আদর্শ শাসন ব্যবস্থা হিসাবে গণতন্ত্র

মৌলিক অধিকার, আইনের অনুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, জনগণের শাসন,
রাজনৈতিক শিক্ষা, গণমাধ্যম।
আদর্শ শাসন ব্যবস্থা হিসাবে গণতন্ত্র
প্রাচীনকাল থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত রয়েছে। নানা ধরনের শাসন ব্যবস্থার
মধ্যে গণতন্ত্র অন্যতম। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের পর থেকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সারা
বিশ্বে অন্যান্য শাসন ব্যবস্থা থেকে বেশি জনপ্রিয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে জনগণের সম্মতিভিত্তিক জনকল্যাণমুখী
একটি শাসন ব্যবস্থা। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে গণতন্ত্র। নি¤েœ আদর্শ শাসন ব্যবস্থা
হিসেবে গণতন্ত্রের স্বরূপ উল্লেখ করা হল ঃ
১। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠিত ঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণ নির্বাচনের
মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে তারাই গণতন্ত্রে সরকার গঠন করে। নির্বাচকমন্ডলী
ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করে।
২। মৌলিক অধিকার স্বীকৃত ঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত। জনগণ যদি
মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে রাষ্ট্র আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৩। আইনের শাসন ঃ আইনের শাসন বলতে আইনের প্রাধান্যকে বোঝায়। অর্থাৎ আইন সকলের জন্য সমান। গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্র জনগণের আইনের অধিকার নিশ্চিত করে। রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট
হয় জনগণের নিরাপত্তাও বিঘিœত হয়। সবচেয়ে বড় কথা, আইনের শাসনের অভাবে মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়।
৪। স্বচ্ছতা ঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছতা বিরাজ করে। স্বচ্ছতা বলতে বুঝায়, সরকার
যা করছে জনগণ তা জানতে পারে। রাষ্ট্র কর্তৃক যে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড করা হয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে সকল
চুক্তি সম্পাদন করা হয়, সে সকল বিষয় সম্পর্কে জনগণের কাছে স্বচ্ছতা থাকা দরকার; যেটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব।
৫। জবাবদিহিতা ঃ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের কর্মকান্ডের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করে
থাকেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের জবাবদিহিতার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রসহ
অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা চালু থাকে।
৬। নির্বাচন ব্যবস্থা ঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান দিক হল নির্বাচন ব্যবস্থা। এখানে নির্বাচনের মাধ্যমে
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে। নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ বিরোধী দল হিসেবে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা
করে। শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে সরকার স্বৈরচারী হতে পারে না।
৭। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ঃ জনমত প্রকাশের প্রধান বাহন হচ্ছে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম স্বাধীন না হলে সরকারের ভালোমন্দ দু’টি দিক জনগণ জানতে পারবে না। জনগণের বিভিন্ন চাহিদা ও অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে।
৮। জনগণের শাসন ঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে জনগণের শাসন বলে অভিহিত করা হয়। এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায়
নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামত শাসন ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শাসনকার্য
পরিচালনা করে বিধায় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে জনগণের শাসন বলা হয়।
৯। সক্রিয় অংশগ্রহণ ঃ গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের যেমন অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে,
তেমনি প্রত্যেক নাগরিকেরও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। এই সুযোগ অন্য কোন ধরনের ব্যবস্থাতে অবারিত থাকে না।
১০। সাংবিধানিক প্রাধান্য ঃ সংবিধানের প্রাধ্যান্য বলতে বুঝায় সংবিধানের উর্ধ্বে আর কোন আইন নেই। সংবিধানকে
অমান্য করার এখতিয়ার সরকারের নেই। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্যকে স্বীকার করা হয়। এর
ফলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের স্বেচ্ছাচারী হবার সুযোগ সীমিত।
১১। রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। এখানে সরকারি
দল ও বিরোধী দল রাজনীতি সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জনসাধারণের সম্মুখে উপস্থাপন করে। আইন সভার বির্তক,
জনসভা, মিছিল-¯েøাগান, টেলিভিশন টকশোসহ নানাবিধ মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক
শিক্ষার বিস্তার ঘটে।
১২। ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতি ঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। এ ধরনের রাষ্ট্রে গণবিপ্লব বা
অভ্যুত্থানের সুযোগ নেই। সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলে নির্বাচনের সময় তারা জনগণের ভোট কম পাবে।
গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় সরকার গঠনের জন্য।
সবশেষে বলা যায়, আইনের শাসন, ব্যক্তিস্বাধীনতা, শাসন ক্ষমতায় অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকার কারণে, অনেকেই
রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা মৌলবাদী শাসনব্যবস্থার তুলনায় গণতন্ত্রকে অনেক উন্নতর মতাদর্শ হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন।
সার-সংক্ষেপ
সরকার পরিচালনার বহু পদ্ধতি রয়েছে। তবে সকল পদ্ধতি অপেক্ষা গণতন্ত্রকে বলা হয় আদর্শ শাসন ব্যবস্থা।
গণতন্ত্রপন্থীদের মতে গণতন্ত্রে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়ে থাকে। কেননা গনতন্ত্রে জনগণের মতামতের
উপর ভিত্তি করে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণের মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়। জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গণতন্ত্রকে আদর্শ শাসন ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থায়?
(ক) একনায়কতন্ত্রে (খ) গণতন্ত্রে
(গ) রাজতন্ত্রে (ঘ) প্রজাতন্ত্রে
২। জনমত প্রকাশের বাহন কী?
(ক) নির্বাচন (খ) সমাবেশ
(গ) গণমাধ্যম (ঘ) সব কয়টি
৩। আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি−
(ক) গণতন্ত্র (খ) রাজতন্ত্র
(গ) সমাজতন্ত্র (ঘ) প্রজাতন্ত্র
৪। জনগণ সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থায়?
(ক) রাজতন্ত্র (খ) সমাজতন্ত্র
(গ) গণতন্ত্র (ঘ) কোনটিই নয়

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]