শাসন বিভাগের গঠন শাসন বিভাগের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রতিরক্ষা দপ্তর, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ, অর্থদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমলা।
শাসন বিভাগের গঠন
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে শাসন বিভাগের প্রাধান্য বেড়ে চলার লক্ষণ
সুস্পষ্ট। ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী (ঈযরবভ ঊীবপঁঃরাব) থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজে
নিযুক্ত সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সকলকেই বোঝায়। শাসন বিভাগের দুইটি অংশ আছে ঃ (ক) রাজনৈতিক অংশ এবং (খ)
অ-রাজনৈতিক অংশ।
(ক) রাজনৈতিক অংশ: শাসন বিভাগের যেসব ব্যক্তি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন তাঁদেরকে শাসন বিভাগের রাজনৈতিক
অংশ বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে এরা শাসন বিভাগে যোগ দেন। কার্যকাল অতিক্রান্ত
হওয়ার পর এদের পুনরায় নির্বাচনী প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অবতীর্ণ হতে হয়। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশকে সরকারের নীতিনির্ধারণের ব্যাপারে চ‚ড়ান্তভাবে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। এ দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবে আইনসভার কাছে এবং চ‚ড়ান্ত বিচারে
নির্বাচকমন্ডলীর কাছে। এ দায়িত্বের প্রকৃতি হল প্রত্যক্ষ। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার
সদস্যদের কথা বলা যায়।
(খ) অ-রাজনৈতিক অংশ: অপরদিকে সরকারের স্থায়ী কর্মচারীদের শাসন বিভাগের স্থায়ী বা অ-রাজনৈতিক অংশ বলা
হয়। এরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে গুণগত যোগ্যতার ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে শাসন বিভাগে যোগ দেন। এদের
নিযুক্তির ব্যাপারে নির্বাচনী রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। স্থায়ী সরকারি কর্মচারীদের ‘আমলা’ নামেও অভিহিত করা হয়।
শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ প্রশাসনিক নীতি-নির্ধারণ করেন এবং তার বাস্তবায়নের দিকে নজর রাখেন। আর
সরকারের আমলা বা স্থায়ী কর্মচারীরা নীতিগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করেন।
শাসন বিভাগের কার্যাবলি
জাতি-রাষ্ট্র (ঘধঃরড়হ-ংঃধঃব) প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে মনে করা হত যে, বহিঃশত্রæর আক্রমণ থেকে দেশরক্ষা এবং
অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই হল শাসন বিভাগের কাজ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, নির্দিষ্টভাবে বললে, বিংশ
শতাব্দীতে এসে, রাষ্ট্রের কার্যক্ষেত্রের পরিধি বিপুলভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। নানাবিধ আন্তুর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
বেড়ে চললেও, এই একবিংশ শতাব্দীতেও রাষ্ট্রের নানাবিধ ভূমিকা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রের কার্যাবলি বৃদ্ধি পাওয়ার
সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই শাসন বিভাগের কর্মপরিধি বিস্তৃতি লাভ করেছে। আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ যেসব কাজ
সম্পাদন করে সেগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল১। অভ্যন্তরীণ শাসনকার্য পরিচালনা: আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন শাসন বিভাগ কার্যকর করে। আইন-শৃঙ্খলা
ভঙ্গকারীকে বিচারালয়ের সম্মুখে উপস্থিত করা, বিচারালয়ের রায় অনুসারে অপরাধীকে শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতির
মাধ্যমে শাসন বিভাগ দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে। তাছাড়া অধঃস্তন সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি
এবং পদচ্যূতি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, জরুরি অবস্থার মোকাবেলা করার জন্য অর্ডিন্যান্স জারি প্রভৃতি শাসন বিভাগের
গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
২। পররাষ্ট্র সংক্রান্ত: বর্তমানে কোন রাষ্ট্রই নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক
সম্পর্ক নির্ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন। শাসন বিভাগের প্রধানই বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে ক‚টনেতিক সম্পর্ক রক্ষা করেন। নিজ
রাষ্ট্রের ক‚টনৈতিক অন্য রাষ্ট্রে প্রেরণ, অন্য রাষ্ট্রের ক‚টনৈতিক প্রতিনিধি গ্রহণ, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন; কোন
রাষ্ট্রের সাথে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হবে কিংবা কোন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা প্রয়োজন ইত্যাদি নির্ধারণ করা
শাসন বিভাগের পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কার্যাবলির অন্তভর্‚ক্ত। এসব কাজের দায়িত্ব পররাষ্ট্র দপ্তরের উপর অর্পিত হয়।
৩। প্রতিরক্ষা কার্যাবলি: দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার গুরুদায়িত্ব শাসন বিভাগের ওপরে ন্যস্ত থাকে।
সাধারণভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান সৈন্যবাহিনীর গঠন, পরিচালনা, যুদ্ধ পরিচালনা বিষয়ে
পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দেশ রক্ষার প্রয়োজনে বেসামরিক শক্তিকে কাজে লাগানো প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করে। রাষ্ট্রপ্রধান
প্রয়োজনবোধে সামরিক আইনও জারি করতে পারেন। যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব প্রতিরক্ষা দপ্তরের উপর ন্যস্ত থাকে।
৪। আইন সংক্রান্ত কার্যাবলি: সংসদীয় ব্যবস্থাতে আইন ও শাসন বিভাগের নেতৃত্বে সাধারণত একই ব্যক্তি থাকে বিধায়,
আইন বিভাগের উপরে শাসন বিভাগের স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের হস্তক্ষেপ চলে আসে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত
ব্যবস্থাতে রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতি ছাড়া আইন বিভাগের আইন প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হতে পারে না। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি
চালু থাকলেও, আজকের দিনে রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত ব্যবস্থাতে আইন সভার উপরে রাষ্ট্রপ্রধানের অনেকখানি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
৫। বিচার সংক্রান্ত কার্যাবলি: রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ প্রধান বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। বিচার বিভাগ
কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শন, শাস্তির পরিমাণ হ্রাস প্রভৃতি বিচার সংক্রান্ত কার্যাবলি রাষ্ট্রপ্রধান সম্পাদন করেন।
তাছাড়া শাসন বিভাগের কোন কর্মচারীর অন্যায় আচরণ কিংবা দুর্নীতির বিচার ও শাস্তি দান, কোন সরকারি কর্মচারীকে
অন্যায়ভাবে পদচ্যুত করা হয়েছে কিনা তার বিচার শাসন বিভাগ করে থাকে। এরূপ বিচারকে শাসন বিভাগীয় বিচার বলা
হয় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এরূপ শাসন বিভাগীয় বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত আছে।
৬। অর্থ সংক্রান্ত কার্যাবলি: সরকারের যাবতীয় কার্য সম্পাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এই বিপুল অর্থ
সংগ্রহের দায়িত্ব প্রধানত শাসন বিভাগের। অবশ্য আইন বিভাগের অনুমোদন না পেলে শাসন বিভাগ অর্থ ব্যয় করতে পারে
না। কর সংগ্রহ ও ব্যয় বরাদ্দ করা ছাড়াও শাসন বিভাগকে সরকারি কোষাগারের হিসাব পরীক্ষা করতে হয়। অর্থদপ্তর এর হাতে এ ক্ষমতা অর্পিত থাকে।
৭। জনকল্যাণমূলক কার্যাবলি: আধুনিক রাষ্ট্রে জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, কৃষি, শিল্প বাণিজ্যের উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার
উন্নতি, অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন প্রভৃতি জনকল্যাণকর কার্যাদি শাসন বিভাগই
সম্পাদন করে।
৮। নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত কাজ: স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনার জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতি থাকতে
হয়। সরকারের শাসন বিভাগ এ নীতি নির্ধারণ করে। ব্রিটেন, ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার দেশে
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট এ নীতি প্রণয়ন করে তাকে। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত শাসন
ব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগের দাযিত্ব এবং ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকে।
৯। আইন বলবৎকরণ সংক্রান্ত কাজ: শাসন বিভাগের অন্যতম মুখ্য কাজ আইন বলবৎ করা। সব ধরনের সরকারেই
আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকে শাসন বিভাগ সঠিকভাবে বলবৎ করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সরকারের
তিনটি বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনকে
শাসন বিভাগ বিশ্বস্ততার সাথে কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে রাষ্ট্রের কার্যাবলি উত্তরোত্তর বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শাসন বিভাগ ক্রমশ:
ক্ষমতাশালী হয়ে উঠার একটি প্রবণতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় আইন বিভাগের প্রাধান্যের পরিবর্তে
শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। রাষ্ট্রপ্রধান শাসিত শাসনব্যবস্থাতেও দলীয় শাসনের মাধ্যমে শাসন বিভাগ আইন বিভাগকে বহুল পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হচ্ছে।
সার-সংক্ষেপ
শাসন বিভাগ আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনকে বাস্তবায়ন করে। আইনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের ইচ্ছা প্রকাশ পায়। আর এ
আইনকে কার্যকর করে শাসন বিভাগ। রাষ্ট্রের সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যাবলি শাসন বিভাগ সম্পাদন করে। শাসন
বিভাগের দুইটি অংশ রয়েছে। যথা− রাজনৈতিক অংশ এবং অ-রাজনৈতিক অংশ। শাসন বিভাগ আইন সংক্রান্ত, বিচার
সংক্রান্ত, পররাষ্ট্র সংক্রান্ত, অর্থ-সংক্রান্ত, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত, অভ্যন্তরীণ শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্তসহ বহুবিধ কার্য
সম্পাদন করে থাকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। শাসন বিভাগের কয়টি অংশ আছে?
ক) ২টি খ) ৪টি
গ) ৬টি ঘ) ৮টি
২। অধ্যাদেশ (ঙৎফরহধহপব) জারি করতে পারেন কে?
ক) প্রধানমন্ত্রী খ) রাষ্ট্রপ্রধান
গ) স্পীকার ঘ) প্রধান বিচারক
৩। পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করেন কে?
ক) প্রধানমন্ত্রী খ) স্পীকার
গ) রাষ্ট্রপ্রধান ঘ) প্রধান বিচারপতি
৪। রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা দেখা যায় কোন দেশে?
ক) বাংলাদেশ খ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গ) ভারত ঘ) ব্রিটেন

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]