আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ আলোচনা কর

সার্বভৌমত্ব, অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন, সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগীয়
পর্যালোচনা, গণ-সংযোগ।
আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ
আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের প্রাধান্য বৃদ্ধি এবং এর পাশাপাশি আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস
একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। একটি সময় পর্যন্ত সংবিধান বিশেষজ্ঞদের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল আইনসভার
সার্বভৌমত্ব। সে সময় অধিকাংশ দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আইনসভার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে
অধিকাংশ দেশের শাসন ব্যবস্থাতেই শাসন বিভাগের ক্ষমতার বিস্তার এবং আইনসভার ক্ষমতা ও প্রভাবের অবসান পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অধ্যাপক কে সি হোয়ার এর মতে “দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল ক্ষেত্রেই
আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে”। লর্ড ব্রাইস (খড়ৎফ ইৎুবপ) তাঁর 'গড়ফবৎহ উবসড়পৎধপরবং' শীর্ষক গ্রন্থে বিভিন্ন
দেশের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
নি¤েœ আইনসভার ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি হ্রাসের সাধারণ কারণ আলোচনা করা হল।
১। জনকল্যাণমূলক দায়িত্বের সম্প্রসারণ: বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের বেশিরভাগ শাসন
বিভাগই সম্পাদন করে। সমাজকল্যাণমূলক কাজ-কর্মের বিপুল দায়িত্বের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে আইনসভা এ
ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে না। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ নীতিনির্ধারণ এবং তা
কার্যকর করে। ফলে শাসনবিভাগের সাথে জনসাধারণের ব্যক্তিগত ও দৈনন্দিন জীবনের গভীর সংযোগ স্থাপিত হয়।
স্বাভাবিকভাবেই জনগন আইনসভার পরিবর্তে শাসন বিভাগের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
২। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির জটিলতা বৃদ্ধি: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ, বিংশ শতাব্দীর ঠান্ডা
লড়াই, সাম্প্রতিককালে মৌলবাদ, জাতিগত সংঘাতসহ নিত্য-নতুন সংকট ও আশংকা এবং অর্থনীতি অত্যন্ত জটিল হয়ে
পড়ার বাস্তবতাতে, শাসন বিভাগের দ্রæত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে
পরিস্থিতির জটিলতা ও জটিল পরিস্থিতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ফলশ্রæতিতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে শাসন
বিভাগের ভ‚মিকা প্রধান হয়ে উঠেছে। সামরিক ও প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে গোপনীয়তা রক্ষা করা দরকার। আইনসভার
সদস্যদের খোলামেলা আলোচনায় তা আবার সম্ভব হয় না। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন-নতুন সমস্যার সৃষ্টি
হচ্ছে। সর্বোপরি জাতীয় সংকট ও জরুরি অবস্থায় আইনসভা অনেক সময় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারায় এর ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
৩। দলীয় ব্যবস্থার কঠোরতা: বর্তমানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আইনসভা কার্যত ক্ষমতাসীন দলের
ইচ্ছামাফিক কাজ করে। রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার বিস্তার, সুসংগঠিত দলীয় ব্যবস্থা ও দলীয় নিয়মানুবর্তিতার বদৌলতে
মন্ত্রিসভা আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকে। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন
করে। সংখ্যারগরিষ্ঠ দলের নেতারাই সরকারে স্থান লাভ করেন। সরকারের স্থায়িত্ব আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের
সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। তাই সরকারি দল দলীয় নির্দেশ ও শৃঙ্খলার ব্যাপারে সতর্ক ও কঠোর হয়। আইনসভার ভিতরে
শাসকদলের সদস্যরা দলীয় নির্দেশ অনুসারে কথা বলেন ও কাজ করেন। দলের বাইরে গেলে পরবর্তীতে দলীয় মনোনয়ন
পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকে। দলীয় নির্দেশ মান্য করা অথবা অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে বরণ করা এ দুয়ের
মধ্যে আইনসভার সদস্যরা সাধারণত প্রথমটিকেই গ্রহণ করেন। ফলশ্রæতিতে, বর্তমানে অনেক দেশে আইনসভা শাসনবিভাগীয় নির্দেশ অনুমোদনের একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
৪। আইন প্রণয়ন ও আর্থিক বিষয়ে ক্ষমতা হ্রাস: বর্তমানে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভার ভ‚মিকা অনেক ক্ষেত্রেই
অনুষ্ঠানসর্বস্ব হয়ে উঠেছে। এখন শাসন-বিভাগই অধিকাংশ আইনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। আইনসভায় উত্থাপিত বিলের
মধ্যে অধিকাংশই সরকারি বিল। এছাড়া অর্থসংক্রান্ত বিষয়ের উপর আধুনিক আইনসভার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে গেছে।
কেননা, আইনসভার সাধারণ সদস্যরা বাজেট প্রস্তাব বা অর্থ বিল উত্থাপন করেন না। মন্ত্রীরাই এ কাজ করেন। আর্থিক
বিষয়ের জটিলতা, প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ-জ্ঞানের অভাব এবং সময়ের স্বল্পতার জন্যও অনেক সময় বাজেট প্রস্তাব নিয়ে
পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার অবকাশ থাকে না।
৫। অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন: আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুবিধ আইনের প্রয়োজন হয়। আইনের
জটিলতা, সদস্যদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাব সর্বোপরি সময়ের অভাবের জন্য আইনসভা আইন প্রণয়নের কিছু ক্ষমতা
বাধ্য হয়ে শাসন বিভাগের হাতে অর্পন করে। ফলে শাসন বিভাগকে কিছু কিছু আইন প্রণয়ন করতে হয়। একে অর্পিত
ক্ষমতাপ্রসূত আইন বলে। এর ফলে আইন বিভাগের উপর শাসন বিভাগের প্রভাব বেড়ে চলেছে।
৬। সদস্যদের অদক্ষতা: আজকের যুগে একটি আইনসভাকে অতীত আমলের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও দক্ষতা
দাবিকারী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এসব সমস্যার সমাধান কেবলমাত্র আন্তুরিকতা বা সাধারণ জ্ঞান দ্বারা সমাধান করা
সম্ভব হয় না। এজন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বিশেষায়িত জ্ঞান প্রয়োজন। উন্নয়নশীল অনেক দেশেই আইন সভার সদস্যদের
অদক্ষতা একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। এহেন বাস্তবতাতে শাসন বিভাগের দক্ষতাসম্পন্ন আমলাদের ভূমিকা শাসনকার্য
পরিচালনাতে বড় হয়ে উঠেছে।
৭। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর গুরুত্ব: আইনসভা সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সংযোগ সাধনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে
কাজ করে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী (চৎবংংঁৎব এৎড়ঁঢ়ং) ও সংগঠন জনগণের স্বার্থ ও সমস্যাদি
সম্পর্কে সরাসরি শাসন বিভাগে সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। সরকারি নীতিকে প্রভাবিত
করার এবং সরকারের সাথে জনগণের সংযোগ সাধনের মাধ্যম হিসেবে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বৃদ্ধি
পেয়েছে। এর ফলশ্রæতিতে আইন সভার গুরুত্ব কমছে।
৮। সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ: তৃতীয় বিশ্বের অনেক উন্নয়শীল রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে সামরিক বাহিনী
শাসন ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করে। তখন আইনসভা স্থবির হয়ে পড়ে। সামরিক সরকারের মাধ্যমে তখন দেশ পরিচালিত হয়
এবং আইনসভার ভ‚মিকা বিলুপ্ত হয়। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে, আইন সভা স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব হারাতে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইদানীংকালে সারা বিশ্বেই নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বাড়ছে। আইন সভাকে
নানান ক্ষেত্রেই অতীত আমলের তুলনায় কিছুটা হলেও কম ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। তথাপি, সংবিধান ও আইন
প্রণয়নের ক্ষমতা থাকার কারণে এ বিভাগটি এখন অবধি অনেকের দৃষ্টিতে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
সার-সংক্ষেপ
আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আইনসভার ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। নানাবিধ বাস্তবতায়
জনগণের সাথে আইনসভার সদস্যদের সম্পৃক্ততা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, শাসন বিভাগের সদস্যদের সাথে নানা কারণে
জনগনের সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বহুমুখী জটিলতার যুগে আইনসভার সদস্যরা অনেক
সময় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আইনসভার সদস্যদের অনেকের দক্ষতার অভাবও আইনসভার ক্ষমতা
হ্রাসের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। "গড়ফবৎহ উবসড়পৎধপরবং" নামক গ্রন্থের লেখক কে?
ক) কে সি হোয়ার খ) লর্ড ব্রাইস
গ) হ্যারল্ড লাসওয়েল ঘ) অ্যালান বল
২। ‘দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল ক্ষেত্রেই আইনসভার ক্ষতা হ্রাস পেয়েছে।’ Ñ উক্তিটি কে করেছেন?
ক) ম্যাকাইভার খ) হ্যারল্ড লাস্কি
গ) কে সি হোয়ার ঘ) জন লক
৩। আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কোন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে?
ক) শাসন বিভাগ খ) বিচার বিভাগ
গ) নির্বাচন কমিশন ঘ) নির্বাচকমÐলী
৪। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকে সংবিধান বর্হিভ‚ত বলে বাতিল ঘোষণা করতে পারে কে?
ক) শাসন বিভাগ খ) সচিবালয়
গ) দুর্নীতি দমন কমিশন ঘ) সুপ্রীম কোর্ট

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]