বাংলাদেশের দারিদ্র্যের কারণসমূহ। দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায়সমূহ চিহ্নিত করুন।

দারিদ্র্যের সংজ্ঞা বা ধারণা
দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই দারিদ্র্য বলতে কি বুঝায় তা আমাদের জানা
দরকার। দারিদ্র্য পরিস্থিতি যদিও একটি আপেক্ষিক ধারণা, তবুও এর সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা
সম্ভব। অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশের আর্থ-সামাজিক মান অনুযায়ী যাদেরকে দারিদ্র্যের পর্যায়ভুক্ত বলে
গণ্য করা হয়, অতি অনুন্নত দেশে তাদের অনেকেই দারিদ্র্যের পর্যায়ে বিবেচিত নাও হতে পারে। তবে
দারিদ্র্য বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বুঝায়, যেখানে মানুষ তার অপরিহার্য বস্তুগত প্রয়োজন
পরিপূরণ করতে পারে না। অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে মানুষ তার
মৌলিক প্রয়োজন যথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের ন্যূনতম চাহিদা মিটাতে পারেনা, সে
পরিস্থিতিকে দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য করা হয়। জন কেনেথ গলব্রেথ (ঔড়যহ কবহহবঃয এধষনৎধরঃয)
তাঁর বিখ্যাত গণ দারিদ্র্যর প্রকৃতি (ঞযব ঘধঃঁৎব ড়ভ গধংং চড়াবৎঃু) নামক গ্রন্থে দারিদ্র্যকে
দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। তাঁর মতে, এক রকম দারিদ্র্য আছে যার দুর্ভোগ সমাজের একটি ক্ষুদ্র
অংশকেই ভোগ করতে হয়। আবার কোন কোন সমাজে এমন দারিদ্র্য রয়েছে যার দুর্ভোগ প্রায়
সকলকেই ভোগ করতে হয়। অবশ্য উক্ত গ্রন্থেই লেখক মূলতঃ গ্রামীণ দারিদ্র্যের স্বরূপ উদ্ঘাটনে
সচেষ্ট হয়েছেন। গলব্রেথের অভিমত, উন্নয়নশীল দেশসমূহেই গ্রামীণ দারিদ্র্য অত্যন্ত প্রকট হয়ে দেখা
দেয়।
বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিস্থিতির আলোকে শহর ও গ্রামের মানুষের মাথাপিছু আয়ের
একটি ন্যূনতম মাত্রাকে দারিদ্র্যের সীমা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রেও মৌলিক চাহিদা পূরণের
সক্ষমতাকে বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা তাদের আয় দ্বারা ন্যুনতম মৌলিক চাহিদা পরিপূরণ
করতে পারেনা, তারাই দরিদ্র। অধৃুনা দারিদ্র্য চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে পুষ্টিমান বিশেষ করে ক্যালরী
গ্রহণের পরিমাণ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ এবং বাসস্থানের সুবিধাকে সূচক হিসেবে
বিবেচনা হচ্ছে। তবে যেভাবেই দারিদ্র্যকে চিহ্নিত বা সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন, দারিদ্র্যের মূল
বৈশিষ্ট্যই হলো অভাবগ্রস্থতা। দরিদ্রমানুষ মানেই অভাবী মানুষ, দরিদ্র দেশ মানেই অভাবগ্রস্থ দেশ।
দারিদ্র্যের সাধারণ কারণ
দারিদ্র্যের সাধারণ কারণ নিয়ে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে এবং বিভিন্নজন কারণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে
করেন। তবে সাধারণতঃ দারিদ্র্যের যেসব কারণ চিহ্নিত করা হয় তা হলো ঃ
একটি সমাজ বা দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে দরিদ্র হতে পারে। অনুর্বর জমি, খনিজ
পদার্থের অভাব কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অপর্যাপ্ততার কারণে কোন দেশ অনুন্নত থেকে
যেতে পারে এবং সেকারণে সেদেশের জনগণ দরিদ্র হতে পারে। তবে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব
থাকলেই যে কোন দেশ দরিদ্র্য হবে তা নয়। জাপান, তাইওয়ান, সিংগাপুর, হংকং এবং দক্ষিণ
কোরিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ না হওয়া সত্তে¡ও দরিদ্র নয়। সুদক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি ও সুষ্ঠ
পরিকল্পনার মাধ্যমে এদেশগুলি দারিদ্র্য নিরসন করেছে। কাজেই, প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে বরং যোগ্য
ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবই দারিদ্র্যের জন্য দায়ী।
অর্থনৈতিক শোষণ এবং বৈষম্যকে দারিদ্র্যর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়
কোন সমৃদ্ধ অঞ্চল হতে যদি উদ্বৃত্ত অপসারিত হয় তাহলে সে অঞ্চল অনুন্নত হয়ে পড়ে এবং ফলে
দারিদ্র্য দেখা দেয়। পল ব্যারণ দেখিয়েছেন, ইষ্ট-ইন্ডিযা কোম্পানী অর্থাৎ র্ইংরেজরা শোষণ করেছিল
বলেই বাংলার অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ থেকে সম্পদ
অপসারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সম্পদের অসম বন্টণের কারণেও দারিদ্র্য দেখা দেয়। বাংলাদেশ,
ভারত, ব্রাজিল এসব দেশে সম্পদের অসম বন্টনের কারণে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্য
পীড়িত। কিন্তু চীন, কিউবা প্রভৃতি দেশে সম্পদের সুষম বন্টনের কারণে দারিদ্র্যের পরিমাণ অনেক
কম। অথচ এদেশগুলোর বস্তুগত উন্নয়নের স্তর প্রায় একই পর্যায়ে।
কোন দেশের শাসন ব্যবস্থা এবং শাসন প্রক্রিয়ার মানের উপরও দারিদ্র্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাশিয়া
এবং পূর্ব ইউরোপের সা¤প্রতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং দারিদ্র্যের জন্যে অনেকেই সমাজতান্ত্রিক
ব্যবস্থা তথা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক নীতিকে দায়ী করেন। কেননা, এ ধরনের শাসন
ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কৌশলের কারণে কর্ম-উদ্যোগ হ্রাস পেয়েছে যার ফলে উৎপাদনশীলতা কমে
গেছে বলে অনেকেরই অভিমত। উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া মানেই ভোগের পরিমাণ সীমিত হওয়া।
এর অনিবার্য পরিণতি হল বস্তুগত প্রয়োজন মিটাতে না পারা অর্থাৎ দারিদ্র্য। অবশ্য অনেক সময়
শাসন ব্যবস্থার চেয়ে সরকারের যোগ্যতা বিশেষ করে আমলাতন্ত্রের সততা ও দক্ষতার উপর
অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের দারিদ্র্য নিরসনের বিষয়টি নির্ভর করে। অদক্ষ ও মাথাভারী প্রশাসন
দারিদ্র্য দূরীকরণের পরিবর্তে বরং জাতীয় সম্পদ অপচয় করে অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি করে।
দারিদ্র্যের সাধারণ কারণ হিসেবে মৌলিক জাতিগত স্বভাবের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইংরেজরা
আইরিশদের চেয়ে এবং জার্মানরা পোলিশদের চেয়ে অধিক পরিশ্রমী। এশিয়াতে চীনা ও জাপানীরা
অন্যদের চেয়ে বেশী পরিশ্রমী ও কর্মমুখী। মৌলিক জাতিগত স্বভাবের এ হেরফেরের জন্য বিভিন্ন
জাতির মধ্যে ধনী-দরিদ্রের তারতম্য ঘটে। আবার আবহাওয়া ও জলবায়ুকেও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিখ্যাত ভ‚গোলবিদ ই হান্টিংটন তাঁর ‘ঈরারষরুধঃরড়হ ধহফ ঈষরসধঃব’
নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, মাঝারী ধরনের শীতল আবহাওয়ার মানুষ পরিশ্রমী ও উদ্যমশীল।
তাই তারা ধনী। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মমন্ডলের মানুষের মধ্যে কাজের প্রতি অনীহা প্রবল। তাই তারা দরিদ্র।
উৎপাদন কাঠামোর ভিন্নতা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম-বিভাজনকে দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ হিসেবে
চিহ্নিত করা যায়। যে সব দেশ কৃষি পণ্য উৎপাদন করে এবং কৃষি পণ্য উৎপাদনের সাথে যারা যুক্ত
থাকে তারা সাধারণত দরিদ্র এবং শিল্পপণ্য উৎপাদনকারী দেশ, এমন কি শিল্পায়িত দেশের শিল্পশ্রমিকরাও অপেক্ষাকৃত ধনী। কেননা, আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষি পণ্যের দাম কম এবং শিল্প-পণ্যের
দাম বেশী। কাজেই কৃষি শ্রমিকের মজুরী শিল্প-শ্রমিকের চেয়ে কম। তাই কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির যে
কোন দেশের অধিকাংশ কৃষক সাধারণতঃ দরিদ্র থাকে।
কোন দেশ ও সমাজের দারিদ্র্যের সাধারণ কারণ পুংখানুপংখভাবে অনুসন্ধান করা হলে অনেক কারণই
খুঁজে বের করা সম্ভব। তবে উল্লেখিত কারণগুলোই দারিদ্র্যের জন্য প্রধানত দায়ী।
বাংলাদেশে দারিদ্রের কারণ
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ এবং বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য পীড়িত।
বিশেষ করে গ্রামীণ দারিদ্র্য-পরিস্থিতি বাংলাদেশে অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৯৬৩-৬৪
সাল হতে শুরু করে ১৯৮১-৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশের অধিক
সংখ্যক দারিদ্র্যসীমার নীচে অবস্থান করছিল। ১৯৮৪ সাল থেকে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার কমতে শুরু
করে। কিন্তু তা সত্তে¡ও বর্তমানে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্যসীমার নীচে। ইসলামাবাদস্থ
মানব উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৯৯৮ সালের বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের মোট
জনসংখ্যার ৪৬ ভাগ এখনো দারিদ্র্য সীমার নীচে অবস্থান করে। উক্ত রিপোর্টে আরো উলে খ করা -
হয়েছে যে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ ভাগ স্বাস্থ্য সেবা পায় না, শিশু পুষ্টিহীনতার
হার শতকরা ৬৭ ভাগ, পয়ঃনিস্কাশনের সুবিধা বঞ্চিত ৫২% ভাগ মানুষ। এ ছাড়া বাংলাদেশের
শতকরা ৬২ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতি এক হাজারে ১২২ জন।
এ আলোচনায় স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এখন আমরা বাংলাদেশের
এই ব্যাপক দারিদ্র্যের কারণ অনুসন্ধান করবো। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের নেপথ্যে বহুবিধ কারণ
রয়েছে। কিন্তু এ পর্যায়ে আমরা কয়েকটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করতে চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ এক সময়ে সম্পদশালী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল এবং এ দেশের জনগণের জীবনমানও ছিল উন্নত। ব্রিটিশরা যখন এ উপমহাদেশে দখল করে তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সে
সময়কার হল্যান্ড, ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সের চেয়ে কম ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে
থাকার মধ্য দিয়ে বাংলার সম্পদ বা উদ্বৃত্ত অপসারিত হয়েছে। ফলে বাংলার পূঁজি বাংলায় বিনিয়োগ
হয় নি। একারণে দেশজ প্রযুক্তির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশে শিল্প-বিপ্লব সংগঠিত
হতে পারেনি। বাংলাদেশে যদি শিল্পায়ন হতো তাহলে বাংলাদেশও ইউরোপের মতোই সমৃদ্ধ হয়ে
উঠতো। কিন্তু ঔপনিবেশিক শোষণ আমাদের সমৃদ্ধির সম্ভাবনাকে বিপর্যস্তই করেছে এবং সৃষ্টি করেছে
ব্যাপক দারিদ্র্য।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এবং পাকিস্তানী শাসনকালে নব্য ঔপনিবেশিক শোষণের কারণে বাংলাদেশের
কৃষিতে আধুনিকায়ন ও গতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে নি। কৃষি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য কম
থাকায় কৃষকের হাতে পর্যাপ্ত পূঁজি সঞ্চিত হতে পারছে না। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক
বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি করারও সুযোগ নেই।
ফলে গ্রামীণ দারিদ্র্য বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও ভ‚মি সংস্কার না করায় এবং গ্রামে কৃষিক্ষেত্রের সংস্কার না করায়
অর্থনৈতিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে স¤প্রসারিত হতে পারে নি, তাই গ্রামে ভ‚মিহীনের সংখ্যা বেড়ে
গেছে এবং তাদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগও সৃষ্টি হয় নি। ফলে গ্রামীণ দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ
করেছে। অন্যদিকে, শিল্পায়নের নিæগতি এবং সার্ভিস সেক্টর স¤প্রসারিত না হওয়ায় গ্রামের উদ্বৃত্ত
জনসংখ্যা শহরে এসে বেকারের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এর ফলে শহুরে দারিদ্র্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে না পারাও দারিদ্র্যের একটি
অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে ভুমির পরিমাণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে জনসংখ্যা ভারসাম্যপূর্ণ
নয়। ফলে অতি জনসংখ্যাজনিত কারণে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ কম। অন্যদিকে, আধুনিক ও
প্রযুক্তিমূলক শিক্ষা স¤প্রসারণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে না পারার কারণে কর্মহীনতা দেখা
দিয়েছে। ফলে দারিদ্র্যও দূর হচ্ছে না।
গ্রাম-শহর নির্বিশেষে আত্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার অভাব রয়েছে। রাষ্ট্রীয়
পূঁজির (ঝঃধঃব পধঢ়রঃধষ) অভাবও এর জন্য অনেকটা দায়ী। বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভর করে কিছু
প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেসরকারী সাহায্য সংস্থারগুলোর (ঘএঙ) দারিদ্র্য দূরীকরণ
কর্মসূচীও দেশব্যাপী বি¯তৃত নয়। ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক লোক উপার্জনহীন রয়ে গেছে এবং
দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে কোনভাবে বেঁচে আছে। অর্থাৎ আত্বকর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাপকভাবে
স¤প্রসারিত না করতে পারার কারণেও দারিদ্র্য দূর হচ্ছে না।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এ দেশে বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির বিপর্যয়
লেগেই আছে। এসব বিপর্যয় বিপুল সংখ্যক মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। অনেকে
নিঃস্ব হয়ে যায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক সচ্ছল মানুষও দরিদ্র হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের প্রকৃতির
এই প্রতিকূলতাও দারিদ্র্যের একটি কারণ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। এ জাতীয় আবহাওয়ার মানুষ অনেকটা অলস ও
কর্মবিমুখ হয়। আবহাওয়াজনিত জাতিগত স্বভাবও বাংলাদেশের দারিদ্র্যর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
এ সব কারণসমূহ ছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অদক্ষ আমলাতন্ত্র, অযোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব,
ব্যাপক দুর্নীতি, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, সম্পদের অসম বন্টন ইত্যাদি বাংলাদেশকে দারিদ্র্যপীড়িত
করে রেখেছে। সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও ব্যাপক কর্ম-উদ্যোগ ছাড়া এ দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব নয়। তাই এ
ব্যাপারে সর্বাগ্রে প্রয়োজন হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যাপক কর্ম-উদ্যোগ।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায়
বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূর না করতে পারলে দেশ ও সমাজের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে
বিশ্বের কিছু দেশ এবং তাদের জনগণ যেখানে প্রাচুর্য্যরে মধ্যে বসবাস করছে, সেখানে আমাদের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এবং পাকিস্তানী শাসনকালে নব্য ঔপনিবেশিক শোষনের কারণে বাংলাদেশের কৃষিতে আধুনিকায়ন ও গতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারেনি। বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে একদিকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, অন্যদিকে জনসংখ্যাকে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিণত করা সবচেয়ে জরুরী।
দেশের জনগণের প্রায় অর্ধেক মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করছে। এ ভয়াবহ দারিদ্র্য হয়তো সহজেই
দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে দারিদ্র্য নিরসন করা অসম্ভবও নয়। এ
ক্ষেত্রে প্রধানতঃ দেশের সম্পদ ও প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতি রেখে জনসংখ্যা পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং
অতিরিক্ত জনসংখ্যাজনিত সমস্যা দূর করা দারিদ্র্য মোকাবিলার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। কাঙ্খিত
জনসংখ্যা নিশ্চিত করে সেই জনসংখ্যাকে উপযুক্ত শিক্ষা ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে
পরিণত করা সম্ভব হলে দারিদ্র্য নিরসন করা যাবে। কেননা, দক্ষ জনশক্তি কর্ম-সংস্থান ও আয় বৃদ্ধির
মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন নিজেরাই করতে পারবে।
বাংলাদেশের ব্যাপক গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনের জন্যে ভ‚মি সংস্কার এবং গ্রামে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প
স¤প্রসারণ করা দরকার। কার্যকর ভ‚মি সংস্কার করে ভ‚মিহীন দারিদ্র্য শ্রেণীকে জমি দেয়া হলে সেই
জমির উপর নির্ভর করে তারা তাদের কর্মহীনতা ও দারিদ্র্য দূর করতে পারবে। এ ছাড়া, গ্রাম পর্যায়ে
ব্যাপকভাবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন করলে উদ্বৃত্ত কৃষক এসব সেক্টরে কর্ম সংস্থান করে আয় বৃদ্ধি ও
দারিদ্র্য দূর করতে পারে।
গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্রদের সহজ শর্তে আত্বকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হলে দেশে বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে। এর ফলে একদিকে আত্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি
এবং অন্যদিকে শ্রম-নিয়োগের সুযোগ বাড়বে। এ পদ্ধতিতেও দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব।
জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়ন তৎপরতা বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সম্পদের প্রবাহ বৃদ্ধি
করা হলেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং এর ফরে দারিদ্র দূর হতে পারে।
দেশে দ্রæত শিল্পায়ন ঘটাতে পারলে বিশেষ করে অধিক হারে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠা করলে মজুরি-শ্রমিক
হিসেবে অনেকে চাকুরী পাবে এবং আয়-উপার্জনের মাধ্যমে তারা তাদের দারিদ্র দূর করতে পারবে।
বিভিন্ন বিপর্যয়ে বিপন্ন হয়ে যারা দরিদ্র হয়ে পড়ে তাদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে
কল্যাণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া, শারিরীক ও মানসিক দিক দিয়ে অক্ষম হবার কারণে
যারা দরিদ্র হয়ে যায়, তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আয়-উপার্জনের
সুযোগ সৃষ্টি করে চরম দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করা যায়।
দারিদ্র্য দূর করার সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে প্রেরণা। চীনের পরিকল্পনাবিদেরা মনে করেন, কেউ
কারো দারিদ্র্য দূর করে দিতে পারে না। দারিদ্র্য নিরসনের পথ দেখিয়ে দিতে পারে মাত্র। আমাদের
দেশের জন্যও এ কথা সত্য। আসলে, দারিদ্র্য দূর করার উপযুক্ত পথ দেখিয়ে দিতে পারলে দরিদ্র
মানুষ নিজেরাই তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা
গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারেন।
উল্লেখিত এসব কারণ ছাড়াও অনুৎপাদনশীলখাতে অধিক ব্যয়, ব্যাপক সামাজিক বৈষম্য, মজুরীর
নিæহার এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

সারকথাঃ যে ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর সামর্থ্য থাকে না, সে পরিস্থিতিকেই ‘দারিদ্র্য’
বলা হয়। দারিদ্র্য মানেই অভাব, আর অভাব মানেই দারিদ্র্য। কর্মসংস্থানের অভাব, স্বল্প মজুরী,
সম্পদহীনতা, কর্মবিমুখতা, অর্থনৈতিক শোষণ ও বৈষম্যের ফলেই মূলত: দারিদ্র্য দেখা দেয়।
বাংলাদেশেও এ সব কারণে জনগণের ব্যাপক অংশ দারিদ্র্যে জর্জরিত। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ,
কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, মজুরীর হার বৃদ্ধি, উন্নয়ন কর্মকান্ড জোরদার করা এবং শোষণ বঞ্চনার
অবসান ঘটিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে গড়ে তুললে বাংলাদেশকে ব্যাপক দারিদ্র্য হতে মুক্ত করা সম্ভব
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. গণ দারিদ্র্যের প্রকৃতি গ্রন্থটি কে লিখেছেন ?
ক. স্টিফেন হাওয়ার্ড;
খ. জন কেনেথ গলব্রেথ;
গ. মাহবুবুল হক;
ঘ. এডওয়ার্ড সাঈদ।
২. এশিয়াতে কোন কোন জাতি তুলনামূলকভাবে বেশী পরিশ্রমী ?
ক. ভারতীয় ও নেপালী;
খ. কুয়েতী ও ইয়েমেনী;
গ. মালয়ী ও ফিলিপিনো;
ঘ. চৈনিক ও জাপানী।
৩. মানব উন্নয়ন রিপোর্ট ১৯৯৮ অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার কতভাগ দারিদ্র্যসীমার নীচে
অবস্থান করে?
ক. ৪৬ ভাগ;
খ. ৫৪ ভাগ;
গ. ৬০ ভাগ;
ঘ. ৬২ ভাগ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. দারিদ্র্যের সংজ্ঞা দিন।
২. দারিদ্র্যের সাধারণ কারণ কি কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের দারিদ্র্যের কারণসমূহ আলোচনা করুন।
২. বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায়সমূহ চিহ্নিত করুন।
উত্তরমালাঃ ১. খ, ২. ঘ, ৩. ক।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]