গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তাবলি আলোচনা কর

গণতান্ত্রিক জনগণ, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, গণতন্ত্রের স্বরূপ, অর্থনৈতিক সাম্য, জাতীয়
ঐকমত্য, জবাবদিহিতা, জনমত, গণমাধ্যম।
গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তাবলি
বর্তমানকালে আদর্শগতভাবে গণতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচিত। এ শাসন ব্যবস্থা কার্যকর ও
টেকসই করা কষ্টকর। হেনরী মেইন (ঐবহৎু গধরহব) এ প্রসঙ্গে বলেন, “সকল ধরনের সরকারের মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে
কঠিন”। গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নানা ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। জন স্টুয়ার্ট মিল গণতন্ত্রের সাফল্যের
জন্য তিনটি শর্তের উল্লেখ করেন। শর্তগুলো হল এরূপ ঃ
(ক) গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করার ইচ্ছা ও সামর্থ্য জনগণের থাকা প্রয়োজন।
(খ) ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষেণের জন্য জনগণকে সদাসতর্ক থাকতে হবে।
(গ) নিজ নিজ নাগরিক কর্তব্য পালন এবং অধিকার রক্ষার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার ইচ্ছা ও সামর্থ্য জনগণের থাকতে হবে।
গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যান্য কতগুলো আবশ্যকীয় শর্তাবলি নি¤েœ উল্লেখ করা হল ঃ
১। গণতান্ত্রিক জনগণ ঃ মিলের অভিমত ব্যাখ্যা করলে একথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ‘গণতান্ত্রিক জনগণের’ ওপর
গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে। বস্তুত জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা ও ভাবধারা যতই বিস্তার লাভ করবে,
গণতন্ত্র ততই সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে।
২। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ঃ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোন শাসন ব্যবস্থাতেই গণতন্ত্রের সাফল্য আসতে পারে
না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চালু না থাকলে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ও সুফল যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারে না।
৩। সৎ, সুদক্ষ ও কর্তব্যপরায়ণ আমলাতন্ত্র ঃ শাসনকার্য সুদক্ষভাবে পরিচালনার জন্য যে শিক্ষা এবং বিশেষীকৃত জ্ঞানের
প্রয়োজন গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিদের অনেকের তা থাকে না। তাই শাসনকার্য পরিচালনার জন্য আমলাতন্ত্রের উপর
তাঁদের বিশেষভাবে নির্ভর করতে হয়। আমলারা সৎ, সুদক্ষ, কর্তব্যপরায়ণ এবং জনকল্যাণকামী মনোভাবাপন্ন না
হলে গণতন্ত্র তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারে না।
৪। সহিষ্ণুতা ঃ গণতন্ত্রে সকলেই যাতে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ মতাদর্শ প্রচার করতে পারে, ইচ্ছানুযায়ী যেকোন আদর্শকে
সমর্থন করতে পারে, সেজন্য অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন। এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন আত্মসংযম এবং
সহিষ্ণুতার। গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী পক্ষকে সহিষ্ণু হতে হয়।
৫। গণতান্ত্রিক শিক্ষার প্রসার ঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য সুনাগরিকের প্রয়োজন। কিন্তু সুনাগরিকতার প্রধান প্রতিবন্ধকতা
হল নির্লিপ্ততা, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা ও সংকীর্ণ দলীয় মনোভাব। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত
গণতান্ত্রিক শিক্ষা।
৬। রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ঃ গণতন্ত্রকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক
অধিকারসমূহের শুধু তত্ত¡গত স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, সেগুলোকে বাস্তবে কার্যকরি করা প্রয়োজন।
৭। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ঃ ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণকে অনেকে গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত বলে মনে করেন। ক্ষমতার
বিকেন্দ্রীকরণ হলে জনগণ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে
তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষমতা সম্পর্কে অংশীদারিত্বের বোধ জন্ম নেয়।
৮। সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ঃ জোসেফ শ্যুমপিটার (ঔড়ংবঢ়য ঝপযঁসঢ়বঃবৎ)-এর মতে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য
প্রয়োজন ন্যায়পরায়ণ, যুক্তিবাদী এবং বিবেকবান নেতৃত্ব। মনের সংকীর্ণতা দূর করে জনগণকে সুস্থ পথে পরিচালিত
করার জন্য সৎ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন।
৯। আইনের শাসন ঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আইনের শাসন। এর অর্থ আইনের চোখে সবাই সমান।
আইনের আশ্রয় লাভ করার অধিকার সকল নাগরিকের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল নাগরিক আইনের সমান
সুযোগ বা অধিকার লাভ করবে। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রকে অর্থহীন করে দেয়।
১০। জবাবদিহিতা ঃ সুশাসন কিংবা গণতন্ত্রকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু
থাকা আবশ্যক। রাজনৈতিক নেতৃত্বের জবাবদিহিতা থাকলে প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা চালু হয়
যা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ।
১১। দল ব্যবস্থা ঃ রাজনৈতিক দলব্যবস্থা ছাড়া গণতন্ত্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। রাজনৈতিক দল জনমত গঠনের
মাধ্যমে রাজনৈতিক চর্চা করে থাকে। সুসংহত ও সক্রিয় রাজনৈতিক দল না থাকলে একনায়কতন্ত্রের প্রভাব
পরিলক্ষিত হয়।
১২। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম ঃ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হয় এবং গণমাধ্যম যাতে
নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টি করতে হয়। প্রচার মাধ্যমগুলোর উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রকে
বাধাগ্রস্ত করে। তাই স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম শর্ত।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোন একক শর্ত পালনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সাফল্য আশা করা যায় না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ
ছাড়া গণতন্ত্র স্থায়ী হতে পারে না। বস্তুত: জনগণ ও শাসনকারী গোষ্ঠীর মধ্যে যে কোন একদিকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের
অনুপস্থিতি থাকলে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।
সার-সংক্ষেপ
বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র হল সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। অন্য যে কোন শাসন পদ্ধতি অপেক্ষা গণতন্ত্রের জনপ্রিয়তা
অনেক বেশি। অনেকের মতে আদর্শগত বিচারেও গণতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার
সফলতার জন্য বহু পূর্বশর্ত রয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আকস্মিকভাবে অর্জন করা যায় না। এর জন্য দরকার
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন জনগণ, গণতান্ত্রিক শিক্ষার প্রসার, জাতীয় ঐক্যমত, আইনের শাসন ও দায়বদ্ধ সরকার।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা কোনটি?
(ক) একনায়কতন্ত্র (খ) গণতন্ত্র
(গ) রাজতন্ত্র (ঘ) প্রজাতন্ত্র
২। “সকল ধরণের সরকারের মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে কঠিন”− কে বলেছেন?
(ক) হেনরী মেইন (খ) জন স্টুয়ার্ট মিল
(গ) আর জি গেটেল (ঘ) ল্যারি ডায়মন্ড
৩। জন স্টুয়ার্ট মিল গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য কয়টি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন?
(ক) ২ (খ) ৩
(গ) ৪ (ঘ) ৫
৪। গণতন্ত্রের জন্য কোনটি বেশি প্রয়োজন?
(ক) আমলাতন্ত্র (খ) ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ
(গ) সামরিক শাসন (ঘ) মৌলবাদ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]