জাতীয় ঐক্য, প্রশাসনিক নৈপুণ্য, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ,
ভৌগোলিক ঐক্য, জাতীয় সরকার, জাতীয় সংহতি।
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণাবলি
বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা চালু আছে। নি¤েœ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণাবলি
আলোচনা করা হল ঃ
১। সমন্বয় সাধন ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার জাতীয় ঐক্য এবং স্বার্থের সঙ্গে আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যের সমন্বয় সাধন করে। এ
ধরণের সরকারে একাধারে কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষমতা অর্পণ এবং আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের
দাবি পূরণ করা সম্ভব। এ সরকারের সামগ্রিকভাবে জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
২। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে সাহায্য করে। বিভিন্ন
অঙ্গরাজ্যের সরকারসমূহ ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
পারে।
৩। কেন্দ্রীয় আমলাতান্ত্রিকতা প্রতিরোধ ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় আমলাতান্ত্রিকতা প্রতিরোধে সহায়ক। অঙ্গরাজ্যের
সরকারসমূহ আঞ্চলিক সমস্যা, দাবি এবং প্রয়োজন সম্পর্কে অবহিত থাকে। অঞ্চলের জনসাধারণের সঙ্গে
রাজনৈতিক প্রশাসকদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ সুশাসনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে বিধায় আমলাদের প্রাধান্য হ্রাস পায়।
৪। রাজনৈতিক সচেতনতা ঃ বিশাল দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাই জনসাধারণকে রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে সচেতন
করে তোলে। সরকারের সঙ্গে তাদের নৈকট্য যত বেশি হয়, সরকার এবং সরকারের কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের জন্যও
তাদের উৎসাহ তত বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক সক্রিয়তাই জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি করে।
৫। প্রশাসনিক নৈপুণ্য ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রশাসনিক নৈপুণ্য বৃদ্ধির সহায়ক। অঙ্গরাজ্যের সরকারসমূহ আঞ্চলিক এবং
কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ভূক্ত সমস্যার সঙ্গে জড়িত থাকে। অঙ্গরাজ্যের সরকার নিজ-নিজ ক্ষেত্রে
দায়িত্ব পালনে ব্যাপৃত থাকে বিধায় তাদের নৈপুণ্য ও পারদর্শিতা বৃদ্ধি পায়।
৬। কেন্দ্রীয় স্বৈরাচার প্রতিরোধ ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্বৈরাচার প্রতিরোধে সহায়ক। সংবিধান কর্তৃক
অঙ্গরাজ্যগুলোকে ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীয় বিবেচনা ও সুবিধা অনুযায়ী রাজ্যের ক্ষমতা
সংকোচন অথবা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে না।
৭। আইন প্রণয়নে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার আইন প্রণয়ন ও প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার
সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুফলগুলো সমগ্র দেশে প্রয়োগ করা যায়। এর ফলে জাতীয় স্বার্থরক্ষায়
কেন্দ্র এবং অঙ্গরাজ্যের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে ওঠে। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষার অবকাশ থাকে না।
৮। স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্যসমূহ বেশির ভাগ স্থানীয় সমস্যাসমূহ কেন্দ্রীয়
সরকারের সহায়তা ছাড়া মীমাংসা করে থাকে। এর ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হয়। এ অভিজ্ঞতা
ও নেতৃত্ব পরবর্তীতে জাতীয় সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়।
৯। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক নাগরিক শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করার সুযোগ
পায় এবং রাজনৈতিক শিক্ষা লাভ করে থাকে। রাজ্যসমূহের জন্য পৃথক আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচারালয়
থাকার ফলে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার তুলনায় অধিক সংখ্যক লোক শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে এবং শাসন ব্যবস্থাকে
আরো শক্তিশালী করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার
অতুলনীয়। তাই এ সরকার ব্যবস্থা বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির দেশগুলোতে জাতীয় সংহতির সহায়ক।
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সমস্যাবলী
বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রীয়
ব্যবস্থার কোন সমস্যা নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ নানা দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সমস্যাগুলো আলোচনা করেছেন।
নিচে তার বর্ণনা করা হল ঃ
১। দুর্বল সরকার ব্যবস্থা ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবসায় কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সংবিধান কর্তৃক ক্ষমতা বণ্টিত হওয়ার
ফলে এককেন্দ্রিক সরকার অপেক্ষা এ সরকার দুর্বল হতে বাধ্য। এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের অথবা রাজ্যের
সঙ্গে বিরোধের ফলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে।
২। সমন্বয় সাধন দুঃসাধ্য ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতা, নীতি ও কর্মসূচির
সমন্বয় সাধন দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন রাজ্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে প্রশাসন
পরিচালনা করলে, বিশেষভাবে কেন্দ্র এবং রাজ্যের নীতির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়।
৩। অগ্রগতি ব্যাহত ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা জাতির অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান
দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়ার ফলে পরিবর্তিত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রæত লয়ে চলার পথে
বাধার সৃষ্টি হয়।
৪। জাতীয় স্বার্থ অবহেলিত ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী জনগণ সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের প্রতি তাদের
প্রাথমিক আনুগত্য প্রকাশ করে। স্বাভাবিকভাবেই আঞ্চলিক স্বার্থের সঙ্গে জনগণের প্রাথমিক স্বার্থ জড়িত থাকে বলেই
অনেক ক্ষেত্রেই তারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন থাকে না এবং অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় স্বার্থের তুলনায়
আঞ্চলিক স্বার্থের প্রতিই বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে।
৫। বিরোধ সৃষ্টি ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত হওয়া সত্তে¡ও তাদের মধ্যে
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কারণে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
৬। জটিল সংবিধান ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সংকটকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের অনুকূল নয়, যুক্তরাষ্ট্রীয়
সংবিধান জটিল। প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে সংশোধন করে জরুরি সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাছাড়া অঙ্গরাজ্যের
সরকারের বিরোধীতার ফলে বহু ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে সমস্যার সমাধানে বাধা সৃষ্টি হয়।
৭। ব্যয়-বহুল ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পরিচালনা ব্যয়-বহুল। কেন্দ্র এবং রাজ্যে সরকার পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ
অর্থ ব্যয় করতে হয়। বহু ক্ষেত্রে অর্থের অপচয়ও ঘটে।
৮। ক্ষমতা বণ্টনের সমস্যা ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্যের স্বীকৃতি এবং অঙ্গরাজ্যসমূহের
কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল করে তোলার নীতি অঙ্গরাজ্যের স্বাতন্ত্র্য ব্যাহত করে। অর্থনৈতিক ক্ষমতার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়
সরকারের উপর নির্ভরশীলতা যত বৃদ্ধি পায় অঙ্গরাজ্যের স্বাতন্ত্র্যও তত বেশি ব্যাহত হয়। ভারতের মত রাষ্ট্রে এ
ধরনের সমস্যা মাঝে মাঝে দেখা দেয়।
৯। সংকীর্ণতাবাদী আন্দোলন ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রের নীতি সিদ্ধান্তের ফলে যদি দীর্ঘকাল ধরে কোন অঞ্চলের দাবি
উপেক্ষিত হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে সংকীর্ণতাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে। বস্তুত: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সব
সময়ে জাতীয় ঐক্যের অনুকূল হয় না।
১০। দীর্ঘসূত্রিতা ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক প্রশাসন থাকায় কখনো কখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে
দীর্ঘসময় ব্যয় হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে এককেন্দ্রিক সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে সেটা
কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা ও মতামত পেতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আঞ্চলিক সরকারের
কাজের গুরুত্বই অনেক সময় কমে যায়।
১১। বিচ্ছিন্নতাবাদের আশঙ্কা ঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে সকল প্রদেশে সমানভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না। অনেক প্রদেশ
আবার রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে পিঁছিয়ে পড়ে। তখন তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এ ধরনের অবস্থা
অনেক দিন চলতে থাকলে এবং কোন একটি প্রদেশের অনেক মানুষের মধ্যে কেন্দ্রের ব্যাপারে বঞ্চনার বোধ দেখা
দিলে বিচ্ছিন্নতাবাদ জন্ম নেয়ার আশঙ্কা দানা বেধে উঠে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধান বর্ণিত পন্থাতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলো নিজ-নিজ কর্মপন্থা নির্ধারণ করলে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা
থেকে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সুফল অর্জন করা সম্ভব।
সার-সংক্ষেপ
যে সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা সাংবিধানিক উপায়ে বন্টন করা হয় এবং উভয় সরকার স্ব-স্ব ক্ষেত্রে
স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে ও স্বাতন্ত্র্য ক্ষমতা চর্চা করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার
ব্যবস্থা আয়তনে বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য বেশি উপযোগী। কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সবসময় সমন্বয় ও যোগাযোগ রক্ষা করে
চলতে হয়। যার জন্য রাষ্ট্রের অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.১১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। কেন্দ্রিয় স্বৈরাচার প্রতিরোধ করে কোন ব্যবস্থা?
ক) যুক্তরাষ্ট্রীয় খ) এককেন্দ্রিক
গ) মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ঘ) স্বৈরাচারী
২। বিচ্ছিন্নতাবাদের আশঙ্কা থাকে কোন ব্যবস্থাতে?
ক) এককেন্দ্রিক খ) যুক্তরাষ্ট্রীয়
গ) রাষ্ট্রপতি শাসিত ঘ) স্বৈরাচারী
৩। প্রশাসনের কোন সমস্যাটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাতে দেখা যায়?
ক) অতিদ্রæততা খ) দীর্ঘসূত্রিতা
গ) সংকীর্ণতা ঘ) তথ্যহীনতা
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র