একনায়কতন্ত্রের গুণাবলি একনায়কতন্ত্রের কুফলগুলি সম্পর্কে আলোচনা

একনায়কতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সুদক্ষ শাসনব্যবস্থা, স্থিতিশীল সরকার, আমলাতন্ত্র,
সামরিক শাসন।
একনায়কতন্ত্রের গুণাবলি
একনায়কতন্ত্রের সমর্থককেরা তাঁদের সমর্থিত শাসনব্যবস্থার উৎকর্ষ প্রমাণ করার জন্য নানা প্রকার যুক্তির
অবতারণা করেন। একনায়কতন্ত্রের অন্যতম গুণ হল তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। তবে আরো অন্যান্য যে গুণাবলি রয়েছে তা
নি¤েœ আলোচনা করা হল ঃ
১। সুদক্ষ শাসনব্যবস্থা ঃ একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রকৃতিগতভাবে সুদক্ষ হয়। কেননা, সুযোগ্য নায়কের একক
নির্দেশে শাসন কার্যাদি পরিচালিত হয়। একনায়ক সুযোগ্য ও সুদক্ষ হওয়ার জন্য দেশের ভিন্নমুখী জটিল
সমস্যাসমূহের দ্রæত সমাধান সম্ভব।
২। স্থায়িত্ব ঃ একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দেশ শাসনের জন্য একনায়ক সুযোগ্য ব্যক্তিগণের উপর সরকারি কার্য
পরিচালনার দায়িত্ব বন্টন করেন। ফলে সরকারি কাজে সাফল্য আসে। তাছাড়া একনায়কতন্ত্রে একটি দল থাকায় দল
ত্যাগ, রাজনৈতিক দলাদলি, বিভিন্ন স্বার্থের দ্ব›দ্ব থাকে না। ফলে একনায়কতন্ত্র স্থায়িত্ব লাভ করে।
৩। জাতীয়তাবাদ ঃ একনায়কতন্ত্রের মূল কথা হল− এক জাতি, এক রাষ্ট্র এবং এক নায়ক। একনায়ক দেশের জনগণের
মধ্যে জাতীয় শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রচার করে জাতীয় ঐক্যবোধ জাগরিত করেন। জনগণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। হিটলার
জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রচার করে জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
৪। জরুরি অবস্থার পক্ষে উপযোগী ঃ যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ, গোলযোগ প্রভৃতি জরুরি অবস্থার মোকাবেলা করার জন্য দ্রæত
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেগুলো কার্যকরী করার ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। একনায়কতন্ত্রে একনায়কের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
তাই জরুরি অবস্থার পক্ষে একনায়কতন্ত্র বিশেষ উপযোগী বলে মনে করা হয়।
৫। দলীয় প্রভাব মুক্ত ঃ একনায়কতন্ত্রে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। তাই এ শাসনব্যবস্থায় দলীয় কোন্দল, দলীয়
সংঘর্ষ ও দলীয় প্রভাব মুক্ত থাকে। একনায়কতন্ত্রে দলীয় প্রভাব মুক্ত থাকে এবং দলীয় শাসনের কুফলগুলো প্রত্যক্ষ করা যায় না।
৬। সাংস্কৃতিক বিষয়ের উন্নতি ঃ অনেকের মতে, এরূপ শাসনব্যবস্থায় একনায়কের ইচ্ছাই চূড়ান্ত বলে তিনি যদি শিল্প,
সাহিত্য, বিজ্ঞান প্রভৃতির অনুরাগী হন তাহলে ঐসব ক্ষেত্রে প্রভূত উৎকর্ষ সাধিত হতে পারে।
৭। যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগ ঃ নিয়োগের ক্ষেত্রে একনায়কের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় চাপ,
প্রভাব বা সুপারিশ না থাকায় একনায়ক প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে মেধাবী, যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোকদের নিয়োগ দিতে
পারেন। ফলে প্রশাসকবৃন্দ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
৮। ব্যয় সংকোচন ঃ একনায়কতন্ত্রে একনায়ক দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। এর মাঝে কোন নির্বাচন বা
উপনির্বাচনের প্রয়োজন হয় না। আর নির্বাচনের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয়ও হয় না। গণতন্ত্রসহ অন্যান্য সরকার ব্যবস্থায়
প্রচুর অর্থ শুধু নির্বাচনের পিছনেই ব্যয় হয়ে থাকে।
৯। আমলাদের দৌরাত্ম্য হ্রাস ঃ একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এক নায়ক চাইলে যোগ্য ও মেধাবীদের প্রশাসনের
গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে পারেন। তারা কাজে অভিজ্ঞ ও দক্ষ। এছাড়া এ শাসনব্যবস্থায় একনায়ক নিজেও
অনেক সময় প্রশাসনিক ব্যাপারে অভিজ্ঞ থাকে। তাকে আমলাদের উপর নির্ভরশীল হতে হয় না। যার ফলে
আমলাদের দৌরাত্ম ও প্রভাব হ্রাস পায়।
১০। স্থিতিশীল সরকার ঃ একনায়কতান্ত্রিক সরকার জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নয় যে জনগণের ইচ্ছানুসারে
পরিচালিত হবে। জনগণ ইচ্ছা করলেই এ সরকারকে পরিবর্তন করতে পারে না। দীর্ঘদিন যাবত এ সরকার
স্থিতিশীলভাবে সরকার পরিচালনা করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, একনায়কতন্ত্রে একনায়ক যে কোন বিষয়ে একক ও দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। একনায়ক দীর্ঘদিন
রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন বিধায় তিনি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেন। একনায়ক দলীয় প্রভাব মুক্ত থেকে
দেশকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে শাসন করতে পারেন।
একনায়কতন্ত্রের সমস্যা
একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর মতামতের কোন স্থান নেই এবং এখানে জনমত কোন প্রভাব বিস্তার
করে না। একনায়কতন্ত্রের সমর্থক ও সুবিধাভোগীরা এই ব্যবস্থার নানাবিধ গুণ চিহ্নিত করলেও, বস্তুত এটি একটি সম্পূর্ণ
অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারী ব্যবস্থা। নি¤েœ একনায়কতন্ত্রের দোষাবলীর আলোচনা করা হল ঃ
১। ব্যক্তিস্বাধীনতা পরিপন্থী ঃ এরূপ শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বাধীনতার কোন মূল্য নেই। এখানে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির
বিকাশ ঘটে না। আত্মসম্মান ও আত্মপ্রত্যয়বোধ জাগ্রত হয় না।
২। বাহুবলের উপর নির্ভরশীল ঃ একনায়কতন্ত্রের ভিত্তি হল বাহুবল। শক্তির জোরে, বল প্রয়োগের দ্বারা নায়ক তাঁর
শাসনকে স্থায়িত্ব দেয়ার চেষ্টা করেন। বিরোধীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য নির্বাসন, কারাদন্ড, এমনকি
গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিতেও তিনি কুণ্ঠিত হন না।
৩। বিশ্ব শান্তির পরিপন্থী ঃ একনায়কতন্ত্রের অন্যতম তত্ত¡ হল পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার কেবল শক্তিমানেরই আছে।
মুসোলিনীর মতে, আন্তর্জাতিক শান্তি হল কাপুরুষের স্বপ্ন; সা¤্রাজ্যবাদ হল জীবনের শাশ্বত এবং অপরিবর্তনীয় নিয়ম।
৪। বিপ্লবের আশংকা ঃ এরূপ শাসনব্যবস্থায় জনমতের কোন মূল্য থাকে না। শাসিতের সম্মতির উপর শাসকের শাসন
প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অসন্তোষ একদিন বিপ্লবের আকার ধারণ করে এরূপ শাসনব্যবস্থার
ধ্বংস সাধন করে।
৫। সাম্য বিরোধী ঃ একনায়কতন্ত্র সাম্য ও সমানাধিকারের নীতিতে আস্থাশীল নয়। তাই এরূপ শাসনব্যবস্থা মুষ্টিমেয়
ব্যক্তি দেশ শাসন করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বিনা প্রতিবাদে তাদের সেই স্বৈরাচারী জনস্বার্থ বিরোধী শাসন
অবনত মস্তকে মেনে নিতে হয়।
৬। রাজনৈতিক চেতনা অবরুদ্ধ ঃ এরূপ শাসনব্যবস্থায় একটি মাত্র রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকায় জনগণ অন্য কোন
দলের প্রতি তাদের সমর্থন জানানোর সুযোগ পায় না। ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে না।
সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক চেতনা হয়ে পড়ে অবরুদ্ধ।
৭। উপেক্ষিত সাধারণ জনগোষ্ঠী ঃ একনায়কতন্ত্রের রাষ্ট্রই প্রধান; মানুষের কোন মূল্য নেই। একনায়কতন্ত্র প্রচার করে
যে, জন্ম থেকেই ব্যক্তি রাষ্ট্রের যূপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত। সাধারণ জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষিত করে বোঝানো হয় যে রাষ্ট্রের
জন্য ব্যক্তি; ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র নয়।
৮। স্বায়ত্তশাসন অস্বীকৃত ঃ একনায়কতন্ত্র মানুষের স্বায়ত্তশাসনকে উপেক্ষা করে বলে তা কখনই সমর্থনযোগ্য হতে পারে
না। একনায়কতন্ত্র যতই সুশাসন ব্যবস্থা হোক না কেন, তা কখনই স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প হতে পারে না।
৯। অস্থায়ী শাসনব্যবস্থা ঃ একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একনায়কের হাতে সর্বময় ক্ষমতা থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনার
সার্বিক দায়িত্ব তিনিই পালন করেন। এ শাসন ব্যবস্থায় মাত্র একজন ব্যক্তির হাতে সর্বময় ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। ফলে
তার মৃত্যুর সাথে সাথে এ শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটে। এজন্য এই শাসনব্যবস্থাকে অস্থায়ী শাসনব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে।
১০। দুর্নীতির প্রসার ঃ একনায়কতন্ত্রে সীমাহীন দুর্নীতির জন্ম হয়। কারও নিকট জবাবদিহি করতে হয় না বলে একনায়ক
চরম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। লর্ড এ্যাকটন বলেন,
পরিশেষে বলা যায় যে, একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বাধীনতা অবরুদ্ধ থাকে। তাদের মতামতের কোন মূল্য
নেই, এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হয়। একনায়কের মুখাপেক্ষী হয়ে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন পরিচালিত হয়। একনায়কের আদেশই আইন; আইনের অনুশাসন এখানে অনুপস্থিত।
সার-সংক্ষেপ
একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্রের বিপরীত শাসন ব্যবস্থা। একজন ব্যক্তি যখন দেশের যাবতীয় শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করে
অপ্রতিহতভাবে প্রয়োগ করে তখনই সেই শাসন ব্যবস্থাকে একনায়কতন্ত্র বলে। সাধারণত কোন ব্যক্তি বা সমরনায়ক
জনগণের নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলপূর্বক ক্ষমতা অধিকার করেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাদের শাসন জনগণের সম্মতির
উপর প্রতিষ্ঠিত নয় বিধায়, সমস্ত বিরোধী মতামতকে শক্তি বা বল প্রয়োগের দ্বারা দমন করতে একনায়ক দ্বিধা করেন না।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। হিটলার কোন দেশের একনায়ক ছিলেন?
(ক) স্পেন (খ) জার্মানী
(গ) ইংল্যান্ড (ঘ) ইতালী
২। "চড়বিৎ ঃবহফং ঃড় পড়ৎৎঁঢ়ঃ, ধহফ ধনংড়ষঁঃব ঢ়ড়বিৎ পড়ৎৎঁঢ়ঃং ধনংড়ষঁঃবষু”−কে বলেছেন?
(ক) ফোর্ড (খ) ব্যানারম্যান
(গ) ফাইনার (ঘ) লর্ড অ্যাকটন
৩। ইতালিতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন কে?
(ক) ফ্রাঙ্কো (খ) হিটলার
(গ) গাদ্দাফি (ঘ) মুসোলিনী
৪। সর্বাত্মকবাদের প্রশ্রয় দেওয়া হয় কোথায়?
(ক) একনায়কতন্ত্র (খ) গণতন্ত্র
(গ) রাজতন্ত্র (ঘ) সমাজতন্ত্র

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]