গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক প্রজাতন্ত্র।

প্রশাসনিক কাঠামো
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক প্রজাতন্ত্র। এর প্রশাসনিক
কাঠামো সেই আলোকেই বিন্যন্ত। গণতান্ত্রিক ও এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে সংগতি রেখে এ
দেশের প্রশাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের শান্তি-শৃংখলা রক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মকান্ড ইপ্সিতভাবে
পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হ’ল প্রশাসন ব্যবস্থা। এর কার্যকারিতার উপর
রাষ্ট্রের কল্যাণ ও অকল্যাণ বহুলাংশে নির্ভরশীল। বর্তমান শতাব্দীর প্রারম্ভ হ’তে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের
দর্শন সুদৃঢ়ভাবে অনুসৃত হবার ফলে এবং কতিপয় রাষ্ট্রে সমাজতান্ত্রিক প্রকৃতির সরকার ব্যবস্থা
প্রবর্তনের ফলে প্রশাসনের পরিধি ও গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে গেছে।
এখন দেখা যাক, প্রশাসনিক কাঠামো বলতে কি বুঝানো হয়। রাষ্ট্র ও সরকার কম-বেশী বিমূর্ত প্রত্যয়
বিশেষ। তবে, প্রজাতন্ত্রের অজস্র কর্মচারীকে সহজে দেখা ও চেনা যায়। জনসাধারণ তাদের কাছে
যাওয়া-আসা করেন, যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং তাদের গৃহীত বা অগৃহীত ব্যবস্থাদির দ্বারা লাভবান
বা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ সব কারণে প্রজাতন্ত্রের এ সব কর্মচারী দেশের সমষ্টিক জীবনের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সার্বিক কর্মকাঠামোকে সাধারণতঃ তিনটি বিভাগে বিভক্ত করে দেখা হয় ঃ
আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। এই নির্বাহী বিভাগের দ্বারাই সরকারের দৈনন্দিন
শৃংখলামূলক, সেবামূলক ও উন্নয়নমূলক কাজকর্মের সিংহভাগ সম্পাদিত হয়। এ সব কাজে অন্য দু’টি
বিভাগের কিছু পরিমাণ নিয়ন্ত্রণমূলক বা নির্দেশনামূলক ভ‚মিকা থাকলেও নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন পদে
নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গই সরকারের এ সব কাজ সম্পাদনে মূল ভূমিকা পালন করেন। নির্বাহী বিভাগের
গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানসমূহের বিন্যাসকে সাধারণভাবে কোন দেশের প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়।
বাংলাদেশকে সাংবিধানিকভাবে একটি একক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র
হিসেবেই এদেশের প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কাঠামোটি ব্রিটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত
ব্যবস্থার ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। আমরা জানি, ব্রিটিশ ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার দু’টি
প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজস্ব আহরণ ও র্শংখলা রক্ষা। প্রায় দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্তর্ভূক্ত বাংলাদেশেও প্রধানতঃ ব্রিটিশ শাসকদের প্রয়োজনে এক ধরনের ইস্তাত কাঠামো
(ঝঃববষ ঋৎধসব) প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশদের প্রস্থানের পর পাকিস্তান আমলে এই
ব্যবস্থায় সামান্যই পরিবর্তন হয়েছিল। আড়াই দশকের পাকিস্তানী শাসনের অবসান হয় একটি
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ‚্যদয়ের পর বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে কিছু কিছু পরিবর্তন
আনার চেষ্টা করা হলেও কাঠামোর মৌলিক কোন হেরফের হয় নি। বিদ্যমান কাঠামোকে বিশ্লেষণ
করলে এর বিন্যাস দেখতে পাওয়া যাবে। কাজের ধরন অনুসারে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে।
প্রথমত, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ দেশের আইনসভা। সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী সংসদ প্রজাতন্ত্রের
প্রধান নীতি-নির্ধারক প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় বিভাগটি হ’ল সরকারের নির্বাহী অঙ্গ। নির্বাহী বিভাগ বহু
সংখ্যক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কার্যসূচক (ভঁহপঃরড়হধষ) এজেন্সী সমন্বয়ে গঠিত হয়। তৃতীয়ত, এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই এদেশের প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলাহয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও অধস্তন আদালতসমূহ নিয়ে গঠিত হয় বিচার বিভাগ। এ সব বিভাগের শীর্ষে
অধিষ্ঠিত আছেন প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও প্রধান ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতি।
নির্বাহী বিভাগের অভ্যন্তরে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কতিপয় দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা ইত্যাদি
থাকতে পারে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সার্বিক তত্ত¡াবধানে এ সব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নির্বাহী
ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন কোনটির আবার মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরে শাখা বা
স্থাপনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ের কর্মীগণই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত সরকারী কার্যাবলী
সম্পাদন করে থাকেন। তাদের কর্মকৌশলের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে সরকারের পারদর্শিতা
বিষয়ক ভাবমূর্ত্তি।
নির্বাহী বিভাগকে আবার আঞ্চলিক কর্মপরিধি (লঁৎরংফরপঃরড়হ) অনুসারে ভাগ ভাগ করে এক একটি
ইউনিটের সাথে মিলিয়ে বিন্যাস করা হয়েছে। কোন বিষয়ে নীতি নির্ধারণ ও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের
কাজটি সম্পন্ন হয় কেন্দ্রীয় বা জাতীয় পর্যায়ে - মন্ত্রণালয়সমূহে এই কাজ হয়। এর ঠিক নীচে আছে
প্রশাসনিক বিভাগ। সারা দেশকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট - এই ছয়টি
বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরূপ বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের
অধস্তন অফিস বা শাখাসমূহ আছে। এ সব দপ্তর হ’তে আরো নি¤œস্তরে অবস্থিত অন্যান্য অফিসের
কাজকর্ম তদারক বা তত্ত¡াবধান করা হয় এবং কিছু কিছু প্রশাসনিক সমস্যার নিরসন করা হয়।
প্রশাসনিক ইউনিট বা স্থানীয় সরকারের পরবর্তী স্তর হ’ল জেলা। সারা দেশে মোট ৬৪টি জেলা
রয়েছে, যার প্রত্যেকটিতে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের অফিস বা শাখা অবস্থিত। মাঠ
পর্যায়ের মূল কাজকর্ম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ, পরিদর্শন ও ব্যবহারিক সমস্যাবলীর তাৎক্ষণিক সমাধানে
লিপ্ত থাকে জেলা স্তরের দপ্তরগুলো। কোন কোন মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের মূল কাজ নির্বাহ করা হয়
জেলা স্তরেই। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জেলা
প্রশাসক জেলা স্তরের সরকারী কাজকর্মের সার্বিক সমন্বয় সাধন করেন। অতঃপর, মাঠপর্যায়ের অধস্তন
স্তরটি হ’ল থানা। এই স্তরটি ঐতিহাসিকভাবে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। প্রধানতঃ আইন-শৃংখলা রক্ষা,
রাজস্ব আহরণ এবং কিছু কিছু উন্নয়নমূলক কাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থানা ব্রিটিশ রাজত্বকাল হ’তেই
অনন্য ভ‚মিকা পালন করে। পাকিস্তান আমলে এই স্তরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামাঞ্চলে তার
ক্ষমতাভিত্তি ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়। সরকারী সম্পদের বিতরণ ও ব্যবহারের জন্য
এই স্তরের প্রশাসনিক কাঠামোকে যথেষ্ট দক্ষ হিসেবে আবিষ্কার করা হয়। স্বাধীনতার পর কিছুদিন এই
স্তরের প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়ে। তবে, কিছুকাল পুর্বে ‘উপজেলা’ হিসেবে চিহ্নিত এই থানা স্তরে
সরকারের মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। এখানে ক্রিয়াশীল দপ্তরগুলো প্রায় সব
দেশগঠনমূলক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। মাঠ প্রশাসনের সর্বনি¤œ স্তরটি হ’ল ইউনিয়ন।
জনপ্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ বা শহরাঞ্চলের পৌরসভা স্তরে স্বাস্থ্য ও কৃষির মত
কতিপয় বিষয়ের জন্য নিযুক্ত সরকারী কর্মচারীগণ নিজ নিজ বিভাগের কাজ করে থাকেন।
স্থানীয় সরকার
আধুনিক পৃথিবীতে জাতীয় বা কেন্দ্রীয় সরকার সকল কাজ নিজের হাতে সম্পাদন করে না। সরকারের
ব্যাপক কাজ বিভিন্ন সংস্থা বা দপ্তরের অধস্তন শাখাগুলোর মাধ্যমে নির্বাহ করা হয়। গণতান্ত্রিক দর্শনের
আলোকে জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবর্গের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমেও কিছু নির্দিষ্ট কাজকর্ম সমাধা করা
হয়। স্থানীয় পর্যায়ে দেশগঠনমূলক কাজ বা উন্নত দেশে এমনকি শৃংখলামূলক কাজও এরূপ স্থানীয়
প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাহ করা হয়। আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত এবং স্থানীয় রাজস্ব আহরণ
ও স্থানীয় উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতাসম্পন্ন এরূপ জনপ্রতিনিধিত্বশীল
প্রতিষ্ঠানই স্থানীয় সরকার। কেন্দ্রীয় বা জাতীয় সরকারের নিকট হ’তে কিছু কর্তৃত্ব বা কার্যাবলী বিযুক্ত
করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানকে যদি আইন অনুযায়ী অর্পণ করা হয় তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়। সরকারী সম্পদের বিতরণ ও ব্যবহারের জন্য থানা স্তরের প্রশাসনিক কাঠামো সবচেয়ে দক্ষ ও উপযুক্ত বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
তাহলে দেখা যায় যে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ধারণা বিকেন্দ্রীকরণের ধারণার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে
জড়িত। একটি মাত্র কেন্দ্র হ’তে সরকারী কর্মকান্ড পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া একাধিক
কেন্দ্রে সঞ্চালনের প্রক্রিয়াই বিকেন্দ্রীকরণ। এটি বর্তমান কালের সামষ্ঠিক কর্মকান্ডে ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব
পাচ্ছে। বিকেন্দ্রীকরণকে তাই কয়েকটি রূপে দেখা যায়ঃ স্থানীয় প্রশাসন (খড়পধষ
অফসরহরংঃৎধঃরড়হ), বহুকেন্দ্রীকীকরণ (উবপড়হপবৎঃৎধঃরড়হ), হস্তান্তর (উবাড়ষঁঃরড়হ), চুক্তিভিত্তিক
অর্পণ (ঈড়হঃৎধপঃরহম-ড়ঁঃ), বেসরকারীকরণ (চৎরাধঃরুধঃরড়হ) ইত্যাদি। এর মধ্যে কর্তৃত্ব হস্তান্তর
হ’ল বিকেন্দ্রীকরণের সর্বাধিক আলোচিত ও পরিচিত চিত্র। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এরূপ অবয়ব
পাওয়ার জন্য প্রত্যাশী থাকে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের ইতিহাস বড়ই বিচিত্র। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ‘প্রশান্ত
আত্বনির্ভর গ্রামগুলো’ মূখ্যতঃ গ্রামপ্রধান ও সমাজের প্রাচীনগণের দ্বারা পরিচালিত হ’ত। ঊনবিংশ
শতাব্দীর ষাটের দশকে ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা প্রবর্তিত চৌকিদারী পঞ্চায়েত আইনের মাধ্যমে এদেশে
আধুনিক স্থানীয় শাসনের সূত্রপাত হয়। ১৮৮৫, ১৯০৯ ও ১৯১৯ সালে প্রবর্তিত বিভিন্ন আইন
অনুযায়ী স্থানীয় এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও ক্ষমতা কিছু কিছু ক’রে বৃদ্ধি পায় এবং এগুলোর গঠনেও
কিছু পরিবর্তন আনা হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ইউনিয়ন বোর্ড ও পরে ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রিক
তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে এবং ভবিষ্যত প্রবাহের মূল বাহকে
পরিণত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানী আমলের ব্যবস্থাটি ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান ও সদস্য-এই উভয় পদে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানসহ মোটামুটি
অক্ষুণœ থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম
মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ-৯)। এ ছাড়াও সরকারের নির্বাহী অঙ্গের অন্যতম
বাহু হিসেবে স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের গঠন, ক্ষমতা ও পরিধি সম¦ন্ধেও ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে
বিধান রাখা হয়েছে। সাংবিধানিক এ সব বাধ্যবাধকতা পূরণের লক্ষ্যে দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান
গঠনের তেমন ঐকান্তিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয় নি, অথবা অনুরূপ গৃহীত কিছু পদক্ষেপ অসফল
হ’য়েছে। এমনকি সাংবিধানিক এ সকল বিধান ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় আচমকা বিলুপ্ত করে
এক ধরণের শূন্যতা আনয়নের প্রক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় যে, পৃথিবীর
এই অঞ্চলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণের কোন সাফল্যজনক প্রবণতা শুরু করা হয়
নি। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কালের পরীক্ষায় একথা বার বার স্পষ্ট হয়েছে যে,
স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট জনগণকে সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন প্রচেষ্টা না নেয়া হলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়।
তাই স্থানীয় সরকার ও বিকেন্দ্রীকরণের আলোচনা সব সময়েই প্রাসংগিক।
দেশে তৃণমূল পর্যায়ে অনেকটা অনানুষ্ঠানিক প্রকৃতির ‘গ্রাম পরিষদ’ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে
শতাব্দীপ্রাচীন যে প্রতিষ্ঠানটি গ্রামাঞ্চলে স্বমহিমায় টিকে আছে তা হ’ল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।
মোটামুটি পনেরোটির মত গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত। এতে একজন চেয়ারম্যান, নয়জন
সাধারণ সদস্য ও তিনজন মহিলা সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। আইন অনুযায়ী
প্রতিষ্ঠিত এই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
করে এবং জাতীয় সরকারের প্রদত্ত অনুদান ছাড়াও নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে নিজস্ব রাজস্ব সংগ্রহের চেষ্টা
করে। কতিপয় অপরাধের আইনানুগ বিচারের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতের দায়িত্ব পালন
করে। গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় ইউপি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন
করে। শহরাঞ্চলে এসব ভুমিকা পালন করে পৌরসভা। শহরাঞ্চলের আয়তন, লোকসংখ্যা,
অধিবাসীদের পেশা, অবকাঠামোগত অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় পৌরসভাগুলো ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’
শ্রেণীতে বিভক্ত। এদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী মহানগরের জন্য একটি করে সিটি
কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের কাজের পরিধি ও সম্পদের ব্যাপকতা সহজেই অনুধাবনযোগ্য। দেশে তৃণমূল পর্যায়ে অনেকটা অনানুষ্ঠানিক প্রকৃতির গ্রাম পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদের উর্ধতন স্তর থানা পর্যায়ে ১৯৯১ সন পর্যন্ত প্রায় এক দশক সময়ে একটি
জনপ্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ছিল উপজেলা পরিষদ। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত
চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই উপজেলা পরিষদে উপজেলাস্থিত ইউপি ও পৌরসভার
চেয়ারম্যানবৃন্দ, উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান এবং মনোনীত মুক্তিযোদ্ধা এবং মহিলা
প্রতিনিধিগণ ভোটাধিকারসম্পন্ন সদস্য ছিলেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদের নিকট প্রেষণে প্রেরিত
জাতিগঠনমূলক সরকারী দপ্তরসমূহের অফিসপ্রধানগণ ছিলেন এর ভোটাধিকারবিহীন সদস্য। জাতীয়
সরকারের দেয়া উন্নয়ন মঞ্জুরী ও নিজস্ব আহরিত সম্পদ দ্বারা উপজেলা পরিষদ স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড
পরিচালনা করত। নবসৃষ্ট এই প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণ বৃদ্ধি ও জন-উপযোগ পূরণের লক্ষ্যে উপজেলা
পরিষদের সমান্তরাল দু’টি দপ্তর জাতীয় সরকারের ‘সংরক্ষিত বিষয়’ হিসেবে উপজেলা স্তরে স্থাপন
করা হয়। এ গুলো হ’ল দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত। ১৯৯২ সালে এই পদ্ধতিটি বাতিল করা
হলে প্রতিনিধিত্বশীল এই পরিষদটির সম্ভাবনা আইনগতভাবে রুদ্ধ হ’য়ে যায়। উপজেলা পরিষদ বা
অনুরূপ প্রতিনিধিত্বমূলক একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পুনরায় প্রবর্তনের জন্যে একটি আইন ১৯৯৮
সালে জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। বিচার কাঠামো ও সংরক্ষিত বিষয়ের সংশ্রব ব্যতীত অন্যান্য বিধান
বর্তমান আইনে সংস্থিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের জেলা স্তরের প্রতিষ্ঠান সন্বন্ধেও ধারাবাহিক পট পরিবর্তন ঘটে এসেছে। সর্বশেষ
১৯৮৯-৯০ সময়ে জেলা পরিষদ নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে সরকারের উপমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন
একজন আধিকারকে অধিষ্ঠিত করা হয়। বাংলাদেশের সমতলভ‚মিস্থ ৬১টির মধ্যে ৬০টি জেলায়
তদানীন্তন সরকার দলীয় একজন ক’রে সংসদ-সদস্যকে এই পদে বসানো হয়। জেলার সকল
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভা চেয়ারম্যান ও কয়েকজন বাছাই করা ইউপি চেয়ারম্যান
ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা ও মহিলাগণের প্রতিনিধিবৃন্দ জেলা পরিষদের প্রতিনিধি সদস্য ছিলেন। জেলা
পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক দপ্তরের প্রধানগণ ছিলেন এই পরিষদের সদস্য। সরকারী
অনুদান, টোল ইত্যাদির মাধ্যমে আহরিত নিজস্ব তহবিল এবং ভ‚মি হস্তান্তর করের অংশবিশেষের মত
নির্ধারিত আদায়ের অর্থ দ্বারা জেলা পরিষদ উন্নয়নমূলক কাজ করতো। উল্লেখ্য, এদেশের পল্লী
অবকাঠামোর মূল ভিত্তিই জেলা পরিষদের দ্বারা স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির অঘোষিত
অবসান ঘটানো হয়। বর্তমানে এই পর্যায়ে কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। তবে একটি চার স্তর
বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শিগগিরই জেলা পরিষদ গঠনের প্রস্তুতি চলছে।
খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও রাঙ্গামাটি জেলায় বিশেষ আইনের অধীনে সৃষ্ট তিনটি ‘পার্বত্য জেলা স্থানীয়
সরকার পরিষদ’ ক্রিয়াশীল রয়েছে। মর্যাদায় উচ্চতর এই পরিষদ পাহাড়ী অঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের
আলোকে সরকারী সম্পদ ও নির্দেশনার মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন সাধনে সচেষ্ট। দেশ গঠনমূলক ২২টি দপ্তরের কাজ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই পরিষদের নিকট ন্যস্ত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ বাতিল ঘোষিত হলে প্রতিনিধিত্বশীল এ পরিষদটির সম্ভবনা আইনগতভাবে রূদ্ধ হয়ে যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১। সংবিধানের মর্মানুযায়ী বাংলাদেশ একটি .......
(ক) যুক্তরাষ্ট্র;
(খ) এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র;
(গ) মুসলিম রাষ্ট্র;
(ঘ) উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।
২। সরকারের আবশ্যকীয় বিভাগসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয় .......
(ক) নির্বাহী বিভাগ;
(খ) বিচার বিভাগ;
(গ) সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ;
(ঘ) আইন বিভাগ।
৩। উপ-মহাদেশে ‘ইস্পাত কাঠামো’ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ........
(ক) মোগল আমলে;
(খ) পাকিস্তান আমলে;
(গ) ব্রিটিশ আমলে;
(ঘ) মৌর্য শাসনামলে।
৪। বিকেন্দ্রীকরণের সমার্থক নয় ................
(ক) বহুকেন্দ্রীকীকরণ;
(খ) বিচ্ছিন্নতাবাদ;
(গ) বেসরকারীকরণ;
(ঘ) চুক্তিভিত্তিক অর্পণ।
৫। তদানীন্তন উপজেলা পরিষদের ভোটাধিকারবিহীন সদস্য ছিলেন ............
(ক) ইউপি চেয়ারম্যান;
(খ) পৌরসভা চেয়ারম্যান;
গ) দেশগঠনমূলক বিভাগের কর্মকর্তা;
(ঘ) মহিলা প্রতিনিধি।
৬। বর্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিবেচনাধীন স্থানীয় সরকারের প্রস্তাবিত কাঠামো ..........
(ক) দ্বি-স্তরবিশিষ্ট;
(খ) ত্রি-স্তরবিশিষ্ট;
(গ) চার-স্তরবিশিষ্ট;
(ঘ) অনির্দিষ্ট।
উত্তর মালাঃ ১. খ, ২. গ, ৩. গ, ৪. খ, ৫. গ, ৬. গ।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]