জাতীয়তার উপাদানগুলো উপাদানগুলো কেন অপরিহার্য তা অনুধাবন কর

জাতীয়তার উপাদান
জাতীয়তা বলতে আমরা সেই জনসমাজকে বুঝি, যারা দেশ, ভাষা ও সাহিত্য, রীতি-নীতি, ইতিহাস ও
ঐতিহ্যের ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ। এই ঐক্যসূত্রগুলোই জাতীয়তার উপাদান। জাতীয়তার উপাদান অনেক, তবে নিম্নলিখিতগুলো
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: (ক) বংশগত ঐক্য, (খ) ভৌগোলিক ঐক্য, (গ) ধর্মের ঐক্য, (ঘ) ভাষা ও সাহিত্যের একতা,
(ঙ) রীতি-নীতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একতা, (চ) সাধারণ রাজনৈতিক আশা-আকাক্সক্ষা।
(ক) বংশগত ঐক্য : বংশগত ঐক্য জাতীয়তার অন্যতম উপাদান। এটি এক জাতির লোককে অন্য জাতি থেকে স্বতন্ত্র
রাখে। কিন্তু বর্তমানে বংশের বা কূলের এত বেশি সংমিশ্রণ ঘটেছে যে কোন জাতিই আর খাঁটি বংশের দাবি করতে পারে
না। বংশগত ঐক্যের দিক থেকে ইংরেজ ও জার্মান জাতির মধ্যে বহু মিল থাকা সত্তে¡ও তারা দুটি স্বতন্ত্র জাতি। অপরপক্ষে
আমেরিকায় বহু বংশজাত জনসমষ্টি থাকা সত্তে¡ও তারা এক জাতিতে পরিণত হয়েছে। বস্তুত: বংশগত ঐক্য ছাড়াও জাতীয়
মনোভাবের সঞ্চার হতে পারে। সুতরাং বলা যায়, বংশগত ঐক্য জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করলেও, এটিকে জাতীয়তার জন্য
অত্যাবশ্যক উপাদান হিসেবে গণ্য হয় না। কানাডায় বংশগত ঐক্য নেই বললেও চলে।
(খ) ভৌগোলিক ঐক্য : ভৌগোলিক ঐক্য জাতীয়তার আর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। একই ভৌগোলিক সীমারেখার
মধ্যে বহুকাল বাস করার ফলে জনসমষ্টির মধ্যে দৃঢ় ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়। সাধারণত ধরে নেয়া হয় যে, জাতি গঠনের জন্য
জনসমষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট ভূখÐে বাস করতে হয়। এভাবে দেখলে যাযাবর গোষ্ঠী জাতিতে পরিণত হতে পারে না। কিন্তু
গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে দেখা যাবে, এ উপাদানটিও জাতীয়তার জন্য অপরিহার্য নয়। ইহুদিরা বহু দিন যাবৎ কোন
নির্দিষ্ট ভূ-খÐে বাস না করেও নিজেদের এক জাতি বলে মনে করত।
(গ) ধর্মের ঐক্য : ধর্মের ঐক্য জাতীয়তা সৃষ্টিতে কখনো-কখনো ভূমিকা পালন করে। এক ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে
সহজেই এক ঐক্যভাব জাগ্রত হয়। ইহুদিরা ধর্মের প্রভাবে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠন করে। অবিভক্ত
ভারতের মুসলমানগণও ধর্মের নামে জাতীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয় এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে। তথাপি বলা প্রয়োজন,
ধর্মের ঐক্য জাতীয়তার অপরিহার্য উপাদান হিসেবে গণ্য হয় না। সাধারণত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়েই জাতি গঠিত হয়।
বর্তমানে ধর্মের ক্ষেত্রে উদারনীতি গৃহীত হওয়ায় এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভাব জাগ্রত হওয়ায় ধর্মের ঐক্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে না।
(ঘ) ভাষা ও সাহিত্যের একতা : ভাষার ঐক্য জাতীয়তার ভাবধারা সৃষ্টিতে ব্যাপক সাহায্য করে। এক ভাষাভাষী জনসমষ্টি
ও একই সাহিত্যের পাঠকবৃন্দ স্বভাবতই দৃঢ় ঐক্যবোধ অনুভব করে। কিন্তু ভাষার ঐক্যই সর্বাপেক্ষা বড় কথা নয়। বিভিন্ন
ভাষায় কথা বলেও অনেক ক্ষেত্রে একটি জনগোষ্ঠী জাতীয়তার ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়। বেলজিয়ামের অধিবাসীবৃন্দ দু’ভাষায়
কথা বলেও এক জাতিতে পরিণত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডে তিনটি ভাষা, চীনে বহু ভাষা প্রচলিত থাকলেও সেখানকার
অধিবাসীবৃন্দ জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত হতে পেরেছে। অপরপক্ষে, ইংরেজ ও আমেরিকানগণ একই ইংরেজি ভাষা
ব্যবহার করেও দুটি জাতি। তারা এক জাতিতে রূপান্তরিত হয়নি। বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রসমূহেও একই আরবী ভাষা প্রচলিত,
তথাপি সেখানে বহু জাতি বিদ্যমান।
(ঙ) রীতি-নীতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঐক্য : জাতীয়তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপাদান রীতি নীতি, ইতিহাস ও
ঐতিহ্যের ঐক্য। একই ঐতিহ্য, একই ইতিহাস, দলগত জয় পরাজয়ের গৌরব ও গøানি, একই প্রথা-পদ্ধতি জনসাধারণকে
ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে। এক সঙ্গে অত্যাচারিত এবং পরাধীন থাকার স্মৃতি, ঐতিহাসিক কোন ঘটনায় অংশগ্রহণের স্মৃতি,
এক ঐতিহ্যের অধিকারী হবার গৌরব জাতীয়তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(চ) সাধারণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আশা-আকাক্সক্ষা : একই ধরনের রাজনৈতিক আশা-আকাক্সক্ষা, একই শাসনব্যবস্থা,
একই রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে কোন জনসমষ্টিকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়ক হয়।
(ছ) মনস্তাত্তি¡ক ঐক্যবোধ: জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে মনস্তাত্তি¡ক ঐক্যবোধের ভূমিকাই মুখ্য বলে অনেকে মনে করেন।
আধুনিক অনেক মনস্তত্ত¡বিদগণের মতে, জাতীয়তার মূল উপাদান হল সংহতি বোধ এবং যুক্ততার অসীম আনন্দ। ফরাসী
পন্ডিত আর্নেস্ট রেনানের মতে, জাতীয়তাবোধ একটি মানসিক সত্তা, এক প্রকার সজীব মানসিকতা। ভূখন্ডের সীমা, ক‚ল,
ধর্ম, ভাষা, এমনকি ইতিহাস-ঐতিহ্যের মধ্যেও এর সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে এই উপাদানগুলোর প্রত্যেকটি
পরোক্ষভাবে মনকে মিলনের জন্যে প্রস্তুত রেখে জাতীয়তাবোধ গঠনে সহায়তা করে। সংহতিবোধ এর প্রাণ স্বরূপ।
অধ্যাপক হ্যারল্ড লাস্কি একই কথা বলেন। তিনি বলেন, “জাতীয়তার ধারণাটি অপরিহার্যভাবেই একটি আতিœক ব্যাপার”।
সার-সংক্ষেপ
জাতীয়তা হল একটি জনসমাজের ঐক্যবোধের অনুভূতি। এই জনসমাজ যখন ভাষাগত, ঐতিহ্যগত, বংশগত,
ভৌগোলিক, রীতি-নীতি, সাহিত্য, রাজনৈতিক দিক দিয়ে নিজেরকে একই ধরনের মনে করে তখনই জাতীয়তা সৃষ্টি হয়।
তবে এর চূড়ান্ত স্বীকৃতির জন্য রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র প্রয়োজন। এই অনুভূতি দীর্ঘদিনে তৈরি হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১২.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। নীচের কোনটি জাতীয়তার উপাদান নয়?
(ক) বংশগত ঐক্য (খ) ভৌগোলিক ঐক্য
(গ) ধর্মের ঐক্য (ঘ) একই ধরণের পোশাক
২। জাতীয়তার উপাদান একটি নয়, একাধিক। বক্তব্যটি-
(ক) মিথ্যা (খ) সত্য
(গ) অর্ধেক সত্য (ঘ) উপরের কোনটিই না
৩। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে করেন জাতীয়তার উপাদান হলর. ভাষা রর. পোশাক-পরিচ্ছেদ ররর. পেশা
নিচের কোনটি সঠিক
ক) র খ) রর
গ) রর ও ররর ঘ) র ও রর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]