চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা

জনসংযোগ, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ, রাজনৈতিক নিয়োগ, জনস্বার্থ, রাজনৈতিক
প্রচার
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন
করেছে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আলোচনা ব্যতীত আধুনিক গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় তুলে ধরা সম্ভব নয়। নি¤েœ চাপ
সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করা হল ঃ
১। স্বার্থের সংহতি সাধন ঃ প্রতিটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বার্থের সংহতি সাধনের জন্য যে সব ব্যবস্থা
আছে তার মধ্যে চাপসৃষ্টিকারী দল অন্যতম। সমাজের বিভিন্ন অংশ এবং বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষের স্বার্থ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।
২। জনসংযোগ ঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নিজেদের স্বার্থ-সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সংযোগ সাধনের উদ্যোগ ত্যাগ করতে
পারে না। সরকারের নীতির সাথে অনেক সময়েই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ ছাড়াও ব্যাপক জনস্বার্থ জড়িত থাকে। চাপ
সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী গণসংযোগের মাধ্যমে জনসাধারণের নিকটে নিজেদের দাবির যৌক্তিকতা এবং সরকারের জনস্বার্থ
বিরোধী নীতির সমালোচনা করে।
৩। তথ্য প্রদান ঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সংবাদ এবং তথ্য সংগ্রহের অন্যতম উৎস। সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য
আইনসভার সদস্য, আমলা, সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনের উচ্চতর পর্যায়েও এ গোষ্ঠী তথ্য সরবরাহ করে।
আইনসভার সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করার চেষ্টা করে। পুস্তিকা প্রকাশ, জনসভা,
সংবাদপত্রে সরব প্রচারসহ নানান মাধ্যমে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী নিজেদের বক্তব্য পেশ করে।
৪। রাজনৈতিক প্রচার ঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রচারকার্য পরিচালনার একটি সংগঠিত মাধ্যম। চাপসৃষ্টিকারী
গোষ্ঠীই কোন বা কোন ভাবে রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কিত থাকে। নির্বাচনী রাজনীতিতে কোন চাপসৃষ্টিকারী
গোষ্ঠীই স্বতন্ত্রভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে না। সরকার গঠন তাদের লক্ষ্য নয়, তাদের মূল লক্ষ্য সরকারের
নীতিকে প্রভাবিত করা। নির্বাচনী রাজনীতিতে বিভিন্ন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন
জ্ঞাপন করে। অনেক সময় রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীর কার্যকলাপ এমনভাবে জড়িয়ে থাকে যে, তাদের ভূমিকার পার্থক্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।
৫। সামাজিকীকরণ ঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যম। বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক
দলের ন্যায় অনেক চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীও জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক প্রচারকার্য পরিচালনা করে। এভাবেই তারা
জনগণের মধ্যে সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে।
৬। সরকারের ত্রæটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ ঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রশাসনের দক্ষতা বজায় রাখতে এবং ত্রæটি-বিচ্যুতি দূরীকরণে
সাহায্য করে। এ গোষ্ঠী সরকারের ত্রæটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালায়। এর ফলে সরকার নিজের ত্রæটি ও
সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকে। গোষ্ঠীর চাপের ফলে আমলাতন্ত্রের উদাসীন্য এবং নিস্পৃহতা দূর করা সম্ভব হয়।
নিজেদের বক্তব্য রাজনৈতিক দলের ন্যায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীও রাজনৈতিক সমস্যাসমূহ সম্পর্কে জনসাধারণের নিকট পেশ করে।
৭। সরকারের উপদেষ্টা ঃ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারের উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে সরকার বিশেষ স্বার্থ-
সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে।
৮। রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ ও পরিবর্তন ঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ অথবা
পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করে। চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ রাজনৈতিক বিচার-বিবেচনার দ্বারা অনেক সময়ই প্রভাবিত হয়। রাজনৈতিক দলের মত বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মধ্যেও সুস্পষ্ট মনোভাব, অনুভূতি এবং
সংবেদনশীলতা থাকে। এসবের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ অথবা পরিবর্তনের আন্দোলনে তারা অংশগ্রহণ করে।
৯। আইন ও নীতির উৎস ঃ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ কখনো-কখনো আইন এবং সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তের উৎসে
পরিণত হয়। বিদ্যমান আইন ও নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ অনেক সময় সরকারের উপর চাপ
প্রয়োগ করে। আইনসভার সদস্যদের মাধ্যমে বক্তব্য পেশ, সরকারের নিকট সরাসরি বক্তব্য উপস্থাপন, জনসভা,
বিক্ষোভ, সমাবেশ অথবা ধর্মঘটের মাধ্যমে গোষ্ঠীসমূহ তাদের স্বার্থের প্রতিকূল আইন ও নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। গোষ্ঠী স্বার্থের বাইরে
এসে, রাষ্ট্রের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সার-সংক্ষেপ
চাপসৃষ্টিকারী দল কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তবুও আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী দলের ভূমিকা
অপরিহার্য। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে প্রভাবিত করাই হল চাপ সৃষ্টিকারী দলের প্রধান
কাজ। মূলত: গোষ্ঠী স্বার্থ আদায়ে কাজ করলেও, কোন কোন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে কখনো কখনো বৃহত্তর জনকল্যাণমূলক
বা জাতীয় স্বার্থে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ‘স্বার্থ একত্রীকরণকারী’ বলা হয় কাকে?
(ক) রাজনৈতিক দল (খ) জনগণ
(গ) সরকার (ঘ) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
২। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর লক্ষ্য কি ?
(ক) ক্ষমতা দখল (খ) বিদেশী স্বার্থ রক্ষা
(গ) ব্যবসা করা (ঘ) কোনটি নয়
৩। কারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে কিন্তু সরকার গঠনে সচেষ্ট নয়?
(ক) সাধারণ জনগণ (খ) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
(গ) রাজনৈতিক দল (ঘ) বিরোধী দল
৪। রাজনৈতিক দলকে পরামর্শ দিয়ে প্রভাবিত করে কে?
(ক) চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী (খ) সাধারণ জনগণ
(গ) নির্বাচকমন্ডলী (ঘ) নির্বাচন কমিশন

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]