বাংলাদেশের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের রূপরেখা বর্ণনা করুন।এর পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলো কি?

তত্ত¡াবধায়ক বা বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি একটি সংক্ষিপ্ত মেয়াদে কোন
গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। দৈনন্দিন জীবনে তত্ত¡াবধায়ক কথাটির এরূপ অর্থসম্পন্ন অসংখ্য উদাহরণ
চোখে পড়ে। এই অর্থে তত্ত¡াবধায়ক সরকার হল একটি বিশেষ ধরণের অস্থায়ী সরকার। ব্যবহারিক
রাজনীতির আধুনিক পরিভাষায় ‘তত্ত¡াবধায়ক সরকার’ পদটি ক্রমেই একটি শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ
করে চলেছে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকার হ’ল একটি সংক্ষিপ্ত মেয়াদে গঠিত ও কার্যকর অস্থায়ী সরকার যা নিয়মিত
সরকারের পরিবর্তে বিশেষ কোন দায়িত্বপালন শেষে নতুন সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর পূর্বক
দৃশ্যপট হতে অপসৃত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে এ ধরণের সরকার প্রতিষ্ঠার
বিস্তারিত বিধান লিপিবদ্ধ আছে। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী সন্নিবেশিত নতুন ৫৮ক,
৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ ও ৫৮ঙ অনুচ্ছেদসমূহ এবং ইষৎ সংশোধিত ৬১ অনুচ্ছেদের বিধানের মধ্যে
তত্ত¡াবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিষয়াবলীর মূলকথা নিহিত।
সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর বা মেয়াদ শেষে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক
কার্যভার গ্রহণের পর হতে সংসদ গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যভার গ্রহণ পর্যন্ত সময়ে
রাষ্ট্রপতির নিকট যৌথভাবে দায়ী একটি নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার থাকবে। নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক
সরকারে একজন প্রধান উপদেষ্টা ও অনধিক দশ জন উপদেষ্টা থাকেন। সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পনেরো
দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাগণের
সাধারণ যোগ্যতা নি¤œরূপ ঃ
সংসদ-সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবার যোগ্যতা;
অনধিক বাহাত্তর বছর বয়স;
কোন রাজনৈতিক দলের বা দলীয় অংগসংগঠনের সদস্য না হওয়া;
সংসদ-সদস্যগণের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে লিখিত সম্মতি প্রদান।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য অধিকতর শর্ত হ’ল এই যে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি
হিসেবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অথবা অনুরূপ ব্যক্তির অসামর্থ্যরে বা অসম্মতির ক্ষেত্রে তাঁর
পূর্বে যিনি উক্ত পদ হতে অবসর নিয়েছেন তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। এদু’জনের
অসামর্থ্য বা অসম্মতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক হিসেবে সর্বশেষ
অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অথবা তাঁর অসামর্থ্য বা অসম্মতির ক্ষেত্রে একই পদে তাঁর অব্যবহিত পূর্বে
অবসরগ্রহণকারী ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। সম্ভাব্য এই ব্যক্তিগণের সকলের
অসামর্থ্য বা অসম্মতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যথাসম্ভব প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাক্রমে
উপদেষ্টা হবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হতে কাউকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তাতেও সফল
না হলে রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। উপদেষ্টাগণের নিয়োগের ক্ষেত্রে
অতিরিক্ত শর্ত হ’ল, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী নিযুক্ত হবেন। প্রধান উপদেষ্টা ও
উপদেষ্টাগণ যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীগণের মর্যাদার অধিকারী হবেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে
লিখিত ও স্বাক্ষরিত পত্রযোগে পদত্যাগ করতে পারবেন। তাছাড়া, উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্তির জন্য
নির্ধারিত যোগ্যতা হারালেও উপদেষ্টার পদ শূন্য হবে।
নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার হিসাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত
ব্যক্তিবর্গের সাহায্য ও সহায়তায় সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করবে। দৈনন্দিন কাজকর্মের
প্রয়োজন ছাড়া এই সরকারের দ্বারা কোন নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে না। শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও
নিরপেক্ষভাবে সংসদ-সদস্যগণের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেমনটা প্রয়োজন, নির্দলীয়
তত্ত¡াবধায়ক সরকার হল সংক্ষিপ্ত মেয়াদে গঠিত ও কার্যকর অস্থায়ী সরকার যা বিশেষ কোন দায়িত্ব পালন করে থাকে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকে তেমন সকল সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করবে। প্রধানমন্ত্রীর
পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের যে সব সাংবিধানিক বিধান আছে, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের
মেয়াদকালে সে সব বিধান কার্যকর থাকবে না। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মেয়াদকালে দেশের প্রতিরক্ষা
কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা সম্পর্কিত আইন-কানুন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরিচালিত হবে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংবিধানে বিস্তাারিত বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে ১৯৯৬ সালে
প্রবর্তিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। আরো অনেক উন্নয়নশীল দেশের মত বাংলাদেশেও সাধারণ
নির্বাচনসমূহ নিয়মিত সরকারের অধীনে সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় কিনা সে বিষয়ে গুরুতর
সংশয় প্রকাশ করা হয়। অনুমিত হয় যে, দলীয় সরকারের পক্ষে নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে
প্রভাবিত করার জন্য সরকারী অবস্থান ও সম্পদের অপব্যবহার এবং বলপ্রয়োগের মত অনিয়ম
সংঘটিত হয়ে থাকে। বিরোধী পক্ষও বলপ্রয়োগের আশ্রয় নেয়। ফলে নির্বাচন হয়ে ওঠে শক্তিপ্রয়োগ,
চাতুরী ও বিশৃংখলার অনাকাংখিত এক উৎসবের মত। সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতির
পাশাপাশি প্রকৃত জন-ইচ্ছার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ নির্বাচনী ফলাফলও পরিলক্ষিত হয়। এতে নির্বাচন
ব্যবস্থা ও সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের বিশ্বাসযোগ্যতার হানি ঘটে। এরূপ অনভিপ্রেত অবস্থা
পরিহারের লক্ষ্যে জনগণের প্রবল দাবী ও উত্তাল গণআন্দোলনের ফলে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে
তদানীন্তন সরকার জাতীয় সংসদে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন, ১৯৯৬ পাশ করে নির্দলীয়
তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। আশা করা যায়, সংসদ-সদস্যগণের
সাধারণ নির্বাচনে সব ধরনের অপপ্রভাব দূরীকরণের পথে এটি একটি সফল পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য
হবে।
গণতন্ত্র একটি সামাজিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় জনগণের সম্মতি ও ইচ্ছার আলোকে
শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। জনগণের অভিপ্রায় নির্ণয়ের জন্য বিশদ বিধি-বিধানের মধ্যে
সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার অন্যতম। কোন বিষয় বা ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে জনগণের
মতামত এরূপ ভোটাধিকারের অনুশীলনের মাধ্যমে নির্ণীত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রদত্ত মতই সঠিক মত
বলে পরিগণিত হয়। তবে সংখ্যালঘুর প্রদত্ত মতামতকে নির্বিকার উপেক্ষা করার পরিবর্তে
যুক্তিযুক্তভাবে সম্মান করার তাগিদ থাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। এ জন্য বলা হয় যে, গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের একাধিপত্য বা সৈ¦রাচার প্রতিষ্ঠিত হবার আশংকা থাকলেও জনমত-অনুসারী
শ্রেয়তর কোন শাসনপদ্ধতির কথা জানা নেই।
গণতন্ত্রে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও মানবসত্তা প্রকৃষ্টভাবে মহিমান্বিত হয়। মানুষের প্রতি আবশ্যিক ভালোবাসা ও
মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা হ’ল গণতন্ত্রের নির্দেশক নীতি। ফরাসী বিপ বের -
দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান প্রত্যয়ের প্রত্যেকটিই গণতন্ত্রের
কেন্দ্রীয় দর্শন। প্রত্যেক মানুষ কিছু মৌলিক বিবেচনায় একে অপরের সমান - এই বিশ্বাসে গণতন্ত্র
সমষ্টির মত নিরূপণের জন্য সকল মানুষের স্বতন্ত্রভাবে ব্যক্ত মতামতকে বিবেচনায় আনে। সম্পদগত
ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্তর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্ত্রী-পুরুষভেদ ইত্যাদি দিকগুলো এ ক্ষেত্রে আমলে নেয়া হয়
না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে জনহিতকর কাজকর্মের প্রয়োজনে ও মানুষের বাধাহীন ইচ্ছার প্রতিভ‚
হিসেবে বেছে নেয়া প্রতিষ্ঠান বলে গণ্য করা হয়।
কোন রাষ্ট্রের জনসাধারণের অভিব্যক্ত ইচ্ছার অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা হওয়ায় গণতন্ত্র
জনমতের প্রতি সর্বদাই সংবেদনশীল। কিন্তু জনমত অতি দ্রুত বদলাতে পারে। তাই নিত্যনৈমিত্তিক
এই পরিবর্তনধারা মনে রেখে আধুনিক সভ্যতার ধারকগণ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর পর জনমত যাচাই
এবং তদনুযায়ী জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ব্যবস্থা করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে চার বছরের জন্য, কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ বা
প্রতিনিধি সভার সদস্য পদে দুই বছরের জন্য এবং কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেটের সদস্য পদে ছয়
বছরের জন্য কাউকে নির্বাচিত করা হয়। ভারত, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি রাষ্ট্রে পার্লামেন্টের সদস্যগণ পাঁচ
বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন। তেমনিভাবে বাংলাদেশের আইনসভা বা জাতীয় সংসদের সদস্য পদে
সংশি ষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়। -
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদ-সদস্যগণই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকেন। তাঁরা
রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করেন, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থিত সদস্য প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। প্রায় সকল
মন্ত্রী তাঁদের মধ্য হতে নিযুক্ত হন, স্থানীয় উন্নয়নের উদ্যোগ কার্যকর করতেও তাঁরা নির্দেশনা দান
করেন। এসব বিবেচনায় সংসদ-সদস্যগণের সাধারণ নির্বাচন যাতে ক্রটিমুক্ত ও জনমতের সত্যিকার জনসাধারণের অভিব্যক্ত ইচ্ছার অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা হওয়ার গণতন্ত্র জনমতের প্রতি সর্বদাই সংবেদনশীল।
প্রতিফলনকারী হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আধুনিক
সরকার ব্যবস্থা মূলতঃ রাজনৈতিক দলীয় সরকার ব্যবস্থা। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে সরকার
গঠনকারী ও সরকারের বিরুদ্ধাচারী রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতভেদ বা সংঘাতের পরিবেশ
বিদ্যমান। ফলে নির্বাচন ব্যবস্থায় অনভিপ্রেত চাপ সৃষ্টি করে ইচ্ছামত নির্বাচনী ফলাফল আদায় করার
একটি প্রবণতা বিশেষতঃ ক্ষমতাসীন মহলের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। এতে জনগণের মতামত ও
মর্যাদা যেমন উপেক্ষিত হয়, তেমনি তিক্ত বিতর্কের পটভ‚মিতে অবিশ্বাস ও সংঘর্ষের মত ঘটনাও
ঘটতে পারে। এরূপ অবস্থা হতে পরিত্রাণ লাভের উপায় হিসেবে একটি অর্ন্তবর্তীকালীন নির্দলীয়
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের ধারণা ক্রমশঃ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে এরূপ একটি তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠিত হয় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে। বিভিন্ন
রাজনৈতিক দল সমন্বয়ে গঠিত তিনটি রাজনৈতিক জোটের নেতৃত্বে পরিচালিত প্রবল গণআন্দোলনের
ফলে জেনারেল এরশাদের জনসমর্থনহীন স্বৈর সরকারের পতনের পর প্রধানতঃ সংসদের পরবর্তী
সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় এই সরকার।
সফলভাবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নিয়মিত সংসদীয় সরকার গঠিত হবার
সাথে সাথেই এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অবসান ঘটে। পরবর্তীকালে কিন্তু নির্বাচন সংক্রান্ত দুর্নীতি
ও অনিয়ম সংঘটনের সুযোগ ও আশংকা সমাজে বিরাজ করতে থাকে। ফলে, সংসদ-সদস্যগণের
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে তা সম্পন্ন করার দাবী
জোরালো হতে থাকে। একটি ঘটনাবহুল আন্দোলনের মাধ্যমে দাবীটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তদানীন্তন সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রর্বতন করে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের
সাংবিধানিক ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন। নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থাধীনে গঠিত নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক
সরকারের ব্যবস্থাপনায় ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক
সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিকভাবে এখন সংসদ-সদস্যগণের সাধারণ নির্বাচনসমূহ নির্দলীয়
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে ও ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত করার স্থায়ী ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। এটি রাষ্ট্র
পরিচালনার আধুনিক ব্যবস্থাপনায় একটি মাইলফলক স্বরূপ।
গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য বাংলাদেশে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার বিশেষ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে
আসছে। রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ এই সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে অধিষ্ঠিত
থাকেন না বলে দলীয় স্বার্থে নির্বাচন পরিচালনার সুযোগ থাকে না। প্রতিদ্ব›দ্বী সব রাজনৈতিক দল
মোটামুটি সমান সুবিধা পায় বলে জনমতকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার সম্ভাবনাও কমে এসেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতার কারণে সমগ্র পদ্ধতির উপর নির্বাচকমন্ডলীর আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করলে রাষ্ট্রীয় ও অন্যবিধ সম্পদের অপচয়
কমে আসে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর চাপ হ্রাস পায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হ’ল এই যে,
এরূপ সরকারের দ্বারা পরিচালিত সাধারণ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনমতের প্রকৃত
প্রতিফলনকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকার গঠন করে জনসেবা ও দেশগঠনের সুযোগ লাভ করছে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের বিপক্ষেও কতিপয় যুক্তি আছে। বলা হয় যে, গণতন্ত্রের অর্থ নিছক নির্দিষ্ট সময়
পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নয়। কিন্তু তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শুধু নির্দিষ্ট
সময় অন্তর নির্বাচনের সমার্থক প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়। দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত নিয়মিত সরকারও যে নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে
সক্ষম- তা উপেক্ষা করা হয়। তৃতীয়ত, সাধারণ নির্বাচনের কাজে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অপরিহার্যতা
প্রতিষ্ঠিত হবার পর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্মের প্রয়োজনেও সমত‚ল্য সরকার প্রতিষ্ঠার দাবী ওঠা
অস্বাভাবিক হবে না। চতুর্থত, গণতন্ত্র কোন জনগোষ্ঠীর সমষ্টি ও ব্যক্তির সামাজিক ও মননগত একটি
অবস্থা বিশেষ। মানুষের চেতনায় গণতন্ত্র থাকলেই প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র আসে, রাষ্ট্রে গণতন্ত্র আসে।
কিন্তু নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতির ফলে জননেতাদের
নিয়মনিষ্ঠতা ও দক্ষতার সাথে গণতন্ত্র শিক্ষা ও অনুশীলনের সুযোগ কমে যায়।
এতসব সমালোচনা সত্তে¡ও বলা যায় যে, পাশ্চাত্যের অগ্রসর গণতন্ত্রের জন্য বাস্তব পূর্বশর্তগুলো
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে প্রধানতঃ অনুপস্থিত। ফলে এদেশে নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক
সরকারের মত অর্ন্তবর্তীকালীন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অশেষ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে। প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতার কারণে সমগ্র পদ্ধতির উপর নির্বাচকমন্ডলীর আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুন্ন থাকে।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারে থাকতে পারেন .......
(ক) একজন প্রধান উপদেষ্টা ও তিনি যেরূপ সংখ্যক পছন্দ করেন সেরূপ সংখ্যক উপদেষ্টা;
(খ) এক বা একাধিক প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা;
(গ) একজন প্রধান উপদেষ্টা ও অনধিক দশজন উপদেষ্টা;
(ঘ) একজন প্রধান উপদেষ্টা ও পনেরো জন উপদেষ্টা।
২। নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার সংসদ-সদস্যগণের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সাহায্য
করেন........
(ক) বেসামরিক প্রশাসনকে;
(খ) নির্বাচন কমিশনকে;
(গ) সশস্ত্র বাহিনীকে;
(ঘ) রাষ্ট্রপতিকে।
৩। সর্বোচ্চ ৭২ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন ........
(ক) রাষ্ট্রপতি;
(খ) শুধু প্রধান উপদেষ্টা;
(গ) শুধু উপদেষ্টাগণ;
(ঘ) প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাগণ।
৪। ফরাসী বিপ বের দ্বারা মহিমান্বিত হয় নি ................ -
(ক) সাম্য;
(খ) মৈত্রী;
(গ) স্বাধীনতা;
(ঘ) সার্বভৌমত্ব।
৫। আধুনিক সরকার ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মূলতঃ ..................
(ক) স্বৈরতন্ত্র;
(খ) রাজনৈতিক দল ভিত্তিক;
(গ) কতিপয়তান্ত্রিক;
(ঘ) গণতান্ত্রিক।
৬। নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার কার্যকর থাকবে ..........
(ক) সর্বক্ষণের জন্য;
(খ) আগামী চারটি নির্বাচনের মেয়াদে;
(গ) সংসদ ভংগ অবস্থায় সংসদ-সদস্যগণের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনের সময়;
(ঘ) রাষ্ট্রপতি যখন চাইবেন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমুলক প্রশ্ন
১. তত্ত¡াবধায়ক সরকার কি?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশে তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন।
২. বাংলাদেশের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের রূপরেখা বর্ণনা করুন।এর পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলো কি?
উত্তরমালা
পাঠ-৪ ১। গ ২। খ ৩। ঘ ৪। ঘ ৫। খ ৬। গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]