ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সুবিধা ও অসুবিধা

দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যক্তি অধিকার, ভারসাম্য নীতি, নাগরিক চেতনা, সংঘাত ও বিপ্লব,
সংসদীয় ব্যবস্থা।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সুবিধা
সরকারের তিনটি বিভাগ আলাদাভাবে কার্য সম্পাদন করলে সরকারি কাজে গতিশীলতা আসে। এছাড়াও এই
নীতির প্রয়োগ হলে একজন বা কয়েকজন ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারের ঝুঁকি কমে। নি¤েœ ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সুবিধা আলোচনা করা হল:
১। গতিশীলতা বৃদ্ধি: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এ নীতি বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি বিভাগ
আলাদাভাবে কাজ করবে। কাজের পরিধি জানা থাকলে কাজগুলো দ্রæততার সাথে সম্পাদন করা সম্ভব। আর কোন বিভাগ
যদি অন্য কোন বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ না করে সেক্ষেত্রে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
২। স্বেচ্ছাচারিতা রোধ: সরকারের তিনটি বিভাগের সকল ক্ষমতা যদি একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির হাতে থাকে
তাহলে সে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ প্রচন্ড ক্ষমতাশালী হয়ে যায়। জেরেমি বেন্থাম এ প্রসঙ্গে বলেন, “যখন আইন বিভাগ, শাসন
বিভাগের সাথে সংযুক্ত হয়ে কাজ করবে তখন জনগণের স্বাধীনতা থাকবে না, কারণ তখন আইন বিভাগ এমনভাবে আইন
প্রণয়ন করে শাসন করবে যা হবে স্বৈরাচারী”। সরকারের এহেন স্বৈরাচার বা স্বেচ্ছাচারিতা রোধে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির গুরুত্ব রয়েছে।
৩। ব্যক্তি অধিকার রক্ষা: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির আরেকটি সুবিধা হল এর মাধ্যমে ব্যক্তি অধিকার রক্ষা পায়। কোন
শাসক যদি নিজেই আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকেন সেক্ষেত্রে নাগরিকের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেননা
সে শাসক নাগরিকের অধিকারের কথা না ভেবে নিজের ক্ষমতাকে কিভাবে আরো বেশি শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা
করেন। তাই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে নাগরিক অধিকার রক্ষা পায়।
৪। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। আইন
বিভাগ কিংবা শাসন বিভাগ যদি বিচার বিভাগের কাজের উপর হস্তক্ষেপ করে তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে
বিচারিক কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আইনের শাসন (জঁষব ড়ভ খধ)ি বাধাগ্রস্থ হবে। তাই
বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়।
৫। বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে সরকারের তিনটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের কাজে দক্ষতা
অর্জন করার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠে। কেননা এ সমস্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন একই ধরনের কাজ করে থাকে।
ফলে তাঁরা নিজ নিজ কাজে বিশেষজ্ঞ হয়ে যায়।
পরিশেষে বলা যায়, শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সুবিধা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সরকারের
কোন একটি বিভাগ যাতে অন্য দুই বিভাগ থেকে বেশি ক্ষমতাশালী না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অসুবিধা
গণতান্ত্রিক সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কার্যকারিতা অপরিহার্য হলেও
এর আক্ষরিক বাস্তবায়ন সম্ভব ও কাঙ্খিত নয় বলেও অনেকে মনে করেন। ম্যাকাইভার বলেন, “মন্টেস্কু যে চরম ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণের কথা বলেছেন তা অসম্ভব।” নি¤েœ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অসুবিধা আলোচনা করা হল:
১। সরকার অখন্ড ও অবিচ্ছেদ্য: সরকার একটি অখন্ড ও অবিচ্ছেদ্য সংগঠন, তাই একে সম্পূর্ণ আলাদা করা সম্ভব নয়।
সরকারের তিনটি বিভাগ নানাবিধ বাস্তব কারণে একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। এই বিভাগগুলো একে অপর থেকে
আলাদা হয়ে পড়লে সরকার পরিচালনা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। বস্তত: অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ যদি
পরিপূর্ণ রূপে কার্যকর করা হয় তাহলে সংবিধানই অকার্যকর হয়ে পড়বে।
২। শাসনযন্ত্রের অচলাবস্থা: ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ হলে এক বিভাগ অন্য কোন বিভাগের কাজে সহযোগিতা না করে
নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করার ঝুঁকি থাকে। অধ্যাপক হ্যারন্ড লাস্কি এ প্রসঙ্গে বলেন, “সরকারের
তিনটি বিভাগকে স্বতন্ত্র ও পৃথক করা হলে প্রতিটি বিভাগই তার দায়িত্ব এড়িয়ে অন্য বিভাগের উপর চাপানোর চেষ্টা করবে।” এর ফলে শাসনযন্ত্রের অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
৩। রাষ্ট্র নিষ্প্রান: রাষ্ট্র হচ্ছে মানুষের মত একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। জে সি বøুন্টসলি তাই বলেন, “দেহ থেকে মস্তককে
আলাদা করলে যেমন মানুষের প্রাণহানি ঘটে, তেমনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করলে রাষ্ট্র নিষ্প্রান হয়ে পড়ে।”
অর্থাৎ সরকারকে পুরোপুরি বিভাজন করলে সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর এর ফলে রাষ্ট্র নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে।
৪। অপূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ: পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রেই এখন পর্যন্ত ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ কার্যকর হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রবর্তিত হলেও, সেখানে এটি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সেখানে নিয়ন্ত্রন ও ভারসাম্যের
নীতি প্রয়োগ হওয়ার ফলে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব হয় নি।
৫। দায়িত্বশীলতা বিলুপ্ত: সরকারের তিন বিভাগ যদি স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে এবং সর্বদা নিজেদের পরিধির মধ্যে অবস্থান
করে, তাহলে তাদের দায়িত্বশীলতা বিলুপ্ত হবে, পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা বিনষ্ট হবে। এর ফলে শাসনকার্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
৬। শাসনকার্যের মান অবনত: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে শাসনকার্যের মান কমে যেতে পারে। আইন বিভাগ যদি
কেবল নিজেদের ইচ্ছামাফিক আইন প্রণয়ন করে, সেক্ষেত্রে শাসন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পায়। শাসন বিভাগের কাজ হল
আইন বিভাগ থেকে প্রণীত আইন সমূহকে বাস্তবায়ন করা। শাসন বিভাগ যদি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ ভূমিকা
রাখতে না পারে, সেক্ষেত্রে শাসন কার্যের মান অবনত হবে।
৭। সংসদীয় ব্যবস্থার অনুপযোগী: সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সরকারের আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
বিরাজ করে। একজন মন্ত্রী যেমন শাসন বিভাগের সাথে সম্পর্কিত তেমনি আবার আইনসভার ও সদস্য। তাই সংসদীয়
শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুপযোগী।
৮। অনৈক্যের সৃষ্টি: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে প্রত্যেক বিভাগ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক
ম্যাকাইভার বলেন, “ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা
ও অনৈক্যের সৃষ্টি হবে।”
পরিশেষে বলা যায়, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির নানাবিধ অসুবিধা থাকলেও, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য এই নীতির
প্রয়োগ কাম্য, তবে স্বতন্ত্রীকরণের নামে যাতে নিয়ন্ত্রণহীন স্বেচ্ছাচারিতার নীতি প্রতিষ্ঠা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সার-সংক্ষেপ
ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। আর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের মাধ্যমেই বিচার বিভাগের
স্বাধীনতা রক্ষা পায়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি চালু থাকলে, সরকারের একটি বিভাগের উপর আরেকটি বিভাগের
হস্তক্ষেপের ঝুঁকি কমে যায়। তবে সরকারের কোন বিভাগ এককভাবে কাজ করলে সরকারের কাজের গতিশীলতা হ্রাস পায়
এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগটির স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার আকাঙ্কা থাকে। বস্তুত: সারা বিশ্বের কোন রাষ্ট্রেই পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ
নীতি বাস্তবায়ন করা যায় নি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.১৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ দ্বারা কোনটির স্বাধীনতা রক্ষা সম্ভব ?
ক) বিচার বিভাগ খ) প্রতিরক্ষা বিভাগ
গ) আইন বিভাগ ঘ) পররাষ্ট্র বিভাগ
২। “সরকারের তিনটি বিভাগকে স্বতন্ত্র ও পৃথক করা হলে প্রতিটি বিভাগই তার দায়িত্ব এড়িয়ে অন্য বিভাগের উপর
চাপানোর চেষ্টা করবে।”Ñ উক্তিটি কে করেছেন?
ক) টমাস হবস খ) জাঁ জাঁক রুশো
গ) হ্যারন্ড লাস্কি ঘ) জন লক
৩। মন্টেস্কুর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি দ্বারা প্রভাবিত হন কোন দেশের সংবিধান প্রণেতারা?
ক) বাংলাদেশ খ) ভারত
গ) যুক্তরাষ্ট্র ঘ) ফ্রান্স

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]