গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের পার্থক্য বিশ্লেষণ কর

ব্যক্তি স্বাধীনতা, বিশ্ব শান্তি, উগ্রজাতীয়তাবাদ, স্বায়ত্তশাসন, সর্বাত্মকবাদ, বিপ্লব,
সাম্য, গুপ্তহত্যা।
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র দুটি পরস্পর-বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শ। স্বাভাবিকভাবেই গণতান্ত্রিক ও
একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মধ্যে সর্বক্ষেত্রেই পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলোকে বৈশিষ্ট্য ও গুণগত দিক থেকে
নি¤েœ আলোচনা করা হল ঃ
১। শাসনের ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র হল জনগণের শাসন এবং একনায়কতন্ত্র এক ব্যক্তি বা দলের শাসন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে
জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে জনমতের কোন মূল্য নেই। একনায়কতন্ত্রে জনগণ শাসনকার্যে
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এখানে একজন মাত্র শাসকের অপ্রতিহত প্রাধান্য সর্বত্রই
বিদ্যমান থাকে।
২। দলীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকে কিন্তু একনায়কতন্ত্রে একটি দল থাকে। গণতন্ত্রে
একাধিক রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। কিন্তু একনায়কতন্ত্রের একনায়কের দল ছাড়া অন্য সব দলের অস্তিত্ব বলপূর্বক
বিলুপ্ত করা হয়।
৩। ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার অনুপন্থী, অপরদিকে একনায়কতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী।
জনগণের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতার স্বীকৃতি গণতন্ত্রের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে মানুষের
সকল প্রকার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়। মানুষের কোন মতামতের মূল্য দেওয়া হয় না।
৪। গণসম্মতির ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা। জনগণ ইচ্ছা করলেই সরকারের
পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু একনায়কতন্ত্র জনসম্মতির পরিবর্তে পেশি শক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবস্থা।
৫। স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র দলীয় শাসনব্যবস্থা বলে পরস্পর বিরোধী স্বার্থের সংঘাত, দল ত্যাগ প্রভৃতির ফলে বার
বার সরকারের পরিবর্তন হয়। স্থায়িত্বের অভাব গণতন্ত্রের অন্যতম ত্রæটি। কিন্তু একনায়কতন্ত্র একদলীয় শাসন বলে
দল ত্যাগ, রাজনৈতিক দলাদলি, দলভিত্তিক স্বার্থের দ্ব›দ্ব প্রভৃতি এখানে থাকে না।
৬। বিশ্ব শান্তির ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী। সর্বপ্রকার বলপ্রয়োগ গণতন্ত্রের নীতি বিরুদ্ধ। কিন্তু একনায়কতন্ত্র
উগ্র-জাতীয়তাবাদ প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বে অশান্তি আহŸান করে। মুসোলিনী বলতেন, “স্ত্রীলোকের নিকট মাতৃত্ব যেমন
কাম্য, পুরুষের নিকট যুদ্ধও তেমনি কাম্য।”
৭। জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্রে আলাপ-আলোচনা, ভোটাভুটি প্রভৃতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে যুদ্ধ,
বহিরাক্রমণ, আভ্যন্তরীণ গোলযোগ প্রভৃতি জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে এরূপ শাসনব্যবস্থা অনুপযোগী বলে প্রমাণিত
হয়েছে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে নায়কের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়
না বলে এরূপ শাসনব্যবস্থা জরুরি অবস্থার পক্ষে বিশেষ উপযোগী।
৮। সাম্য ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র, সাম্য, সমানাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার নীতিসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত। এরূপ
শাসনব্যবস্থায় ধর্ম, বর্ণ, জাতি, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সমান। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে এসব গণতান্ত্রিক নীতি সম্পূর্ণভাবেই উপেক্ষিত হয়।
৯। স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র জনগণের স্বায়ত্তশাসন স্বীকৃত; কিন্তু একনায়কতন্ত্রে জনগণের এ অধিকার সম্পূর্ণভাবে
বঞ্চিত। তাই বলা হয়, একনায়কতন্ত্র যতই সুশাসন হোক না কেন, তা কখনই স্বায়ত্তশাসনের বিকল্প বলে বিবেচিত হতে পারে না।
১০। বিপ্লবের সম্ভাবনা ঃ গণতন্ত্রে জনগণ ব্যালটের সাহায্যে শান্তিপূর্ণভাবে সহজেই সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
তাই এরূপ শাসনব্যবস্থা অনেকাংশে বিপ্লবের সম্ভাবনা মুক্ত বলা যেতে পারে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে
সরকারের পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অসন্তোষ একদিন বিপ্লবের আকার ধারণ করে
এরূপ শাসনব্যবস্থার ধ্বংস সাধন করে।
১১। দলীয় শাসনের ক্ষেত্রে ঃ গণতন্ত্র দলীয় শাসন বলে এরূপ শাসনব্যবস্থায় দলীয় সংঘর্ষ, ভোট ক্রয়-বিক্রয়, নির্বাচনে
অর্থের অপচয় প্রভৃতি দলীয় শাসনের কুফলগুলো দেখা যায়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল থাকায়
এরূপ শাসনব্যবস্থায় দলীয় শাসনের কুফল প্রত্যক্ষ করা যায় না।
পরিশেষে বলা যায় যে, একনায়কতন্ত্রের চেয়ে গণতন্ত্র উত্তম শাসন ব্যবস্থা। বর্তমান বিশ্বে বেশির ভাগ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক
শাসনব্যবস্থার উপর বেশি আস্থাশীল। গণতন্ত্রের যে দোষ-ত্রæটি রয়েছে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব। পক্ষান্তরে,
একনায়কের পতন ছাড়া একনায়কতন্ত্রের দোষ-ত্রæটি সমাধান সম্ভব নয়।
সার-সংক্ষেপ
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সকল শ্রেণির মানুষ সরকারের অংশ হতে পারে। তত্ত¡গতভাবে এ ব্যবস্থাতে সকল শ্রেণির মানুষের
মতামত প্রতিফলিত হয় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। এছাড়া নিয়মিত সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক
কার্যাবলিতে সকলের অংশগ্রহণের অধিকার গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তি-স্বাধীনতার ভিত্তিতে গড়ে উঠা শাসনব্যবস্থাই
গণতন্ত্র। অন্যদিকে, একনায়কতন্ত্র হল গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী শাসনব্যবস্থা। একনায়কতন্ত্র বলতে এমন
শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা কোন একজন ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ব্যক্তি স্বাধীনতা কোথায় অস্বীকৃত?
(ক) গণতন্ত্রে (খ) একনায়কতন্ত্রে
(গ) সমাজতন্ত্রে (ঘ) রাজতন্ত্রে
২। “স্ত্রীলোকের কাছে মাতৃত্ব যেমন কাম্য, পুরুষের নিকট যুদ্ধও তেমনি কাম্য”− কে বলেছেন?
(ক) ফ্রাঙ্কে (খ) হিটলার
(গ) মুসোলিনী (ঘ) গাদ্দাফি
৩। জনগণের শাসন স্বীকৃত কোথায়?
(ক) গণতন্ত্র (খ) একনায়কতন্ত্র
(গ) রাজতন্ত্র (ঘ) কোনটিই নয়
৪। গণতন্ত্রের বিপরীত শাসনব্যবস্থা কী?
(ক) রাজতন্ত্র (খ) একনায়কতন্ত্র
(গ) অভিজাততন্ত্র (ঘ) মধ্যতন্ত্র

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]