দেশপ্রেম, উগ্রদেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ
দেশপ্রেমের ধারণা
দেশপ্রেম দ্বারা জন্মভূমির প্রতি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝায়। দেশপ্রেম বলতে সেই নৈতিক
মূল্যবোধকে বোঝানো হয় যা দ্বারা ব্যক্তি তার স্বীয় ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জন্মভূমির স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়। জাতীয়তাবাদ
ও দেশপ্রেমকে অনেক সময় সমার্থক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। কেউ কেউ আবার এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে চান।
তাঁদের মতে দেশপ্রেম একটি জাতির আতœনিয়ন্ত্রণাধিকারের সাহস বোঝায়। পক্ষান্তরে, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে দেশপ্রেমের
এমন এক পর্যায় যখন একটি জাতি অপর জাতির তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করার মানসিকতা তৈরি হয়।
দেশপ্রেমকে ইংরেজিতে বলা হয়। শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ থেকে যার অর্থ "
বা “দেশীয় লোক” এটি গ্রীক শব্দ বা স্বদেশী এর সমার্থক। মতে, দেশের
প্রতি জনগণের ভালবাসাই দেশপ্রেম।
দেশপ্রেম হচ্ছে নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা। কোন কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, রাষ্ট্র অনেক সময় একটি সমজাতীয় পরিচয়
নির্মাণ শক্তিশালী করতে দেশপ্রেমকে উদ্বুদ্ধ করে। দেশপ্রেমে যখন দেশের প্রতি সত্যিকারের ভালবাসা হিসেবে প্রকাশ পায়
তখন তা জাতি গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগোষ্ঠী দেশের জন্য নিজের জীবন দিতেও কুন্ঠাবোধ
করে না। যেমনটি আমরা দেখেছি ভিয়েতনাম যুদ্ধের ক্ষেত্রে। ভিয়েতনামকে রক্ষা করার জন্য লক্ষ-লক্ষ লোক তাদের জীবন
উৎসর্গ করেছেন।
অন্যদিকে, অতিমাত্রায় দেশপ্রেম উগ্রপন্থার জন্ম দেয়। যেমন, জার্মানির হিটলার, ইতালির মুসোলিনি উগ ্রদেশপ্রেমেরই
উদাহরণ। তাছাড়া ভারতের উগ্রবাদী ‘হিন্দুত্ববাদী’রাও ভারতকে শুধু হিন্দুদের দেশ বলে বিশ্বাস করে। এই ধারণা
তাদেরকে উগ্রপন্থার দিকে উৎসাহিত করেছে। জার্মানিতে হিটলার জার্মান জাতিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে তুলে অন্য
জাতির মানুষদের ওপর হিংসাত্মক আচরণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
একটি জাতির প্রতি চরম ভালোবাসা অনেক সময় স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। আর স্বাধীন রাষ্ট্র টিকে থাকার জন্য দেশপ্রেম
জরুরি। আজকের এই বিশ্বায়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে।
এই যোগাযোগ মানুষে-মানুষে আস্থার সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। নতুন বাস্তবতাতে দেশপ্রেমের সনাতনী ধারণা
অনেকটাই পাল্টে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একাধিক রাষ্ট্র আজ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের সীমানা শিথিল
করেছে। ইউরোপিয় ইউনিয়ন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে দেশপ্রেমের এই যোগাযোগের কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলি ব্যবহার করে পৃথিবীর নানান স্থানে দেশপ্রেমের নামে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মের
রাজনৈতিক ব্যবহারের মাধ্যমে সহিংসতার বিস্তার ঘটানো হচ্ছে।
সার-সংক্ষেপ
জাতি গঠনে দেশপ্রেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশপ্রেমের কারণে কোন ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠী নিজের মাতৃভূমির প্রতি
প্রবল ভালবাসা অনুভব করে। এ বিষয়ে সমরূপ অনুভূতিসম্পন্ন জনগোষ্ঠী মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জীবনও
উৎসর্গ করতে পারে। অর্থাৎ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েই একটি জনগোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে
একটি জাতির জন্ম দিতে পারে। পক্ষান্তরে অন্য দেশ বা জাতির মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করে শুধু নিজ দেশের প্রতি বা
জাতির প্রতি যুক্তিহীন ভালবাসা উগ্র দেশপ্রেম বা উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১২.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। দেশপ্রেম হচ্ছে-
(ক) নিজের দেশকে ভালবাসা (খ) অন্যের দেশকে ঘৃণা করা
(গ) নিজের দেশের প্রতি উদাসীন থাকা (ঘ) নিজের দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দেয়া
২। উগ্র দেশপ্রেম একটি দেশের জন্য-
ক) প্রয়োজনীয় খ) প্রধান শর্ত
গ) ক্ষতিকর ঘ) কোনটিই নয়
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। কখনো-কখনো ধর্ম জাতীয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে। ধর্মীয় ঐক্য থাকা সত্তে¡ও পাকিস্তান থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কারণ হিসেবে বলা যায়
পাকিস্তানের দুটি অংশের মাঝে ভাষা, সাহিত্য, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছেদ এমন কি ভৌগোলিক ঐক্যও ছিল না।
অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের লাগামহীন শোষণ বাঙালি জাতিকে রাজনৈতিক সংগঠন সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। যার
ফলশ্রæতিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে কেবল মাত্র ধর্মগত
ঐক্য একটি জাতি হয়ে ওঠার অনুভূতিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে না।
ক) জাতি ও জাতীয়তার উৎপত্তিগত শব্দ দুটি কি?
খ) জাতি কি?
গ) উদ্দীপকের আলোকে জাতীয়তার সকল উপাদানগুলো উল্লেখ করুন।
ঘ) জাতীয়তার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপাদানে মিল থাকার পরও পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান কেন একটি জাতি গঠন করতে
পারেনি? ফলশ্রæতিতে কি হয়েছিল ব্যাখ্যা করুন।
২। ‘ক’ একটি সংগঠিত জাতি। তাদের মাঝে জাতীয়তার বেশির ভাগ উপাদানের মিল রয়েছে। তারা স্বাধীনতার পর চার
দশকের বেশি সময় অতিক্রম করেছে কিন্তু উন্নতির কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে নি। সুশীল সমাজ লাগামহীন
দুনীর্তি ও দেশপ্রেমহীনতাকেই এর জন্য দায়ী করেছেন। এ জাতির বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীই ব্যক্তিগত স্বার্থ অন্বেষণে
ব্যস্ত। ফলে এখনও বৃহৎ জনগোষ্ঠী দারিদ্রতা ও নিরক্ষতায় নিমজ্জিত।
ক) জাতি ও জাতীয়তার মূল পার্থক্য কি?
খ) দেশপ্রেম কি?
গ) উদ্দীপকের আলোকে দেশপ্রেম ও জাতীয়তার সম্পর্ক আলোচনা করুন।
ঘ) “দেশপ্রেম না থাকলে জাতীয়তার অনুভূতি ও ঐক্য ¤øান হয়ে যায়”-ব্যাখ্যা করুন।
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১২.১ ঃ ১। ঘ ২। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১২.২ ঃ ১। ক ২। খ ৩। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১২.৩ ঃ ১। ঘ ২। খ ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১২.৪ ঃ ১। ক ২। গ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র