বাংলাদেশের বেকারত্বের কারণসমূহ বেকারত্ব নিরসনের উপায়সমূহ চিহ্নিত করুন।

বেকারত্বের ধারণা
অর্থশাস্ত্রে বেকারত্ব বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বুঝায় যেখানে শ্রমিক কর্মদক্ষ ও বর্তমান মজুরীতে
কর্মে যোগদানে ইচ্ছুক হওয়া সত্তে¡ও কর্ম নিয়োগ লাভ করে না। বেকারত্ব অনেক সময় ইচ্ছাকৃত হতে
পারে। যেমন, অনেক কর্মবিমুখ ধনীর সন্তান আছে যারা পিতৃপুরুষের উপার্জিত সম্পদের মাধ্যমেই
জীবন কাটিয়ে দেয়। এদের কাজ করবার ইচ্ছাও নেই, প্রয়োজনও নেই। আবার এক শ্রেণীর লোক
আছে যারা সা¤প্রতিক মজুরির হার কম বলে কাজ গ্রহণ করে না। তবে এ ধরনের বেকারত্ব খুব একটা
দেখা যায় না।
বেকারত্বের প্রকৃত সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন কর্মক্ষম সুস্থ ব্যক্তি , যার কাজ করবার বয়স হয়েছে
এবং কাজ করবার ইচ্ছাও আছে অথচ প্রচলিত মজুরির হারে কোন চাকরি পায় না। এই ধরনের
বেকারত্বেকে অনিচ্ছাকৃত বেকারত্ব বলে। অর্থশাস্ত্র বেকারত্ব বলতে এইরূপ অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বকে
বুঝায়।
অর্থনীতিবিদ জে.এম.কেইনস এবং সা¤প্রতিককালের কতিপয় লেখক বেকারত্ব বলতে অনিচ্ছাকৃত
বেকারত্বকেই বুঝিয়ে থাকেন। অধ্যাপক পিগু মত প্রকাশ করেছেন যে, যখন কোন দেশে কর্মক্ষম
ব্যক্তিরা প্রচলিত মজুরীতে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকা সত্তে¡ও যোগ্যতানুযায়ী কাজ পায়না তখন সে
অবস্থাকে বেকারত্ব বলা হয়।
বেকারত্বের বিভিন্ন রূপ বা শ্রেণীবিভাগ
বেকারত্বের বিভিন্ন রূপ বা শ্রেণী মূলতঃ অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বের রূপ বা শ্রেণীবিভাগকেই নির্দেশ করে।
এ বেকারত্বের শ্রেণীবিভাগ এবং এগুলোর পশ্চাতে যেসব কারণ বিরাজমান সেগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
মৌসুমী বেকারত্ব ঃ এমন অনেক কর্মক্ষেত্র আছে যেখানে সারা বছর কাজ হয় না, যেমন-কৃষি,
চিনিশিল্প প্রভৃতি। কৃষকেরা কয়েক মাস কৃষিকার্যে নিযুক্ত থাকে, অন্য সময় তাদের কোন কাজ থাকে
না। চিনি শিল্পের শ্রমিকগণ বছরে মাত্র কয়েক মাস কাজ করতে পারে। আখের মৌসুম শেষ হয়ে
গেলে তাদের কোন কাজ থাকে না। এভাবে মৌসুম বা ঋতু পরিবর্তনের ফলে যে বেকার সমস্যা দেখা
দেয় তাকে মৌসুমী বেকারত্ব বলে।
কাঠামোগত বেকারত্ব ঃ দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোতে জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পায় পুঁজির পরিমাণ সে হারে
বাড়ে না। ফলে প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে এই বর্ধিত জনসংখ্যাকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ করা
সম্ভব হয় না। কেননা, উৎপাদনের উপকরণ ব্যতীত কারো পক্ষে কিছু উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
ফলস্বরূপ, বর্ধিত জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ বেকারত্বকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।
সংঘাতজনিত বেকারত্ব ঃ শ্রম সচলতার অভাব, উৎপাদন ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়ের
অভাব, শ্রমিক সংগঠনের ধর্মঘট, যন্ত্রপাতির সাময়িক ক্রটি বা বিকল কাঁচামালের সাময়িক অভাব
প্রভৃতি কারণে শ্রমিকেরা যদি সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়ে তবে তাকে সংঘাতজনিত বেকারত্ব
বলে। এই ধরনের বেকার সমস্যা নিতান্তই সাময়িক এবং উন্নত বা অনুন্নত সকল দেশেই এরূপ সংঘাতজনিত বেকার সমস্যা অল্পবিস্তর দেখা যায়।
প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব ঃ যখন কোন প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক কর্মচারী নিয়োজিত থাকে তখন
এ অতিরিক্ত কর্মচারীদের নিয়োগ প্রচ্ছন্ন বা ছদ্ম বেকারত্বের সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের
কৃষির কথা বলা চলে। এখানকার কৃষিক্ষেত্রে যত শ্রমিকের প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি লোক
কৃষিকাজে নিয়োজিত রয়েছে। কাজেই এসব অতিরিক্ত শ্রমিকদের কৃষিক্ষেত্র থেকে অন্যত্র স্থানান্তর
করা আবশ্যক। এ স্থানান্তর সত্তে¡ও কৃষির উৎপাদন হ্রাস পাবে না কারণ তারা ছিল অতিরিক্ত। এ
ধরনের বেকারত্বকে বলা হয় প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব ।
বাণিজ্য-চক্রজনিত বেকারত্ব ঃ বাণিজ্য-চক্র পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
এর ফলেই ব্যবসা-বাণিজ্যে কখনো তেজীভাব আবার কখনও মন্দভোব বিরাজ করে। এ ধরনের
তেজী-মন্দার প্রভাবের অবশ্যম্ভাবী ফল গিয়ে পড়ে কর্ম ও নিয়োগের উপর। উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধির
ফলে শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যাও হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে। ফলে সৃষ্টি হয় বেকার সমস্যার।
ন্যূনতম মজুরিজনিত বেকারত্ব ঃ যখন শ্রমের যোগান চাহিদার চেয়ে বেশি হয় এবং মজুরির হার
হ্রাস পায় না তখনই ন্যূনতম মজুরিজনিত বেকারত্ব দেখা দেয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এমন একটা
অবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল। তখন ন্যূনতম হারে মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করতে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছুক ছিল
না। এমতাবস্থায় মজুরির হার হ্রাস করলেই কেবল নিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারত। কিন্তু তখন
মজুরির হার হ্রাস পায় নি বলে অসংখ্য শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল।
কার্যকরী চাহিদার অভাবজনিত বেকারত্ব ঃ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় আয়ের একটি অংশ সঞ্চিত
থাকে; বিনিয়োগের সুযোগ ও পরিমাণ থাকে অপেক্ষাকৃত কম। ফলে বাজারে দ্রব্যের চাহিদা হ্রাস পায়
এবং মূল্যস্তরও কমে যায়। এতে লাভের পরিমাণও কমে যায় আর সে সঙ্গে নিয়োগের পরিমাণও হ্রাস
পায়। এর অব্যবহিত ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় বেকারত্বের ।
যন্ত্রজনিত বেকারত্ব ঃ সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল আবিস্কৃত
হয় এবং এর ফলে উৎপাদন পদ্ধতির ক্ষেত্রে ঘটে এক ব্যাপক পরিবর্তন। এতে অনেক শ্রমিককে নতুন
নতুন কৌশল না জানার কারণে কর্ম থেকে বিদায় নিতে হয়। এভাবে তারা হয়ে পড়ে বেকার।
ইংল্যান্ডে শিল্প-বিপ বকালে বিভিন্ন কল-কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাক্টরীতে সনাতন যন্ত্রপাতির -
স্থলে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে অনেক শ্রমিক বেকারে পরিণত হয়। এ ধরনের
বেকারত্বকে বলা হয় যান্ত্রিক বেকারত্ব।
বাংলাদেশে উপরে বর্ণিত বেকারত্বের সবগুলো রূপই পরিলক্ষিত হয়। এখানে যে বেকারত্ব অত্যন্ত
প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। বস্তুত আমাদের শ্রমশক্তির একটা বিরাট অংশ
বেকারত্ব ও অর্ধ-বেকারত্বতে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের বেকারত্বের কারণ
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৬% মানুষ বেকার অবস্থায় রয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের বেকার সমস্যা ভবিষ্যতে আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এ পর্যায়ে
বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণসমূহ উল্লেখ করা হল।
দ্রæত জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ দ্রæতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাংলাদেশের সমস্যার জন্য বিশেষভাবে দায়ী।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মের সুযোগ তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। ফলে কৃষিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও
দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্বৃত্ত শ্রমিকের সংখ্যা। শিল্প, কল-কারখানায় কাজ লাভের উদ্দেশ্যে পল্লী
এলাকার জনগণ এসে ভিড় জমায় শহরাঞ্চলগুলোতে, কিন্তু কারিগরি ও যন্ত্রপাতি চালনার জ্ঞানের
অভাবে তারা শিল্প কারখানায় কোন কাজ লাভে সক্ষম হয় না। ফলে তারা বেকারই থেকে যাচ্ছে।
সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশঃ বাংলাদেশের সনাতন সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় অনুশাসনের ফলে
জনসাধারণ অনেকাংশ কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। যৌথ পরিবার ব্যবস্থা, নারীদের পর্দা প্রথা, বর্ণ প্রথা
প্রভৃতি উপাদান আমাদের জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের পশ্চাতে কাজ করে। এসব সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও অনেক সময় সব শ্রমিক সব রকম কাজ করতে পারে না। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৬% মানুষ বেকার অবস্থায় রয়েছে।
বিশেষ করে সামাজিক ও ধর্মীয় বাঁধার কারণে নারী সমাজ ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও কর্মে নিয়োগ লাভ
করতে পারে না।
কৃষির উপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা ঃ আমাদের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে পল্লীর জনগোষ্ঠী কৃষি
কাজের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল বলে তারা অতি সহজেই বেকার হয়ে পড়ে। কারণ কৃষি তাদেরকে
বছরের কয়েক মাস মাত্র কাজ দিতে পারে। কৃষি মৌসুমেই কৃষকরা কর্ম ব্যস্ত এবং অন্য সময়
তাদের হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না বললেই চলে। এদিক থেকে বিচার করলে বলা চলে যে,
আমাদের দেশের কৃষকরা মৌসুমী বেকারত্বের অন্তর্ভুক্ত।
শিল্পে পশ্চাৎপদতা ঃ শিল্পক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা বাংলাদেশে বেকারত্বের অপর একটি উল্লেখযোগ্য
কারণ বলে বিবেচিত। বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা কর্মসংস্থানের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
আমাদের দেশে অধিক সংখ্যায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় নি বলে কর্মসংস্থানের তেমন প্রসার
ঘটেনি।
ক্রটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও এ দেশের বেকার সমস্যার জন্য অনেকাংশে
দায়ী। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারী কর্মচারী ও কেরানী সৃষ্টি করা ছাড়া অন্যভাবে বাস্তব উপযোগী
কর্ম-সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে না। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত জনগণের সংখ্যা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে
কিন্তু কারিগরী শিক্ষার প্রসার ঘটছে না সে পরিমাণে। ফলে অনেক সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক বেকার হয়ে পড়ছে।
কারিগরি জ্ঞানের অভাব ঃ বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি
পেয়েছে অনেকগুণে। সে সঙ্গে আজকাল ক্ষেত-খামারেও প্রচুর পরিমাণে যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু আমাদের অধিকাংশ কৃষকই যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিতান্তই অজ্ঞ। ফলে একদিকে
শিল্পক্ষেত্রে এবং অপর দিকে কৃষিক্ষেত্রে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিয়োগের সীমাবদ্ধ সুযোগ ঃ বাংলাদেশে বেকারত্বের জন্য নিয়োগের সীমাবদ্ধ সুযোগ বিশেষভাবে দায়ী। এখানে শুধু কৃষিতেই নয় অকৃষি-খাতেও জনগণকে নিয়োগ করার সুযোগ অতিশয় সীমিত।
ফলে বেকারত্ব সংকট বিদ্যমান রয়েছে।
বাংলাদেশে বেকারত্ব নিরসনের উপায়
বাংলাদেশে বেকারত্ব নিরসনের কোন সহজ পথ নেই। এ সমস্যার সমাধান জরুরি হলেও
সময়সাপেক্ষ। তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বেকারত্ব নিরসন সম্ভব। এক্ষেত্রে যে সব
পদক্ষেপ নেয়া যায় তা হলো ঃ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি রোধ করার মাধ্যমে ঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যা রোধ করতে হলে সর্বাগ্রে
প্রয়োজন জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি রোধ করা। সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে স্বভাবতই উক্ত
জনসংখ্যার একাংশ বেকার থেকে যাবে। কাজেই জনসংখ্যার হার কমিয়ে সম্পদের সঙ্গে তার সমতা
আনয়ন করতে হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা দূর
করা সম্ভব। দেশে এখনো যেসব সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে সেগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহারের
মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ পরিকল্পনা গ্রহণ। কৃষি ও শিল্পের
পাশাপাশি সার্ভিস সেক্টর স¤প্রসারণ করেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়।
কর্ম বিনিময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঃ বেকার সমস্যার জন্য আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক
কর্ম বিনিময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠান বেকার শ্রমিক ও অপূর্ণ কর্মস্থলের বিবরণ
সংগ্রহ করে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে বেকার জনগণকে তথ্যাদি প্রদান করতে পারে। ফলে শ্রমের
চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যথার্থ সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। বেকার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়ার গুরুত্বও কম নয়।
কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ঃ বাংলাদেশের কৃষি অনুন্নত বিধায় দেশের ক্রমবর্ধমান
জনশক্তির কর্মসংস্থান করতে পারছে না । বিনিয়োগের অভাবে কৃষিখাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে
লাগানো যাচ্ছে না। সেচ সুবিধার আওতা বাড়িয়ে এবং জৈব-রাসায়নিক প্রযুক্তির স¤প্রসারণ করে
দু‘ফসল বা তিন ফসল উৎপাদন দ্বারা কৃষিখাতে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে।
দ্রæত শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে ঃ শিল্প ক্ষেত্রে দ্রæত উন্নতি সাধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা
সমাধান করা যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন অধিক মাত্রায় শিল্প কল-কারখানা স্থাপন। শ্রমঘন
শিল্পের পাশাপাশি কুটির শিল্পের উন্নতি সাধন করা প্রয়োজন। কুটির শিল্পে অধিক পরিমাণে লোক
নিয়োগ করা সম্ভব। এতে করে বেকারত্ব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে ঃ বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি
হচ্ছে সাধারণ শিক্ষা ; কোন প্রকার পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষা নয়। কিন্তু পেশাগত ও কারিগরি
জ্ঞানের অভাবে আমাদের দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে উঠছে না। কারিগরী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ শ্রমশক্তি
গড়ে তোলা সম্ভব হলে বেকারত্বও কমবে।
প্রচলিত সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে ঃ বাংলাদেশের বেকার সমস্যার
দূরীকরণের জন্য প্রচলিত সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি পরিবর্তন করা একান্ত আবশ্যক। কারণ,
এগুলোর কুফল আমাদের জনগোষ্ঠীকে কর্মবিমুখ করে তোলে। ফলে আমাদের শ্রমশক্তির এক
উলে খযোগ্য অংশ বেকার থেকে যায়। এসব প্রথার মধ্যে রয়েছে বর্ণ প্রথা, রক্ষণশীলতা, পর্দা প্রথা -
এবং বিভিন্ন ধরনের সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামি। এসব দূর করে জনগণের মধ্যে কর্মমুখী সংস্কৃতি গড়ে
তুলতে হবে।
জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমেঃ বাংলাদেশের বিপুল অদক্ষ জনসংখ্যাকে
উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা হলে জনসংখ্যা দেশে অর্থনৈতিক
উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া, দক্ষ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে জনসংখ্যার
চাপ একদিকে কমবে, অপরদিকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে
ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
সারকথাঃ কর্মদক্ষতা থাকা এবং বিদ্যমান মজুরীতে কর্মে যোগদানে ইচ্ছুক হওয়া সত্তে¡ও কাজ না
পাওয়াকে বেকারত্ব বলা হয়। বেকারত্বের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে, যেমন-মৌসুমী বেকারত্ব,
কাঠামোগত বেকারত্ব, সংঘাতজনিত বেকারত্ব, প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব, বাণিজ্য-চক্র জনিত বেকারত্ব, ন্যূনতম
মজুরীজনিত বেকারত্ব, কার্যকরী বেকারত্ব। বাংলাদেশে সব ধরনের বেকারত্বেরই অস্তিত্ব আছে।
বাংলাদেশের বেকারত্বের কারণও বহুবিধ। যেমন-দ্রæত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ,
কৃষির উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা, শিল্পে পশ্চাৎপদতা, ক্রটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা, কারিগরী জ্ঞাণের
অভাব ও নিয়োগের সীমিত সুযোগ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি রোধ করার
মাধ্যমে, কর্মবিনিময় কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে, কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে, শিল্পোন্নয়নের
মাধ্যমে, শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে এবং সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
সঠিক উত্তরটি লিখুন।
১. কর্মক্ষম এবং কর্ম-আগ্রহী ব্যক্তি প্রচলিত মজুরীর হারে চাকুরী না পেলে তাকে কি ধরনের বেকারত্ব
বলে ?
ক. অনিচ্ছাকৃত বেকারত্ব;
খ. মৌসুমী বেকারত্ব;
গ. ইচ্ছাকৃত বেকারত্ব;
ঘ. যন্ত্রজনিত বেকারত্ব;
২. দ্রæত বেকারত্ব নিরসন করতে হলে বাংলাদেশে কি ধরনের শিল্প গড়ে তোলা বেশী প্রয়োজন ?
ক. পূঁজিঘন শিল্প;
খ. শ্রমঘন শিল্প;
গ. রাসায়নিক শিল্প;
ঘ. বিমান-নির্মান শিল্প।
৩. বাণিজ্য চক্র কোন ধরণের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য?
ক. সামন্তবাদী ব্যবস্থার;
খ. সমাজবাদী ব্যবস্থার;
গ. আদিম সাম্যবাদী ব্যবস্থার;
ঘ. পুঁজিবাদী ব্যবস্থার।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. বেকারত্বের সংজ্ঞা দিন।
২. বেকারত্ব কত প্রকার ও কি কি ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাংলাদেশের বেকারত্বের কারণসমূহ আলোচনা করুন।
২. বাংলাদেশের বেকারত্ব নিরসনের উপায়সমূহ চিহ্নিত করুন।
উত্তরমালাঃ ১. ক, ২. খ, ৩. ঘ।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]