বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহ

সংবিধান হ’ল কোন রাষ্ট্রের মৌলিক আইন। রাষ্ট্রের দর্শনস্বরূপ এই মূল আইনে নিহিত থাকে
নির্বাহীগণের অভিষেক প্রক্রিয়া, পরিচালক ও পরিচালিতের সম্পর্ক, রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামোসমূহের
পারষ্পরিক সম্পর্ক, নাগরিকগণের অধিকারের সীমারেখা, আইন প্রণয়ণের পদ্ধতি ইত্যাদি। মোট
কথা, কোন রাষ্ট্র নিজেকে পরিচালিত করার জন্য যে পথ বেছে নেয় তা-ই সংবিধান। এারিস্টেটলের
মতে রাষ্ট্র মনোনীত জীবন পদ্ধতিই হল সংবিধান। লিখিত আইন-কানুন ছাড়াও অনানুষ্ঠানিক ও
লোকায়ত আচার এতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সংবিধানের উদ্ভব ও প্রবর্তন
বিভিন্নভাবে হ’তে পারে। যথা ঃ ঐশী নির্দেশের অভিব্যক্তির দ্বারা, বিবর্তনের দ্বারা, সামরিক বিজয়ের
দ্বারা ও গণতান্ত্রিক কার্যব্যবস্থার দ্বারা ইত্যাদি।
একটি ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালের
২৩ মার্চ দেশে একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিগণকে নিয়ে গঠিত এই গণপরিষদ বিভিন্ন দেশের সংবিধান যাচাই করে অবশেষে ১৯৭২
সালের ৪ নভেম্বর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটি লিখিত সংবিধান গ্রহণ করে এবং তা
একই বছর ১৬ ডিসেম্বর তারিখে বলবৎ হয়। সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩টি
অনুচ্ছেদ ও ৪টি তফসিল সন্নিবেশিত ছিল। দুষ্পরিবর্তনীয় এই সংবিধান বাংলাদেশকে একটি
এককেন্দ্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ক’রে দেশে গণতান্ত্রিক ও মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা
প্রবর্তন করে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কয়েকটি মূলনীতি বিবৃত হয় এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা
ও নাগরিকগণের জন্য মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের
ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের ব্যক্ত ইচ্ছার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার বিধান রাখা হয় উৎকৃষ্ট এই
সংবিধানে।
কালের পরিসরে সংবিধানে নানাবিধ পরিবর্তন, পুনঃপরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
সংবিধানের অবয়বগত পরিবর্তন হ’য়েছে অনেক। ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রবর্তনের পর বর্তমানে
সংবিধানে ভাগ, অনুচ্ছেদ ও তফসিলের সংখ্যা যথাক্রমে ১২, ১৬৫ ও ৩।
এই ইউনিটে বাংলাদেশের সংবিধানের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সেই সাথে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার উপর আলোকপাত করা হবে। সংবিধানের সংশোধনীসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন।
রাষ্ট্র একটি মৌলিক প্রতিষ্ঠান। মানুষের প্রয়োজন ও আশা-আকঙ্খা বাস্তবায়নের জন্যই এই প্রতিষ্ঠানের
উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে। তাই একে পরিচালনা করার জন্যও বিশেষ বিশেষ মৌলিক নীতিমালা
অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানেও অনুরূপ নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই পাঠে সে সব
নীতিমালা সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে।
মানবীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সৃষ্ট ও বিকশিত হয়। এরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে
রাষ্ট্র হ’ল সবচেয়ে বেশী ব্যাপ্তিশীল ও শক্তিশালী। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত রাষ্ট্রও একটি নির্দিষ্ট
লক্ষ্যানুযায়ী কর্মকান্ড নির্বাহ করে। সাধারণভাবে রাষ্ট্রের লক্ষ্য হ’ল মানুষের কল্যাণ ও জীবনমানের
উন্নতি সাধন। এর দ্বারা যে কোন সমাজের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা
এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের অপ্রতিহত সুযোগ সৃষ্টিকে বোঝানো যায়। মূলনীতি বা নধংরপ ঢ়ৎরহপরঢ়ষব
বলতে কোন প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করার জন্য গৃহীত বা অনুসৃত দিকনির্দেশক অনুশাসনকে বোঝায়।
যে সব মৌলিক দর্শন রাষ্ট্রপরিচালনায় দিকদর্শন হিসেবে কাজ করে সেগুলিতে রাষ্ট্র পরিচালনার
মূলনীতি বলে। আধুনিক রাষ্ট্রে এরূপ মূলনীতিসমূহ সাধারণতঃ লিখিত অবস্থায় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত
থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধান উৎকৃষ্টরূপে লিখিত। এর “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি” শিরোনামযুক্ত দ্বিতীয়
ভাগে এসব মূলনীতি লিখিত হয়েছে। প্রস্তাবনায় বাংলাদেশের জনগণের অঙ্গীকার হিসেবে
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক
সুবিচারের অর্থে সমাজতন্ত্রকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অনুপ্রেরণা বলে গণ্য করা হয়েছে। তাই এ সব
আদর্শকে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে দীক্ষিত বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে
ঘোষণা করা হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনার “মূলনীতি” শিরোনামযুক্ত দ্বিতীয় ভাগের শুরুতেই বলা হয়েছে যে, সংবিধানের
মূলনীতি হিসেবে বর্ণিত নীতি এবং তার সাথে এই [দ্বিতীয়] ভাগে বর্ণিত অন্যান্য নীতিকে রাষ্ট্র
পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণ্য করা হবে। সর্বশক্তিমান আল াহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস -
রাষ্ট্রের কার্যাবলীর ভিত্তি হবে। বাংলাদেশ পরিচালনার এবং আইনের ব্যাখ্যাদানের মূলসূত্র হিসেবে এ
সব নীতিমালা নির্দেশক হলেও আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হবে না। এখন রাষ্ট্র পরিচালনার
মূলনীতির মধ্যে প্রধান প্রধান নীতিগুলিকে উলে খ করা হল। -
সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস
বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালকের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিমা ও কর্তৃত্বের উপর বিশ্বাস মানুষের জন্য আধ্যাত্বিক
চেতনার বিষয়। পঞ্চম সংশোধনীর পর সংবিধানে এই বিশ্বাসকে রাষ্ট্র পরিচালনার একটি অগ্রগণ্য
মূলনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের সব কার্যাবলী পরিচালনা
করা হবে বলে অঙ্গীকার ঘোষিত হয়েছে (অনুঃ ৮)।
জাতীয়তাবাদ : রাষ্ট্রের উন্নতির জন্যে প্রচেষ্টা ও দেশকে ভালোবাসার মূল সূত্র হ’ল জাতীয়তাবাদ।
১৯৭২ সালে প্রবর্তিত মূল সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে বিবৃত হয়েছিল যে, ভাষাগত ও কৃষ্টি একক
সত্তাবিশিষ্ট বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ১৯৭৯ সালে প্রবর্তিত
পঞ্চম সংশোধনী অনুসারে অনুচ্ছেদটি পরিপূর্ণভাবে বদলে গেছে। এই সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের
পরিবর্তে, দেশপ্রেম হ’ল জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যে সকল কর্মকান্ডের মূল অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ যুক্ত করা হয়।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য হ’ল মানুষের কল্যাণ ও জীবনমানের উন্নতি সাধন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাষ্ট্রের কার্যাবলীর ভিত্তি হবে।
গণতন্ত্র : গণতন্ত্র এমন একটি রাষ্ট্রদর্শন যেখানে মৌলিক মানবাধিকার, স্বাধীনতা, মানবসত্তার মর্যাদা
ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা নিশ্চিত হয়। ব্যক্তি মানুষের সর্বাধিক মর্যাদা দানকারী এই দর্শনের
আওতায় সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অভিব্যক্ত জনমত অনুসারে রাষ্ট্রের কাজকর্ম
নির্বাহ করার অঙ্গীকার ঘোষিত হয়েছে (অনু: ৮ ও ১১)। গণতন্ত্র ক্রটিহীন ব্যবস্থা না হলেও অন্যান্য
সকল ব্যবস্থার বিপরীতে এটিই হল সবচেয়ে কম ক্রটিপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এই কারণে
বাংলাদেশেও রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে গণতন্ত্র সমাদৃত।
সমাজতন্ত্র : অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের উপায়স্বরূপ ‘সমাজতন্ত্র’ নামক
আর্থসামাজিক ব্যবস্থা বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি (অনু: ৮)। সংবিধানের এ
সংক্রান্ত বর্তমান বিধান মূল সংবিধানের ১০ অনুচ্ছেদে বিধৃত ‘সমাজে উত্তরণের অঙ্গীকার হতে
গুণগতভাবে পৃথক। সংশোধন-পূর্ব মূল সংবিধানে তদানীন্তন বিশ্বব্যবস্থায় প্রবল আবেদন সৃষ্টিকারী
আদর্শ ‘সমাজতন্ত্র’কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচালনার অন্যতম দিকদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
সময়ের পরিক্রমায় ‘সমাজতন্ত্র’কে এখন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অঙ্গীকারের অর্থে
সংজ্ঞায়িত করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সীমিত করা হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে আত্বীকৃত সংবিধানের এই চারটি মূলনীতি ছাড়াও সংবিধানের
দ্বিতীয় ভাগে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য মূলনীতিগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। রাষ্ট্র জনগণের
প্রতিনিধিবৃন্দের পরিচালনায় গণতান্ত্রিকভাবে স্থানীয় শাসন প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্বাহ এবং জাতীয় জীবনের
সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। উৎপাদন ব্যবস্থার সবকিছুই জনগণের মালিকানাধীন
বলে গণ্য করে সংবিধান গুরুত্বের ক্রমানুযায়ী সম্পদের রাষ্ট্রীয়, সমবায়ী ও ব্যক্তিগত মালিকানা নির্দেশ
করেছে (অনুঃ ১৩)। কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তিকে রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে সংবিধান জনগণের
জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ, কর্মসংস্থান, বিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করার
অঙ্গীকার করেছে (অনুঃ ১৪-১৫)। কৃষি বিপ্লব সংঘটন, গ্রামোন্নয়ন শহরের সাথে গ্রামের জীবনযাত্রার
বৈষম্য দূরীকরণের কথাও ব্যক্ত হয়েছে (অনু ঃ ১৬) এ সংবিধানে।
রাষ্ট্র সম্ভাব্য ন্যনতম সময়ে নিরক্ষরতা দুরীকরণ, যুক্তিযুক্ত স্তর পর্যন্ত বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক
শিক্ষাদান এবং বাস্তবানুগ শিক্ষাব্যবস্থা ও উপযুক্ত নাগরিক সৃজনে যতœবান হবে (অনুঃ ১৭)। জনস্বাস্থ্য
ও নৈতিকতার প্রতি দৃষ্টি রেখে ক্ষতিকর উপকরণ, গণিকাবৃত্তি, জুয়া ইত্যাদি রোধকল্পে ব্যবস্থাগ্রহণ
(অনুঃ ১৮) এবং মানুষের সুযোগের সমতাবিধান ও অসাম্য বিলোপের চেষ্টা করা হবে (অনুঃ ১৯)।
নাগরিকের জন্য অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় হিসেবে কর্ম মহিমান্বিত হবে এবং অনুপার্জিত
সম্পদ ভোগের সুযোগ বিলোপ করা হবে (অনুঃ ২০)। নাগরিকগণ সভ্য জীবনের অনুসরণে সংবিধান
ও শৃংখলার অনুবর্তী হবেন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ জনগণের সেবায় সকল সময়ে সচেষ্ট থাকবেন
(অনুঃ ২১)। রাষ্ট্র বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ হ’তে পৃথক করবে (অনুঃ ২২)।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের চেষ্টা ছাড়াও জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে রাষ্ট্র জনগণের
অংশগ্রহণ এবং জাতীয় স্মৃতি নিদর্শনসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করবে (অনুঃ ২৩-৪)। এছাড়া,
জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, আর্ন্তজাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ইত্যাদির ভিত্তিতে রাষ্ট্র
শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও আত্ববিকাশের জন্য সব জাতির মহান অধিকারের সপক্ষে ও নিপীড়নের বিপক্ষে
ভ‚মিকা রাখবে। ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশ-সমূহের সাথে জোরদার ভাতৃত্ব গড়ার চেষ্টা
করা হবে বলেও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ব্যক্ত হয়েছে (অনুঃ ২৫)।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধানে বিঘোষিত মূলনীতিসমূহ আদালত কর্তৃক বলবৎ যোগ্য না হ’লেও
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জীবন নির্বাহ করা এবং আইন প্রণয়ন ও আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে এসব
মূলনীতি নির্দেশক সূত্র হিসেবে কাজ করে। জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও মনোভাবের বিমূর্ত অভিব্যক্তিস্বরূপ
এ সব মূলনীতি আমাদের সাধারণ অঙ্গীকার।
সংশোধনীসমূহ:
বাংলাদেশের সংবিধানের এখন পর্যন্ত ১৩টি সংশোধনী বলবৎ হয়েছে। এগুলোর কোন কোনটি
আকারে বিরাট ও চরিত্রে ভাবগম্ভীর। এগুলোর আলোচনা স্বল্পপরিসরে সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য। তাই জীবনের সকল সম্ভবনার স্ফুরণে রাষ্ট্র উলে খযোগ্য - ভ‚মিকা পালন করবে।
এখানে শুধু এ সব সংবিধান সংশোধন আইন প্রবর্তনের সময় ও এগুলোর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
দু‘একটি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।
প্রথম : ১৯৭৩ সাল। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণমূলক জঘন্য অপরাধের কঠিন শাস্তির প্রতিবিধান।
দ্বিতীয় : ১৯৭৩ সাল। কঠিনতর আইনের ও জরুরি ঘোষণা বলবৎ করার বিধান সম্বলিত এই
সংশোধনীর দ্বারা দেশে নাগরিক অধিকার কিছু মাত্রায় খর্ব করার সুযোগ সৃষ্ট হয়।
তৃতীয় : ১৯৭৪ সাল। রাষ্ট্রীয় সীমানা পুনর্বিন্যাসের স্বীকৃতিজ্ঞাপক এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ
ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন সীমান্তরেখা পুন:সংজ্ঞায়িত করার জন্যে প্রণীত চুক্তিকে
বৈধতাদান করা হয়।
চতুর্থ : ১৯৭৫ সাল। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও একদলীয় শাসন প্রবর্তন। দেশের শাসন পদ্ধতিতে
আকস্মিক ও ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করা হয় এর মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার
ব্যবস্থা ও একদলীয় শাসন প্রবর্তিত হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। এছাড়াও নাগরিক
অধিকারও সীমিত হয়ে পড়ে এর দ্বারা।
পঞ্চম : ১৯৭৯ সাল। সামরিক শাসন বৈধকরণ, মূলনীতি পরিবর্তন ও একদলীয়ব্যবস্থার অবসান।
সামরিক শাসনের মাধ্যমে ১৯৭৫-৭৯ সময়ে দেশ পরিচালনার জন্যে গৃহীত
ব্যবস্থাবলীকে অনুমোদন করা হয়।
ষষ্ঠ : ১৯৮১ সাল। উপ-রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনযোগ্য পদের যোগ্যতাদান। উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগযোগ্য
হলেও তাকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ব্যাক্তিরূপে নির্বাচনযোগ্য
পদের যোগ্যতা হারাতে হবে না বলে বিধান করা হয়।
সপ্তম : ১৯৮৬ সাল। সামরিক আইন বৈধকরণ। ১৯৮২-১৯৮৬ পর্যন্ত সময়ে সামরিক আইন বলবত
থাকাকালে গৃহীত সকল ব্যবস্থাকে এই সংশোধনী দ্বারা বৈধতা দেয়া হয়।
অষ্টম : ১৯৮৮ সাল। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয় এই সংশোধনীতে।
নবম : ১৯৮৯ সাল। উপ-রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রপতির রানিংমেট করার বিধান সম্বলিত এই সংশোধনীতে
রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি-উভয় পদকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনযোগ্য
বলে ঘোষণা করা হয়।
দশম : ১৯৯০ সাল। মহিলা সদস্যগণের আসন সংরক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধি। বিধান করা হয় যে
মোটামুটিভাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে জাতীয় সংসদে ৩০ জন মহিলা সদস্য পরোক্ষ
ভোটে নির্বাচিত হবেন।
একাদশ : ১৯৯১ সাল। প্রধান বিচারপতিকে উপ-রাষ্ট্রপতিরূপে কাজ করানোর বিধান সম্বলিত এই
সশোধনী মূল সংবিধানকে স্পর্শ করেনি। তবে ১৯৯০ সালের সফল গণঅভ‚্যত্থানের
মাধ্যমে সরকারের যে অসাংবিধানিক ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিলো তাকে সংবিধানের
সমর্থন দেয়া হয়।
দ্বাদশ : ১৯৯১ সাল। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তন সম্বলিত এই সংশোধনীর মাধ্যমে
১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনী কর্তৃক সাধিত রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা হতে
সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রবর্তন করা হয়।
ত্রয়োদশ : ১৯৯৬ সাল। সংসদ ভেঙে গেলে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিধান-সম্বলিত
এই সংশোধনীর মাধ্যমে স্থায়ী সাংবিধানিক ব্যবস্থা রাখা হয় যে, সংসদ ভেঙ্গে গেলে
সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সময় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে দেশে একটি নির্দলীয়
তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্রিয়াশীল থাকবে। এই তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনেই
সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চর্তুদশ: ২০০৪ সাল। চতুর্দশ সংবিধান সংশোধনীতে বলা হয়েছে স্পীকার অথবা ডেপুটি স্পীকার
সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করাতে অসমর্থ হলে প্রধান নির্বাচন কশিনার শপথ পাঠ
করানোর বিধান করা হয়। জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৪৫-এ বৃদ্ধি
করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টি আসন হবে সংরক্ষিত মহিলা আসন। এই ৪৫টি বর্ধিত
আসনে মনোনীত নারী প্রার্থীদের মধ্যে বন্টন করা হবে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী
রাজনৈতিক দলগুলোর আওতায় সাধারণ আসনের সংখ্যানুপাতে নারী আসনগুলো ভাগ
করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ বছর,
পিএসসির চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের বয়সসীমা ৬২ থেকে ৬৫ বছর এবং মহা-হিসাব
নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অবসর বয়সসীমা ৬০ থেকে ৬৫ বছরে উন্নীত করা হয়।
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রবর্তিত হয় ১৯৭২ সালের ...........
(ক) ২৬ মার্চ তারিখে;
(খ) ১৭ এপ্রিল তারিখে;
(গ) ৪ নভেম্বর তারিখে;
(ঘ) ১৬ ডিসেম্বর তারিখে।
২। বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ রযেছে ...........
(ক) ১৫২টি;
(খ) ১৫৩টি;
(গ) ১৬৪টি;
(ঘ) ১৬৫টি।
৩। “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি” শিরোনামযুক্ত অংশটি সংবিধানের ...........
(ক) প্রথম ভাগ;
(খ) দ্বিতীয় ভাগ;
(গ) তৃতীয় ভাগ;
(ঘ) চতুর্থ ভাগ।
৪। সংবিধানে গুরুত্বের ক্রমানুযায়ী সম্পদের মালিকানার ধরণ ..............
(ক) সমবায়ী, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত;
(খ) রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত ও সমবায়ী;
(গ) ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও সমবায়ী;
(ঘ) রাষ্ট্রীয়, সমবায়ী ও ব্যক্তিগত।
৫। সংবিধানে মুসলিম দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের ভাতৃত্ব জোরদার করার ভিত্তি হিসেবে বর্ণিত
হ’য়েছে ...
(ক) জাতিসংঘ সনদ;
(খ) জোটনিরপেক্ষ নীতিমালা;
(গ) ইসলামী সংহতি;
(ঘ) অনাক্রমণ।
৬। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ হ’তে পৃথক করার সাংবিধানিক অঙ্গীকার ব্যক্ত হ’য়েছে .........
(ক) ৮ অনুচ্ছেদে;
(খ) ১২ অনুচ্ছেদে;
(গ) ১২২ অনুচ্ছেদে;
(ঘ) ২২ অনুচ্ছেদে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলো ব্যাখ্যা করুন।
২. বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।
উত্তরমালাঃ
পাঠ-১ ১। ঘ ২। ঘ ৩। খ ৪। ঘ ৫। গ ৬। ঘ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]