বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব আলোচনা কর।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ১৯৭০ সালের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই নির্বাচনের
মাধ্যমে বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবী স্বাধীনতার দাবীতে রূপান্তরিত হয়। তাই সত্তরের নির্বাচন
এবং স্বাধীনতা আন্দোলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উল্লেখ্য যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সমগ্র দেশব্যাপী
এটাই ছিল প্রথম সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ঐ নির্বাচনী ফলাফলকে কেন্দ্র করে সামরিক শাসক জেনারেল
ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বনাম শেখ মুজিব ও এদেশের
মানুষের আশা আকাঙক্ষার মধ্যে যে তীব্র দ্ব›দ্ব-সংঘাত শুরু হয় তারই অনিবার্য পরিণতিতে বাংলার
সংগ্রামী জনতা এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদী শাসকগোষ্ঠী সত্তর সালের নির্বাচনী গণরায়কে অস্বীকার এবং বিজয়ী
দল আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে পাকিস্তানের ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে ওঠে।
১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতন এবং জেনারেল
ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণ-এই পটভ‚মিতে সুদীর্ঘ তেইশ বছর পরে ১৯৭০ সালে প্রাপ্ত-বয়স্ক
ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন ছিল খুবই তাৎপর্যমন্ডিত। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া
খানের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে পাকিস্তানে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকায় কোন একটা দলের পক্ষে
জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আর তিনি বিভিন্ন দলের অনৈক্যের সুযোগ
নিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের মতো দেশের উপর এমন একটি শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দিতে পারবেন যা
মূলতঃ কায়েমী ও স্বার্থবাদী শাসক চক্রের ক্ষমতাকেই টিকিয়ে রাখবে।
ক্ষমতাসীন সামরিকচক্র কেন্দ্রে একটি দুর্বল কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক
দলের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তুলতে থাকে। ইয়াহিয়া খান অতি সতর্কতার সাথে তার পরিকল্পিত পথে
অগ্রসর হতে থাকেন। তিনি ছোট- বড়ো সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিলিত হতে শুরু
করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক মতভেদ সৃষ্টি করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের প্রতি
দ্ব›েদ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত হতে প্ররোচিত করা। জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না।
সামরিক বাহিনীর রাওয়ালপিন্ডিস্থ হেডকোয়ার্টার্সে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেলদের বোঝাবার
চেষ্টা করেছিলেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দিলেই সামরিক বাহিনীর স্বার্থ রক্ষা হবে। প্রেসিডেন্টের
ঘনিষ্ঠ সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টাদেরও এই অভিমত ছিল। তারা আইয়ুব খানের শেষ দিনগুলোর
ঘটনাবলী উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে দেখালেন যে, জোর করে সামরিক শাসন চালিয়ে যাবার চেষ্টা
করলে সমগ্র পাকিস্তান একসঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ও
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে হবে। শাসক মহলের এই সব অনুমানের পরিপ্রেক্ষিতেই
ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন।
নির্বাচনী ইস্তেহারে আওয়ামী লীগ ‘ছয় দফা’ কর্মসূচীর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা, শোষণহীন
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিকে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলে ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনকে ‘ছয়-দফা’র উপর ‘গণভোট’ বলে উল্লেখ করেন। মুজিবের সাথে
ভুট্টোর মৌলিক পার্থক্য ছিল ‘ছয়-দফা’ কর্মসূচি নিয়ে। নির্বাচনী প্রচার অভিযানে পূর্ব ও পশ্চিম
পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বাংলার মানুষের হৃদয় জয় করে
নিতে সক্ষম হন। আওয়ামী লীগ ‘জয়বাংলা’ úোগানের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্পৃহা ঘরে
ঘরে পৌঁছে দেয়।
নির্বাচনী ফলাফল
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ১৭ ডিসেম্বর
প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ আওয়ামী লীগকে
নিরঙ্কুশভাবে জয়ী করে। জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে এই নির্বাচনের পরে স্বায়ত্তশাসনের দাবী স্বাধীনতার দাবীতে রূপান্তরিত হয় শেখ মুজিব আর্থ- সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বাংলার মানুষের হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম হন।
আওয়ামী লীগ। ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি ৮৮টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দল
হিসাবে আÍপ্রকাশ করে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ
২৯৮টি আসন লাভ করে। নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের ১৬৭
জন সদস্য সকলেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত হন; অনুরূপভাবে পিপলস্ পার্টির ৮৮টি আসনই
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত। দু’টি দলই আঞ্চলিক আধিপত্য ও প্রাধান্য লাভ করে এবং দু’টি
দলই অন্য অঞ্চল থেকে কোন আসন লাভ করে নি। সুতরাং নির্বাচনী ফলাফলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে
যে, দেশের দু’অংশের জনমত সম্পূর্ণ বিভক্ত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় সারা
বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের চরম
অবজ্ঞা ও উদাসীনতার বিরুজনতার রুদ্ররোষের বহিঃপ্রকাশ। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে,
পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যকার বিরাজিত অর্থনৈতিক বৈষম্য বাঙালিদের মনে প্রচন্ড বিক্ষোভের সঞ্চার
করেছিল।
নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানের কায়েমী শাসনের ভিত্তিমূলে আঘাত হানে। বাংলাদেশের জনগণ ৬ দফা
ও ১১ দফা কর্মসূচির প্রতি সুস্পষ্ট রায় প্রদানের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল যে, তারা শোষণ ও বঞ্চনার
অবসান চায়।
নির্বাচনোত্তর ঘটনাবলী
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন যে, ‘ছয় দফা’ কর্মসূচির ভিত্তিতেই
দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে এবং এ বিষয়ে কোন আপোস নেই। পক্ষান্তরে ভ‚ট্টো
বললেন যে, ‘ছয় দফা’ ভিত্তিক শাসনতন্ত্র পাকিস্তানের ভিত্তিমূলে আঘাত হানবে। তিনি হুমকি দিয়ে
বললেন যে, যদি আওয়ামী লীগ এককভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকে এবং এককভাবে
শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় তাহলে তিনি সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানে হরতাল আহবান করে প্রশাসন
ব্যবস্থা অচল করে দেবেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, পাঞ্জাব ও সিন্ধুই হলো পাকিস্তানের ক্ষমতার উৎস
এবং কেন্দ্রস্থল। আর এই দুই প্রদেশে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সুতরাং দেশের স্বার্থ এবং
জনগণের সেবা করার জন্যে তাকে ক্ষমতায় যেতেই হবে। ভুট্টোর এই দাবীর প্রতিবাদে আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ উল্লেখ করেন যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে আর এই সংখ্যাগরিষ্টতার বলে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও কেন্দ্রীয় সরকার
গঠনের অধিকার আওয়ামী লীগেরই রয়েছে। এইভাবে ভুট্টোর পিপলস্ পার্টি এবং আওয়ামী লীগের
মধ্যে øায়ুযুদ্ধ শুরু হয়।
নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আওয়ামী লীগ বৈধভাবে শাসনতন্ত্র রচনা ও শাসনভার গ্রহণের আশা
করেছিল। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মন্ত্রীসভা গঠন ও দেশ শাসনের দাবীদার। কিন্তু
জুলফিকার আলী ভ‚ট্টোর অনমনীয়তা সৃষ্টি করেছিল এক অচলাবস্থা। ভুট্টোর মাধ্যমে কিছু শাসনতান্ত্রিক
বিতর্ক সৃষ্টি করে জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকবেন ডাকছেন করে টালবাহানা
শুরু করেন। অতঃপর ৩রা মার্চ ‘৭১, জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ ঘোষিত হয়।
কিন্তু ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন
স্থগিত ঘোষণা করেন।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে স্বতঃস্ফুর্ত গণবিস্ফোরণ ঘটে। বাংলার সর্বস্তরের
মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। úোগান ওঠে, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘কৃষক
শ্রমিক অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ইত্যাদি।
সেই সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ úোগানের ধ্বনিতে সমস্ত বাংলাদেশ মুখরিত হতে থাকে। বিদ্রোহ দাবানলের
মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতা চরম ঘৃণা ও ক্ষোভে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে
ফেলে। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্র-সমাজের পক্ষ থেকে
বাংলাদেশের মানচিত্র-খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। এছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন ত্যাগ এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষিত হয়। ৩রা মার্চ
ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা পত্র প্রচার করা
হয়। উক্ত সভায় প্রচারিত স্বাধীনতার ইস্তেহারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি
তোমায় ভালবাসি’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক বলে ঘোষণা করা হয়। ঐ ঐতিহাসিক সভায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশে
বঙ্গবন্ধু অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-যুবক, শিক্ষক-কর্মচারী
সকলেই যোগ দিলেন অসহযোগ আন্দোলনে। অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মন্ত্রীসভা গঠন ও দেশ শাসনের দাবীদার। নির্বাচনের উলে খযোগ্য - দিক হল দু’টি দলই আঞ্চলিক আধিপত্য ও প্রাধান্য লাভ করে, কিন্তু অন্য অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
এক ইস্পাত কঠিন ঐক্যে উপনীত হয়। জনতার অমিত তেজ, আত্বপ্রত্যয় ও সংগ্রামী চেতনা ক্রমশ
স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে থাকে। জনগণ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে স্বাধীনতার দাবী তুলতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী
উদ্যান) লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে এক ভাষণ রাখেন। ইতিহাসে তা ৭ই মার্চের ভাষণ নামে খ্যাত।
বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ঐ দিকনির্দেশনামূলক ভাষণটি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে
একটি টার্নিং পয়েন্ট। বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐ ভাষণে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের
শাসন ও শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে বাঙালির জাতীয় মুক্তির প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন।
তিনি ঘোষণা করেন: ‘‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর
মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব,
ইনশাআল াহ। ... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। -
জয় বাংলা।’’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ছিল কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক
ভাষণের পর জনগণ আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুসারে পরিচালিত হতে থাকে। ৮ই মার্চ থেকে
বাংলাদেশের সর্বত্র আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। গণআন্দোলনের উত্তাল জোয়ারে পাকিস্তানী
শাসন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। সমস্ত স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে
যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রদেশের সমগ্র প্রশাসন কার্যত এক বিকল্প সরকারে পরিণত হয়।
ক্যান্টনমেন্টগুলো ছাড়া পূর্ব বাংলার সর্বত্র কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব প্রায় বিলীন হয়ে যায়। অভ‚তপূর্ব
গণঅভ্যুত্থানকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের
রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনরূপ আগ্রহ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া, ভ ট্টো বা কোন
জেনারেলদের ছিল না। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক
গণবিক্ষোভ এবং সাধারণ মানুষ ও সর্বদলীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ইয়াহিয়া ও তার সামরিক
বাহিনীর সম্মুখে সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো যে, বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগের পিছনে ঐক্যবদ্ধ। সামরিক
বাহিনী তখন এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয় যে, একমাত্র চ‚ড়ান্ত আঘাতের মাধ্যমেই বাঙালিদের সংগ্রামী
চেতনা প্রতিহত করা সম্ভব হতে পারে। সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন ও গণহত্যার পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করার
জন্যে প্রয়োজন ছিল কিছু সময়ের। তাই কৌশল হিসাবে ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের সঙ্গে
আলোচনার প্রহসন করেছিলেন। ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্র সমস্ত নিয়মতান্ত্রিকতার ও গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ
করে বাংলাদেশের মানুষকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে ঠেলে দেয়।
সারকথাঃ ১৯৭০-এর নির্বাচন এবং স্বাধীনতা আন্দোলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের মানুষ
এই নির্বাচনে একটি সত্তায় পরিণত হয়। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে
আওয়ামী লীগ ৬-দফার ভিত্তিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানী
শাসনের ভিত্তিমূলে আঘাত হানে। পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচনী রায়কে অস্বীকার করার ফলে
সংগ্রামী জনতা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে স্বাধীনতার দাবি তুলতে থাকে। বস্তুতঃপক্ষে দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল
১৯৭০ সালের নির্বাচনী গণরায়কে অস্বীকার করায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর
রহমানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অনিবার্য ধারায় অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থনে পতন হয়েছিল
ক. ইয়াহিয়া খানের;
খ. আইয়ুব খানের;
গ. ভ‚ট্টোর;
ঘ. টিক্কা খানের।
২. জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতটি আসন লাভ করেছিল?
ক. ১৬৭টি;
খ. ১৬৮টি;
গ. ১৬৯টি;
ঘ. ১৭০টি।
৩. জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা ছিল
ক. ৩১৩টি;
খ. ৩১০টি;
গ. ৩১২টি;
ঘ. ৩০৯টি।
৪. ৩রা মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করে
ক. আওয়ামী লীগ;
খ. যুবলীগ;
গ. ছাত্রলীগ;
ঘ. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
৪. কখন থেকে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয় ?
ক. ২ মার্চ;
খ. ৭ মার্চ;
গ. ৮ মার্চ;
ঘ. ২৫ মার্চ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তরমালাঃ ১. খ, ২. ক, ৩. ক, ৪. ঘ, ৫. গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]