গণতন্ত্রের সুবিধাগুলি সম্পর্কে বলতে কর গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা কর

সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, সুশাসন, বিপ্লব, আইনের অনুশাসন, পুঁজিবাদ।
গণতন্ত্রের সুবিধাসমূহ
বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। গণতন্ত্রের গুণ বা সপক্ষে সাধারণত
নি¤œলিখিত যুক্তিগুলো প্রদর্শন করা হয় ঃ
১। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা ঃ ‘সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা’ এই তিনটি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্রের ইমারত দাঁড়িয়ে
থাকে। গণতন্ত্রে সকলেই সমান, সমানাধিকার নীতিটি শুধু তত্ত¡গতভাবে নয়, বাস্তবেও গৃহীত হতে দেখা যায়। জাতি,
ধর্ম, বর্ণ, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই আইনের চোখে সমান এবং সকলেই আইন কর্তৃক সমভাবে
সংরক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়।
২। দেশপ্রেম জাগরিত হয় ঃ গণতন্ত্র জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পারে। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়
প্রত্যেকেই অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকলের স্বার্থ সমভাবে রক্ষিত হয়।
৩। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সার্বিক কল্যাণ সাধন সম্ভব ঃ জেরেমি বেন্থাম (ঔবৎবসু ইবহঃযধস)-এর মতে শাসক ও শাসিতের
স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সর্বাধিক জনগণের সর্বাধিক মঙ্গল সাধন করাটাই হল সুশাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
শাসিতকে শাসকের পদে উন্নীত করা সম্ভব হলে এ সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। একমাত্র গণতন্ত্রেই শাসিত
শাসকের পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে এবং এর মাধ্যমে সর্বাধিক জনকল্যাণ সাধিত হতে পারে।
৪। স্থায়িত্ব ঃ অনেকের মতে, স্থায়িত্ব হল গণতন্ত্রের অন্যতম উল্লেখযোগ্য গুণ। জনগণের সম্মতির উপর এরূপ
শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত বলে সরকারের প্রতি জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদর্শন করে।
৫। সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ করে ঃ গণতন্ত্র জনমত পরিচালিত শাসনব্যবস্থা বলে সরকার জনমতের ভয়ে সাধারণত
স্বৈরাচারী হতে পারে না।
৬। বিপ্লবের সম্ভাবনা কম ঃ জনগণের হাতে সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকায় জনগণের অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়ে রক্তক্ষয়ী
বিপ্লবের আকার ধারণ করতে পারে না।
৭। রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির সহায়ক ঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র, অভিজাত-অভাজন, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে
প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
৮। দায়িত্বশীলতা ঃ গণতন্ত্রকে বলা হয় দায়িত্বশীল সরকার। শাসিতের সম্মতিতে যেহেতু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত এবং
শাসনকার্য পরিচালিত হয় তাই গণতন্ত্র জনগণের নিকট দায়িত্বশীল থাকে। এখানে সরকার মন্ত্রিপরিষদ শাসিত কিংবা
রাষ্ট্রপতি শাসিত হোক না কেন জনগণের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।
৯। আইনের শাসন ঃ সুশাসনের অন্যতম উপদান হল আইনের শাসন (জঁষব ড়ভ ষধ)ি। আইনের শাসন নীতিটি হল
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের আইনের সমান অধিকার লাভ করা। আইনের শাসন যদি মেনে চলা
না হয় তাহলে সে রাষ্ট্রের শান্তি-স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্রে সকল জনগণের অংশগ্রহণ থাকে বিধায় এ ব্যবস্থার অধীনে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত
হয়। এখানে ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, গণতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ রাজনৈতিক শিক্ষা লাভ করে। জনগণের নির্বাচিত
প্রতিনিধিরা শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করে বিধায় নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও বেশিরভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গণতন্ত্রকেই
সর্বোৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা মনে করেন।
গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে নানা প্রকার যুক্তি-তর্কের অবতারণা করা হলেও বিরুদ্ধবাদিগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর
সমালোচনা করেন। নি¤েœ গণতন্ত্রের কয়েকটি সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা হল ঃ
১। অদক্ষদের শাসন ঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়। কিন্তু অনেক দেশে
জনগণের বিপুল অংশ নানাবিধ অজ্ঞতা, অজ্ঞানতা, কুসংস্কারগ্রস্ত থাকে। এ ধরনের জনসমাজের মধ্য থেকে উঠে
আসা জনপ্রতিনিধিদের অনেকের মধ্যেও, এসব দুর্বলতা বিরাজ করে।
২। স্থায়িত্বের অভাব ঃ হেনরী মেইনের মতে, স্থায়িত্বের অভাব গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ত্রæটি। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা
যায় যে, জনগণ কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থায় পরস্পর বিরোধী স্বার্থের দ্ব›দ্ব থাকার ফলে শাসনকার্য যথাযথভাবে
পরিচালনা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।
৩। আমলাদের প্রাধান্য বৃদ্ধি ঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিবর্গ সরকার গঠন করলেও শাসনকার্য পরিচালনার
জন্য যে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের সে জ্ঞান থাকে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমলাদের
ওপর তাঁদের অত্যধিক পরিমাণে নির্ভর করতে হয়। কিন্তু আমলাদের প্রাধান্য বৃদ্ধির অর্থই হল দীর্ঘসূত্রতা এবং
জনস্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া।
৪। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির স্থান নেই ঃ অনেকের মতে, গণতন্ত্রে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের স্থান নেই। এরূপ শাসনব্যবস্থায়
দলীয় রাজনীতির প্রাধান্য থাকায় সৎ ও যোগ্য অথচ রাজনীতি-বিমুখ ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে সম্মত হন না।
৫। দলীয় শাসনের কুফল ঃ দল প্রথা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক
ক্ষমতা লাভের দ্ব›দ্ব অনেক সময় সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে।
৬। পুঁজিবাদকে প্রশ্রয় দেয় ঃ অনেকে গণতন্ত্রকে ‘পুঁজিবাদীদের দুর্গ’ বলে অভিহিত করেন। তাঁদের মতে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে
গণতন্ত্র রাজনৈতিক এবং কিছু পরিমাণে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করলেও অর্থনৈতিক সাম্যের উপর যথেষ্ট
গুরুত্ব আরোপ করে না।
৭। সংখ্যালঘুর স্বার্থ উপেক্ষিত হয় ঃ অনেকের মতে, গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হওয়ার কারণে সংখ্যালঘিষ্ঠরা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনসভায় প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে না। এভাবে তাদের স্বার্থ ক্রমাগত উপেক্ষিত হয়।
৮। ব্যয়বহুল ঃ অনেকে গণতন্ত্রকে ব্যয়বহুল শাসনব্যবস্থা বলে সমালোচনা করেন। জনমত গঠন, নির্বাচন অনুষ্ঠান,
প্রচারকার্য প্রভৃতির পেছনে গণতন্ত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়।
৯। জরুরি অবস্থার পক্ষে অনুপযোগী ঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত
গৃহীত হয় বলে বহি:শত্রæর আক্রমণ, কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে তা
অনেক সময় অনুপযোগী বলে বিবেচিত হয়।
১০। রক্ষণশীল শাসনব্যবস্থা ঃ জনপ্রিয়তা ধরে রাখায় অনেক মনোযোগ দিতে হয় বিধায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়
জনপ্রতিনিধিরা গতানুগতিকতার উর্ধ্বে উঠতে পারে না।
১১। দীর্ঘসূত্রিতা ঃ অনেকে মনে করেন যে, গণতন্ত্রে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সরকার বিভিন্ন বিভাগের সাথে
পরামর্শ করে থাকে। এ পরামর্শ বা মতামত থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অনেক সময় ব্যয় হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তির অবতারণা করা হয় তাদের অনেকগুলো ভিত্তিহীন এবং কল্পনাপ্রসূত বলে মনে করা হয়। লর্ড ব্রাইসের মতে, গণতন্ত্র হয়তো বিশ্বমানবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরিত করতে পারেনি,
হয়তো শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত মনকে রাষ্ট্রের কার্যে নিয়োগ করতে সমর্থ হয়নি, হয়তো রাজনীতিকে ত্রæটি মুক্ত করতেও ব্যর্থ হয়েছে,
তথাপি একথা সত্য যে, অন্যান্য শাসনব্যবস্থার তুলনায় আজকের গণতন্ত্র নিজেকে অনেকটাই সাধারন মানুষের মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
সার-সংক্ষেপ
গণতন্ত্রকে অনেকে অক্ষম ও অশিক্ষিতের শাসন বলে থাকে। এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় দলীয় শাসন প্রতিফলিত হয়
বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে গণতন্ত্রকে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রে জনগণের মতের
প্রতিফলন হয়ে থাকে। গণতন্ত্রের মাধ্যমেই রাষ্ট্রে আইনের অনুশাসন, ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এর মাধ্যমে
দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবিধানিক উপায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। গণতান্ত্রিক শাসনে বিপ্লবের সম্ভাবনা কেমন?
ক) কম খ) বেশি
গ) একেবারেই নেই ঘ) কোনটিই নয়
২। গণতন্ত্র সরকারের স্বৈরাচারিতার সম্ভাবনা-
ক) বাড়ায় খ) কমায়
গ) সম্পূর্ণ দূর করে ঘ) কোনটিই নয়
৩। জরুরি অবস্থাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা-
ক) সুবিধাজনক খ) অসুবিধাজনক
গ) লাভজনক ঘ) কোনটিই নয়
৪। গণতন্ত্র পুঁজিবাদের-
ক) সহায়ক খ) শত্রæ
গ) প্রতিবন্ধক ঘ) কোনটিই নয়

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]