রেটিস (খ) প্লেটো
(গ) এরিস্টটল (ঘ) আলেকজান্ডার
৪। ‘ঞযব জবঢ়ঁনষরপ’ গ্রন্থের লেখক কে?
(ক) প্লেটো (খ) এরিস্টটল
(গ) লাস্কি (ঘ) গেটেল
৫। এরিস্টটল কয়টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে সরকারের শ্রেণি বিভাগ করেছেন?
(ক) ১৪৮ (খ) ১৫০
(গ) ১৫৪ (ঘ) ১৫৮
৬। এরিস্টটল কয়টি মূলনীতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন?
(ক) ২ (খ) ৪
(গ) ৬ (ঘ) ৮
৭। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যারিয়ট সরকারের কয়টি শ্রেণিবিভাগ করেছেন?
(ক) ২ (খ) ৩
(গ) ৪ (ঘ) ৫
৮। এরিস্টটলের মতে নিকৃষ্টতম সরকার কোনটি?
(ক) মধ্যতন্ত্র (খ) রাজতন্ত্র
(গ) গণতন্ত্র (ঘ) কতিপয়তন্ত্র
৯। লীকক্ সরকারকে কতটি ভাগে ভাগ করেছেন?
(ক) ২ (খ) ৪
(গ) ৬ (ঘ) ৮

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]