সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের গুণাবলি ও সমস্যা

জনমতের প্রাধান্য, জনকল্যাণকামী, নাগরিক সচেতনতা, জাতীয় সংকট, রাজনৈতিক
শিক্ষা।
সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের গুণাবলি
বর্তমানকালে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই গণতন্ত্রকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে
পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয়, উভয় ব্যবস্থাতেই
সংসদীয় শাসন সমানভাবে জনপ্রিয়। সংসদীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণগুলো
অনুধাবন করা যায়। নি¤েœ এ ধরনের কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হল ঃ
১। আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক ঃ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে নিবিড়
সম্পর্ক এবং গভীর বোঝাপড়া থাকে। এরকম শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতিকে স্বীকার করা হয় না। উভয়
বিভাগের মধ্যে এই পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুশাসনের পথ প্রশস্ত হয়।
২। গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে ঃ এই শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রিসভাই হল প্রকৃত শাসক। এই মন্ত্রিসভা আবার জনগণের
প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। ফলে জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারাই সরকারি নীতি নির্ধারিত হয় এবং শাসনকার্য
পরিচালিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক শাসন বা জনগণের শাসনের স্বরূপ বজায় থাকে।
৩। সরকার স্বৈরাচারী নয় ঃ সংসদীয় সরকারে মন্ত্রিসভাকে সরকারি নীতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে সকল বিষয়ে আইনসভার
কাছে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। তাই মন্ত্রিসভা স্বৈরাচারী
হতে পারে না। এছাড়া, মন্ত্রিসভার জনস্বার্থ বিরোধী এবং স্বৈরাচারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিরোধী দল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
৪। নমনীয় ও পরিবর্তনশীল ঃ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা বিশেষভাবে নমনীয়। এরূপ শাসন ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে
পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। প্রয়োজনের তাগিদে
নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদে পরিবর্তন আনয়নে অসুবিধা হয় না।
৫। রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঃ এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। সরকারি নীতি,
দেশের বিভিন্ন সমস্যা ও সরকারি কার্যক্রম নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা ও সমালোচনা হয়। তার মাধ্যমে দেশের
সাধারণ মানুষ সরকারের কার্যকলাপ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।
৬। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ঃ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে যেকোন বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায় এবং সঠিকভাবে উচিৎ-অনুচিৎ স্থির
করা যায়। এ ধরনের অনুশীলন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৭। রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সমন্বয় ঃ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রকে বজায় রেখেও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ
পাওয়া যায়। রাজা বা রাণীকে নিয়মতান্ত্রিক শাসকের পদ দিয়ে মন্ত্রিসভাকে প্রকৃত শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা
যায়। উদাহরণ হিসেবে ব্রিটেনের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার কথা বলা যেতে পারে।
৮। জনমতের প্রাধান্য ঃ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে জনমতের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। জনগণের মতামত উপেক্ষা করে
সরকার এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ তা মেনে নেয় না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিধায় আইন সভার
সদস্যদের জনমতের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হয়। এখানে জনমতের উপর ভিত্তি করেই সরকার আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণ করে থাকে।
৯। বিরোধী দলের মর্যাদা ঃ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে বিরোধী দলের মর্যাদা রয়েছে। এখানে বিরোধী দল সরকারের
গঠনমূলক সমালোচনা করে থাকে। সরকারের ভুল-ত্রæটি ধরিয়ে দেয়া এবং বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে বিরোধী
দল গণতন্ত্র চর্চায় অবদান রাখতে পারে।
১০। জনকল্যাণকামী ঃ জনকল্যাণ সাধন মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের অন্যতম গুণ। সরকার যদি জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন
করার চেষ্টা না করে, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ সরকারি দলকে ভোট দান থেকে বিরত থাকে। এ আশংকা
থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকারি দল জনকল্যাণকামী হয়ে থাকে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্খা থাকে
বিধায় বিরোধী দলও জনকল্যাণমুখী অবস্থান গ্রহণ করে।
১১। জাতীয় সংকট নিরসন ঃ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বিভিন্ন জাতীয় সংকট দক্ষতার সাথে সমাধান করতে পারে।
সংকটকালীন সময়ে প্রয়োজনে বিরোধী দলের সাথে সরকারি দল পরামর্শ করে সিদ্ধান্তে আসতে পারে।
নানাবিধ ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিবেচনা করে বলা যায় যে, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসন ব্যবস্থা অপরাপর শাসন
ব্যবস্থা থেকে অধিকতর উত্তম শাসন ব্যবস্থা। এ শাসন ব্যবস্থা জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং
সরকার তাদের কাজের জন্য আইনসভা ও জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। অন্য কোন শাসনব্যবস্থায় জনগণের নিকট
শাসনকারী কর্তৃপক্ষের এতটা দায়বদ্ধতা দেখা যায় না।
সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের সমস্যাবলী
উপরোক্ত গুণাবলির অস্তিত্ব সত্তে¡ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বিরূপ সমালোচনার হাত এড়াতে পারেনি। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে
এরূপ সরকারের বিরুদ্ধে বহুবিধ ত্রæটির কথা বলা হয়। নি¤েœ তা আলোচনা করা হল ঃ
১। সুশাসনের অন্তরায় ঃ সংসদীয় ব্যবস্থাতে মন্ত্রীগণকে শাসনকার্য ছাড়াও আইন প্রণয়ন কাজে অংশগ্রহণ করতে হয় এবং
প্রশ্নোত্তর দানে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাছাড়া মন্ত্রীদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়। এর
ফলেও মন্ত্রীদের অনেকটা সময় চলে যায়। এতে বিভাগীয় মন্ত্রীগণ তাঁদের উৎসাহ-উদ্দীপনার পুরোটাই নির্বাহী ক্ষেত্রে
নিয়োগ করতে পারেন না। এটি সুশাসনের অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
২। অখন্ড সরকারি নীতি অনুসৃত হয় না ঃ সংসদীয় সরকারের পরিবর্তনশীলতা বা নমনীয়তা অন্যতম গুণ হিসেবে
বিবেচিত হয়। কিন্তু এটি সরকারি নীতি ও কার্যক্রমের অখন্ডতার বিরোধী। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ঘন-ঘন
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের আশংকা থাকে। আবার মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হলে সরকারি নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম দেখা দেয়।
৩। জরুরি অবস্থার উপযোগী নয় ঃ এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় সরকারি সকল সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলাপ-আলোচনার
মাধ্যমে গৃহীত হয়। সেজন্য কোন বিষয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
৪। দল ব্যবস্থার ত্রæটি ঃ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব অপরিহার্য বিবেচিত হয়। ফলে এ ধরনের
শাসনব্যবস্থায় দল ব্যবস্থার সকল ত্রæটি পরিলক্ষিত হয়। সংকীর্ণ দলাদলি, দলীয় স্বার্থ, যোগ্যতার উপেক্ষা প্রভৃতি
শাসনব্যবস্থার দক্ষতার হানি ঘটায়।
৫। নয়া স্বৈরাচার ঃ সংসদীয় ব্যবস্থাতে কোন একটি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করলে একদলীয়
শাসনের আশঙ্কা তৈরি হয়। মন্ত্রিসভার স্বৈরাচারের পথে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ক্ষমতা দুর্বল বিরোধী দলের থাকে না।
৬। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুপস্থিত: সংসদীয় ব্যবস্থাতে আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে কোন ভেদ থাকে না। অর্থাৎ
আইন সভাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতেই নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব থাকে। সরকারের এই দুই বিভাগের একীভূত হয়ে
থাকাকে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন।
৭। পক্ষপাতমূলক প্রশাসন ঃ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থা যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে
গঠিত হয় সেহেতু প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব থাকে। আর এ পক্ষপাতমূলক প্রশাসন জনগণের জন্য অকল্যাণকর।
পরিশেষে বলা যায় যে, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের কিছু ত্রæটি থাকলেও বর্তমান বিশ্বে এ শাসনব্যবস্থা ব্যাপকভাবে
জনপ্রিয়। অনেকে মনে করেন, ক্ষমতাসীন দল যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুসরণ করে তাহলে সংসদীয় ব্যবস্থাতেই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব।
সার-সংক্ষেপ
যে শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভা শাসন ক্ষমতার অধিকারী এবং মন্ত্রিপরিষদ তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট
জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার বলে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসন
ব্যবস্থায় সরকারের সকল ক্ষমতা তত্ত¡গতভাবে একজন রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকে। কিন্তু প্রকৃত শাসন ক্ষমতা
মন্ত্রিপরিষদের উপর ন্যস্ত থাকে। বর্তমানে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার জনপ্রিয় ও নন্দিত সরকারে পরিণত হচ্ছে। তবে
এ সরকারের কিছু ত্রæটি দূর করে আরো বেশি জনপ্রিয় ও অর্থবহ করা যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৮
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। মন্ত্রণালয়ের প্রধান কে?
(ক) সচিব (খ) উপসচিব
(গ) মন্ত্রী (ঘ) স্পীকার
২। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে মূল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু কে?
(ক) রাষ্ট্রপতি (খ) প্রধানমন্ত্রী
(গ) সেনাপ্রধান (ঘ) প্রধান বিচারপতি
৩। কোনটি মন্ত্রীপরিষদ শাসিত ব্যবস্থাতে দেখা যায় না?
ক) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ (খ) আমলাতন্ত্র
(গ) দুর্নীতি (ঘ) স্বজনপ্রীতি

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]