১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করুন।

প্রাচীন কাল থেকে ব্রিটিশ শাসন পূর্বকাল
বাঙালিরা এমন এক জাতি, যার ইতিহাস বারবার পরাজিত হয়েছে বিকৃতি আর অসত্যের কাছে। এই
বিকৃতির শুরু প্রাচীন কালে। যখন আর্য-অনার্য যুদ্ধে এখানের আদিবাসী অনার্যরা পরাজিত হয়েছিল।
জয়ী আর্যরা নিজেদের মত করে ইতিহাস রচনা করে ।এই ইতিহাস রাক্ষস, নাগ, দৈত্য, অসুর, পাখী
ইত্যাদি গোষ্ঠী এবং শ্রেণীতে বিভক্ত আদিবাসীদের কুৎসিত চিত্র তৈরি করে। তাদের ‘জন্তু’ তে
পরিণত করা হয়। অনার্য সভ্যতা ও সংষ্কৃতির উপর আর্যদের জয়ের প্রভাব হয় সুদূর প্রসারী। প্রাচীন
বাঙালির সকল শ্রেষ্ঠত্ব এবং বীরত্বের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। যদিও বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর
শতাব্দী আর্য ও অনার্য ভাবধারা, ধর্মীয় মতাদর্শের আড়ালে এ অঞ্চলে চলেছে রাজনৈতিক সংষ্কৃতির
বিরোধ, বিদ্রোহ, সংঘাত। এমনকি একাদশ-দ্বাদশ শতকেও যখন উঁচু সমাজে আর্য সংষ্কৃতি বি¯তৃত
হয়, তখনো নি¤œবর্গের মানুষের কাছে লোক সংষ্কৃতি, লোক ভাবাদর্শই একমাত্র মতাদর্শ ছিল। আদি
বাঙালির সংগ্রাম কখনো বন্ধ হয় নি।
মধ্যযুগ
হাজার বছর আগে, অষ্টম শতকে ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মুক্তি সংগ্রামের নিদর্শন পাওয়া
যায়। পাল রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পর এ অঞ্চলের কৈবর্ত কৃষকরা সশস্র সংগ্রামে অংশ নেয়। এ সংগ্রাম
স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি শ্রেণী সংঘর্ষের রূপও লাভ করে। কৈবর্ত বিদ্রোহী নেতা দিব্যেক সংগ্রামে
জয় লাভ করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন।
মুঘল আমল
বাংলাদেশে সমগ্র মুঘল শাসন আমলেই কৃষক অসন্তোষ ও বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।যদিও এদের রূপ
ছিল বিভিন্ন রকম- আঞ্চলিকতা,ধর্মগত বিরোধ, শ্রেণীগত শাসন -শোষণ বিদ্রোহ ও বিক্ষোভের
অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা দেয়।
ব্রিটিশ আমল
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বাংলার ক্ষমতা দখল করে। সেই থেকে
১৯৪৭ সাল পর্যন্ত, প্রায় দু’শত বছর বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তি দ্বারা
শাসিত হয়। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়কালেও বাঙালি জাতি বিভিন্ন আন্দোলন - সংগ্রামের মাধ্যমে
উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। এখানে ব্রিটিশ শাসনকালে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম
সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।স›দ্বীপ বিদ্রোহ (১৭৬৪), রংপুর বিদ্রোহ (১৭৮৩), বাকেরগঞ্জ
বিদ্রোহ (১৭৯২) এবং এ সময়ের উপজাতীয় বিদ্রোহ ছিল আঞ্চলিক প্রশ্নকে কেন্দ্র করে, অঞ্চলভিত্তিতে এ আন্দোলনগুলো সংগঠিত হয়। ফকির-সন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০),সিলেট বিদ্রোহ বাঙালিরা এমন এক জাতি, যার ইতিহাস বারবার পরাজিত হয়েছে বিকৃতি আর অসত্যের কাছে। এই বিকৃতির শুাং প্রাচীন কালে।
(১৭৮২, ১৭৯৯),কুমিল ার ফিরিঙ্গী খেদাও বিদ্রোহ(১৮৯৭)-এই প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ধর্মীয় -
কারণে তৈরি হলেও পরে গণবিদ্রোহের রূপ পায়।
কৃষক বিদ্রোহ (১৮২৪-১৮৩৩),ফরায়েজী ও ওয়াহাবী আন্দোলন (১৮৩১), তিতুমীরের বাঁশের কেল া -
(১৮৩১),নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-১৮৬১) প্রভৃতিও ছিল উলে খযোগ্য। হাজী শরিয়ত উল্লাহ ও -
পরবর্তীতে তার পুত্র দুদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে প্রচলিত
কুসংস্কারগুলো উচ্ছেদের পাশাপাশি ইংরেজ শাসক এবং সুবিধাভোগী জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে
জনগণকে সংগঠিত করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। এ আন্দোলন শাসকদের স্বার্থ বিরোধী হওয়ায়
অনেক স্থানেই রাষ্ট্রশক্তি ফারায়েজীদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এ সমস্ত বিদ্রোহে সামন্তবাদ,
রাজতন্ত্র, জমিদারতন্ত্র তথা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আঘাত তৈরি করে।১৮৫৭ সালে, ভারত
ব্যাপী ব্রিটিশ বিরোধী ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ সংগঠিত হয়। এ বিদ্রোহে বাংলাদেশের সমগ্র অঞ্চলের
জনগণ সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে জড়িয়ে পড়ে।১৮৮৫ সাল ব্রিটিশ আনুগত্যের শপথ নিয়ে ভারতীয়
জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হলেও পরবর্তীতে এ দল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করে ।
১৯০৫ সালে বঙ্গ-ভঙ্গকে কেন্দ্র করে সমগ্র বাঙলায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চ‚ড়ান্ত রূপ লাভ করে
। এ সময়ে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সূচনা হয় । ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হয়। পরবর্তীতে
পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলিম লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। বিশের দশকে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের
নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন এবং গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সমগ্র ভারতে
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চ‚ড়ান্ত রূপ লাভ করে। বাংলাদেশের জনগণও খেলাফত অসহযোগ
আন্দোলনে একান্ত হয়। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল বিপ্লবী নেতা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার
লুন্ঠিত হয়। বিদ্রোহীরা শুধু অস্ত্রাগার লুন্ঠন নয়, সশস্ত্র অভ‚্যত্থানের মাধ্যমে চট্রগ্রামকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র
ঘোষণার পরিকল্পনা করে।
নানকার বিদ্রোহ (১৯২২-১৯৪৯),টংক আন্দোলন (১৯৩৭-১৯৪৯), তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-৪৭)
প্রভৃতি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক অবস্থা পর্যন্ত ছিল। এ সব সংগ্রাম পরিচালনা ও সংগঠিত করার
জন্য প্রথম বারের মত রাজনৈতিক শক্তি জড়িত হয়। ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন শুরু হয় ।
এ আন্দোলন সমগ্র বাংলা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে । কলিকাতা এবং ঢাকায় ধর্মঘট হয়। ঢাকায় পুলিশের
গুলিতে ৫ জন প্রাণ হারায় । ১৮-৩০ আগষ্ট এই হত্যাকন্ডের প্রতিবাদে কোন সংবাদপত্র বের হয় নি।
পাকিস্তানী শাসন আমল
১৯৪৭ সালে ‘দ্বি-জাতি’ তত্তে¡র ভিত্তিতে, ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান - এ দু’টি
স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্যের কারণে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত
হয়। এ অঞ্চলের জনগণের আশা ছিলো, স্বাধীন রাষ্ট্রে নিজেদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে, শাসন -
শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটবে । কিন্তু স্বাধীনতার অল্প দিনের মধ্যেই বাঙ্গালিদের আশা ভঙ্গ হয়।
দেখা যায়, পশ্চিম পাকিস্তানীরাও ব্রিটিশ শাসকদের মতই শোষণ এবং লুন্ঠণেই আগ্রহী। এ থেকেই
বাঙালীদের মধ্যে অসন্তোষ জমা হতে থাকে। শুরু হয় বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রাম । যার পরিণতি
১৯৭১ এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। এখানে পাকিস্তানী
শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির সংগঠিত প্রধান কয়েকটি আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস সংক্ষেপে
আলোচনা করা হল:
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের দাবীতে ১৯৫২ সালে ‘ভাষা আন্দোলন’ সংগঠিত হয়।
১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের দাবী জানানো হয়। এরপর ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালে
ভাষা আন্দোলন শুরু করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশের আপামর জনগণ। ২১শে ফেব্রুয়ারী
তারিখে ছাত্ররা এই দাবী বাস্তবায়নের জন্য সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে শাসক গোষ্ঠী গুলি
চালায়। শহীদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক প্রমুখ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসক
গোষ্ঠী বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ‘উদর্‚’কে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষার স্থান দেয়া হয়। অথচ বাংলা ভাষা ছিল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মুখের ভাষা। ১৯৪৮ সাল থেকেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরো এক ধাপ অগ্রসর করে ।
বাঙালিদের মধ্যে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবীতে ক্ষোভ সঞ্চারিত হতে থাকে । ১৯৫২ সালের
২১শে ফেব্রæয়ারী তা পূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়। ভাষা-আন্দোলনের ফলে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর
রাজনৈতিক চেতনায় বিপুল পরিবর্তন আসে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে ভাষাভিত্তিক বাঙালি
জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মে§ষ ঘটে।
১৯৬২’র ছাত্র আন্দোলন
১৯৫৮সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন। তখন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা
কিংবা জনমত গড়ে তোলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । বাঙালি ছাত্র সমাজ ১৯৬২ সালে এই চ্যালেঞ্জ
গ্রহণ করে এবং শেষ পর্যন্ত জনগণের মধ্যে বিরাজমান সামরিক শাসনের ভীতি কাটাতে সক্ষম হয়।
বাষট্টি’র ছাত্র আন্দোলনের ফলেই রাজনৈতিক দলগুলো আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত
হবার সাহস পায় । বাষট্টির ছাত্র আন্দোলনের তিনটি পর্যায় চিহ্নিত করা যায়:
১ ফেব্রæয়ারী থেকে মার্চ: শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে সামরিক শাসন বিরোধী
আন্দোলনের সূচনা।
২ মার্চ থেকে এপ্রিল: আইয়ুব খান প্রবর্তিত সংবিধান বিরোধী আন্দোলন।
৩ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর: আইয়ুব খান প্রবর্তিত শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন।
১৯৬৬‘র ছয় দফা কর্মসূচি
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ-ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচী
পেশ করেন। মূলত: ছয় দফা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্মারক - এখান থেকেই বাঙালীর
মুক্তি সংগ্রাম নতুন গতি লাভ করে। এর পূর্ব পর্যন্ত শাসকদের কাছ থেকে বাঙালিদের নায্য দাবী
আদায় করাই ছিল আন্দোলন -সংগ্রামের মূল লক্ষ্য। কিন্তু, ছয় দফা উত্থাপনের পর আন্দোলনের
চরিত্র পাল্টে যায়। তখন থেকে বাঙালির নিজেদের জন্য নিজেরাই আরো বেশী কি করতে পারে -
সেই মানসিকতা সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিদ্যমান বৈষম্যসমূহ এবং
১৯৬৫’র পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব-পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রাখায় এ অঞ্চলের জনগণের
মধ্যে আইয়ুব শাসন বিরোধী মনোভাব তীব্র হয়। ছয় দফা কর্মসূচী ও আন্দোলন সেই তীব্র ক্ষোভেরই
বহি: প্রকাশ।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
এ অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখার জন্য আইয়ুব সরকার নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে ।
১৯৬৮’র জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার তথ্য প্রকাশ করে যে, ভারতের আগরতলায়
প্রণীত পাকিস্তান বিরোধী একটি ষড়যন্ত্র তারা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাদের মতে এ ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য
ছিলো- পূর্ব বাংলায় সশস্ত্র অভ‚্যত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণা। বলাবাহুল্য এ তথ্য ছিলো সম্পূর্ণ
মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সরকার এই অভিযোগে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে এবং শেখ মুজিবুর
রহমানকে প্রধান আসামী সাব্যস্ত করে মামলা দায়ের করে। এ মামলা ইতিহাসে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র
মামলা’ নামে খ্যাত। সামরিক ট্রাইবুন্যালে গোপন বিচার শুরু হলে সমগ্র বাঙালি জাতি শেখ মুজিবুর
রহমানের মুক্তির দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠে। এভাবেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাংলার স্বাধীনতা
আন্দোলনকে আরো এক ধাপ অগ্রসর করে ।
১৯৬৯’র গনঅভ্যুত্থান
১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। এ
আন্দোলনকে সংগঠিত রূপ দানের লক্ষ্যে প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো যৌথ ভাবে ১১ দফা দাবী উত্থাপন
করে। এই দাবীগুলো সাধারন জনগণের মধ্যেও গ্রহণযোগ্যতা পায়। কেননা এই দাবী গুলোর মধ্যে
সমাজের সকল পেশা এবং শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশের ছাত্র এবং সাধারণ
মানুষ একই সাথে আন্দোলনে নেমে আসার কয়েকটি কারণ হলো - দীর্ঘ দিন যাবৎ শোষণ - বৈষম্য,
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, বেতার ও টি.ভি.তে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ ঘোষণা, বাংলাভাষার তথাকথিত বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের৭ মার্চ, সর্বাতœক অসহযোগের ডাক দেন। তখন থেকেই এ অঞ্চলের উপর পাকিস্তানী আধিপত্যের অবসান ঘটে।
সংষ্কারের পুন:চেষ্টা। সরকার বিরোধী আন্দোলন পর্যায়ক্রমে এতটা তীব্র রূপ ধারণ করে যে,
আইয়ুব খান শেষ পর্যন্ত পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
১৯৭১’র. মুক্তিযুদ্ধ
১৯৬৯ সালে গণঅভ‚্যত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন হয়। ইয়াহিয়া খান নতুন সামরিক
শাসক হিসাবে পাকিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচণের ঘোষণা
দেন। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে, আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজী ছিল না। বাঙালি জাতির অধিকার
আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ-এর ঐতিহাসিক ভাষণে সর্বাÍক
অসহযোগের ডাক দেন। পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী শেষ চেষ্টা হিসাবে ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ ঢাকা সহ
সারাদেশে ব্যাপক হত্যাকান্ড চালায়। তারপরও বাঙালির স্বাধীনতার আকঙ্খা দমন করা সম্ভব হয় নি।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এভাবেই সশস্ত্র যুদ্ধের সূচনা হয়। অত:পর নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত
হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
সারকথা: বাঙালিরা এমন এক জাতি, যাদের ইতিহাস বিকৃতি আর অসত্যের কাছে বারবার পরাজিত
হয়েছে। সুদূর অতীতে জয়ী আর্যরা নিজেদের মত করে ইতিহাস রচনা করে। সে ইতিহাসে বাঙালি
অঙ্কিত হয় কুৎসিৎ জন্তু রূপে। মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বাঙালীর শৌর্থ -বীর্যের ইতিহাস। কিন্তু
ইতিহাস প্রমাণ করে স্বাতন্ত্র্য রক্ষার স্বার্থে বাঙালির সংগ্রাম স্পৃহা কখনো বন্ধ হয়নি। আদি বাঙালির
আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরে মধ্যযুগ, মুঘল আমলে বীর বাঙালি লড়াই করেছে বিদেশী প্রভ‚দের
বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধী বিভিন্ন সংগ্রামে বাঙালির অবদান সুবিদিত। অত:পর
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কঠিন আন্দোলন-সংগ্রাম ও পরবর্তীতে
১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন শাসনের সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. পলাশীর যুদ্ধ সংগঠিত হয় 
ক) ১৭৫৭ খৃ: অ:;
খ) ১৮৫৭ খৃ: অ:;
গ) ১৯৪৭ খৃ: অ:;
ঘ) ১৯৭১ খৃ: অ:
২. ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল
ক) বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দান;
খ) সকল স্তরে উর্দূ ভাষার প্রচলন;
গ) নতুন বাংলা রীতি চালু করা;
ঘ) ইংরেজীতে কথা বলার অধিকার লাভ।
৩. ১৯৬৯ সালে ১১ দফা দাবী উত্থাপন করে 
ক) ছাত্র সমাজ;
খ) সামরিক বাহিনী;
গ) আমলা তন্ত্র;
ঘ) ব্যবসায়ী শ্রেণী।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ৬ দফা কর্মসূচী লক্ষ্য কি ছিল?
২। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কেন দায়ের করা হয়?
৩। ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের কারণ কি ছিল?
রচনা মূলক প্রশ্ন
১। ব্রিটিশ শাসনামলে বাঙ্গালি জাতির আন্দোলন -সংগ্রামের ইতিহাস আলোচনা করুন।
২। ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করুন।
উত্তর: ১.ক , ২.ক, ৩.ক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]