বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত প্রধান প্রধান মৌলিক অধিকারসমূহ আলোচনা করুন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান যে সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তার মধ্যে মৌলিক অধিকার বিষয়ক
বিধানাবলী অগ্রগণ্য। বর্তমান পাঠে এ সব বিধান সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে। মানুষের
স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য কতিপয় অপরিহার্য সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন। সমাজে ব্যক্তির অস্তিত্ব
রক্ষা ও বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এ সব সুযোগ-সুবিধার অভাবে জীবনধারণ কষ্টকর ও
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। জীবনের উন্নতি হয়ে যায় রুদ্ধ। এ সব সুযোগ-সুবিধার সাধারণ নাম মৌলিক
অধিকার। আধুনিক বিশ্বে প্রায় সকল সভ্য সমাজে এসব অধিকারের মহিমা উচ্চকিত হয়েছে। মৌলিক
অধিকার হ’ল সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের নিশ্চয়তাসম্পন্ন সেইসকল অপরিহার্য সাধারণ সুযোগ-সুবিধা
যা সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগণ স্ব স্ব সত্তার বিকাশ সাধন ও মানবজীবনের পরিপূর্ণতা অর্জন করতে
পারে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ক পর্যন্ত ২৩ টি অনুচ্ছেদে ব্যাপ্ত তৃতীয় ভাগে
মৌলিক অধিকার বিষয়ক বিধানাবলী বিদ্যমান। এই ভাগের শুরুতেই বলা হয়েছে যে, সংবিধান
সংশোধনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক প্রণীত আইন ছাড়া অন্য কোন আইনে মৌলিক অধিকারের
ব্যত্যয় ঘটানো হ’লে সে সব আইন পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল হবে (অনুঃ ২৬)।
সকল নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং তাদের প্রত্যেককে আইনের সমান আশ্রয় লাভের
অধিকারী বলে ঘোষণাপূর্বক সংবিধান ব্যক্ত করেছে যে, নাগরিকদের মধ্যে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষ বা জম্মস্থানের কারণে রাষ্ট্রের পক্ষ হ’তে বৈষম্য করা হবে না। তবে নারী, শিশু ও সমাজের
অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির নিমিত্তে বা সরকারী কর্ম লাভে তাদেরকে সহায়তাদানের নিমিত্তে বা ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠানে ও বিশেষ প্রকৃতির অন্যান্য কাজে নিয়োগ-সংরক্ষণের নিমিত্তে ব্যতিক্রমী বিধান প্রবর্তনের
সুযোগ থাকবে (অনু-ঃ ২৭-২৯)। আরো বিধৃত হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যাতিরেকে কোন
নাগরিক বিদেশী রাষ্ট্রের নিকট থেকে উপাধি, পুরষ্কার ইত্যাদি গ্রহণ করবেন না (অনুঃ ৩০)।
সংবিধানের এই ভাগের বিধান অনুযায়ী প্রজাতন্তের অধিবাসীদের জন্য আইনের আশ্রয় গ্রহণ বা
আইনানুগ ব্যবহার লাভের অবিচ্ছেদ্য অধিকার থাকবে এবং আইনের অধীনে ছাড়া কোন ব্যক্তির
সুযোগ বা সম্পত্তির হানি ঘটানো যাবে না। আইনের অধীনে ছাড়া কোন ব্যক্তির জীবন বা ব্যক্তি
স্বাধীনতার খর্ব করা যাবে না। কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নিকটতম
ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট উপস্থিত করা হবে এবং তাঁর নির্দেশ ছাড়া উক্ত ব্যক্তিকে ততোধিক কাল আটক
রাখা যাবে না। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে তার গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে এবং তাকে তার মনোনীত
আইনজীবির পরামর্শ ও সাহায্য গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। শুধু নিবর্তনমূলক আটকের অধীন ব্যক্তির
জন্য এরূপ অধিকার কিছু মাত্রায় খর্ব হতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রেও একটি উপযুক্তরূপে গঠিত উচ্চ
ক্ষমতাসম্পন্ন পর্ষদের সুপারিশ ব্যতীত কাউকে ছয়মাসের বেশী কাল আটক রাখা যাবে না (অনুঃ ৩১-
৩৩)।
ফৌজদারী অপরাধের দন্ড ও বিশেষ প্রয়োজনে আইনানুযায়ী আহুত কর্ম ব্যতীত যে কোন বাধ্যতামূলক
শ্রম নিষিদ্ধ থাকবে। অপরাধ সংঘটনকালে বিদ্যমান আইনে নির্ধারিত দন্ডের অতিরিক্ত দন্ড দেয়া যাবে
না বা এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার বিচার করা যাবে না। কাউকে নিজের বিরুদ্ধে
সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। সাধারণতঃ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে দ্রæত ও প্রকাশ্য বিচারের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী।
ব্যবস্থা থাকবে এবং নিষ্ঠুর, লাঞ্ছনাদায়ক ও অমানবিক দন্ড বা আচরণ পরিহার করা হবে (অনুঃ ৩৪-
৩৫)।
জনস্বার্থে আইনানুগভাবে আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য
বাংলাদেশে বসবাস, চলাফেরা, বহির্গমন ও প্রত্যাবর্তন এবং সমাবেশ ও শোভাযাত্রা বা সংগঠনে
যোগদানের অধিকার থাকবে। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। অনুরূপভাবে বৈধ পেশা বা বৃত্তিতে লিপ্ত হবার অধিকার ও
পছন্দমত ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার নিশ্চিত থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের
জন্য অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না (অনুঃ ৩৬-৪১)।
আরো বলা হয়েছে যে, আইনানুগ বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে নাগরিকগণ সম্পত্তি অর্জন, ভোগ ও বিলিব্যবস্থা করতে পারবেন এবং সম্পত্তি দখল করতে হ’লে আইনানুযায়ী ক্ষতিপূরণসহ তা করা যাবে।
আইনানুযায়ী প্রদত্ত নির্দেশ ছাড়া কারো গৃহে প্রবেশ বা তল্লাশী করা বা তাকে আটকানো যাবে না।
চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তার অধিকার হ’তে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না
(অনুঃ ৪২-৪৩)।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎ করার জন্য নাগরিকগণ হাইকোর্ট
বিভাগের নিকট বা সংসদ কর্তৃক নির্ধারিত অন্য আদালতের নিকট মামলা করতে পারবেন। শৃংখলা
বাহিনীর সদস্য-সম্পর্কিত শৃংখলামূললক আইন বা বিধানের ক্ষেত্রে এই ভাগের বিধান কোনরূপ বাধার
সৃষ্টি করবে না। আবার, মুক্তি সংগ্রামের প্রয়োজনে অথবা দেশাভ্যন্তরে শৃংখলা রক্ষার প্রয়োজনে কোন
ব্যক্তি কর্তৃক কৃত কাজ বা গৃহীত ব্যবস্থাকে সংসদের আইন অনুযায়ী বৈধ হিসেবে গণ্য করে নেয়া যাবে (অনুঃ ৪৪-৪৬)।
মৌলিক অধিকার বিষয়ক ভাগের শেষ প্রান্তে দু’টি (৪৭ ও ৪৭ক) হেফাজতকরণমূলক অনুচ্ছেদ
সন্নিবেশকরতঃ বিধান করা হয়েছে যে, সংবিধানের মূল নীতি ও মৌলিক অধিকার বিষয়ক বিধান সত্তে¡ও সম্পত্তি, কারবার, ব্যবসায়, পেশা ইত্যাদির উপর রাষ্ট্রের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অধিকার
থাকবে। এই অধিকার সংসদের আইন দ্বারা প্রযুক্ত হবে এবং এরূপ আইন প্রয়োজনমত সংশোধনের
সুযোগ থাকবে। আবার গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদির কারণে কোন বাহিনীর সদস্য বা যুদ্ধবন্দীকে
আটক, দন্ডদান ইত্যাদির জন্য প্রণীত কোন আইনের বিধান সংবিধানের অনুশাসনের নিরীখে বাতিল
বা বেআইনী বলে গণ্য হবে না। সবশেষে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এরূপ আইন যার প্রতি
প্রযোজ্য তিনি সাংবিধানিক প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন না। এ ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী ব্যক্তিবর্গকে দমনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার বিষয়ক অংশ হ’ল .......
(ক) দ্বিতীয় ভাগ;
(খ) প্রস্তাবনা;
(গ) তৃতীয় ভাগ;
(ঘ) তৃতীয় তফসিল।
২। সংবিধান যাদের অগ্রগতির নিমিত্তে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখেনি তারা হ’লেন .......
(ক) নারী;
(খ) শিশু;
(গ) সমাজের অনগ্রসর অংশ;
(ঘ) বৃদ্ধ।
৩। কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হ’লে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হাজির করতে হয় ........
(ক) নিকটবর্তী থানায়;
(খ) নিকটতম কারাগারে;
(গ) নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট;
(ঘ) জেলা জজের আদালতে।
৪। নিবর্তনমূলক আটকের বিধানযুক্ত আইনের অধীনে কাউকে উপযুক্তরূপে গঠিত পর্ষদের সুপারিশ
ব্যতীত আটক রাখা যায় সর্বোচ্চ ..........
(ক) ত্রিশ দিন;
(খ) চার মাস;
(গ) ছয় মাস;
(ঘ) ৩১০ দিন।
৫। অপরাধের কারণে শাস্তিদানের সময় কোন কোন অবস্থায় আরোপ করা সম্ভব ...............
(ক) নিষ্ঠুর দন্ড;
(খ) বাধ্যতামূলক শ্রমদন্ড;
(গ) লাঞ্ছনাদায়ক সাজা;
(ঘ) অমানবিক দন্ড।
৬। মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য নাগরিকগণ মামলা দায়ের করতে পারেন ..........
(ক) মানবাধিকার আদালতে;
(খ) বিশেষ আদালতে;
(গ) সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে;
(ঘ) নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আদালতে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. মৌলিক অধিকার কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত প্রধান প্রধান মৌলিক অধিকারসমূহ আলোচনা করুন।
উত্তরমালা
১। গ ২। ঘ ৩। গ ৪। গ ৫। খ ৬। গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]