বাংলাদেশের সমস্যাবলী
প্রায় দুই শত বৎসর ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশের অধীনে থাকার পর
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলাদেশের আর্থ-
সামাজিক জীবনে বিভিন্ন সমস্যা পুঞ্জিভ‚ত হয়। স্বাধীনতার পর একদিকে রাষ্ট্রগঠন অপরদিকে আর্থ-
সামাজিক সংকট দূরীকরণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অনেকাংশে
সফল হলেও সার্বিক উন্নয়ন দীর্ঘ ২৯ বৎসরেও কাঙ্খিত মাত্রায় সাধিত হয় নি। রাজনৈতিক
অস্থিতিশীলতা, সামাজিক অবক্ষয় এবং জনগণের জীবনযাত্রার নি¤œমান বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা
হিসেবে চিহ্নিত। এ সব সমস্যা ছাড়াও অসংখ্য সংকট বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি রুদ্ধ করে
রেখেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতিক‚লতা, জাতীয় অভ্যাস ও বৈশিষ্ট্য, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ
এবং বিশ্ব-ব্যবস্থায় প্রতিক‚ল অবস্থান আমাদের বস্তুগত সমৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে আছে। যদিও
বিগত দিনগুলোতে জাতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কিন্তু
সমস্যা নিরসনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় নি। ছিটে ফোঁটা যেটুকু অগ্রগতি ঘটেছে তার সুবিধা ভোগ
করছে জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি অংশ। জনগণের বৃহৎ অংশ এখনও ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও
অসাবধানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে বিরাজিত
অসংখ্য সমস্যার স্বরুপ সঠিকভাবে নিরুপণ করে তা সমাধানে সচেষ্ট হওয়া অপরিহার্য। তা না হলে
এসব ভয়াবহ সমস্যার কারণে জাতীয় অস্তিত্ব ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে যাবে।
জনসংখ্যা তত্ত¡¦ ঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
জনসংখ্যা একটি দেশে সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, আবার সমস্যা হিসেবেও দেখা দিতে
পারে। জনসংখ্যা সমস্যা বলতে কি বুঝায় সে সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ টমাস রবার্ট ম্যালথাস জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেন, তাহলো কোন
দেশের জনসংখ্যা সে দেশের মোট উৎপাদিত খাদ্যের তুলনায় বেশি হলেই সমস্যা হিসেবে গণ্য হয়।
ম্যালথাসের মতে জনসংখ্যা সমস্যা হলো খাদ্য সরবরাহের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যজনিত সমস্যা।
এ ধরনের জনসংখ্যা সমস্যার কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, যুদ্ধবিগ্রহ, বন্যা, প্রভৃতি প্রাকৃতিক
দুর্যোগ দেখা দেয় ।
আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ ম্যালথাসের অভিমত সমর্থন করেন না। তাঁরা জনসংখ্যাকে কেবলমাত্র খাদ্য
উৎপাদনের দিক দিয়ে বিবেচনা না করে দেশের সকল সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করেছেন।
কাম্য জনসংখ্যা তত্তে¡ বলা হয়, কেবল খাদ্য উৎপাদনের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যাকে বিচার না করে দেশের
সমস্ত সম্পদের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার বিচার করা যুক্তিযুক্ত। অর্থাৎ কাম্য জনসংখ্যার তত্তে¡ জনসংখ্যা
সমস্যার বিশ্লেষণে জনসংখ্যাকে দেশের সমস্ত সম্পদের সাথে তুলনা করা হয়। এই তও¦ অনুযায়ী
কোন নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ জনসংখ্যা একটি দেশের সমস্ত প্রাপ্ত সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে
সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় নিশ্চিত করতে পারে সেই পরিমাণ জনসংখ্যাই হলো কাম্য জনসংখ্যা। কাম্য
জনসংখ্যা অপেক্ষা কোন দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা বেশি হলে সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি
হওয়ার কারণে দেশে বেকার সমস্যা দেখা দেয় । এতে মাথাপিছু আয় কম হবে এবং জনগণের
জীবনযাত্রার মানও নিæ হবে। পক্ষান্তরে, দেশের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম হলে অর্থাৎ কাম্য
জনসংখ্যার তুলনায় প্রকৃত জনসংখ্যা কম হলে জনসংখ্যার স্বল্পতার কারণে দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ও
পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হবে না। এতেও মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান নি¤œ হবে। সুতরাং কাম্য
জনসংখ্যা তও¦ অনুযায়ী কোন দেশের জনসংখ্যা কাম্য জনসংখ্যা থেকে বেশি হলে বা কম হলে
জনসংখ্যাজনিত সমস্যা দেখা দেবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা কাম্য জনসংখ্যা থেকে
অনেক বেশি। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৩,৯৯৮ বর্গ কিলোমিটার। অথচ বাংলাদেশের লোকসংখ্যা
(জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট, ’৯৮ অনুযায়ী) ১২ কোটি ৪০ লক্ষ। প্রতি
বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৭৫০ জন লোক বাস করছে। বেকারত্ব ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে মোট শ্রমশক্তির
শতকরা প্রায় ৩৬ ভাগই বেকার অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের কৃষিতে বিরাজ করছে ছদ্ম
বেকারত্ব। তাছাড়া বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় খুবই কম। তাই তাদের জীবনযাত্রার মানও
নিচু। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যে কাম্য জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে তা
সহজেই অনুমেয়। সুতরাং বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা রয়েছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় । কিন্তু
কাম্য জনসংখ্যা তওে¦র ভিত্তিতে অনেকে এটা প্রমাণ করতে চান যে, বাংলাদেশ এখনও অতিরিক্ত
জনসংখ্যার দেশ নয়। তাঁরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের যথাযথ
ব্যবহার এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। ভ‚-গর্ভস্থ সম্পদসমূহ আহরণ করে সেগুলোর সুষ্ঠ ব্যবহার
এখনও নিশ্চিত করা যায় নি। তাছাড়া বাংলাদেশের কৃষি এখনও পশ্চাদপদ রয়েছে, কৃষির
১
কাম্য জনসংখ্যার
তুলনায় কোন
দেশের জনসংখ্যা
বেশী হলে বেকার
সমস্যা দেখা দেবে
এবং জনগণের
জীবনযাত্রার মানও
নিæ হবে।
আধুনিকায়ণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিও যথাযথ ব্যবস্থা আজও গৃহীত হয় নি। কৃষির
প্রক্রিয়াকরণ, আধুনিকায়ণ ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দ্রæত করলে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বাড়ানো সম্ভব।
তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার নীতিই
অনুসরণ করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবেই
পরিগণিত করা হয়।
বাংলাদেশের জনসংখ্যাজনিত সমস্যাসমূহ
বাংলাদেশের জনসংখ্যা গত পঞ্চাশ বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা রিপোর্ট,
’৯৮ অনুযায়ী আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২.১০ ভাগ। আশার কথা, স¤প্রতি
সরকারি এক তথ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৫৯-এ নেমে এসেছে বলে জানা যায়। যাহোক,
জনসংখ্যার আধিক্যে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, ভবিষ্যতে সমস্যা আরো
বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার কারণে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হল ঃ
খাদ্য সমস্যা ঃ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাংলাদেশের খাদ্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। জনসংখ্যার
ক্রমবর্ধমান গতির সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই দেশে খাদ্য খাটতি
দেখা দেয়। এই ঘাটতি বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে মেটাতে হয়। খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি
করতে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। ফলে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অনেক
সময় খাদ্য আমদানির কাজে লাগাতে হয়। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
কৃষির ওপর চাপ ঃ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আমাদের কৃষির ওপর যে চাপ সৃষ্টি করছে তাতে কৃষি
উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনীতির অন্যান্য খাত স¤প্রসারিত না হওয়ায় ক্রমবর্ধমান
জনসংখ্যার চাপ কৃষির ওপরই ক্রমশ বাড়ছে। ফলে কৃষি জমি খন্ডিত বিখন্ডিত হয়ে পড়ছে। তাছাড়া
মাথাপিছু জমির পরিমাণ যাচ্ছে কমে। এর ফলে কৃষকদের দারিদ্র্য বাড়ছে। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক দ্রæত
ভ‚মিহীন কৃষকে পরিণত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা কৃষির ওপর যে চাপ সৃষ্টি করছে তার ফলে কৃষি
উন্নয়ন বাধার সম্মুখীন হয়ে সমগ্র অর্থনীতিকেই নিশ্চলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বেকারত্ব ঃ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের জন্য ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে দায়ী।
বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তির শতকরা প্রায় ৩৬ ভাগই বেকার। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় আমাদের
দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ লোক বেকার রয়েছে। জনসংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে
বেকার সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
শিল্পোন্নয়ন ব্যাহত ঃ বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে বিশেষভাবে ব্যাহত
হচ্ছে। শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কল-কব্জা, কাঁচামাল প্রভৃতি আমদানি করার জন্য পর্যাপ্ত
বৈদেশিক মুদ্রা অনেক সময় পাওয়া যায় না। কারণ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা মেটানোর
জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানিতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়।
ফলে আমাদের শিল্পোন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
মূলধন গঠন ব্যাহত ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মূলধন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু ব্যাপক
দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশে মূলধন গঠনের হার কম। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ মূলধন গঠনের পরিমাণ
হলো মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ৪ ভাগ মাত্র। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভরণ-পোষণের জন্য
ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলেই মূলধন গঠনের হার বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে মূলধন গঠনের হার কম।
মূলধন গঠনের হার কম বলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না।
জীবনযাত্রার নি¤œমান ঃ জীবনযাত্রার উপযুক্ত মান বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্য, বস্ত্র
এবং পরিচ্ছন্ন বাসস্থান আবশ্যক। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা জীবনধারণের মৌলিক উপাদান থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ (১৯৯৫-৯৬) অনুযায়ী দারিদ্র্যসীমার নিচে
অবস্থানকারী জনসংখ্যার এই হার ৫৩ দশমিক ১ এবং ৩৫ দশমিক ৬ ভাগ চরম দারিদ্র্যসীমায়
রয়েছে। আর পিআইএস-এর হিসাবে পল্লী অঞ্চলে দরিদ্রদের সংখ্যা ৫১ দশমিক ৭ ভাগ। পুষ্টিহীন
বাংলাদেশের
ক্রমবর্ধমান
জনসংখ্যা কৃষির
উপর চাপ সৃষ্টি
করছে। এর ফলে
কৃষি উন্নয়ন বাঁধার
সম্মুখীন হয়ে সমস্ত
অর্থনীতিকেই
নিশ্চলতার দিকে
ঠেরে দিচ্ছে।
লোকের সংখ্যা এখানে শতকরা প্রায় ৭০ জন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বাংলাদেশের জনগণের
জীবনযাত্রার মানের নিæগতির জন্য বিশেষভাবে দায়ী।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ঃ জনসংখ্যা দ্রæত গতিতে বাড়ার কারণে আমাদের মৌলিক দ্রব্যসমূহের ওপর
ক্রমশ চাপ পড়ছে। চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রব্যমূল্য সব সময়
উর্ধ্বগামী হচ্ছে।
বাসস্থান সমস্যা ঃ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান নির্মাণ করতে আবাদী জমি ব্যবহার করতে
হচ্ছে। এতে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া বাসস্থানজনিত সমস্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে
বাড়ছে। এসব সমস্যা ছাড়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে পরিবেশ সমস্যা, সুপেয় পানির
সরবরাহ এবং যোগাযোগ ও পরিবহন সমস্যা তীব্র হয়ে উঠবে। কাজেই, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এখনই
ঠেকানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা জাতীয় জীবনের জন্যে হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা
বিস্ফোরণের ফলে সম্পদের সাথে জনসংখ্যা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে সামাজিক ও
অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে জনসংখ্যা সমস্যার দ্রæত সমাধান অপরিহার্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যা
সমস্যা সমাধানে যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলোজনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ঃ জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা হলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।
বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিকল্পনার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হলেও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে
মাথাপিছু আয় বাড়ছে না। এমতাবস্থায়, সুষ্ঠু পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা
করতে পারলে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান বহুলাংশেই সম্ভব হবে।
জনসংখ্যার পূনর্বন্টন ঃ জনসংখ্যার ঘনত্ব বাংলাদেশের সর্বত্র একরূপ নয়। বাংলাদেশে প্রতি বর্গ
কিলোমিটারে গড়ে ৭৫০ জন লোক বাস করে। কিন্তু ভ‚-প্রকৃতি, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকার উর্বরতা,
পরিবহন ও যাতায়তের ব্যবস্থা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বিভিন্ন রূপ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বর্ষ গ্রন্থ-১৯৯৮ এর হিসাব অনুযায়ী ঢাকা জেলায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৬৫৭
জন এবং কুমিল া জেলায় ১২৯০ জন লোক বাস করে। পক্ষান্তরে, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন জেলায় -
প্রতি বর্গকিলোমিটারে যথাক্রমে ১২০ জন ও ৪৭ জন লোক বাস করে। খুলনা বিভাগের
জেলাগুলোতেও জনবসতি তুলনামূলকভাবে কম। ঘনবসতিপূর্ণ জেলাসমূহ থেকে কম জনবসতিপূর্ণ
জেলায় জনসংখ্যার পূনর্বন্টনের মাধ্যমেও জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান কিছুটা সম্ভব। জনসংখ্যা
পুনর্বন্টনের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য আনয়ণ করতে পারলে জনসংখ্যা
সমস্যার সমাধানের পথ প্রশস্ত হবে।
আন্তর্জাতিক স্থানান্তর ঃ জনসংখ্যা আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের মাধ্যমেও জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান
সম্ভব। পৃথিবীর অনেক দেশে বাংলাদেশ থেকে লোক স্থানান্তর সম্ভব। অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং
মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহসহ পৃথিবীর অনেক দেশ শ্রমশক্তি আমদানি করতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশ থেকে
জনসংখ্যার স্থানান্তর আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত করতে পারলে জনসংখ্যা সমস্যার পথ বহুলাংশে সুগম
হবে।
আয় পুনর্বন্টন ঃ জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানে আয় পুনর্বন্টন বিশেষ ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
ধনীদের ওপর অধিকহারে কর বসিয়ে কর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দরিদ্র জনগণের মধ্যে বন্টন করলে দরিদ্র
জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। তাছাড়া জমির সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণের মাধ্যমে অধিক জমির
মালিকদের নিকট থেকে উদ্বৃত্ত জমি নিয়ে ভ‚মিহীন ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে বন্টন করলেও সমাজে
আয়ের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে। আয়ের পুনর্বন্টনের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার গড় মান বৃদ্ধি
করলে সেই মান বজায় রাখতে তারা কম সন্তান লাভ করতে চাইবে। এ ভাবে সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের
দ্বারা জনসংখ্যার সমস্যার সমাধান ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে দেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি খাতের
স¤প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে জাতীয় আয় বাড়ে এবং
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানও বাড়ে।
বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতির উন্নয়ন ও
স¤প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এতে জাতীয় আয় বাড়বে এবং জনগণের মাথাপিছু আয় ও
জীবনযাত্রার মানও বাড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সার্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান
এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়লে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে উৎসাহী হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে এ
ভাবে জনসংখ্যার সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও সামাজিক-অধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যেকার বৈষম্য কমানো, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রির
সহজলভ্যতা, বহু-বিবাহ নিষিদ্ধকরণ এবং ভাসমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও তাদেরকে
জন্মনিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান সম্ভব।
জনসংখ্যার আধিক্য আসলেই কি সমস্যা? জাপান তার বিশাল জনসংখ্যাকে যথাযথভাবে কাজে
লাগিয়ে বর্তমানে পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় শিল্প উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ জাপানের নেই
কোন খনিজ সম্পদ বা অফুরন্ত শষ্য ভান্ডার। তথাপি সে তার বিশাল জনসংখ্যাকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে। জনসংখ্যা তখনই সমস্যা হবে যখন তাকে
যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আর আমাদের সমস্যাটা হল এটাই।
সারকথাঃ জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃতি নিয়ে মতভেদ আছে। ম্যালথাসের মতে, জনসংখ্যা সমস্যা হল
খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যজনিত সমস্যা। কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ শুধু খাদ্য
উৎপাদনের পরিবর্তে সমস্ত সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা সমস্যাকে বিবেচনা করেছেন। তবে যে
কোন বিবেচনাতেই বাংলাদেশে জনসংখ্যার আধিক্য রয়েছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যাজনিত যে সব
সমস্যা বিদ্যমান তা হলঃ খাদ্য সমস্যা, কৃষির উপর চাপ, বেকারত্ব, শিল্পোন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি, মূলধন
গঠন ব্যাহত, জীবনযাত্রার নিæমান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাসস্থান সমস্যা ইত্যাদি। বাংলাদেশের এ
সব সমস্যার সমাধান করতে হলে যে সব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা হল- জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ,
জনসংখ্যার পুনর্বন্টন, আন্তর্জাতিক স্থানান্তর ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. কোন্ অর্থনীতিবিদ খাদ্য সরবরাহের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যকে জনসংখ্যা সমস্যা হিসেবে গণ্য
করেছেন ?
ক. গুণার মিরডাল;
খ. পল সাম্যুয়েলসন;
গ. অর্মত্য সেন;
ঘ. টমাস রবার্ট ম্যালথাস।
২. বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা কতভাগ বেকার?
ক. ৪৮ ভাগ;
খ. ২২ ভাগ;
গ. ৩০ ভাগ;
ঘ. ৩৬ ভাগ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. কাম্য জনসংখ্যা বলতে কি বুঝেন ?
২. ম্যালথাসের মতে অতি জনসংখ্যার কারণে কি কি সমস্যা দেখা দেয় ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশে জনসংখ্যা স্ফীতির কারণে কি কি সমস্যা প্রকট হয়ে উঠতে পারে ?
২. বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান কিভাবে সম্ভব হতে পারে তা আলোচনা করুন।
উত্তরমালাঃ ১. ঘ, ২. ঘ।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র