ইতিহাসের বিবর্তন ধারায় কিভাবে বাংলাদেশ নামের উৎপত্তি হয়েছে আলোচনা করুন।

বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার এক অমোঘ পরিণতি। মুসলিম লীগের দ্বিজাতি তত্তে¡র
উপর ভিত্তি করে যে রাজনীতি ভারত উপমহাদেশে সংগঠিত হয়েছিল তারই পরিণতিতে ভারতবর্ষ
বিভক্ত হয় পাকিস্তান ও ভারত এই দু’টি রাষ্ট্রে। পাকিস্তানের দু’টি অংশ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের
মধ্যে প্রধান সেতুবন্ধন ছিল ইসলাম ধর্ম। মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছাড়া আর কোন বিষয়ে পূর্ব ও
পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে মিল ছিল না। ভাষা, সমাজ-সংস্কৃতি ও ভৌগলিক অবস্থানের সকল
বিরুদ্ধতাকে উপেক্ষা করে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল। পাকিস্তানের এই অর্ন্ত নিহিত দূর্বলতা
পরবর্তীকালে উত্তরোত্তর প্রকট হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পূর্ব বাংলার
স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছিল। এরই ফলশ্রæতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদী
আন্দোলনের অনিবার্য ধারায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশের। আমাদের একটি গৌরবোজ্জল অতীত আছে। সে ইতিহাস মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার
ইতিহাস । এই অধ্যায়ে সেই স্বর্ণময় অতীত ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ♦ বঙ্গ, বাঙ্গালা, বাংলাদেশ
প্রচীনকালে এ দেশের নাম বাংলা বা বাংলাদেশ ছিল না। বিভিন্ন পরিবর্তনের পথ ধরে এ দেশের নাম
বাংলা বা বাংলাদেশ হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা এক এক সময় এদেশ শাসন
করেছে। এরই সঙ্গে দেশটির নামে এসেছে বিভিন্ন পরিবর্তন। এ দেশটি অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে
বিভক্ত ছিল। বাংলার এই অঞ্চলগুলোকে বলা হত জনপদ, সমতট, গৌড়,বঙ্গ, বরেন্দ্র, পুন্ড্র, হরিকেলএরকম প্রায় ১৬টি জনপদের কথা জানা যায়। এ সব জনপদকে রাষ্ট্র বা রাজ্য হিসাবে চিহ্নিত করা
যায়। প্রতিটি অঞ্চলের শাসকরা স্বাধীনভাবে শাসন করত। অঞ্চলগুলো ছিল অনেকটা প্রাচীন গ্রীক
নগর রাষ্ট্রের মতো।
বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বদিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন
শিলালিপিতে বঙ্গ জনপদ হিসেবে দু’টি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়। একটি বিক্রমপুর আর অন্যটি
নাব্য। বরিশাল, পটুয়াখালি ও ফরিদপুর এই তিনটি এলাকা নাব্য অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত ছিল। বঙ্গ জনপদ
বহুকাল ধরে স্বাধীন ছিল। এই জনপদটিকে খুব শক্তিশালী অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেন
রাজাদের তাম্রলিপিতে দেখা যায় ঢাকা, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ বঙ্গের অর্ন্তভুক্ত ছিল।
প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের সীমানা
পশ্চিমে ভাগিরথী ও করতোয়া নদী, পূর্বে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা, উত্তরে ব্রহ্মপুত্র এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর
-এই বিস্তীর্ণ ভু-খন্ড নিয়ে প্রাচীন বঙ্গরাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই সম্পূর্ণ এলাকা ভগিরথীর পূর্ব তীরে
কিছ অংশ বাদ দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশর অর্ন্তভুক্ত।
বঙ্গ থেকে বাংলাদেশের উৎপত্তি
ঐতরেয় অরণ্যক -গ্রন্থে সর্বপ্রথম বঙ্গ-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ-ইসিরাজ তবকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থে বঙ্গ শব্দটির উল্লেখ করেছেন। মোগল সম্রাট আকবরের নবরতœ সভার
সদস্য ইতিহাস লেখক আবুল ফজলের মতে এ দেশের প্রাচীন নাম ছিল বঙ্গ। তাঁর মতে প্রাচীনকালে
বঙ্গ অঞ্চলের রাজারা ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ চওড়া বিরাট আল বা বাঁধ নির্মান করতেন। সে সময়
থেকে বাঙ্গাল বা বঙ্গালা নাম হয়েছে। মধ্যযুগে যখন দেশটি মুসলমান শাসকদের অধিকারে আসে
তখন দেশটির নাম হয় বাংলা। মুসলিম শাসক ও ইতিহাস লেখকগণ বঙ্গ বা বাংলা বলতে দক্ষিণ পূর্ব
বাংলাকে বুঝাতেন। সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ প্রথম সমগ্র বাংলাকে নিজের অধিকারে আনেন।
ইতিহাস লেখকগণ তাঁকে শাহ-ই বাঙ্গালা এবং সুলতানই বাঙ্গালারূপে অভিহিত করেন। এ সময়
থেকেই পুরো দেশটি বাঙ্গালা নামে পরিচিত হয় এবং অধিবাসীদের বাঙ্গালি বলা হত। এ কথা সত্য
যে, মুসলিম আমলে বঙ্গ ও বাঙ্গলা বাংলার অংশ বিশেষের নাম ছিল । বাংলার পূর্বরূপ বাঙ্গালা নাম
মুসলমানদের দেওয়া। মুসলমানরা প্রথম থেকেই সমগ্র বঙ্গ দেশকে মুলুক-ই-বাঙ্গালা বলত।
চতুর্দশ শতাব্দী হতে বাঙ্গালা শব্দটি বিভিন্ন সমসাময়িক মুসলিম গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-তারিখ-ই
ফিরোজশাহী গ্রন্থের কথা উল্লেখ করা যায়। পরে হিন্দুরাও দেশের এই নাম ব্যবহার করেন।
পর্তুগীজরা যখন এদেশে আসেন তখন বাঙ্গালা নাম গ্রহণ করে একে বলেন ‘ইবহমধষ’ বাঙ্গালা নামের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা এক এক সময় এদেশ শাসন করেছে বাংলার পূর্বরূপ বাঙ্গালা নাম মুসলমানদের দেওয়া
প্রথম উলে খ পাওয়া যায় ইবনে বতুতার ভ্রমণ-বৃত্তান্তে। পরবর্তীতে লেখক জিয়াউদ্দীন বারূনী তার -
তারিখ-ই-ফিরোজশাহী গ্রন্থে বাঙ্গালা নামের উল্লেখ করেছেন। চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বঙ্গ
বাঙ্গালায় রূপান্তরিত হয়।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজরা ভারতের ক্ষমতা দখল করে। এ সময় বাংলাভাষী আমাদের এ দেশটি
ইংরেজদের অধিকারে চলে যায় এবং ব্রিটিশদের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। ব্রিটিশরা তখন ইংরেজী
ভাষায় এই প্রদেশের নাম বলতো বেঙ্গল । আজকের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম
বাংলার অধিকাংশ এলাকা মিলে পুরো অঞ্চলটিকে বলা হত “বাংলা“। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন
বাংলাকে দু’টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। একটি পূর্ব বাংলা আর অন্যটি পশ্চিম বাংলা। হিন্দুদের প্রচন্ড
বিরোধিতা ও আন্দোলনের মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায়। ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ
বিরোধী ভারতীয়দের আন্দোলনের ফলে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজরা এদেশ ছেড়ে চলে যায় এবং ভারত
ও পাকিস্তান নামে দুটো রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ইতিহাসের চমকপ্রদ ঘটনা হল এই যে, পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখিয়েছিল। কিন্ত মাত্র ২৪ বছরের ব্যবধানে বাংলার সংগ্রামী মানুষ
পাকিস্তানী শাসনের পতন ঘটায়। ১৯৭১-এর ২৬শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে
এক মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চ‚ড়ান্ত বিকাশের মধ্যদিয়ে বাঙ্গালিরা এদেশটির নাম
দেয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের এই পরিণতি ছিল অবশ্যম্ভাবী। এ দেশের মানুষ পাকিস্তানী শাসকদের
শাসনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাকিস্তানের ইতিহাস স্বৈরশাসনের ইতিহাস। সুদীর্ঘ নয় মাস এক
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। এ ভাবে
যুগে যুগে এ দেশের নামের পরিবর্তন হয়েছে।
সারকথা: বিভিন্ন পরিবর্তনের পথ ধরে এদেশের নাম বাংলা বা বাংলাদেশ হয়েছে। দেশটি অনেকগুলি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এই অঞ্চলগুলোকে বলা হত জনপদ। মধ্যযুগে দেশটি যখন মুসলমান
শাসকদের অধিকারে আসে তখন দেশটির নাম হয় বাংলা। চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বঙ্গ
বাঙ্গালায় রূপান্তরিত হয়। আজকের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বাংলার অধিকাংশ এলাকা নিয়ে
পুরো অঞ্চলকে বলা হত বাংলা। ১৯৭১ সালে এক গৌরব উজ্জ্বল রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে এ দেশটির নাম হয় বাংলাদেশ।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) দিন
১। প্রাচীনকালে এদেশের নাম ছিল-
(ক) বাংলা;
(খ) বাঙ্গালা;
(গ) বঙ্গ;
(ঘ) বাংলাদেশ।
২। এদেশের অধিবাসিদের বলা হত -
(ক) বাংলাদেশী;
(খ) বাঙ্গালি;
(গ) বঙ্গী;
(ঘ) বঙ্গাল।
৩। বাংলা ২টি প্রদেশে বিভক্ত হয়-
(ক) ১৯০৫ সালে;
(খ) ১৯০৬ সালে;
(গ) ১৯৭১ সালে;
(ঘ) ১৯৪৭ সালে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। প্রাচীন বঙ্গরাষ্ট্রের সীমানা চিহ্নিত করুন।
রচনামুলক প্রশ্ন
১। ইতিহাসের বিবর্তন ধারায় কিভাবে বাংলাদেশ নামের উৎপত্তি হয়েছে আলোচনা করুন।
উত্তরমালা: ১-গ, ২-খ,৩-ক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]